ঢাকা ০১:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ:-
স্বপ্ন পূরন হলো না মৌলভীবাজারের লিটনের,বেলারুশে পিটিয়ে হত্যা  টংঙ্গীবাড়ীতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বীজ-আলু, মনিটরিংয়ে ইউএনও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য হলেন জাবি অধ্যাপক ভালুকার কৃত্তি সন্তান নতুন আইজিপি বাহারুল ও ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত নারায়ণগঞ্জে চুরির অভিযোগে একজনকে পিটিয়ে হত্যা ঈশ্বরদীতে এসডি টেলিভিশন ২য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত  বিআইডব্লিউটি’র সিভিল ও সার্ভেয়ার জটিলতার অবসান চায় কর্মকর্তারা মৌলভীবাজার পূজা উদযাপন পরিষদ সম্পাদক মহিম গ্রেপ্তার সিদ্ধিরগঞ্জে হেলিকপ্টার দেখতে গিয়ে গুলিতে নিহত সুমাইয়ার মরদেহ উত্তোলন যাত্রবাড়ি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র দৌলতপুরে উদ্ধার র‍্যাবের ২ অধিনায়ক এবং ৩ পরিচালককে নিজ বাহিনীতে ফেরত টংঙ্গীবাড়ীতে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু নির্মানে ধীরগতি গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার যানজট নিরসনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত  সাতক্ষীরা-শ্যামনগর মহাসড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে আটক-৮ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির পদত্যাগ মৌলভীবাজারে কমলা চাষে অভূতপূর্ব সাফল্য  মিরপুরে মিথ্যা মামলায় জেল হাজতে স্বামী-স্ত্রী  সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ৮ দিনের রিমান্ডে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে ‘দ্য হিন্দু’কে ড. ইউনূস জাতীয় প্রেস ক্লাবের ৩৭ জনের সদস্যপদ স্থগিত সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম উত্তরায় গ্রেপ্তার মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বালুমহালে অভিযানে আটক-৫  রায়পুরায় পূজামণ্ডপের প্যান্ডেল ভাঙচুর নিয়ে গুজব ছড়ানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন কুষ্টিয়ায় ৮০ লাখ টাকা মুল্যের ভারতীয় কোকেন উদ্ধার নকলায় মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের ঝুঁলন্ত মরদেহ উদ্ধার ঈশ্বরদীতে গুলির পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে কুপিয়ে হত্যা ভালুকায় ইউএনও-এসিল্যান্ডের নেতৃত্বে বাজার মনিটরিং আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে আট মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে হাজির করা হলো ভালুকায় নয়াপাড়া স্কুলের শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গসহ অনিয়মের অভিযোগ মেঘনাঘাটে টিস্যুর গোডাউনে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ঈশ্বরদীতে রুপপুর প্রকল্পের দোভাষীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসিসহ ৩ পুলিশ কর্মকর্তা ক্লোজড মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের লীজকৃত জমি আত্মসাতের চেষ্টা বন বিভাগ খোদ জানেন না জমির পরিমাণ  কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু মৌলভীবাজারে এক জমিতে ১১জাতের ধানের চাষ ঈশ্বরদীতে সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন  সিদ্ধিরগঞ্জে ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত লম্পট হাকিম গ্রেপ্তার গিনেস বুকে বিশ্বের সবচেয়ে কৃপণ যে নারীর নাম রয়েছে জানা গেল পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজের কন্টেইনারে কী আছে পুলিশকে জনগণের বাহিনী হিসেবে গড়তে হবে : আইজিপি মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ দেবহাটায় ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উৎযাপন মুন্সিগঞ্জে হতে হাত বদলে আলু বিক্রি হচ্ছে দেড়গুণ বেশি দামে শ্রীমঙ্গলে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক তিন আসামি গ্রেপ্তার মিরপুরে ট্রাকের ধাক্কায় স্কুল ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু মৌলভীবাজারে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সভায় সকল উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত ‘গলি থেকে রাজপথ’ শ্যামবাজারের রক থেকে উঠে প্রাসাদে মিঠুন চক্রবর্তী  বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ না’গঞ্জের ১১তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত  দৌলতপুরে অস্ত্র-গুলি ককটেলসহ যুবদল ও যুবলীগ নেতা আটক ভালুকায় পৌর বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা ও  দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত সাবেক ওয়াসার এমডি ও নাসিক মেয়রের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার কারন জানা গেলো এক কর্মস্থলে ৩ বছরের বেশি নয়, পরিপত্র জারি নাম-লোগো-পোশাকসহ বদলে যাচ্ছে র‍্যাব পরকীয়ার বলি হয়ে প্রেমিকার হাতেই খুন হন শিল্পপতি মাসুম ভালুকায় পৌর বিএনপির উদ্যোগে  আলোচনা ও দোয়া মাহফিল ভালুকায় স্কুল ছাত্রদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ  বহু গুনে গুণান্বিত কাঁচালঙ্কা অকাতরে খান চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি সহ এনটিসিএল’র বাগান চালুর দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুরে নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনারের সাথে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করেন সালাউদ্দিন চৌধুরী  মৌলভীবাজার কোর্টের বিপরীতে অবৈধ দখলদারদের দখলে সরকারি কোটি টাকার জমি  দৌলতপুরে অস্ত্র ও ১৩ রাউন্ড গুলিসহ দুই ভাই আটক মৌলভীবাজারে দ্রুতগামী মোটরসাইকেলের ধাক্কায় এক নারী নিহত ভারতীয় রেলওয়েতে টয়লেট চালুর অজানা ইতিহাস ঈশ্বরদীতে অনাড়ম্বর আয়োজনে বিআরইএল’র ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন বিএনপি নেতা-কর্মীদের হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন না’গঞ্জে কর্ণফুলী শিপইয়ার্ড পরিদর্শনে নৌ-উপদেষ্টা মুন্সীগঞ্জে বাংলাবাজার ইউনিয়ন সভাপতি ঘিরে বিএনপির দু’গ্রুপে উত্তেজনা ফরিদপুরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত দূর্নীতির রাজত্বের রাজা কানুনগো শ্রীপদ দীর্ঘ ৪ বছরেও চালু হয়নি সুন্দরগঞ্জের পানি শোধনাগার টেকনাফে বিজিবির অভিযানে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ রোহিঙ্গা যুবক আটক ইসলামী শরী’য়ার দৃষ্টিতে উশরের বিধান ও বাংলাদেশের ভূমি সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলে ডিইউজের নিন্দা মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে সেবাগ্রহীতা কর্মশালা অনুষ্ঠিত  উত্তরায় বিএনপি নেতা শিমুল-কামরুলের নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল  মৌলভীবাজারে চিলের থাবায় ছাত্রী আহত ভালুকায় পৌর বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত গাজীপুরে আজও ১৪ কারখানা বন্ধ, ৩টিতে বিক্ষোভ-কর্মবিরতি চরভদ্রাসনে ইউএসএআইডি’র সবাই মিলে শিখি প্রকল্পের মেলা অনুষ্ঠিত মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী রামলীলা উৎসব আগামী ১৫ নভেম্বর খাসি আদিবাসীদের ”খাসি সেং কুটস্নেম” উৎসব এবার হচ্ছে না  নবগঠিত উপদেষ্টা বশির বাণিজ্যে, ফারুকী সংস্কৃতি ও আসিফের দপ্তর পরিবর্তন ছয় উপদেষ্টার দপ্তর পুনর্বণ্টন, কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন জনগনের ভোটে সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত অস্থিরতা কাটবে না: সিপিবি বিটিভির সাবেক জিএম মাহফুজাকে দুদকে তলব চিকন চাকার রিক্সা পালা করার সিদ্ধান্ত বন্ধ করনে মানববন্ধন বরগুনা-১’র সাবেক সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ঢাকায় গ্রেপ্তার তারেক রহমানের জন্মদিন অনুষ্ঠান পালন না করার নির্দেশ বিএনপির যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ আটক নরসিংদীর সাবেক এমপি ডলার সিরাজ গ্রেপ্তার ধর্মঘর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নারীসহ শিশু আহত আমি মৌলভীবাজারে “এনজয়” করতে আসিনি: পুলিশ সুপার ভালুকায় বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত  কমলগঞ্জে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রবাসীর ঘরবাড়ি ভাংচুর,গাছ-গাছালি কর্তন সিদ্ধিরগঞ্জে ৮ দফা দাবীতে পিএম গার্মেন্টস’র শ্রমিক বিক্ষোভ বিপ্লব ও সংহিত দিবস উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জে বিএনপির ব্যাপক শোডাউন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির গ্রেপ্তার বীরমুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে আর্থিক অনুদান

কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই ‘আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময়- ০১:৩৫:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪ ৯০ বার পড়া হয়েছে
ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায় , কলকাতা।।
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই’ আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক । যেখানে বাঙালি সেখানেই আড্ডা । বাঙালি আছে ,আড্ডা নেই এটা হতেই পারে না ।এই আড্ডা চলছে যুগযুগ ধরে । কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (চরিত্রহীন খ্যাত), শবৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (বিদূষক খ্যাত) , দামোদর মুখোপাধ্যায় , কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রসালো আড্ডা জমিয়ে রাখতেন।বাঙালির এই চিরাচরিত আড্ডাকেই আজকের পাতায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন — ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায়
 বাঙালি আছে, আড্ডা নেই! এটা কোনদিন ভাবাই যায় না। আড্ডার পীঠস্থান অখণ্ড বাংলা ছিল,আছে আর থাকবেও। আড্ডার সঙ্গে বাড়ি,অফিসের রক গুলির কিন্তু গভীর,ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আর আছে ক্লাব,রেস্তোঁরা,হোটেল, বাড়ি ও পার্ক বা ময়দান। শুধু কি তাই, আড্ডা পাগল বাঙালি লঞ্চ,স্টিমার রেলেও আড্ডার আসর বসিয়ে থাকে। মাঠে,ময়দানে আড্ডায় অনেক সময় বেগুনি,ফুলুরি,মসলা মুড়ি অনবদ্য।চায়ের কাপে চুমুক চলে ঘণ্টার ব্যবধানে।
বাঙালি মাত্রই আড্ডাপ্রিয়। এই আড্ডা তুলনাহীন। পৃথিবীর কোনো দেশের, জাতির মানুষের সাথে এই আড্ডার তুলনা মেলে না। বুদ্ধদেব বসুর ভাষায়, বাঙালির আড্ডার মেজাজ নেই অন্য কোনো দেশে, কিংবা থাকলেও যথোচিত পরিবেশ নেই। অন্যান্য দেশের লোক বক্তৃতা দেয়, রসিকতা করে, তর্ক চালায়, ফূর্তি করে রাত কাটিয়ে দেয়, কিন্তু আড্ডা দেয় না। আমাদের ঋতুগুলো যেমন কবিতা জাগায়, তেমনই আড্ডাও জমায়। আমাদের চৈত্রসন্ধ্যা, বর্ষার সন্ধ্যা, শরতের জ্যোৎস্না-ঢালা রাত্রি, শীতের মধুর উজ্জ্বল সকাল- সবই আড্ডার নীরব ঘণ্টা বাজিয়ে যায়, কেউ শুনতে পায়, কেউ পায় না।
বাঙালির মতো আড্ডার মেজাজ আর কোনো জাতির মানুষের মাঝে খুঁজে পাওয়া দুস্কর; I
তাই এ ভূ-সংসারে এমন কোনো বাঙালি পাওয়া যাবে না যে জীবনে একবারও আড্ডা দেয়নি। বাঙালির আড্ডার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বাংলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের আড্ডা নিয়ে কত মজার কাহিনী চালু রয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় দুই বাংলায় বেশ কয়েকটি জমাট আড্ডার ঠেক ছিল। বাংলার বহু জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন সেসব আড্ডার মধ্যমণি। সেই আড্ডাগুলো ছিল প্রাণোচ্ছ্বল। দুই বাংলার এমন কয়েকটি বিস্মৃত আড্ডার স্থান নিয়ে আজকের এই নিবন্ধ।
      চৌরঙ্গীর কফি হাউজ
চল্লিশের দশকে বাংলার বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিকদের এক জমজমাট আড্ডার আসর ছিল চৌরঙ্গীর কফি হাউজ। ১৯৪৫-৪৬ সালে এই আড্ডায় নিত্য যাতায়াত ছিল সত্যজিৎ রায়, কমলকুমার মজুমদার, চঞ্চল কুমার চট্টোপাধ্যায় ও রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো ব্যক্তিদের। সত্যজিতের অনবদ্য চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালি’র ভাবনাও এই আড্ডা থেকেই শুরু।
রাধাপ্রসাদ গুপ্তের এক লেখা থেকে জানা যায়, চৌরঙ্গি কফি হাউজের ছোট ঘরে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন চরিত্রের ও পেশার লোকজনের সমাগম হতো। সত্যজিৎ, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, চিদানন্দ দাশগুপ্তরা সেসব আড্ডায় ইউরোপিয়ান চলচ্চিত্র নিয়ে বিদগ্ধ আলোচনা করতেন।
রায়বাড়ির আড্ডা
কলকাতার অনেক বনেদি বাড়ি বা বিখ্যাত ব্যক্তির বাড়ির বৈঠকখানায় বেশ জমাট আড্ডা বসতো। ঐ রকমই একটি আড্ডার আসর ছিল লেক অ্যাভিনিউ, ৩ নম্বর লেক টেম্পল রোড এবং ১/১, বিশপ লেফ্রয় রোডে তিন তলার পূর্বদিকের এক ফ্ল্যাটে। রায় পরিবারের এই আড্ডা প্রায় তিন প্রজন্মের। এই আড্ডার প্রাণপুরুষ বিংশ শতাব্দীর বাংলার প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় ও তার বন্ধুদের ‘মন্ডা ক্লাব’ আজও কিংবদন্তী হয়ে আছে।
বিশপ লেফ্রয় রোডে অবস্থিত রায় বাড়িতে বসতো আড্ডার আসর।
শুধু অবান্তর কৌতুক ছড়াই নয়, এই আড্ডায় অনেক গুরুগম্ভীর আলোচনাও হতো। মন্ডা ক্লাবের একেকজন সভ্য ছিলেন নামকরা ব্যক্তিত্ব। সুকুমার রায়ের মৃত্যুতে এই আড্ডা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সুকুমার রায়ের সুযোগ্য পুত্র সত্যজিৎ রায় আবার নতুন করে আয়োজন করেন সেই আড্ডার। রবিবার সকালে রায়বাড়ির এই আড্ডায় উপস্থিত থাকতেন বিভিন্ন পেশার মানুষজন। কমলকুমার মজুমদার, রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো নামকরা লেখক ছাড়াও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বরুণ চন্দ, দীপঙ্কর দে, ধৃতিমান চ্যাটার্জিসহ অনেক নামকরা অভিনেতাই হাজির হতেন এই সকালের আড্ডায়। সিনেমা সংক্রান্ত আলোচনা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো এই আড্ডায়। সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায় এখনও এ আড্ডা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন।
কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজের আড্ডা
কলকাতা কলেজ স্ট্রিটের আলবার্ট হল একসময় ভারতীয় কফিবোর্ডের মালিকানাধীন ছিল। পরবর্তীকালে একে তারা কফি হাউজে রূপান্তর করেন। কবি-লেখকে সর্বদা গমগম করতো কফি হাউসের বিশাল হলঘর, তিলধারণের জায়গা থাকতো না।
সত্তরের শুরুর দিকেই এই কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজে কবি-সাহিত্যিকদের তুখোড় আড্ডা জমতো। সে সময়ে প্রতি সন্ধ্যায় কবি আর গল্প লেখকদের মিলনমেলায় কফি হাউজে দাঁড়ানোর মতো জায়গা থাকতো না। কবিদের আড্ডার মধ্যমণি হয়ে থাকতেন পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল। তার সতীর্থদের মধ্যে ছিলেন নিশীথ ভড়, সমরেন্দ্র দাস, অরণি বসু, অমিতাভ গুপ্ত, তুষার চৌধুরী মতো কবিরা। আর গল্পকারদের আড্ডার প্রধান ছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। তার বিষয় উপস্থাপন, কথা বলার ভঙ্গি শ্রোতাদের চুম্বকের মতো টানতো।
কবিদের মধ্যে আরও আসতেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কৃত্তিবাস পত্রিকার কবিদের দলবল নিয়ে উপস্থিত হতেন। সত্যজিৎ রায়ের গল্পের কাহিনীকার হিসেবে, আধুনিক বাংলা কবিতার তুমুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘কৃত্তিবাস’ আন্দোলনের নেতা এবং লেখক হিসেবে তখন সুনীল কফি হাউজের মেগাস্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এছাড়া কবিতা সিংহের মতো ক্ষুরধার নারীব্যক্তিত্ব সেসব আড্ডাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেন।
আমার বাবা যখন কলকাতার হিন্দু হোস্টেলে থাকতেন পড়াশোনার জন্য।তখন নিয়মিত কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে যেতেন। খুব কাছে এই কফি হাউস। সেখানে তখন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত আসতেন। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে পর পর অভিনয় করে বেশ নামডাক হয়েছে। তিনি আলাদা করে বেশ বড়সর আড্ডার আসর বসিয়ে নিতেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অনেক কবি, সাহিত্যিক শরণার্থী হিসেবে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর সে সময় এই কফি হাউজ হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের আর এক শিবির, অন্যরকম এক ঘাঁটি। আল মাহমুদ, বেলাল চৌধুরি, আব্দুল গাফফার চৌধুরী প্রমুখ লেখক এই কফি হাউজে সে সময় নিত্য যাতায়াত করতেন। কফি হাউজের সেই আড্ডা আজ আর আগের মতো না থাকলেও তার রেশ একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে তা বলার উপায় নেই। এখনও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের ভিড়ে কফি হাউজ মুখরিত থাকে। কফি হাউজের আড্ডার সেই আবেগ ছড়িয়ে দিয়েছেন মান্না দে তার বিখ্যাত ‘কফি হাউজ’ গানটিতে,
“কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই”।
বুধ সন্ধ্যা
আড্ডা দিতে খুব ভালবাসতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ তার সমসাময়িক সকল লেখক। সেই লক্ষ্যেই ১৯৮০ সালের দিকে সাগরময় ঘোষ, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ‘বুধ সন্ধ্যা’। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে এই আড্ডা বসতো না। সপ্তাহে প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় স্বনামধন্য সব সাহিত্যিক তাদের পরিচিত কারো বাড়ির বৈঠকখানায় জড়ো হয়ে ভাবের দেওয়া-নেওয়া, আলাপ-আলোচনায় মেতে উঠতেন।
এই আড্ডায় কে না ছিলেন? শঙ্খ ঘোষ, সুবোধ সরকার, মল্লিকা সেনগুপ্ত, জয় গোস্বামী, আবুল বাশার, আফসার আহমেদ, তারাপদ রায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেনের মতো বিখ্যাত সাহিত্যিকরা এ আড্ডার নিয়মিত সদস্য ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, অসীম সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, সৈয়দ আল ফারুক, তারিক সুজাতসহ বাংলাদেশের অনেক কবি-সাহিত্যিকের আনাগোনা ছিল এই আড্ডায়।
এই আড্ডাকে তারা নিজেদের চিন্তা-ভাবনার আদান-প্রদানের উৎকৃষ্ট স্থান বলে মনে করতেন। এই আড্ডায় পাঠ করা হতো সদ্য লেখা কোনো কবিতা। চলতো প্রকাশিত কোনো লেখার উপর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। এছাড়া আড্ডায় কেউ স্বরচিত গান আবার কেউ তারা ভাল লাগা কোনো গানের কলি খালি গলায় পরিবেশন করে আড্ডাকে জমিয়ে তুলতেন।
পুরনো ঢাকার বিউটি বোর্ডিং
চল্লিশের দশকে পুরনো ঢাকার ১নং শ্রীশ উনদাস লেনে অবস্থিত বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডা বেশ সুখ্যাতি লাভ করে। এই দোতলা পুরাতন বাড়ির সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির এক অনন্য ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এই বোর্ডিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গায়ক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের এক মিলনমেলা ছিল এই বিউটি বোর্ডিং।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস:-

কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই ‘আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক’

আপডেট সময়- ০১:৩৫:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪
ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায় , কলকাতা।।
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই’ আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক । যেখানে বাঙালি সেখানেই আড্ডা । বাঙালি আছে ,আড্ডা নেই এটা হতেই পারে না ।এই আড্ডা চলছে যুগযুগ ধরে । কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (চরিত্রহীন খ্যাত), শবৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (বিদূষক খ্যাত) , দামোদর মুখোপাধ্যায় , কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রসালো আড্ডা জমিয়ে রাখতেন।বাঙালির এই চিরাচরিত আড্ডাকেই আজকের পাতায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন — ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায়
 বাঙালি আছে, আড্ডা নেই! এটা কোনদিন ভাবাই যায় না। আড্ডার পীঠস্থান অখণ্ড বাংলা ছিল,আছে আর থাকবেও। আড্ডার সঙ্গে বাড়ি,অফিসের রক গুলির কিন্তু গভীর,ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আর আছে ক্লাব,রেস্তোঁরা,হোটেল, বাড়ি ও পার্ক বা ময়দান। শুধু কি তাই, আড্ডা পাগল বাঙালি লঞ্চ,স্টিমার রেলেও আড্ডার আসর বসিয়ে থাকে। মাঠে,ময়দানে আড্ডায় অনেক সময় বেগুনি,ফুলুরি,মসলা মুড়ি অনবদ্য।চায়ের কাপে চুমুক চলে ঘণ্টার ব্যবধানে।
বাঙালি মাত্রই আড্ডাপ্রিয়। এই আড্ডা তুলনাহীন। পৃথিবীর কোনো দেশের, জাতির মানুষের সাথে এই আড্ডার তুলনা মেলে না। বুদ্ধদেব বসুর ভাষায়, বাঙালির আড্ডার মেজাজ নেই অন্য কোনো দেশে, কিংবা থাকলেও যথোচিত পরিবেশ নেই। অন্যান্য দেশের লোক বক্তৃতা দেয়, রসিকতা করে, তর্ক চালায়, ফূর্তি করে রাত কাটিয়ে দেয়, কিন্তু আড্ডা দেয় না। আমাদের ঋতুগুলো যেমন কবিতা জাগায়, তেমনই আড্ডাও জমায়। আমাদের চৈত্রসন্ধ্যা, বর্ষার সন্ধ্যা, শরতের জ্যোৎস্না-ঢালা রাত্রি, শীতের মধুর উজ্জ্বল সকাল- সবই আড্ডার নীরব ঘণ্টা বাজিয়ে যায়, কেউ শুনতে পায়, কেউ পায় না।
বাঙালির মতো আড্ডার মেজাজ আর কোনো জাতির মানুষের মাঝে খুঁজে পাওয়া দুস্কর; I
তাই এ ভূ-সংসারে এমন কোনো বাঙালি পাওয়া যাবে না যে জীবনে একবারও আড্ডা দেয়নি। বাঙালির আড্ডার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বাংলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের আড্ডা নিয়ে কত মজার কাহিনী চালু রয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় দুই বাংলায় বেশ কয়েকটি জমাট আড্ডার ঠেক ছিল। বাংলার বহু জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন সেসব আড্ডার মধ্যমণি। সেই আড্ডাগুলো ছিল প্রাণোচ্ছ্বল। দুই বাংলার এমন কয়েকটি বিস্মৃত আড্ডার স্থান নিয়ে আজকের এই নিবন্ধ।
      চৌরঙ্গীর কফি হাউজ
চল্লিশের দশকে বাংলার বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিকদের এক জমজমাট আড্ডার আসর ছিল চৌরঙ্গীর কফি হাউজ। ১৯৪৫-৪৬ সালে এই আড্ডায় নিত্য যাতায়াত ছিল সত্যজিৎ রায়, কমলকুমার মজুমদার, চঞ্চল কুমার চট্টোপাধ্যায় ও রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো ব্যক্তিদের। সত্যজিতের অনবদ্য চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালি’র ভাবনাও এই আড্ডা থেকেই শুরু।
রাধাপ্রসাদ গুপ্তের এক লেখা থেকে জানা যায়, চৌরঙ্গি কফি হাউজের ছোট ঘরে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন চরিত্রের ও পেশার লোকজনের সমাগম হতো। সত্যজিৎ, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, চিদানন্দ দাশগুপ্তরা সেসব আড্ডায় ইউরোপিয়ান চলচ্চিত্র নিয়ে বিদগ্ধ আলোচনা করতেন।
রায়বাড়ির আড্ডা
কলকাতার অনেক বনেদি বাড়ি বা বিখ্যাত ব্যক্তির বাড়ির বৈঠকখানায় বেশ জমাট আড্ডা বসতো। ঐ রকমই একটি আড্ডার আসর ছিল লেক অ্যাভিনিউ, ৩ নম্বর লেক টেম্পল রোড এবং ১/১, বিশপ লেফ্রয় রোডে তিন তলার পূর্বদিকের এক ফ্ল্যাটে। রায় পরিবারের এই আড্ডা প্রায় তিন প্রজন্মের। এই আড্ডার প্রাণপুরুষ বিংশ শতাব্দীর বাংলার প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় ও তার বন্ধুদের ‘মন্ডা ক্লাব’ আজও কিংবদন্তী হয়ে আছে।
বিশপ লেফ্রয় রোডে অবস্থিত রায় বাড়িতে বসতো আড্ডার আসর।
শুধু অবান্তর কৌতুক ছড়াই নয়, এই আড্ডায় অনেক গুরুগম্ভীর আলোচনাও হতো। মন্ডা ক্লাবের একেকজন সভ্য ছিলেন নামকরা ব্যক্তিত্ব। সুকুমার রায়ের মৃত্যুতে এই আড্ডা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সুকুমার রায়ের সুযোগ্য পুত্র সত্যজিৎ রায় আবার নতুন করে আয়োজন করেন সেই আড্ডার। রবিবার সকালে রায়বাড়ির এই আড্ডায় উপস্থিত থাকতেন বিভিন্ন পেশার মানুষজন। কমলকুমার মজুমদার, রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো নামকরা লেখক ছাড়াও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বরুণ চন্দ, দীপঙ্কর দে, ধৃতিমান চ্যাটার্জিসহ অনেক নামকরা অভিনেতাই হাজির হতেন এই সকালের আড্ডায়। সিনেমা সংক্রান্ত আলোচনা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো এই আড্ডায়। সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায় এখনও এ আড্ডা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন।
কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজের আড্ডা
কলকাতা কলেজ স্ট্রিটের আলবার্ট হল একসময় ভারতীয় কফিবোর্ডের মালিকানাধীন ছিল। পরবর্তীকালে একে তারা কফি হাউজে রূপান্তর করেন। কবি-লেখকে সর্বদা গমগম করতো কফি হাউসের বিশাল হলঘর, তিলধারণের জায়গা থাকতো না।
সত্তরের শুরুর দিকেই এই কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজে কবি-সাহিত্যিকদের তুখোড় আড্ডা জমতো। সে সময়ে প্রতি সন্ধ্যায় কবি আর গল্প লেখকদের মিলনমেলায় কফি হাউজে দাঁড়ানোর মতো জায়গা থাকতো না। কবিদের আড্ডার মধ্যমণি হয়ে থাকতেন পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল। তার সতীর্থদের মধ্যে ছিলেন নিশীথ ভড়, সমরেন্দ্র দাস, অরণি বসু, অমিতাভ গুপ্ত, তুষার চৌধুরী মতো কবিরা। আর গল্পকারদের আড্ডার প্রধান ছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। তার বিষয় উপস্থাপন, কথা বলার ভঙ্গি শ্রোতাদের চুম্বকের মতো টানতো।
কবিদের মধ্যে আরও আসতেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কৃত্তিবাস পত্রিকার কবিদের দলবল নিয়ে উপস্থিত হতেন। সত্যজিৎ রায়ের গল্পের কাহিনীকার হিসেবে, আধুনিক বাংলা কবিতার তুমুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘কৃত্তিবাস’ আন্দোলনের নেতা এবং লেখক হিসেবে তখন সুনীল কফি হাউজের মেগাস্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এছাড়া কবিতা সিংহের মতো ক্ষুরধার নারীব্যক্তিত্ব সেসব আড্ডাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেন।
আমার বাবা যখন কলকাতার হিন্দু হোস্টেলে থাকতেন পড়াশোনার জন্য।তখন নিয়মিত কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে যেতেন। খুব কাছে এই কফি হাউস। সেখানে তখন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত আসতেন। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে পর পর অভিনয় করে বেশ নামডাক হয়েছে। তিনি আলাদা করে বেশ বড়সর আড্ডার আসর বসিয়ে নিতেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অনেক কবি, সাহিত্যিক শরণার্থী হিসেবে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর সে সময় এই কফি হাউজ হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের আর এক শিবির, অন্যরকম এক ঘাঁটি। আল মাহমুদ, বেলাল চৌধুরি, আব্দুল গাফফার চৌধুরী প্রমুখ লেখক এই কফি হাউজে সে সময় নিত্য যাতায়াত করতেন। কফি হাউজের সেই আড্ডা আজ আর আগের মতো না থাকলেও তার রেশ একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে তা বলার উপায় নেই। এখনও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের ভিড়ে কফি হাউজ মুখরিত থাকে। কফি হাউজের আড্ডার সেই আবেগ ছড়িয়ে দিয়েছেন মান্না দে তার বিখ্যাত ‘কফি হাউজ’ গানটিতে,
“কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই”।
বুধ সন্ধ্যা
আড্ডা দিতে খুব ভালবাসতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ তার সমসাময়িক সকল লেখক। সেই লক্ষ্যেই ১৯৮০ সালের দিকে সাগরময় ঘোষ, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ‘বুধ সন্ধ্যা’। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে এই আড্ডা বসতো না। সপ্তাহে প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় স্বনামধন্য সব সাহিত্যিক তাদের পরিচিত কারো বাড়ির বৈঠকখানায় জড়ো হয়ে ভাবের দেওয়া-নেওয়া, আলাপ-আলোচনায় মেতে উঠতেন।
এই আড্ডায় কে না ছিলেন? শঙ্খ ঘোষ, সুবোধ সরকার, মল্লিকা সেনগুপ্ত, জয় গোস্বামী, আবুল বাশার, আফসার আহমেদ, তারাপদ রায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেনের মতো বিখ্যাত সাহিত্যিকরা এ আড্ডার নিয়মিত সদস্য ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, অসীম সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, সৈয়দ আল ফারুক, তারিক সুজাতসহ বাংলাদেশের অনেক কবি-সাহিত্যিকের আনাগোনা ছিল এই আড্ডায়।
এই আড্ডাকে তারা নিজেদের চিন্তা-ভাবনার আদান-প্রদানের উৎকৃষ্ট স্থান বলে মনে করতেন। এই আড্ডায় পাঠ করা হতো সদ্য লেখা কোনো কবিতা। চলতো প্রকাশিত কোনো লেখার উপর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। এছাড়া আড্ডায় কেউ স্বরচিত গান আবার কেউ তারা ভাল লাগা কোনো গানের কলি খালি গলায় পরিবেশন করে আড্ডাকে জমিয়ে তুলতেন।
পুরনো ঢাকার বিউটি বোর্ডিং
চল্লিশের দশকে পুরনো ঢাকার ১নং শ্রীশ উনদাস লেনে অবস্থিত বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডা বেশ সুখ্যাতি লাভ করে। এই দোতলা পুরাতন বাড়ির সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির এক অনন্য ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এই বোর্ডিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গায়ক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের এক মিলনমেলা ছিল এই বিউটি বোর্ডিং।