গণআন্দোলনে প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণকারী একাধিক মামলার আসামী হকার আসাদ গ্রেপ্তার
- আপডেট সময়- ০৫:১১:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪ ২৬ বার পড়া হয়েছে
অনলাইন ডেস্ক।।
নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রানকেন্দ্র চাষাড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নাশকতার উস্কানিদাতা, প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী হকার নেতা ও দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ আসাদুল ইসলাম আসাদকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১ এর একটি চৌকস অভিযানিক দল।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গাউছিয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে র্যাব-১১ এর ব্যাটেলিয়ানের মিডিয়া কর্মকর্তা এএসপি সনদ বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গ্রেপ্তারকৃত হকার নেতা আসাদুল ইসলাম আসাদ সোনারগাঁ উপজেলার বুরুমদী এলাকার মৃত সামসুদ্দিনের ছেলে।
আসামি আসাদ নারায়ণগঞ্জ মহানগর হকার সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর হকারলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও হত্যা সহ বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে র্যাব সূত্র জানিয়েছে।
র্যাব-১১ এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, হকার নেতা আসাদ তার সহযোগী হকারদের নিয়ে গত ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শহরের প্রানকেন্দ্র চাষাঢ়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র, পিস্তল, রামদা, চাপাতি, হকিস্টিক, চাইনিজ কুড়াল নিয়ে হামলা চালিয়েছে। এছাড়া তার উস্কানি ও মদদে সহযোগী অন্য হকাররা বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, বাস স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেয়ে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। তাদের এসকল সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ফলে সাধারণ জনগণ গুরুতর আহত ও গুলিবিদ্ধ সহ হত্যার শিকার হয়।
র্যাব-১১, আরও জানায়, গত কয়েক বছর আগেও এই হকার নেতা আসাদ সড়কের পাশে ফুটপাতে হকারি করতে দেখা গেলেও অল্প সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা করে রাতারাতি হকারদের নেতা বনে যায়।এর পরর্তীতে সে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের হকার সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর হকারলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,
২০১৮ সালে ততকালীন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসনের ফুটপাত হকারমুক্ত করার যৌথ উদ্যোগের বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে আলোচনায় উঠে হকার নেতা আসাদ। ওই বছরের ১৬ জানুয়ারি হকারমুক্ত সড়ক ইস্যুকে কেন্দ্র করে তার সহযোগী সন্ত্রাসী বাহিনী হকারদের সাথে নিয়ে হামলা চালিয়ে সাধারণ জনগণ, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আহত করে।
এর পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৯ মার্চ ফুটপাতে অবৈধ হকার বসার দাবিতে তারই নেতৃত্বে বিক্ষোভ করে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে যানবাহন ভাঙচুর করে হকাররা। বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে তাদের তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র লুটের চেষ্টা, যানবাহন ভাঙচুর ও সড়কে আগুন দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয় এই আসাদ।
ওই বছরের ১৪ অক্টোবর ফুটপাতে দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে দুই হকারের তর্কের জেরে খুন হয় ১৮ বছর বয়সি তরুণ জোবায়ের হোসেন। অভিযোগ উঠে তাকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় হকার নেতা আসাদের নেতৃত্বাধীন, এসময় ওই মামলার আসামি করা হয় আসাদকে।
পরবর্তীতে নিহত হকার যুবক জুবায়েরের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হকার নেতা আসাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনা নিহত হকার জুবায়েরের মা মুক্তা বেগম ফের একটি অভিযোগ দায়ের করে আসাদের বিরুদ্ধে।
র্যাব-১১,আরও জানায়, নিজেকে হকার নেতা পরিচয় দেওয়া আসাদুল ইসলাম আসাদ নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া এলাকায় মূলত চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। সড়কের ফুটপাতে যে কোনো হকার বসতে হলে আসাদকে প্রতিদিন নিদিষ্ট পরিমাণে চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদার একটি অংশ সখ্যতা বজায় রাখার সুবিধার্থে তার গডফাদার রাজনৈতিক নেতাদের কাছে পৌঁছে দিতো আসাদ।গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসাদ এসব অপকর্ম ও অভিযোগের কথা স্বীকার করেছে বলেও র্যাব সুত্র জানিয়েছে।পরবর্তী তাকে পুলিশে সোপর্দ করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।