ঢাকা ০২:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ:-
কদম-রসুল সেতুর দাবি শুধুমাত্র আবেগের নয়, এটি বন্দরবাসীর প্রাণের দাবি: মাসুদুজ্জামান মানুষের অসাধ্য কিছু নেই, মনোবল দৃঢ় থাকলে সফলতা আসবেই: জেলা প্রশাসক কুষ্টিয়ায় নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগে সিভিল সার্জন অফিসে তালা মাদক সনাক্তকারী কুকুর ‘মেঘলা’র ঘ্রাণে ধরা চোলাই মদের চালানসহ আটক-৪ না’গঞ্জ কেবল শিল্প ও ব্যবসার শহর নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃদস্পন্দন: মাসুদুজ্জামান উখিয়ায় র‍্যাব ও ডিজিএফআই’র যৌথ অভিযান: ১ লক্ষ ১২হাজার ইয়াবাসহ নারী আটক কেবল নয় ফলাফলমুখী শিক্ষা বিকশিত হোক মানবতার দীক্ষা’- জাহিদুল ইসলাম মিঞা ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে ফরিদপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা রাজধানীর মিরপুরে পোশাক কারখানায় ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১০ ইউনিট নরসিংদীতে যাত্রীবাহী বাসের সাথে অটোরিকশার সংর্ঘষে নিহত-৩ টেকনাফের পাহাড়ে কোস্ট গার্ডের অভিযান: নারী-শিশুসহ উদ্ধার-৪৪ টেকনাফে পুলিশের অভিযানে অপহৃত কিশোর উদ্ধার সেনা অভিযানে ৭ দিনে আগ্নেয়াস্ত্র,গোলাবারুদ ও মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তার-১৫১ আত্মসমর্পণ করা ১৫ সেনা কর্মকর্তারা নির্দোষ: আইনজীবী আড়াইহাজারে চাঞ্চল্যকর ইমন হত্যার দুই পলাতক আসামি পিবিআই’র জালে নারায়ণগঞ্জে সিকিউরিটি গার্ড হানিফ হত্যাকান্ডে জড়িত গ্রেপ্তার-৩, অধরা মূলহোতা অভি কুষ্টিয়ায় পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, আতঙ্কে এলাকাবাসী মৌলভীবাজারে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত নারায়ণগঞ্জে পালিত হলো জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৫ অক্টোবরেই চূড়ান্ত হবে বিএনপির ২০০ প্রার্থীর ভাগ্য যেসব সেনা কর্মকর্তাদের কারাগারে পাঠানো হলো অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফরিদপুরে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর বস্তাবন্দি অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার বড়লেখার বিএনপি নেতা হত্যা চেষ্টায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী কালাম কারাগারে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার টেকনাফে বিজিবির নৌ-অভিযান: ৪০ হাজার ইয়াবাসহ ৩ রোহিঙ্গা আটক টেকনাফের পাহাড়ে বিজিবির অভিযান: ছয় জিম্মি মুক্ত, অস্ত্র উদ্ধার গাইবান্ধায় ‘খাদ্যবান্ধব’ কর্মসূচিতে পচা চাল বিতরণ: ক্ষুব্ধ দরিদ্র মানুষের প্রতিবাদ না’গঞ্জ শহরজুড়ে বিএনপির এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী বাবুলের নির্বাচনী শোডাউন প্রতিবন্ধী শিশুদের মূখে হাসি ফোটাতে ফূল-চকলেট নিয়ে হাজির হলেন জেলা প্রশাসক নারায়ণগঞ্জে ফের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অজ্ঞাত যুবকের উলঙ্গ লাশ উদ্ধার বলিউডের প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতা আসরানি মারা গেছেন নির্বাচিত সরকার ছাড়া ঋণের অর্থ দেবে না: আইএমএফ পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগে যুক্ত হচ্ছে জেলা-উপজেলা প্রশাসন না’গঞ্জে ধর্ষণের দায় চাপিয়ে মব সৃষ্টি করে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ কুলাউড়ায় পুলিশের ধাওয়ায় চোরাই সিএনজিসহ যুবক আটক কুষ্টিয়ায় লালনের আখড়াবাড়ি থেকে ৭৮ মোবাইল চুরি, গ্রেপ্তার-১২ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে: ইএবি, সভাপতি ‘বিগো লাইভে’ প্রেম ও বিয়ে, শেষে প্রেমিকার শরবতে মৃত্যুফাঁদ উখিয়ায় বিজিবির অভিযানে ৩০ হাজার ইয়াবা জব্দ পর্নো-তারকা যুগল অন্য বাংলাদেশিদেরকেও ওয়েবসাইটে যুক্ত করে: সিআইডির তথ্য বাংলাদেশি শীর্ষ পর্ন-তারকা দম্পতি গ্রেপ্তার অবশেষে সামনে এলো জবির শিক্ষার্থী জুবায়েদ হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য  শুভ দীপাবলি ও শ্যামাপূজা আজ জবি’র ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হত্যাকান্ড, সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর ফুটেজ জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবায় কোনো তালবাহানা বরদাস্ত করা হবে না’: ডিসি ধানমন্ডিতে গণমাধ্যমকর্মীর আত্মহত্যা: যৌন হয়রানির অভিযোগে তোলপাড় নারায়ণগঞ্জে পৃথক অভিযানে ইয়াবা ও গাঁজাসহ আটক-৪ মাদক কারবারি এবার ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ফ্যাক্টরিতে আগুন জানা গেলো খুলনা কারাগারে কয়েদিদের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের কারন এবার কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আগুন, ১ ঘন্টার প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণ  শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুন নিয়ন্ত্রণে, ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক  চট্টগ্রাম বন্দর ও ডিপোতে কনটেইনার পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী মাসুদুজ্জামানের সিদ্ধিরগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাহেব আলীর সহযোগী বিদেশি পিস্তলসহ র‍্যাবের জালে বিএনপির এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী মাসুদুজ্জামানের পাশে মহানগর যুবদল নারায়ণগঞ্জে মাদকবিরোধী অভিযানে ইয়াবা ও নগদ অর্থসহ আটক-৬ টেকনাফ সীমান্তে নতুন বিতর্ক: ওসির বিরুদ্ধে ঘুষসহ অভিযানের ইয়াবা গায়েবের অভিযোগ টেকনাফের নাফ নদীতে ভেসে উঠল রোহিঙ্গা যুবকের অর্ধগলিত লা*শ হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া মতপার্থক্য ভূলে ফের ঐক্যের ডাক দিলেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী: মাসুদুজ্জামান না’গঞ্জে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু জাফর বাবুলের নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগ শুরু সাবরাংয়ে ‘মাদক সম্রাট’ জুবাইরের বিলাসবহুল বাড়িতে অভিযান রাকসু’তেও ভরাডুবি ছাত্রদলের, শিবিরের একচেটিয়া জয় হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের আস্তা ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য: ডিসি  চাকসুতে ভিপি-জিএস শিবির সমর্থিত প্যানেল,এজিএস ছাত্রদলের টেকনাফের ইকো-ট্যুরিজম কমপ্লেক্সে হামলা ও ভাঙচুর, আতঙ্কে স্থানীয়রা গাইবান্ধায় স্কুলছাত্রী অপহরণের ১৭ দিনেও উদ্ধার হয়নি আদুরী রানী নারীরা পিছিয়ে থাকলে সমাজের উন্নয়ন সম্ভব না: আবু জাফর বাবুল নারায়ণগঞ্জের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ হবে তারুণ্যের হাত ধরে: মাসুদুজ্জামান ফের ৪ জেলায় নতুন ডিসি বিচার প্রক্রিয়াকে প্রযুক্তিনির্ভর করতে দেশে প্রথম ই-বেইল বন্ড প্রবর্তন: আইন উপদেষ্টা উখিয়ার শীর্ষ অস্ত্র ও মাদক কারবারি এনায়েত উল্লাহ গ্রেপ্তার টেকনাফে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের নিষিদ্ধ ইয়াবা জব্দ  কেন্দ্রীয় নেতা বকুলকে ‘ধানের শীষ’ ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সোনারগাঁয়ে নিখোঁজের ৪ দিন পর যুবতীর অর্ধগলিত বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার চার ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি রূপনগরের ভয়াবহ আগুন, নিহত-৯ মিরপুরে দুই কারখানায় ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৬ ইউনিট স্ত্রী সম্বোধন করে পোষ্ট, তনির তৃতীয় স্বামী কে এই সিদ্দিক উখিয়ায় শীর্ষ মাদক কারবারি তাজ উদ্দিন গ্রেপ্তার না’গঞ্জের ‘কিং মেকার’ বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আলী এবার মাসুদুজ্জামানের পাশে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মাসুদুজ্জামানকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থন ফ্যাক্ট ফুটপাত দোকান বসানো: মধ্যরাতে ঢাবি ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নারায়ণগঞ্জে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন চট্টগ্রামে যমুনা টিভির সাংবাদিককে ‘ফ্যাসিস্ট’ তকমা দিয়ে মারধর করলো পুলিশ না’গঞ্জের মাদকের হট স্পষ্টগুলো চিহৃিত করে গুরিয়ে দেয়া হবে: ডিসি চট্টগ্রামের জিইসি’তে কনসার্টে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের জেরে ভাঙচুর, গোলাগুলি কাকরাইলে জাপা’র নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে রনক্ষেত্র  টেকনাফে অপহরণচক্রের তিন সদস্য গ্রেপ্তার অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে এবার দেশজুড়ে প্রশংসিত নারায়ণগঞ্জের ডিসি অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে সেনাসদর, মিসিং-১ শান্তিতে নোবেল জয়ী নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ ভেনেজুয়েলার কোরিনা মাচাদো দেশের ১৭ অঞ্চলে বজ্রবৃষ্টিসহ ঝড়ের পূর্বাভাস দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ এখনো স্বাস্থ্য সচেতন নয়: সচিব জাহেদী টেকনাফে বার্লিন’র তৎপরতায় ঢাকাগামী বাসে লুকিয়ে রাখা ৫’শ ইয়াবাসহ আটক-১ রাজনীতি আমার কাছে মানুষের আস্থা ও দায়িত্বের প্রতীক: মাসুদুজ্জামান টেকনাফে র‍্যাবের অভিযানে দেশীয় ও নকল বিদেশি মদসহ আটক-৩ টেকনাফে গাঁজাসহ তিন নারী মাদক কারবারি আটক ক্ষুদে কারাতে প্রতিযোগীদের আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে আসলেন জেলা প্রশাসক রূপগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাজাহান ভুইঁয়া আর নেই 

কেবল নয় ফলাফলমুখী শিক্ষা বিকশিত হোক মানবতার দীক্ষা’- জাহিদুল ইসলাম মিঞা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময়- ০৩:৪৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ২৪ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সমকালীন কাগজ
সম্পাদকীয়…..

‘শিক্ষা ভাবনা’

প্রকৃত মানুষ করার জীবনব্যাপী সব আয়োজনই শিক্ষা। একটি জাতি তথা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম..

প্রকৃত মানুষ করার জীবনব্যাপী সব আয়োজনই শিক্ষা। একটি জাতি তথা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম। কিন্তু শিক্ষা মানবসভ্যতার বিকাশের অন্যতম প্রধান উপাদান হলেও আজ তা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে কেবল জিপিএ ৫, সার্টিফিকেট অর্জন অথবা চাকরি পাওয়ার মধ্যে। কিন্তু পাস করা ও শিক্ষিত হওয়া এক বিষয় নয়। তাই পাসের হার বাড়লেও শিক্ষার গুণগত মান বাড়ছে না। সন্তান কতটা মানবিক জ্ঞানসম্পন্ন হলো, কতটা সুশিক্ষিত হলো সেদিকে আমাদের খেয়াল নেই। সবাই আমরা ব্যস্ত কেবল নিজেদের নিয়ে। অর্থের বিনিময়ে অর্জিত শিক্ষায় দেশপ্রেম, ভদ্রতা, সভ্যতা, মানবিক মূল্যবোধ আজ প্রায় বিলুপ্ত। সমাজে সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলার দৃঢ় মানসিকতাসম্পন্ন মানুষের বড্ড অভাব। তাই আমাদের স্লোগান হোক, ‘কেবল নয় ফলাফলমুখী শিক্ষা, বিকশিত হোক মানবতার দীক্ষা’। এ কথা সত্য, যে শিক্ষা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটায় না, বিবেক জাগ্রত করে না, মনের দিগন্ত প্রসারিত করে না, মানবতাবোধ জাগ্রত করে না তা প্রকৃত শিক্ষা নয়। তাই শিক্ষা হতে হবে মানবিক ও নৈতিকতানির্ভর, যা শিক্ষার্থীর নৈতিক মানদণ্ডকে উন্নত করার পাশাপাশি অন্তরের মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করবে। কারণ নৈতিকতাবিবর্জিত বিদ্বান ব্যক্তি সমাজ সংস্কারে কিংবা সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষায় কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি বিকাশের বিষয়টি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক এ ত্রিভূজ সম্পর্কের ভিত্তির ওপর গড়ে ওঠে।

বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় শিক্ষার সামাজিক প্রভাব কী? সমাজ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে মেধা না অর্থ? সম্মানিত কে অর্থশালী না বিদ্বান? মানুষ ছুটছে অর্থ না বিদ্যার পেছনে? জাতির মেরুদণ্ড কি শিক্ষা না অর্থনীতি? শিক্ষা কি সমাজ গড়ছে না সাম্রাজ্য? আমাদের রোল মডেল কি দুর্নীতিবাজ না সস্তা জনপ্রিয়তার কেউ? শিক্ষার উদ্দেশ্য কি সমস্যার সমাধান না অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো? শিক্ষা কি আমাদের বিবেককে প্রসার ঘটাচ্ছে না অন্ধ অনুকরণের পথে নিয়ে যাচ্ছে? মানুষ কি বিবেকের প্রেরণায় না হুজুগে চলছে? মুক্ত চিন্তার প্রকাশ কোথায়? তরুণ সমাজের লক্ষ্য কী? শিক্ষা কি আজ মানুষকে রোবট বানাচ্ছে? সমাজের আলোচনার বিষয়বস্তু কী? আমরা শিক্ষিত হচ্ছি কুশিক্ষায় না সুশিক্ষায়?

পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্র আজ মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিকতা আর উদারতা প্রায় ম্রিয়মাণ। সমাজ হয়ে পড়েছে দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বার্থপর ও অসহিষ্ণু। দৃষ্টি কেবল স্বার্থের চোখে নিবদ্ধ, মানবিকতার চোখ কার্যত অন্ধ। আমাদের তরুণ সমাজের কাছে আজ সবচেয়ে বড় সংকট অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের। কাকে অনুসরণ করে স্বপ্ন বুনবে, কার চরিত্র অনুকরণ করবে, কার আদর্শে নিজেকে আলোকিত করবে তার কোনো সমাধান নেই। তাই আমরা দেখতে পাই নৈতিকতাবিবর্জিত এ সমাজে বড় অপরাধীরাও বড় ডিগ্রিধারী। অন্তত পুঁথিগত বিদ্যায় তারা বেশ এগিয়ে।

সমাজ জীবনে স্নেহ-প্রীতি-ভালোবাসা প্রায় অবলুপ্ত, মানবতা-নৈতিকতা-উদারতা বিলীন প্রায়, শ্রদ্ধা-বিনয় অদৃশ্য, দুর্নীতি ও ভ্রষ্টাচারে সামাজিক পরিমণ্ডল কলুষিত। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, অপহরণ, ইত্যাদি স্বাভাবিক জীবনকে ছন্দহীন করে তুলেছে। মাদক, কিশোর গ্যাং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, শিশু ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের মতো অপরাধ বেড়ে চলেছে। অপকর্মের এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আমাদের শিশু-ছাত্র-যুবারা দিন দিন মানসিকভাবে আহত হয়ে বিপথগামী হতে চলেছে। এ অবস্থা একটি জাতির জন্য খুবই ভয়ংকর। তাই আজকের তরুণ প্রজন্মকে এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যে প্রজন্ম কেবল প্রাতিষ্ঠানিক ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে না তারা হবে ছোটদের প্রতি স্নেহশীল, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, দেশপ্রেম উজ্জীবিত। তারা অন্যের বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে এবং সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটাবে। সৃজনশীল বিকাশ ছাড়া সমাজকে আলোকিত করা সম্ভব নয়। আলোকিত তরুণরাই হবে আলোকিত ভবিষ্যৎ।

একজন মানুষের চিন্তা, কর্ম, আচরণের প্রভাবের সূতিকাগার হচ্ছে পরিবার। মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, নীতি-নৈতিকতা কিংবা অন্যের মতামত গ্রহণ করার মতো মানসিকতার শিক্ষা পরিবার থেকেই নিতে হয়। শিশুর প্রথম শিক্ষালয় তার পরিবার ও প্রথম শিক্ষক তার মা-বাবা। সেহেতু শিশুকে পারিবারিক মূল্যবোধ, উন্নত চরিত্র, সৎ আদর্শবান নাগরিক ও উন্নত চরিত্রের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রধান হচ্ছে পরিবার। তাই শিশুদের নৈতিকভাবে বিকশিত করতে হলে পরিবারের সদস্যদের নৈতিক গুণাবলিসম্পন্ন হতে হবে। কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ যেমন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত তেমনি ধ্যান-ধারণা ও চিন্তায় এসেছে নানা পরিবর্তন। কিন্তু আমরা যদি নিজেরাই সততা ও নৈতিকতার মূর্ত প্রতীক কিংবা সহানুভূতির প্রতিচ্ছবি না হতে পারি, তবে তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করা কিংবা উন্নত মানুষ গড়া প্রায় অসম্ভব। বাবা-মা রাত ১২টায় ঘরে ফিরে যদি প্রত্যাশা করে তার সন্তান সন্ধ্যায় ঘরে ফিরবে তা কি হয়? বাবা-মা এবং অভিভাবকরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সন্তানদের নৈতিক শিক্ষার পরিবর্তে সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষায় প্রলুব্ধ করছে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। কার সন্তান কত শিক্ষিত হলো, কার পরীক্ষায় কি রেজাল্ট হলো, কে কোথায় পড়ে, পড়া শেষে কী করবে, কার ছেলে বিজ্ঞানী হলো, ইঞ্জিনিয়ার হলো—যা মুখ্য আলোচনার বিষয়বস্তু হলেও নীতি-নৈতিকতা, মানবিকতা, দেশপ্রেম কিংবা সত্যিকারের মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার বিষয়ে কোনো প্রকার আলোকপাত নেই।

শিক্ষকতা মহান পেশা/যারা মানুষের শ্রদ্ধা, আদর্শ ও অনুকরণের প্রেরণা। মহানুভবতা, ন্যায়পরায়ণতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সচ্চরিত্রের মতো মানবীয় গুণাবলির জন্য একজন শিক্ষক সবার অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে ওঠেন। মানবিক মূল্যবোধের এসব গুণাবলি সমাজজীবনে স্থায়ী প্রভাব ফেলে। শিক্ষক হয়ে উঠেন গুরু, ছাত্র হয় শিষ্য। শিক্ষক ছাত্রকে শুধু শিক্ষা নয়, সাথে দেন দীক্ষাও। কারণ শিক্ষকদের দায়িত্ব শুধু পাঠদান, সিলেবাসের প্রশ্ন শেখানো কিংবা পরীক্ষায় পাস করানো নয়। বরং শিক্ষার্থীদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ, মানবিক মানুষ তৈরি, বিবেকবোধ জাগ্রত করা, উন্নত চরিত্র গঠন, যা তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, ছাত্রছাত্রীদেরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিমুখতা, শিক্ষকের বিরুদ্ধাচরণ কিংবা শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন, দলাদলি আজকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক সাধারণ চিত্র। আবার অনেক শিক্ষকও হয়ে পড়েছেন বাণিজ্যমুখী। তাই ক্লাস থেকে কোচিং-প্রাইভেটেই মনোযোগ বেশি। বিদ্যা আজ বাক্সবন্দি, পড়াশোনা কেবল পরীক্ষামুখী। বিদ্যালয়গুলো এখন কেবল পাসের হার, গ্রেড আর নম্বরের পেছনে ছোটাছুটি। কি শেখানো হচ্ছে আর কি শেখানো দরকার তা নিয়ে কোনো আয়োজন নেই; নেই কোনো লাগসই পরিকল্পনা। শিক্ষার্থীরা আজ অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যেমন আপন করে ভাবতে পারছে না তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ বা আকর্ষণের জায়গা হিসেবে নিজেদের মেলে ধরতে পারছে না। পড়ালেখা যেন তাদের কাছে এক ধরনের বাধ্যবাধকতা, সার্টিফিকেট প্রাপ্তিই এর মূল উদ্দেশ্য। ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, পরীক্ষার আগে ও পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপ, হতাশা ও ক্লান্তি এমনভাবে প্রকট হয়ে উঠেছে যে, তারা কখনো কখনো পরীক্ষা কেন্দ্র ভাংচুরের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় লিপ্ত হচ্ছে। এটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার নৈতিক ও মানসিক দুর্বলতার প্রতিফলন। এ কারণেই শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাবোধের স্থানটি আজ অনেকটা বিবর্ণ। ছাত্রসমাজের সামনে আজ অনুকরণীয় অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের বড় অভাব। পাঠদান কেবল পাঠ্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, বইয়ের বাইরে শেখা হচ্ছে না কিছুই। মানসম্মত শিক্ষক না থাকায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশ আজ কেবল অতীতস্মৃতি। সমাজে আজ আদর্শবান ব্যক্তির অভাব, বিত্তবানরাই যেন আদর্শ, আর পেশিশক্তির অধিকারীরাই যেন সমাজপতি। তাই সমাজ আর গড়ে উঠছে না, উঠছে সাম্রাজ্য। চাকরি পাওয়া বা আর্থিকভাবে সচ্ছলতা আনতেই ব্যস্ত মুখস্থনির্ভর আজকের শিক্ষা-সংস্কৃতি। ফলে বিত্ত-বৈভব আর প্রাচুর্যে জীবনকে রাঙিয়ে তোলার প্রবল বাসনায় ব্যক্তি বা সমাজের জন্য মহৎ কিছু করার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের মূল চালিকাশক্তি-সততা ও নিষ্ঠার মতো মানবিক গুণাবলি। আমরা ভুলেই যাচ্ছি জীবন শুধুই একটি ভ্রমণযাত্রা, কোনো প্রতিযোগিতা নয়।

আমরা যদি সত্যিই একটি উন্নত, মানবিক ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, তবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে হতে হবে আনন্দময় ও অংশগ্রহণমূলক। যে শিক্ষা একজন শিক্ষার্থীর নৈতিক মানদণ্ডকে উন্নত করার পাশাপাশি তার ভেতরকার মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকবে উৎসবমুখর পরিবেশ। শিক্ষকরা হবেন সবার অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব, অভিভাবকদের লক্ষ্য শুধু ভালো ফলাফল নয়; লক্ষ্য হবে আদর্শ মানুষ গড়ার। যারা হবে মেধাবী, মানবিক, নৈতিকতাবোধসম্পন্ন ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এক প্রজন্ম। যেখানে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে থাকবে না কোনো ভয়, থাকবে না কোনো শঙ্কা। সম্পর্কের ভিত্তি হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। প্রযুক্তির পরিবর্তনকে আলিঙ্গন এবং প্রযুক্তির মতো উন্নত সংস্করণে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে যোগ্যতার মানদণ্ডে উন্নীত হবে। এরূপ শিক্ষা কেবল মনুষ্যত্ববোধ ও বিবেক জাগ্রত করবে না, বরং শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে কর্মপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদান করবে এবং জীবনের গভীর সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলবে। তাহলেই আগামী প্রজন্মের কাছে এ দেশ থাকবে নিরাপদ। অর্জিত হবে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ। কারণ তরুণরাই গড়বে আগামীর বাংলাদেশ।

 

মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা

–জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ

নিউজটি শেয়ার করুন..

ট্যাগস:-

কেবল নয় ফলাফলমুখী শিক্ষা বিকশিত হোক মানবতার দীক্ষা’- জাহিদুল ইসলাম মিঞা

আপডেট সময়- ০৩:৪৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
ছবি: সমকালীন কাগজ
সম্পাদকীয়…..

‘শিক্ষা ভাবনা’

প্রকৃত মানুষ করার জীবনব্যাপী সব আয়োজনই শিক্ষা। একটি জাতি তথা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম..

প্রকৃত মানুষ করার জীবনব্যাপী সব আয়োজনই শিক্ষা। একটি জাতি তথা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম। কিন্তু শিক্ষা মানবসভ্যতার বিকাশের অন্যতম প্রধান উপাদান হলেও আজ তা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে কেবল জিপিএ ৫, সার্টিফিকেট অর্জন অথবা চাকরি পাওয়ার মধ্যে। কিন্তু পাস করা ও শিক্ষিত হওয়া এক বিষয় নয়। তাই পাসের হার বাড়লেও শিক্ষার গুণগত মান বাড়ছে না। সন্তান কতটা মানবিক জ্ঞানসম্পন্ন হলো, কতটা সুশিক্ষিত হলো সেদিকে আমাদের খেয়াল নেই। সবাই আমরা ব্যস্ত কেবল নিজেদের নিয়ে। অর্থের বিনিময়ে অর্জিত শিক্ষায় দেশপ্রেম, ভদ্রতা, সভ্যতা, মানবিক মূল্যবোধ আজ প্রায় বিলুপ্ত। সমাজে সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলার দৃঢ় মানসিকতাসম্পন্ন মানুষের বড্ড অভাব। তাই আমাদের স্লোগান হোক, ‘কেবল নয় ফলাফলমুখী শিক্ষা, বিকশিত হোক মানবতার দীক্ষা’। এ কথা সত্য, যে শিক্ষা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটায় না, বিবেক জাগ্রত করে না, মনের দিগন্ত প্রসারিত করে না, মানবতাবোধ জাগ্রত করে না তা প্রকৃত শিক্ষা নয়। তাই শিক্ষা হতে হবে মানবিক ও নৈতিকতানির্ভর, যা শিক্ষার্থীর নৈতিক মানদণ্ডকে উন্নত করার পাশাপাশি অন্তরের মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করবে। কারণ নৈতিকতাবিবর্জিত বিদ্বান ব্যক্তি সমাজ সংস্কারে কিংবা সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষায় কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি বিকাশের বিষয়টি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক এ ত্রিভূজ সম্পর্কের ভিত্তির ওপর গড়ে ওঠে।

বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় শিক্ষার সামাজিক প্রভাব কী? সমাজ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে মেধা না অর্থ? সম্মানিত কে অর্থশালী না বিদ্বান? মানুষ ছুটছে অর্থ না বিদ্যার পেছনে? জাতির মেরুদণ্ড কি শিক্ষা না অর্থনীতি? শিক্ষা কি সমাজ গড়ছে না সাম্রাজ্য? আমাদের রোল মডেল কি দুর্নীতিবাজ না সস্তা জনপ্রিয়তার কেউ? শিক্ষার উদ্দেশ্য কি সমস্যার সমাধান না অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো? শিক্ষা কি আমাদের বিবেককে প্রসার ঘটাচ্ছে না অন্ধ অনুকরণের পথে নিয়ে যাচ্ছে? মানুষ কি বিবেকের প্রেরণায় না হুজুগে চলছে? মুক্ত চিন্তার প্রকাশ কোথায়? তরুণ সমাজের লক্ষ্য কী? শিক্ষা কি আজ মানুষকে রোবট বানাচ্ছে? সমাজের আলোচনার বিষয়বস্তু কী? আমরা শিক্ষিত হচ্ছি কুশিক্ষায় না সুশিক্ষায়?

পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্র আজ মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিকতা আর উদারতা প্রায় ম্রিয়মাণ। সমাজ হয়ে পড়েছে দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বার্থপর ও অসহিষ্ণু। দৃষ্টি কেবল স্বার্থের চোখে নিবদ্ধ, মানবিকতার চোখ কার্যত অন্ধ। আমাদের তরুণ সমাজের কাছে আজ সবচেয়ে বড় সংকট অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের। কাকে অনুসরণ করে স্বপ্ন বুনবে, কার চরিত্র অনুকরণ করবে, কার আদর্শে নিজেকে আলোকিত করবে তার কোনো সমাধান নেই। তাই আমরা দেখতে পাই নৈতিকতাবিবর্জিত এ সমাজে বড় অপরাধীরাও বড় ডিগ্রিধারী। অন্তত পুঁথিগত বিদ্যায় তারা বেশ এগিয়ে।

সমাজ জীবনে স্নেহ-প্রীতি-ভালোবাসা প্রায় অবলুপ্ত, মানবতা-নৈতিকতা-উদারতা বিলীন প্রায়, শ্রদ্ধা-বিনয় অদৃশ্য, দুর্নীতি ও ভ্রষ্টাচারে সামাজিক পরিমণ্ডল কলুষিত। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, অপহরণ, ইত্যাদি স্বাভাবিক জীবনকে ছন্দহীন করে তুলেছে। মাদক, কিশোর গ্যাং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, শিশু ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের মতো অপরাধ বেড়ে চলেছে। অপকর্মের এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আমাদের শিশু-ছাত্র-যুবারা দিন দিন মানসিকভাবে আহত হয়ে বিপথগামী হতে চলেছে। এ অবস্থা একটি জাতির জন্য খুবই ভয়ংকর। তাই আজকের তরুণ প্রজন্মকে এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যে প্রজন্ম কেবল প্রাতিষ্ঠানিক ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে না তারা হবে ছোটদের প্রতি স্নেহশীল, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, দেশপ্রেম উজ্জীবিত। তারা অন্যের বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে এবং সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটাবে। সৃজনশীল বিকাশ ছাড়া সমাজকে আলোকিত করা সম্ভব নয়। আলোকিত তরুণরাই হবে আলোকিত ভবিষ্যৎ।

একজন মানুষের চিন্তা, কর্ম, আচরণের প্রভাবের সূতিকাগার হচ্ছে পরিবার। মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, নীতি-নৈতিকতা কিংবা অন্যের মতামত গ্রহণ করার মতো মানসিকতার শিক্ষা পরিবার থেকেই নিতে হয়। শিশুর প্রথম শিক্ষালয় তার পরিবার ও প্রথম শিক্ষক তার মা-বাবা। সেহেতু শিশুকে পারিবারিক মূল্যবোধ, উন্নত চরিত্র, সৎ আদর্শবান নাগরিক ও উন্নত চরিত্রের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রধান হচ্ছে পরিবার। তাই শিশুদের নৈতিকভাবে বিকশিত করতে হলে পরিবারের সদস্যদের নৈতিক গুণাবলিসম্পন্ন হতে হবে। কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ যেমন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত তেমনি ধ্যান-ধারণা ও চিন্তায় এসেছে নানা পরিবর্তন। কিন্তু আমরা যদি নিজেরাই সততা ও নৈতিকতার মূর্ত প্রতীক কিংবা সহানুভূতির প্রতিচ্ছবি না হতে পারি, তবে তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করা কিংবা উন্নত মানুষ গড়া প্রায় অসম্ভব। বাবা-মা রাত ১২টায় ঘরে ফিরে যদি প্রত্যাশা করে তার সন্তান সন্ধ্যায় ঘরে ফিরবে তা কি হয়? বাবা-মা এবং অভিভাবকরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সন্তানদের নৈতিক শিক্ষার পরিবর্তে সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষায় প্রলুব্ধ করছে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। কার সন্তান কত শিক্ষিত হলো, কার পরীক্ষায় কি রেজাল্ট হলো, কে কোথায় পড়ে, পড়া শেষে কী করবে, কার ছেলে বিজ্ঞানী হলো, ইঞ্জিনিয়ার হলো—যা মুখ্য আলোচনার বিষয়বস্তু হলেও নীতি-নৈতিকতা, মানবিকতা, দেশপ্রেম কিংবা সত্যিকারের মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার বিষয়ে কোনো প্রকার আলোকপাত নেই।

শিক্ষকতা মহান পেশা/যারা মানুষের শ্রদ্ধা, আদর্শ ও অনুকরণের প্রেরণা। মহানুভবতা, ন্যায়পরায়ণতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সচ্চরিত্রের মতো মানবীয় গুণাবলির জন্য একজন শিক্ষক সবার অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে ওঠেন। মানবিক মূল্যবোধের এসব গুণাবলি সমাজজীবনে স্থায়ী প্রভাব ফেলে। শিক্ষক হয়ে উঠেন গুরু, ছাত্র হয় শিষ্য। শিক্ষক ছাত্রকে শুধু শিক্ষা নয়, সাথে দেন দীক্ষাও। কারণ শিক্ষকদের দায়িত্ব শুধু পাঠদান, সিলেবাসের প্রশ্ন শেখানো কিংবা পরীক্ষায় পাস করানো নয়। বরং শিক্ষার্থীদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ, মানবিক মানুষ তৈরি, বিবেকবোধ জাগ্রত করা, উন্নত চরিত্র গঠন, যা তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, ছাত্রছাত্রীদেরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিমুখতা, শিক্ষকের বিরুদ্ধাচরণ কিংবা শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন, দলাদলি আজকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক সাধারণ চিত্র। আবার অনেক শিক্ষকও হয়ে পড়েছেন বাণিজ্যমুখী। তাই ক্লাস থেকে কোচিং-প্রাইভেটেই মনোযোগ বেশি। বিদ্যা আজ বাক্সবন্দি, পড়াশোনা কেবল পরীক্ষামুখী। বিদ্যালয়গুলো এখন কেবল পাসের হার, গ্রেড আর নম্বরের পেছনে ছোটাছুটি। কি শেখানো হচ্ছে আর কি শেখানো দরকার তা নিয়ে কোনো আয়োজন নেই; নেই কোনো লাগসই পরিকল্পনা। শিক্ষার্থীরা আজ অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যেমন আপন করে ভাবতে পারছে না তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ বা আকর্ষণের জায়গা হিসেবে নিজেদের মেলে ধরতে পারছে না। পড়ালেখা যেন তাদের কাছে এক ধরনের বাধ্যবাধকতা, সার্টিফিকেট প্রাপ্তিই এর মূল উদ্দেশ্য। ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, পরীক্ষার আগে ও পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপ, হতাশা ও ক্লান্তি এমনভাবে প্রকট হয়ে উঠেছে যে, তারা কখনো কখনো পরীক্ষা কেন্দ্র ভাংচুরের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় লিপ্ত হচ্ছে। এটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার নৈতিক ও মানসিক দুর্বলতার প্রতিফলন। এ কারণেই শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাবোধের স্থানটি আজ অনেকটা বিবর্ণ। ছাত্রসমাজের সামনে আজ অনুকরণীয় অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের বড় অভাব। পাঠদান কেবল পাঠ্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, বইয়ের বাইরে শেখা হচ্ছে না কিছুই। মানসম্মত শিক্ষক না থাকায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশ আজ কেবল অতীতস্মৃতি। সমাজে আজ আদর্শবান ব্যক্তির অভাব, বিত্তবানরাই যেন আদর্শ, আর পেশিশক্তির অধিকারীরাই যেন সমাজপতি। তাই সমাজ আর গড়ে উঠছে না, উঠছে সাম্রাজ্য। চাকরি পাওয়া বা আর্থিকভাবে সচ্ছলতা আনতেই ব্যস্ত মুখস্থনির্ভর আজকের শিক্ষা-সংস্কৃতি। ফলে বিত্ত-বৈভব আর প্রাচুর্যে জীবনকে রাঙিয়ে তোলার প্রবল বাসনায় ব্যক্তি বা সমাজের জন্য মহৎ কিছু করার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের মূল চালিকাশক্তি-সততা ও নিষ্ঠার মতো মানবিক গুণাবলি। আমরা ভুলেই যাচ্ছি জীবন শুধুই একটি ভ্রমণযাত্রা, কোনো প্রতিযোগিতা নয়।

আমরা যদি সত্যিই একটি উন্নত, মানবিক ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, তবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে হতে হবে আনন্দময় ও অংশগ্রহণমূলক। যে শিক্ষা একজন শিক্ষার্থীর নৈতিক মানদণ্ডকে উন্নত করার পাশাপাশি তার ভেতরকার মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকবে উৎসবমুখর পরিবেশ। শিক্ষকরা হবেন সবার অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব, অভিভাবকদের লক্ষ্য শুধু ভালো ফলাফল নয়; লক্ষ্য হবে আদর্শ মানুষ গড়ার। যারা হবে মেধাবী, মানবিক, নৈতিকতাবোধসম্পন্ন ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এক প্রজন্ম। যেখানে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে থাকবে না কোনো ভয়, থাকবে না কোনো শঙ্কা। সম্পর্কের ভিত্তি হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। প্রযুক্তির পরিবর্তনকে আলিঙ্গন এবং প্রযুক্তির মতো উন্নত সংস্করণে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে যোগ্যতার মানদণ্ডে উন্নীত হবে। এরূপ শিক্ষা কেবল মনুষ্যত্ববোধ ও বিবেক জাগ্রত করবে না, বরং শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে কর্মপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদান করবে এবং জীবনের গভীর সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলবে। তাহলেই আগামী প্রজন্মের কাছে এ দেশ থাকবে নিরাপদ। অর্জিত হবে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ। কারণ তরুণরাই গড়বে আগামীর বাংলাদেশ।

 

মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা

–জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ