সর্বশেষঃ
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, গণমাধ্যম, চট্টগ্রাম, ঢাকা, দূর্নীতি দমন কমিশন(দুদক), দেশজুড়ে, নারায়ণগঞ্জ, পূর্বাভাস, প্রতিরক্ষা, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, রাজনীতি, রাজশাহী, র্যাব, সিলেট
নতুন সরকার ও বিএনপিকে ম্যানেজ করতে মরিয়া ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৩:৫৮:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩৩ বার পড়া হয়েছে
➤দেদারসে ঘুরে বেড়াচ্ছে অধরা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের দিলীপ আগরওয়ালা
➤২৫ হাজার ২শ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি।
➤ভ্যাট গোয়েন্দার তদন্ত ধামাচাপা দেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা
➤বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে খুনের আসামি হয়েও দেদারসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দিলীপ
➤বিগত সরকারের ভিভিআইপির ফোনে বিশাল অংকের অর্থদন্ড জরিমানা স্থগিত
বিশেষ প্রতিবেদক।।
হাসিনা সরকার শাসনামনে দুর্দান্ত প্রতাপশালী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য এবং সাম্প্রতিক ছাত্র হত্যা মামলার আসামি দিলীপ কুমার আগরওয়ালের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড বিগত ১৫ বছরে ২৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার সরকারি ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে গোয়েন্দাদের তদন্তে উঠে এসেছে।
তবে সেই তদন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সরাসরি হস্তক্ষেপে তার আমলনামা ধামাচাপা দেওয়া হয়।
এমনকি এসব তদন্তে জড়িত একাধিক কর্মকর্তাকে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে তাৎক্ষণিক বদলিও করা হয়েছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর সূত্রে জানা গেছে । সংস্থাটির আয়কর বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল-সিআইসি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের আয়কর নথিতে পাওয়া করফাঁকির তদন্তও ধামাচাপা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে এনবিআর সূত্র।
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের একাধিক বিক্রয়কর্মী জানান, দিলীপ আগরওয়ালা ডায়মন্ডের নামে বিক্রি করেন মূল্যবান কাচ এবং বিক্রির সময় শর্তও দেওয়া হয় এই ডায়মন্ড শুধু তাদের কাছ থেকেই এক্সচেঞ্জ এবং বিক্রি করা যাবে বলে শর্তারোপ করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর) সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকা-নারায়নগঞ্জ সহ সারা দেশে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের প্রায় ৩০টিরও বেশি শোরুম রয়েছে। এসব শোরুম থেকে দিনে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার ভূয়া ডায়মন্ড বিক্রি করা হলেও আওয়ামী লীগের শাসনামলের ১৫ বছরে কোনো ধরনের ভ্যাট দেয়নি দিলীপ আগরওয়ালা।
এনবিআরের কর্মকর্তাদের হিসাবে- ২৮টি শোরুম থেকে বছরে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছেন এই প্রতারক দিলীপ আগরওয়ালা।
সেই হিসাব করলে দেখা যায় গত ১৫ বছরে ২৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাকি দিয়েছে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। ভ্যাট ফাঁকি ও দিলীপ আগরওয়ালার আয়কর নথি তদন্ত শুরু করলেই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দিলীপ তদন্ত এগোতে না দিয়ে তা বন্ধ করে দেয়।যে সকল কর্মকর্তারা এই কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাদের বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো মন্ত্রী-আমলা ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে নানানভাবে ভয়ভীতি দেখাতেন।
একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে যাতে কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, সেটা তিনি নিশ্চিত করতেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের একাধিক সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। সেখানে অভিযোগ করা হয় সোনা ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে দিলীপ আগরওয়ালার রাজস্ব ফাঁকিসহ শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
অভিযোগের সূত্র ধরে দুদকের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) দিলীপ আগরওয়ালার আয়কর নথি ও ভ্যাট ফাঁকির তদন্ত শুরু করলেও রহস্যজনক কারণে সেই তদন্ত একসময় ধামাচাপা পড়ে যায়।
এনবিআর সূত্র আরও জানায়, গত কয়েক বছর ধরে দেশে কোনো ডায়মন্ড আমদানি হয় না। অথচ দিলীপ আগরওয়ালা ডায়মন্ড আমদানি নাকি ডায়মন্ডের নামে অন্য কিছু বিক্রি করে প্রতারণা মাধ্যমে সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। যদি ডায়মন্ড আমদানি করে তাহলে ১৫০ শতাংশের বেশি ট্যাক্স দেওয়ার কথা, সেটাও দিয়েছে কি না তাও তদন্ত করা হবে।
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কয়েকজন স্টাফ বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয় মাস আগে দিলীপ আগরওয়ালাকে ৭৭০ কোটি টাকা জরিমানাও করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তখন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ভিভিআইপি একজন ব্যক্তি সরাসরি ফোন করে সেই জরিমানার অর্থদন্ড স্থগিত করে দেন। বিগত সরকারের ভিভিআইপির ফোনের পর লাল ফিতায় বন্দি হয়ে যায় সব তদন্ত প্রক্রিয়া।
তথ্য সূত্রে জানা যায়,
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ দুই কমিটির উপকমিটিতে শিল্পবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। ওবায়দুল কাদের ও সালমান এফ রহমানকে ম্যানেজ করে তিনি উপকমিটিতে জায়গা করে নেন। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের ডোনারও ছিলেন এবং সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত, এলাকায় তার বিরুদ্ধে নানান ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ প্রশাসনকে টাকা দিয়ে ছাত্র-জনতাকে পেটানোর অভিযোগও জানা গেছে গোয়েন্দা সূত্রে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে খুনের মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ আগরওয়ালা।
এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর বাড্ডায় গত ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে শিবচরের সন্ন্যাসীরচর এলাকার হৃদয় হোসেন শিহাব নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের দিলীপ আগরওয়ালাসহ ১৬১ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে। গত ২২ আগস্ট বাড্ডা থানায় শিবচর পৌরসভার সাবেক কমিশনার শাহাদাত হোসেন খান এ মামলাটি দায়ের করেন।
অথচ দিলীপ আগরওয়ালা এ মামলার আসামি হলেও তিনি দেদারসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যে। এ ছাড়াও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সোনা চোরাচালানের রুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনার। চাঞ্চল্যকর ওই খুনের ঘটনার তদন্তেও বেরিয়ে আসে দিলীপ আগরওয়ালার নাম। স্পর্শকাতর দুই মামলার আসামি হলেও তারা এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
তথ্য সূত্রে আরো জানা গেছে,
সোনা চোরাচালান, হীরা প্রতারণা, হুন্ডি বাণিজ্যসহ অজ্ঞাত সূত্রে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া দিলীপ কুমার আগরওয়ালকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয় মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার আটকের পর।
পুলিশের কাছে পিয়াসার দেওয়া স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। সিআইডি পিয়াসাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, অবৈধভাবে আনা সোনা ও ভেজাল ডায়মন্ড, হীরা দিলীপের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করত মিশু-পিয়াসা চক্র। যাতে সরকার বিপুল পরিমাণ কর থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। শুল্ক কর্মকর্তারা অনুসন্ধান চালালে তার শুল্ক ফাঁকির আরও অনেক তথ্য পাবে বলেও দিলীপের একসময়ের ঘনিষ্ঠজনরাও দাবি করেছেন।
অবৈধভাবে অর্থ পাচারের মাধ্যমে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ভারতে কলকাতায় তিনটি জুয়েলারি ও ১১টি বাড়ি করেছেন, কানাডা ও দুবাইয়েও তার আলিশান বাসভবন আছে বলে দুদকের কাছে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। ৪০ কোটি টাকা দিয়ে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকেরও পরিচালক হয়েছেন। এসব টাকার উৎস নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে সরকারি সংস্থাগুলো কোনো ব্যবস্থা নেয় না!
দেশের শীর্ষস্থানীয় ডায়মন্ড এবং স্বর্ণ চোরাকারবারী দিলীপ আগারওয়ালা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছিল লীগের ঘনিষ্ঠ। এই সুযোগে হাজার হাজার কোটি টাকা স্বর্ণ ও ডায়মন্ড চোরাচালান করেছে। অস্ট্রেলিয়া দুবাই কানাডা আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে অবৈধ অর্থ পাচার করেছে।
শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সাথেও এই চোরাকারবারীর ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো বলে তথ্য সূত্রে জানা গেছে। তারা নাকি জাস্ট ফ্রেন্ড! এই দিলীপ আগারওয়ালা এখনো ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
সম্প্রতি এখন আবার দেখা যাচ্ছে, নতুন সরকার এবং বিএনপির সাথে সখ্যতা গড়তে নেমে পড়েছে এই কুখ্যাত দিলীপ ওপরওয়ালা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে খুনের আসামি, ২৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির সাথে জড়িত – ভুয়া ডায়মন্ড বিক্রেতা এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা গোপনে Bangladesh Nationalist Party-BNP’র যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকনের সাথে গোপনে ঢাকার গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে মিটিং করে করে পরিস্থিতি অনুকূলে আনার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাবেক সভাপতি এনামুল হক দোলনের মধ্যস্থতায় দিলীপ সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করছেন, দোলন নিজেও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার দিন উভয়ের আলাপের একপর্যায়ে দিলীপ কুমার’কে বলতে শোনা যায় ‘বাজেট কোন বিষয় না’, এখানে উল্লেখ্য দিলীপের সাথে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা-‘র অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলেও জানা যায়। এছাড়াও ২০১৬ সালে প্রায় ২ লক্ষ ডলারের বিনিময়ে ক্যারিবিয়ান দ্বীপ রাষ্ট্র এন্টিগা-বার্বুডার পাসপোর্ট গ্রহণ করেন বিতর্কিত এই ব্যবসায়ী।
তবে নতুন সরকার এবং বিএনপির সাথে ভোল পাল্টে সখ্যতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।