সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, আইন-আদালত, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, দেশজুড়ে, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পুলিশ
মুন্সীগঞ্জে সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মা ইলিশ শিকারের মহোৎসব
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৫:৫৯:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৭ বার পড়া হয়েছে
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।।
মা ইলিশ ও ইলিশের ডিম সংরক্ষণে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মুন্সীগঞ্জের পদ্মা মেঘনা নদীতে জাল ফেলে ইলিশ মাছ শিকার করছে জেলেরা।তারা সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনে ও রাতে মা ইলিশ শিকারের মহোৎসবে মেতেছে।মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসনের অভিযান চলমান থাকলেও তারা নদী থেকে ফিরে গেলেই ইলিশ নিধনে মেতে উঠে অসাধু জেলেসহ একটি চক্র।ভোর রাতে,দুপুরের পর ও সন্ধ্যার পর থেকে-এই তিন সময়ে অসাধু জেলেরা মা-ইলিশ শিকারে মেতে উঠে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে নদীতে জেলেদের মাছ ধরার কর্মব্যস্ততা পাশাপাশি নদীর তীরে দুর দূরান্ত থেকে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতাদের আনাগোনা দেখা গেছে মেঘনা নদীর তীরে ইসমানির চর,এবং পদ্মা নদীর সদরের বাংলাবাজার,টংঙ্গীবাড়ীর দিঘিরপাড় ও হাসাইল এলাকা,লৌহজং উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী এলাকার কুমারভোগ,সিংহেরহাটি,বেজগাঁও, শামুরবাড়ি ওস্তাকারপাড়া এবং শ্রীনগরের বাঘরা ও ভাগ্যকুল এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিদিন কয়েকদফা বসে ইলিশ বিক্রির ভাসমান হাট।জেলেরা ইলিশ ধরার পর এসব এলাকার নদীর তীরেই ভাসমান হাটে বিক্রি করছে।আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্যে হাট বসিয়ে বিক্রি হচ্ছে মা ইলিশ।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,সাধারণত সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রশাসনের অভিযান বেশি থাকে।দুপুর ১২টার পর নদী থেকে অভিযানকারী দল ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর এ সুযোগে ইলিশ শিকারে নামে জেলেরা।অথচ মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ রাখতে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে ইলিশ আহরণ,পরিবহণ ও বাজার জাতকরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও তা মানছে না অসাধু জেলেরা।নদীতে ঘুরে জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য দেখে বোঝার উপায় নেই,দেশে মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার মৌসম চলছে।নিষিদ্ধ এই সময়টাকে জেলেরা ইলিশ উৎসব মনে করছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়,মেঘনা নদীর গজারিয়া ঘাট সংলগ্ন মাঝ নদী,সদরের চরঝাপটা,কালিরচর, কাউয়াদি এবং বকচর এলাকা সংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেরা ইলিশ শিকার করছে।এছাড়া পদ্মা সেতুর উজানে লৌহজংয়ের মাওয়ার যশলদিয়া, লৌহজং-টংঙ্গীবাড়ী পয়েন্টে ও সিডারচর পয়েন্টের বিভিন্ন এলাকায় পদ্মা নদীতে শতাধিক নৌকা নিয়ে দিনরাত অবাধে মা ইলিশ নিধন চলছে।এছাড়া টংঙ্গীবাড়ীর দিঘিরপাড় ও হাসাইল এলাকা সংলগ্ন পদ্মা নদীতেও ট্রলার দিয়ে ইলিশ নিধন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।নাম প্রকাশে এক ক্রেতা বলেন,গত শনিবার সদরের বাংলাবাজার ইউনিয়ন ঘেঁষা পদ্মা নদী তীর থেকে ইলিশ মাছ কিনে এনেছি।ওইখানে মেঘনা ও পদ্মা নদী থেকে ইলিশ ধরে জেলেরা বিক্রি করতে নিয়ে আসছেন। দাম মোটামুটি কম হওয়ায় অনেক ক্রেতা দুর দুরান্ত থেকে বাংলাবাজার গিয়ে মাছ কিনে নিচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়,লোকমান ওস্তাকার এবং রাজিব খানের নেতৃত্বে শামুরবাড়ি গ্রামে এসব ইলিশ প্রকাশ্যে বিক্রি করছে স্বপন ওস্তাকার,তপন ওস্তাকার,কাদির ওস্তাকার,সফি ওস্তাকার,দীপু ওস্তাকার,দীলু ওস্তাকার,রফিক ও মালেক। মারৈলের সেন্টু সরদার,আবুল ঢালী,শামসুদ্দিন ঢালী,কুদ্দুস সরদার এসব ইলিশ বিক্রি করছে। সিডার চরের জসিম মল্লিকের মাধ্যমে নৌপুলিশকে নৌকাপ্রতি ৩ হাজার টাকা প্রতিদিন দিয়ে নদীর মাছ শিকার করছে কলমা ইউনিয়নের মারৈল গ্রামের বানু চকিদার,সোনামিয়া ঢালী,দুলাল শেখ,দানেশ বেপারী,আজগর মাতবর,সোহাগ মাতবর,কাদির সরদার,জাকির মাদবর,জলিল সরদার,জব্বার সইয়াল,নোয়াব আালী খাঁ,লিটন সৈয়াল,শাকিল খাঁ, কামাল চোকদার ও তাদেরে সাঙ্গপাঙ্গ।সূত্র আরও জানায়,চাঁদার টাকা আদায় করে জসিম মল্লিকের কাছে নিয়ে দিচ্ছে শামুরবাড়ি গ্রামের ইদ্রিস চকিদার ও ডহুরি মরৈল এলাকার সোনা মিয়া ঢালী ও আমির সরদার।স্পিডবোটের ঘাটে জেলেদের নিজস্ব লোকও বসিয়ে রাখা হয়েছে।তারা অভিযানের তথ্য সরবরাহ করছে জেলেদের কাছে।
এদিকে পদ্মায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযান নিয়ে এলাকাবাসীর বিস্তর অভিযোগ।তবে প্রশাসনের ভাষ্য,উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালিয়ে জাল জব্দ ও জেলেদের জরিমানা করা হচ্ছে।এ বিষয়ে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন,পদ্মা নদীতে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জাল জব্দ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেলেদের জরিমানা করা হচ্ছে।মা ইলিশ নিধনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে মন্সীগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ টি এম তৌফিক মাহমুদ বলেন,এ বছর ইলিশ প্রজনন মৌসমে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলায় ইলিশ শিকারে জড়িত ৯ হাজার জেলের মনে ৩ হাজার জেলেকে পরিবার প্রতি ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।তারা নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ শিকার না করে এবং পরিবার চলতে পারে।
তিনি বলেন,তারপরও কতিপয় জেলে ইলিশ শিকার করছে বলে শুনেছি।তাই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার করতে না পারে তা প্রতিরোধে মৎস্য কর্মকর্তা,প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে পুলিশ, কোস্টগার্ড,আনসার,নৌ-পুলিশ প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে।