সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, উপজেলা প্রশাসন, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, দেশজুড়ে, নারী ও শিশু, পূর্বাভাস, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পুলিশ
সিজুর মৃত্যু রহস্যে উত্তাল গাইবান্ধা: স্বজনদের দাবি, “পরিকল্পিত হত্যা”

প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৪:২৯:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫ ৪২ বার পড়া হয়েছে

ফেরদৌস আলম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি।।
গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মহসিন আলীকে ছুরিকাঘাতের পর পুকুরে ডুবে মৃত্যুর ঘটনায় যুবক সিজু মিয়ার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের দাবি, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং “পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড”। শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে সিজুর স্বজন ও স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে গাইবান্ধা জেলা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন ।
ঘটনায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলমের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে, যা স্থানীয় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের জন্ম দিয়েছে ।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাত ৮:৪০ মিনিটে সিজু মোবাইল ফোন হারানোর বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে সাঘাটা থানায় যান। পুলিশের বর্ণনামতে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় তার জিডি নথিবদ্ধ করা হয়নি। পরে তাকে ৫০ টাকা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর সিজু ছুরি হাতে থানায় ফিরে আসেন এবং দায়িত্বরত কনস্টেবল সেরাজুলের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় তিনি এএসআই মহসিন আলীর মাথা ও হাতে ছুরিকাঘাত করেন। হামলার পর সিজু দৌড়ে থানার পেছনে অবস্থিত পাইলট স্কুলের পুকুরে ঝাঁপ দেন। রাতের অন্ধকারে উদ্ধার কাজ ব্যর্থ হওয়ায় পরদিন শুক্রবার সকালে রংপুর থেকে আনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদের সহায়তায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় ।
সিজুর মৃত্যুর পর শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে শতাধিক মানুষ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সিজুর পরিবার, স্থানীয় বাসিন্দা এবং জেলা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তাদের মূল দাবি ছিল- “ওসি বাদশা আলমের অবিলম্বে পদত্যাগ ও গ্রেপ্তার। সিজুর মৃত্যুর তদন্তে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন । “
সিজুর মা ও স্বজনেরা জোর দিয়ে বলেন, সিজু সম্পূর্ণ সুস্থ-সবল যুবক ছিলেন, যার মানসিক ভারসাম্যহীনতার কোনো ইতিহাস নেই। তাদের অভিযোগ, “তাকে ঠান্ডা মাথায় মেরে ফেলা হয়েছে” এবং পুকুরে ডোবানো হয়েছে মরদেহ গোপন করার উদ্দেশ্যে । বিক্ষোভ চলাকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে উত্তাপ আরও বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ সুপার নিশাত এঞ্জেলা সিজুর মা ও কয়েকজন স্বজনকে তার কার্যালয়ে আলোচনার জন্য নিয়ে যান ।
এ ঘটনায় পুলিশের ব্যাখ্যার সঙ্গে স্বজনদের বক্তব্যের বেশ কয়েকটি বিরোধপূর্ণ দিক চিহ্নিত হয়েছে, সিজুর মা দাবি করেন, একটি চুরি যুক্ত মোবাইল ফোন কেনা কে কেন্দ্র করে স্থানীয় জুনাইদ টেলিকমের কর্মীর সঙ্গে বিরোধের জেরেই সিজু থানায় গিয়েছিলেন। এই বিরোধের পেছনে ওসি বাদশা আলমের যোগসাজশ থাকতে পারে । এ ছাড়া মরদেহ উদ্ধারে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় লাগা এবং রংপুর থেকে ডুবুরি আনতে বিলম্বকে স্বজনরা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন।
ওসি বাদশা আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সিজুর “মানসিক ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ” ছিল। তবে পরিবার ও স্থানীয়রা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানান, সিজু ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং সাম্প্রতিক সময়েও তিনি সামাজিক অনুষ্ঠানে স্বাভাবিকভাবে অংশ নিয়ে ছিলেন।
গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের আমির আব্দুল করিম সিজুর জানাজায় বক্তব্য রাখেন। তিনি সিজুকে “অন্যায়ের প্রতিবাদকারী কর্মী” আখ্যা দিয়ে দাবি করেন, এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই তাকে টার্গেট করা হয়েছে ।
আজ রাত ৮টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সিজুর মায়ের সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়, কিন্তু কোনো স্পষ্ট সমাধান আসেনি। জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফুল আলম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দিলেও বিক্ষোভকারীরা ওসির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ চেয়ে তাদের অবস্থান পাল্টাননি।
বিক্ষোভকারীরা প্রশ্ন তুলেছে, সিজু কেন ছুরি নিয়ে থানায় ফিরেছিলেন? জিডি প্রত্যাখ্যানই কি এর একমাত্র কারণ? এ ছাড়াও থানার সিসিটিভি ফুটেজ ও অভিযুক্ত ওসির কর্মকাণ্ড জোরালো ভাবে তদন্তের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গাইবান্ধায় এটিই পুলিশ-বিরোধী প্রথম ঘটনা নয়; গত সোমবার সাঘাটায় এক অভিযানে সোহরাব হোসেন ও শফিকুল ইসলামের মৃত্যু হয়। পুলিশ দাবি করে তারা “প্রাকৃতিক অসুস্থতায়” মারা গেছেন, কিন্তু স্বজনরা তা “নির্যাতনের ফল” বলে অভিযোগ তোলেন।
নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগস:-

-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ