ঢাকা ০৫:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ:-
মাদকবিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি: কারাবন্দিদের ডোপ টেস্ট কার্যক্রম শুরু না’গঞ্জে প্রতিমা বিসর্জ্জনের সার্বিক প্রস্তুতির স্থান পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক গ্রামীন জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানকল্পে গ্রাম্য আদালত ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করবে: ডিসি ভাঙ্গার দুই ইউনিয়ন ফরিদপুর-৪ আসনে ফিরিয়ে দিতে হাইকোর্টের রুল জারি টেকনাফে র‍্যাব-বিজিবির যৌথ অভিযানে ৪০ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার-১ গাইবান্ধার ঘাঘট নদী থেকে শিক্ষিকার ভাসমান মরদেহ উদ্ধার বাধ্যতামূলক অবসরে পুলিশের ৯ পরিদর্শক কমলগঞ্জে বোনকে উত্যক্তের কারণে গলাকেটে লিটনকে হত্যা গনতন্ত্র রক্ষায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান: মাসুদুজ্জামানের তিন জেলার ডিসি বদলি-পদায়ন নারায়ণগঞ্জে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যা মৌলভীবাজার পিবিআই’র হাজত খানায় ফাঁস লাগানো যুবকের মরদেহ উদ্ধার  জুড়ীতে আসন্ন দুর্গোৎসব উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা নারায়ণগঞ্জ জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত টেকনাফে বিজিবির যৌথ অভিযানে ইয়াবাসহ আটক-২ টংঙ্গীবাড়ীতে সরকারি চিকিৎসা সেবা থাকতেও রোগীরা ঝুকছেন প্রাইভেট ক্লিনিকে টেকনাফে প্রদীপ-লিয়াকতের অন্ধকার সাম্রাজ্য: খুন,ধর্ষণ, ইয়াবাসহ ক্রসফায়ার বাণিজ্য টেকনাফ সীমান্তবর্তী নাফ নদীতে ২ লাখ ৪০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার এবার ডিসি নিজে রক্ত দিয়ে ‘তারুণ্যে উৎসব’ সেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন দেশবরেণ্য লালন সংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন আর নেই সুন্দরবনে ভ্রমণে এসে গোসলে নেমে পর্যটক নিখোঁজ ‘আগামী বর্ষায় নগরীতে জলাবদ্ধতা হবে না’ উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনে এসে নাসিক প্রশাসক রূপগঞ্জে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে অস্ত্র ও মাদকসহ ৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী আটক গাইবান্ধায় জামায়াতের মহাসমাবেশ: সরকার গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচনে লড়াই ঘোষণা মুন্সীগঞ্জের শীর্ষ নৌ ডাকাত শামীম গ্রেপ্তার সাগরপথে মানবপাচার: টেকনাফে বিজিবির অভিযানে পাচারকারী চক্রের ৫ সদস্য আটক শ্রীমঙ্গল পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিদেশী মদসহ আটক-১ উত্তাল বাগেরহাট: ফের তিন দিনের হরতালসহ ৬ দিনের কর্মসূচির ঘোষণা সোনারগাঁয়ে বিএনপি নেতার অবৈধ চুনা কারখানা গুড়িয়ে দিলেন তিতাস কর্তৃপক্ষ টেকনাফে বিজিবির প্রশিক্ষিত কুকুর ‘ডগ জ্যাক’র সহায়তা ইয়াবা জব্দ শ্রীনগরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নারীসহ ৪ জনকে কু*পি*য়ে আহত ঈশ্বরদীতে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিরাপত্তা বিষয়ক মতবিনিয় সভা অনুষ্ঠিত ভাঙ্গায় রেলপথ-মহাসড়ক অবরোধ, চরমদুর্ভোগে ২৫ জেলার জনজীবন সাংবাদিককে নির্যাতনসহ হত্যা চেষ্টা: কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানাকে বরখাস্ত এবারের শারদীয় দূর্গোৎসব হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সেতুবন্ধন: জেলা প্রশাসক উখিয়ায় বিজিবির অভিযানে ২ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার ডাকসুতে ১২টি সম্পাদকীয় পদের ৯টিতেই ছাত্রশিবিরের নিরংকুশ জয় ডাকসুর নির্বাচনে ছাত্রশিবির প্রার্থীর নিরংকুশ বিজয় জুড়ীর বটুলী সীমান্ত শুল্ক স্টেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ শেরপুরে ৮৫ টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে সড়ক ও জনপদ ডাকসু নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকের মৃত্যু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই পালালেন সোনারগাঁ মহিলা আ’লীগ নেত্রী নূর জাহান ফতুল্লায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে নিহত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিলেন ইউএনও রাজনগর ইউএনও’র যোগসাজশে সরকারি বরাদ্দের ৯৪ শতাংশই আত্মসাৎ  না’গঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী শুটার মাসুদ ও ডাকাত আক্তার অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার যে কারনে পাম্পের ম্যানেজার ইকবালকে হাতুড়ি দিয়ে হত্যা যেভাবে খু*ন হলো তালিকাভুক্ত দূর্ধর্ষ কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসী ইভান ফতুল্লার কুখ্যাত কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসী একাধিক মামলার আসামী ইভন খুন টেকনাফে কোস্ট গার্ডের অভিযানে নিত্য পন্য সামগ্রীসহ ১০ পাচারকারী আটক উখিয়ায় র‍্যাবের অভিযানে বিপুল পরিমাণে ইয়াবা ও অর্থসহ ২ নারী পাচারকারী আটক আজ পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ, রাতের আকাশে ঘটবে বিরল দৃশ্য, এবার বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর টাঙ্গাইলের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর মৌলভীবাজারে ৩১৫ পিস ইয়াবা ও নগদ অর্থসহ গ্রেপ্তার-২ নারায়ণগঞ্জে জশনে জুলুসে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন টেকনাফে ২০৫ পিস ইয়াবাসহ তিন পাচারকারী আটক মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নাসিক ১২নং ওয়ার্ড কামান্ড কমিটি গঠন, আহ্বায়ক-মহাব্বত হাসেম মৌলভীবাজারে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে জুলুস মোবারক র‌্যালি সুন্দরবনে কোস্টগার্ডের অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ৪ বনদস্যু আটক নারায়ণগঞ্জে অস্থির নিত্যপণ্যের দাম, স্বস্তি নেই কাঁচা বাজারেও ক্যাসিনো কাণ্ডের আলোচিত রূপগঞ্জের ডন সেলিম প্রধানসহ গ্রেপ্তার-৯ সংসদীয় আসন পুনঃবিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরে মহাসড়কে মানববন্ধন ‘দিদি ৬ মাস আওয়ামী লীগ, ৬ মাস বিএনপি’ ‘নুরাল পাগলা’র দরবারে হামলা, কবর থেকে লাশ তুলে আগুনের ঘটনায় ৩৫’শ জনের বিরুদ্ধে মামলা আজ ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) জাপা কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনার নিন্দা বিএনপির গাইবান্ধায় ফুফা সেজে বিশ্বাস ভঙ্গ, বাঁশঝাড়ে নির্মম সংঘবদ্ধ ধর্ষণ নুরাল পাগলের লাশ তুলে আগুন, দরবারে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ রাজবাড়ীতে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা-সংঘর্ষ- অগ্নিসংযোগে নিহত-১, আহত অর্ধশত এবার গণঅধিকার পরিষদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জাপা’র মহাসচিবের মুন্সীগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপে ভয়াবহ সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ-৮ ফের জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ফরিদগঞ্জে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী সাইফুর রহমানের ১৬তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ নারায়ণগঞ্জে নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের যোগদান গ্রেপ্তারের ১ দিনের মাথায় রূপগঞ্জ থেকে শুটার রিয়াজের বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করলো র‍্যাব-১১ জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা সোনারগাঁয়ে গ্যাসের চুলা জ্বালাতেই বিস্ফোরণ, শিশুসহ একই পরিবারের দগ্ধ-৫ রূপগঞ্জে ডিবি পরিচয়ে অপহৃত ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্ধার, আটক-১ পাথর মেরে মানুষ হত্যার ইতিহাস আর রচনা করতে চাইনা- মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম রাজধানীতে সোহাগ পরিবহন অফিসে হামলা: কুপিয়ে জখম  জাফলংয়ে ঘুরতে গিয়ে রূপগঞ্জের চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী শুটার রিয়াজ গ্রেপ্তার দেশের বাজারে আরও বাড়লো স্বর্ণের দাম না’গঞ্জের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জে একটি তুলার গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড না’গঞ্জের বৃহৎ দিগুবাবুর বাজারে পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে অর্থদন্ড ৮০৪ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ টেকনাফে ৩০ হাজার ইয়াবাসহ তিন পাচারকারী আটক গাইবান্ধায় দুর্গাপূজার প্রতিমায় দুর্বৃত্তদের অগ্নিসংযোগ  পূর্ব সুন্দরবনের দু’সহস্রাধিক জেলেরা বনদস্যু আতঙ্কে বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ঈশ্বরদীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শতবর্ষী অদম্য ফজিলাতুন্নেছার পাশে না’গঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল জেলা প্রশাসকের নাম ভাঙিয়ে অধিগ্রহনের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নাসিকের প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পেলেন আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ‘ডাকসু নির্বাচন’ বাম সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ পিনাকীর এবার সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদে রদবদল, নতুন দায়িত্বে ৬ কর্মকর্তা এবার ৩৮ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে বরখাস্ত হলেন সহকারী কর কমিশনার শরণখোলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনসহ ইউএনও’র উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করেছে হাইকোর্ট নারায়ণগঞ্জে ফ্রিজ বিস্ফোরণ; অগ্নিদগ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে মানবিক ডিসি জাহিদুল খুলনায় রূপসা নদী থেকে ফের সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধার না’গঞ্জে মাথাবিহীন লাশের পরিচয় সনাক্তসহ হত্যাকান্ডে জড়িত গ্রেপ্তার-২

কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই ‘আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময়- ০১:৩৫:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪ ৪০৩ বার পড়া হয়েছে
ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায় , কলকাতা।।
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই’ আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক । যেখানে বাঙালি সেখানেই আড্ডা । বাঙালি আছে ,আড্ডা নেই এটা হতেই পারে না ।এই আড্ডা চলছে যুগযুগ ধরে । কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (চরিত্রহীন খ্যাত), শবৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (বিদূষক খ্যাত) , দামোদর মুখোপাধ্যায় , কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রসালো আড্ডা জমিয়ে রাখতেন।বাঙালির এই চিরাচরিত আড্ডাকেই আজকের পাতায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন — ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায়
 বাঙালি আছে, আড্ডা নেই! এটা কোনদিন ভাবাই যায় না। আড্ডার পীঠস্থান অখণ্ড বাংলা ছিল,আছে আর থাকবেও। আড্ডার সঙ্গে বাড়ি,অফিসের রক গুলির কিন্তু গভীর,ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আর আছে ক্লাব,রেস্তোঁরা,হোটেল, বাড়ি ও পার্ক বা ময়দান। শুধু কি তাই, আড্ডা পাগল বাঙালি লঞ্চ,স্টিমার রেলেও আড্ডার আসর বসিয়ে থাকে। মাঠে,ময়দানে আড্ডায় অনেক সময় বেগুনি,ফুলুরি,মসলা মুড়ি অনবদ্য।চায়ের কাপে চুমুক চলে ঘণ্টার ব্যবধানে।
বাঙালি মাত্রই আড্ডাপ্রিয়। এই আড্ডা তুলনাহীন। পৃথিবীর কোনো দেশের, জাতির মানুষের সাথে এই আড্ডার তুলনা মেলে না। বুদ্ধদেব বসুর ভাষায়, বাঙালির আড্ডার মেজাজ নেই অন্য কোনো দেশে, কিংবা থাকলেও যথোচিত পরিবেশ নেই। অন্যান্য দেশের লোক বক্তৃতা দেয়, রসিকতা করে, তর্ক চালায়, ফূর্তি করে রাত কাটিয়ে দেয়, কিন্তু আড্ডা দেয় না। আমাদের ঋতুগুলো যেমন কবিতা জাগায়, তেমনই আড্ডাও জমায়। আমাদের চৈত্রসন্ধ্যা, বর্ষার সন্ধ্যা, শরতের জ্যোৎস্না-ঢালা রাত্রি, শীতের মধুর উজ্জ্বল সকাল- সবই আড্ডার নীরব ঘণ্টা বাজিয়ে যায়, কেউ শুনতে পায়, কেউ পায় না।
বাঙালির মতো আড্ডার মেজাজ আর কোনো জাতির মানুষের মাঝে খুঁজে পাওয়া দুস্কর; I
তাই এ ভূ-সংসারে এমন কোনো বাঙালি পাওয়া যাবে না যে জীবনে একবারও আড্ডা দেয়নি। বাঙালির আড্ডার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বাংলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের আড্ডা নিয়ে কত মজার কাহিনী চালু রয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় দুই বাংলায় বেশ কয়েকটি জমাট আড্ডার ঠেক ছিল। বাংলার বহু জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন সেসব আড্ডার মধ্যমণি। সেই আড্ডাগুলো ছিল প্রাণোচ্ছ্বল। দুই বাংলার এমন কয়েকটি বিস্মৃত আড্ডার স্থান নিয়ে আজকের এই নিবন্ধ।
      চৌরঙ্গীর কফি হাউজ
চল্লিশের দশকে বাংলার বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিকদের এক জমজমাট আড্ডার আসর ছিল চৌরঙ্গীর কফি হাউজ। ১৯৪৫-৪৬ সালে এই আড্ডায় নিত্য যাতায়াত ছিল সত্যজিৎ রায়, কমলকুমার মজুমদার, চঞ্চল কুমার চট্টোপাধ্যায় ও রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো ব্যক্তিদের। সত্যজিতের অনবদ্য চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালি’র ভাবনাও এই আড্ডা থেকেই শুরু।
রাধাপ্রসাদ গুপ্তের এক লেখা থেকে জানা যায়, চৌরঙ্গি কফি হাউজের ছোট ঘরে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন চরিত্রের ও পেশার লোকজনের সমাগম হতো। সত্যজিৎ, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, চিদানন্দ দাশগুপ্তরা সেসব আড্ডায় ইউরোপিয়ান চলচ্চিত্র নিয়ে বিদগ্ধ আলোচনা করতেন।
রায়বাড়ির আড্ডা
কলকাতার অনেক বনেদি বাড়ি বা বিখ্যাত ব্যক্তির বাড়ির বৈঠকখানায় বেশ জমাট আড্ডা বসতো। ঐ রকমই একটি আড্ডার আসর ছিল লেক অ্যাভিনিউ, ৩ নম্বর লেক টেম্পল রোড এবং ১/১, বিশপ লেফ্রয় রোডে তিন তলার পূর্বদিকের এক ফ্ল্যাটে। রায় পরিবারের এই আড্ডা প্রায় তিন প্রজন্মের। এই আড্ডার প্রাণপুরুষ বিংশ শতাব্দীর বাংলার প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় ও তার বন্ধুদের ‘মন্ডা ক্লাব’ আজও কিংবদন্তী হয়ে আছে।
বিশপ লেফ্রয় রোডে অবস্থিত রায় বাড়িতে বসতো আড্ডার আসর।
শুধু অবান্তর কৌতুক ছড়াই নয়, এই আড্ডায় অনেক গুরুগম্ভীর আলোচনাও হতো। মন্ডা ক্লাবের একেকজন সভ্য ছিলেন নামকরা ব্যক্তিত্ব। সুকুমার রায়ের মৃত্যুতে এই আড্ডা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সুকুমার রায়ের সুযোগ্য পুত্র সত্যজিৎ রায় আবার নতুন করে আয়োজন করেন সেই আড্ডার। রবিবার সকালে রায়বাড়ির এই আড্ডায় উপস্থিত থাকতেন বিভিন্ন পেশার মানুষজন। কমলকুমার মজুমদার, রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো নামকরা লেখক ছাড়াও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বরুণ চন্দ, দীপঙ্কর দে, ধৃতিমান চ্যাটার্জিসহ অনেক নামকরা অভিনেতাই হাজির হতেন এই সকালের আড্ডায়। সিনেমা সংক্রান্ত আলোচনা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো এই আড্ডায়। সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায় এখনও এ আড্ডা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন।
কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজের আড্ডা
কলকাতা কলেজ স্ট্রিটের আলবার্ট হল একসময় ভারতীয় কফিবোর্ডের মালিকানাধীন ছিল। পরবর্তীকালে একে তারা কফি হাউজে রূপান্তর করেন। কবি-লেখকে সর্বদা গমগম করতো কফি হাউসের বিশাল হলঘর, তিলধারণের জায়গা থাকতো না।
সত্তরের শুরুর দিকেই এই কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজে কবি-সাহিত্যিকদের তুখোড় আড্ডা জমতো। সে সময়ে প্রতি সন্ধ্যায় কবি আর গল্প লেখকদের মিলনমেলায় কফি হাউজে দাঁড়ানোর মতো জায়গা থাকতো না। কবিদের আড্ডার মধ্যমণি হয়ে থাকতেন পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল। তার সতীর্থদের মধ্যে ছিলেন নিশীথ ভড়, সমরেন্দ্র দাস, অরণি বসু, অমিতাভ গুপ্ত, তুষার চৌধুরী মতো কবিরা। আর গল্পকারদের আড্ডার প্রধান ছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। তার বিষয় উপস্থাপন, কথা বলার ভঙ্গি শ্রোতাদের চুম্বকের মতো টানতো।
কবিদের মধ্যে আরও আসতেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কৃত্তিবাস পত্রিকার কবিদের দলবল নিয়ে উপস্থিত হতেন। সত্যজিৎ রায়ের গল্পের কাহিনীকার হিসেবে, আধুনিক বাংলা কবিতার তুমুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘কৃত্তিবাস’ আন্দোলনের নেতা এবং লেখক হিসেবে তখন সুনীল কফি হাউজের মেগাস্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এছাড়া কবিতা সিংহের মতো ক্ষুরধার নারীব্যক্তিত্ব সেসব আড্ডাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেন।
আমার বাবা যখন কলকাতার হিন্দু হোস্টেলে থাকতেন পড়াশোনার জন্য।তখন নিয়মিত কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে যেতেন। খুব কাছে এই কফি হাউস। সেখানে তখন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত আসতেন। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে পর পর অভিনয় করে বেশ নামডাক হয়েছে। তিনি আলাদা করে বেশ বড়সর আড্ডার আসর বসিয়ে নিতেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অনেক কবি, সাহিত্যিক শরণার্থী হিসেবে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর সে সময় এই কফি হাউজ হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের আর এক শিবির, অন্যরকম এক ঘাঁটি। আল মাহমুদ, বেলাল চৌধুরি, আব্দুল গাফফার চৌধুরী প্রমুখ লেখক এই কফি হাউজে সে সময় নিত্য যাতায়াত করতেন। কফি হাউজের সেই আড্ডা আজ আর আগের মতো না থাকলেও তার রেশ একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে তা বলার উপায় নেই। এখনও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের ভিড়ে কফি হাউজ মুখরিত থাকে। কফি হাউজের আড্ডার সেই আবেগ ছড়িয়ে দিয়েছেন মান্না দে তার বিখ্যাত ‘কফি হাউজ’ গানটিতে,
“কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই”।
বুধ সন্ধ্যা
আড্ডা দিতে খুব ভালবাসতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ তার সমসাময়িক সকল লেখক। সেই লক্ষ্যেই ১৯৮০ সালের দিকে সাগরময় ঘোষ, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ‘বুধ সন্ধ্যা’। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে এই আড্ডা বসতো না। সপ্তাহে প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় স্বনামধন্য সব সাহিত্যিক তাদের পরিচিত কারো বাড়ির বৈঠকখানায় জড়ো হয়ে ভাবের দেওয়া-নেওয়া, আলাপ-আলোচনায় মেতে উঠতেন।
এই আড্ডায় কে না ছিলেন? শঙ্খ ঘোষ, সুবোধ সরকার, মল্লিকা সেনগুপ্ত, জয় গোস্বামী, আবুল বাশার, আফসার আহমেদ, তারাপদ রায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেনের মতো বিখ্যাত সাহিত্যিকরা এ আড্ডার নিয়মিত সদস্য ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, অসীম সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, সৈয়দ আল ফারুক, তারিক সুজাতসহ বাংলাদেশের অনেক কবি-সাহিত্যিকের আনাগোনা ছিল এই আড্ডায়।
এই আড্ডাকে তারা নিজেদের চিন্তা-ভাবনার আদান-প্রদানের উৎকৃষ্ট স্থান বলে মনে করতেন। এই আড্ডায় পাঠ করা হতো সদ্য লেখা কোনো কবিতা। চলতো প্রকাশিত কোনো লেখার উপর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। এছাড়া আড্ডায় কেউ স্বরচিত গান আবার কেউ তারা ভাল লাগা কোনো গানের কলি খালি গলায় পরিবেশন করে আড্ডাকে জমিয়ে তুলতেন।
পুরনো ঢাকার বিউটি বোর্ডিং
চল্লিশের দশকে পুরনো ঢাকার ১নং শ্রীশ উনদাস লেনে অবস্থিত বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডা বেশ সুখ্যাতি লাভ করে। এই দোতলা পুরাতন বাড়ির সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির এক অনন্য ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এই বোর্ডিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গায়ক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের এক মিলনমেলা ছিল এই বিউটি বোর্ডিং।

নিউজটি শেয়ার করুন..

ট্যাগস:-

কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই ‘আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক’

আপডেট সময়- ০১:৩৫:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪
ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায় , কলকাতা।।
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই’ আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক । যেখানে বাঙালি সেখানেই আড্ডা । বাঙালি আছে ,আড্ডা নেই এটা হতেই পারে না ।এই আড্ডা চলছে যুগযুগ ধরে । কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (চরিত্রহীন খ্যাত), শবৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (বিদূষক খ্যাত) , দামোদর মুখোপাধ্যায় , কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রসালো আড্ডা জমিয়ে রাখতেন।বাঙালির এই চিরাচরিত আড্ডাকেই আজকের পাতায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন — ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায়
 বাঙালি আছে, আড্ডা নেই! এটা কোনদিন ভাবাই যায় না। আড্ডার পীঠস্থান অখণ্ড বাংলা ছিল,আছে আর থাকবেও। আড্ডার সঙ্গে বাড়ি,অফিসের রক গুলির কিন্তু গভীর,ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আর আছে ক্লাব,রেস্তোঁরা,হোটেল, বাড়ি ও পার্ক বা ময়দান। শুধু কি তাই, আড্ডা পাগল বাঙালি লঞ্চ,স্টিমার রেলেও আড্ডার আসর বসিয়ে থাকে। মাঠে,ময়দানে আড্ডায় অনেক সময় বেগুনি,ফুলুরি,মসলা মুড়ি অনবদ্য।চায়ের কাপে চুমুক চলে ঘণ্টার ব্যবধানে।
বাঙালি মাত্রই আড্ডাপ্রিয়। এই আড্ডা তুলনাহীন। পৃথিবীর কোনো দেশের, জাতির মানুষের সাথে এই আড্ডার তুলনা মেলে না। বুদ্ধদেব বসুর ভাষায়, বাঙালির আড্ডার মেজাজ নেই অন্য কোনো দেশে, কিংবা থাকলেও যথোচিত পরিবেশ নেই। অন্যান্য দেশের লোক বক্তৃতা দেয়, রসিকতা করে, তর্ক চালায়, ফূর্তি করে রাত কাটিয়ে দেয়, কিন্তু আড্ডা দেয় না। আমাদের ঋতুগুলো যেমন কবিতা জাগায়, তেমনই আড্ডাও জমায়। আমাদের চৈত্রসন্ধ্যা, বর্ষার সন্ধ্যা, শরতের জ্যোৎস্না-ঢালা রাত্রি, শীতের মধুর উজ্জ্বল সকাল- সবই আড্ডার নীরব ঘণ্টা বাজিয়ে যায়, কেউ শুনতে পায়, কেউ পায় না।
বাঙালির মতো আড্ডার মেজাজ আর কোনো জাতির মানুষের মাঝে খুঁজে পাওয়া দুস্কর; I
তাই এ ভূ-সংসারে এমন কোনো বাঙালি পাওয়া যাবে না যে জীবনে একবারও আড্ডা দেয়নি। বাঙালির আড্ডার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বাংলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের আড্ডা নিয়ে কত মজার কাহিনী চালু রয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় দুই বাংলায় বেশ কয়েকটি জমাট আড্ডার ঠেক ছিল। বাংলার বহু জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন সেসব আড্ডার মধ্যমণি। সেই আড্ডাগুলো ছিল প্রাণোচ্ছ্বল। দুই বাংলার এমন কয়েকটি বিস্মৃত আড্ডার স্থান নিয়ে আজকের এই নিবন্ধ।
      চৌরঙ্গীর কফি হাউজ
চল্লিশের দশকে বাংলার বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিকদের এক জমজমাট আড্ডার আসর ছিল চৌরঙ্গীর কফি হাউজ। ১৯৪৫-৪৬ সালে এই আড্ডায় নিত্য যাতায়াত ছিল সত্যজিৎ রায়, কমলকুমার মজুমদার, চঞ্চল কুমার চট্টোপাধ্যায় ও রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো ব্যক্তিদের। সত্যজিতের অনবদ্য চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালি’র ভাবনাও এই আড্ডা থেকেই শুরু।
রাধাপ্রসাদ গুপ্তের এক লেখা থেকে জানা যায়, চৌরঙ্গি কফি হাউজের ছোট ঘরে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন চরিত্রের ও পেশার লোকজনের সমাগম হতো। সত্যজিৎ, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, চিদানন্দ দাশগুপ্তরা সেসব আড্ডায় ইউরোপিয়ান চলচ্চিত্র নিয়ে বিদগ্ধ আলোচনা করতেন।
রায়বাড়ির আড্ডা
কলকাতার অনেক বনেদি বাড়ি বা বিখ্যাত ব্যক্তির বাড়ির বৈঠকখানায় বেশ জমাট আড্ডা বসতো। ঐ রকমই একটি আড্ডার আসর ছিল লেক অ্যাভিনিউ, ৩ নম্বর লেক টেম্পল রোড এবং ১/১, বিশপ লেফ্রয় রোডে তিন তলার পূর্বদিকের এক ফ্ল্যাটে। রায় পরিবারের এই আড্ডা প্রায় তিন প্রজন্মের। এই আড্ডার প্রাণপুরুষ বিংশ শতাব্দীর বাংলার প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় ও তার বন্ধুদের ‘মন্ডা ক্লাব’ আজও কিংবদন্তী হয়ে আছে।
বিশপ লেফ্রয় রোডে অবস্থিত রায় বাড়িতে বসতো আড্ডার আসর।
শুধু অবান্তর কৌতুক ছড়াই নয়, এই আড্ডায় অনেক গুরুগম্ভীর আলোচনাও হতো। মন্ডা ক্লাবের একেকজন সভ্য ছিলেন নামকরা ব্যক্তিত্ব। সুকুমার রায়ের মৃত্যুতে এই আড্ডা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সুকুমার রায়ের সুযোগ্য পুত্র সত্যজিৎ রায় আবার নতুন করে আয়োজন করেন সেই আড্ডার। রবিবার সকালে রায়বাড়ির এই আড্ডায় উপস্থিত থাকতেন বিভিন্ন পেশার মানুষজন। কমলকুমার মজুমদার, রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো নামকরা লেখক ছাড়াও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বরুণ চন্দ, দীপঙ্কর দে, ধৃতিমান চ্যাটার্জিসহ অনেক নামকরা অভিনেতাই হাজির হতেন এই সকালের আড্ডায়। সিনেমা সংক্রান্ত আলোচনা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো এই আড্ডায়। সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায় এখনও এ আড্ডা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন।
কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজের আড্ডা
কলকাতা কলেজ স্ট্রিটের আলবার্ট হল একসময় ভারতীয় কফিবোর্ডের মালিকানাধীন ছিল। পরবর্তীকালে একে তারা কফি হাউজে রূপান্তর করেন। কবি-লেখকে সর্বদা গমগম করতো কফি হাউসের বিশাল হলঘর, তিলধারণের জায়গা থাকতো না।
সত্তরের শুরুর দিকেই এই কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজে কবি-সাহিত্যিকদের তুখোড় আড্ডা জমতো। সে সময়ে প্রতি সন্ধ্যায় কবি আর গল্প লেখকদের মিলনমেলায় কফি হাউজে দাঁড়ানোর মতো জায়গা থাকতো না। কবিদের আড্ডার মধ্যমণি হয়ে থাকতেন পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল। তার সতীর্থদের মধ্যে ছিলেন নিশীথ ভড়, সমরেন্দ্র দাস, অরণি বসু, অমিতাভ গুপ্ত, তুষার চৌধুরী মতো কবিরা। আর গল্পকারদের আড্ডার প্রধান ছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। তার বিষয় উপস্থাপন, কথা বলার ভঙ্গি শ্রোতাদের চুম্বকের মতো টানতো।
কবিদের মধ্যে আরও আসতেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কৃত্তিবাস পত্রিকার কবিদের দলবল নিয়ে উপস্থিত হতেন। সত্যজিৎ রায়ের গল্পের কাহিনীকার হিসেবে, আধুনিক বাংলা কবিতার তুমুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘কৃত্তিবাস’ আন্দোলনের নেতা এবং লেখক হিসেবে তখন সুনীল কফি হাউজের মেগাস্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এছাড়া কবিতা সিংহের মতো ক্ষুরধার নারীব্যক্তিত্ব সেসব আড্ডাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেন।
আমার বাবা যখন কলকাতার হিন্দু হোস্টেলে থাকতেন পড়াশোনার জন্য।তখন নিয়মিত কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে যেতেন। খুব কাছে এই কফি হাউস। সেখানে তখন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত আসতেন। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে পর পর অভিনয় করে বেশ নামডাক হয়েছে। তিনি আলাদা করে বেশ বড়সর আড্ডার আসর বসিয়ে নিতেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অনেক কবি, সাহিত্যিক শরণার্থী হিসেবে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর সে সময় এই কফি হাউজ হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের আর এক শিবির, অন্যরকম এক ঘাঁটি। আল মাহমুদ, বেলাল চৌধুরি, আব্দুল গাফফার চৌধুরী প্রমুখ লেখক এই কফি হাউজে সে সময় নিত্য যাতায়াত করতেন। কফি হাউজের সেই আড্ডা আজ আর আগের মতো না থাকলেও তার রেশ একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে তা বলার উপায় নেই। এখনও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের ভিড়ে কফি হাউজ মুখরিত থাকে। কফি হাউজের আড্ডার সেই আবেগ ছড়িয়ে দিয়েছেন মান্না দে তার বিখ্যাত ‘কফি হাউজ’ গানটিতে,
“কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই”।
বুধ সন্ধ্যা
আড্ডা দিতে খুব ভালবাসতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ তার সমসাময়িক সকল লেখক। সেই লক্ষ্যেই ১৯৮০ সালের দিকে সাগরময় ঘোষ, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ‘বুধ সন্ধ্যা’। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে এই আড্ডা বসতো না। সপ্তাহে প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় স্বনামধন্য সব সাহিত্যিক তাদের পরিচিত কারো বাড়ির বৈঠকখানায় জড়ো হয়ে ভাবের দেওয়া-নেওয়া, আলাপ-আলোচনায় মেতে উঠতেন।
এই আড্ডায় কে না ছিলেন? শঙ্খ ঘোষ, সুবোধ সরকার, মল্লিকা সেনগুপ্ত, জয় গোস্বামী, আবুল বাশার, আফসার আহমেদ, তারাপদ রায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেনের মতো বিখ্যাত সাহিত্যিকরা এ আড্ডার নিয়মিত সদস্য ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, অসীম সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, সৈয়দ আল ফারুক, তারিক সুজাতসহ বাংলাদেশের অনেক কবি-সাহিত্যিকের আনাগোনা ছিল এই আড্ডায়।
এই আড্ডাকে তারা নিজেদের চিন্তা-ভাবনার আদান-প্রদানের উৎকৃষ্ট স্থান বলে মনে করতেন। এই আড্ডায় পাঠ করা হতো সদ্য লেখা কোনো কবিতা। চলতো প্রকাশিত কোনো লেখার উপর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। এছাড়া আড্ডায় কেউ স্বরচিত গান আবার কেউ তারা ভাল লাগা কোনো গানের কলি খালি গলায় পরিবেশন করে আড্ডাকে জমিয়ে তুলতেন।
পুরনো ঢাকার বিউটি বোর্ডিং
চল্লিশের দশকে পুরনো ঢাকার ১নং শ্রীশ উনদাস লেনে অবস্থিত বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডা বেশ সুখ্যাতি লাভ করে। এই দোতলা পুরাতন বাড়ির সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির এক অনন্য ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এই বোর্ডিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গায়ক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের এক মিলনমেলা ছিল এই বিউটি বোর্ডিং।