ঢাকা ০১:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ:-
শরণখোলায় হরিণ শিকারের দায়ে যুবক’কে কারাদণ্ড কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের জালে তিন যুবক গণঅভ্যুত্থান স্মরণে নারায়ণগঞ্জে ‘জুলাই প্রতীকী ম্যারাথন’ অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জে হকার্স মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৩০টির অধিক দোকান ভস্মীভূত গনঅভ্যুত্থান উপলক্ষে মৌলভীবাজারে জুলাই প্রতীকী ম্যারাথন গোপালগঞ্জে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় ৫’শ জনকে আসামী করে মামলা মতিঝিলে সেনা কল্যাণ ভবনে অগ্নিকান্ড, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট গোপালগঞ্জকে ‘চিরতরে মুজিববাদ মুক্ত’ করতে মার্চ করা হবে: নাহিদ ইসলামের হুশিয়ারী ময়নাতদন্ত ছাড়াই গোপালগঞ্জে নিহত ৪ জনের দাফন-সৎকার সম্পন্ন ‘আমার ছেলে তো দোষ করেনি, কেন তাকে মেরে ফেলল’- পিতার আর্তনাদ গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে গুলিতে নিহত-৪ দৌলতপুর সীমান্তে বিদেশি পিস্তল ও শর্টগানসহ আটক-২ শরণখোলায় সাপের কামড়ে নারীর মৃত্যু রণক্ষেত্র গোপালগঞ্জ, ১৪৪ ধারা জারি গোপালগঞ্জে এবার ইউএনও’র গাড়ি বহরে হামলা,বহু হতাহত এনসিপির পদযাত্রা ঠেকাতে গোপালগঞ্জে পুলিশের গাড়িতে হামলাসহ আগুন না’গঞ্জে বিগত ছয়মাসের কর্ম ফিরিস্তি ‘মিট দ্যা প্রেস’ এ তুলে ধরলেন ডিসি নওগাঁয় মাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়া কুলাঙ্গার ছেলে গ্রেপ্তার কুলাউড়ায় স্ত্রীর মৃত্যুর খবরে তিন ঘণ্টার মধ্যে স্বামীর মৃত্যু শরণখোলায় বাসচাপায় অজ্ঞাত নারীর মৃত্যু শরণখোলা রেঞ্জে অবৈধভাবে মাছ ধরার সময় পাঁচ জেলে আটক পটুয়াখালীতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নববধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ ভেড়ামারায় মেয়েকে হত্যার অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে, মামলা করলেন মা ভরা মৌসুমে চালের বাজারে অস্থিরতা যুক্তরাষ্ট্রের যৌক্তিক শুল্ক নির্ধারণে আশাবাদী বাংলাদেশ: বাণিজ্য উপদেষ্টা ক্যামব্রিয়ান ও বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান বাশার গ্রেপ্তার মিটফোর্ডে আলোচিত সোহাগ হত্যার অন্যতম আসামি নান্নু না’গঞ্জে গ্রেপ্তার দেশে সর্বপ্রথম নান্দনিক “জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ” নির্মিত হলো নারায়ণগঞ্জে  শ্রীমঙ্গলে আলোচিত কলেজ ছাত্র হৃদয় হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ আটক-২ কমলগঞ্জে অ/জ্ঞা/ত ব্যক্তির ভাসমান মৃ/ত/দে/হ উদ্ধার ভাঙ্গায় চলাচলের অনুপযোগী সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ফরিদপুরে সামাজিক সমস্যা নিরসনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত প্রাচীন অস্পৃশ্য গ্রাম মালানা গণতন্ত্রের নিঃশব্দ সাক্ষী মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা প্রথম নির্ধারণ করেছেন এক বাঙালি  বাগেরহাটে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান ও সেবা মূল্যায়ন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত সোমবার নারায়ণগঞ্জ আসছেন অন্তবর্তী সরকারের ৬ উপদেষ্টা ফ্রান্স প্রবাসীর দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলায় অভিযুক্ত জসিম উদ্দিন শ্রীঘরে শরণখোলায় বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে নির্বাচিত হলেন যারা অবৈধ মৎস্য শিকারিদের কবলে হাকালুকি হাওর সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিতে বিক্ষোভ মিছিল ডেঙ্গু মোকাবেলায় ৩’শ শয্যা হাসপাতালের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম পরিদর্শনে ডিসি পাথর মেরে বর্বরোচিত হত্যার প্রতিবাদে কুষ্টিয়ায় ইসলামী আন্দোলন বিক্ষোভ স্বামীর লিঙ্গ কর্তন: থানা হেফাজতে ‘বিষপানে’ নারীর মৃত্যু, ৩ পুলিশ বরখাস্ত কুলাউড়ার ওসির তৃতীয় দফায় বদলির পর ডিআইজির হস্তক্ষেপ মৌলভীবাজারে শেখ মুজিবের ম‍্যুরাল ভেঙে দিল ছাত্র-জনতা কুষ্টিয়ায় অটোরিকশাচালকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ রাজধানীর মিটফোর্ডের সামনে নৃশংস হত্যার ঘটনায় মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার-৪ রাজধানীতে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ: মৃত্যু নিশ্চিতের পর লাশের ওপর লাফায় ঘাতকরা বিসিএমএ’র নতুন সভাপতি প্রিমিয়ার সিমেন্টের কর্ণধার আমিরুল হক দেওভোগে স্কুলের উন্নয়নে এগিয়ে এলেন মাসুদুজ্জামান বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের ১৮ বিচারক’কে অবসরে পাঠাল সরকার ‘হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেপ্তার ঠেকাতে’ ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি যে কারনে পদায়নের ৭২ ঘন্টার মাথায় সোনারগাঁয়ের ওসি ক্লোজড শ্রীমঙ্গলে গৃহবধুর অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার নারায়ণগঞ্জ কারাগারে ’জুয়াড়ি শাহজাহান’ খ্যাত কয়েদির মৃত্যু গাইবান্ধায় এসএসসিতে অকৃতকার্য: অভিমানে তিন ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা, ২ জন প্রাণ হারালেন সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরার সময় ৩ ট্রলারসহ আটক ২৭ জেলে পলাশবাড়ীতে এসএসসিতে ফেলের শোকে ১৬ বছরের লাবণ্যের আত্মহত্যা গাইবান্ধার দুই স্কুলে এসএসসি পরীক্ষায় শূন্য পাসের রেকর্ড শরণখোলায় সিএসও নেটওয়ার্কের সেবা মূল্যায়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত টঙ্গীর শীর্ষ সন্ত্রাসী সৈকতসহ ৬ সহযোগী র‍্যাবের জালে পাকশীতে স্কুলছাত্রী রুপাকে অপহরণচেষ্টা ব্যর্থ, অভিযুক্ত নাইম পলাতক সুন্দরগঞ্জে ওএমএস ডিলার নিয়োগে অনিয়ম: বিক্ষোভে উত্তাল উপজেলা  কমলগঞ্জে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সিগারেটসহ আটক-২  সেফটিক ট্যাংকিতে ঢুকে ৪ জনের মৃত্যু,একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক নির্বাচনের আগে ডিসি-এসপিদের রদবদল হবে আজ এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, যেভাবে রেজাল্ট দেখা যাবে ফের পুলিশের পাঁচ অতিরিক্ত ডিআইজিসহ ১৬ কর্মকর্তাকে বদলি সিদ্ধিরগঞ্জে ধনু হাজী খালের উভয় পাশে ৩’শ চারা রোপণ করলেন ডিসি রূপগঞ্জে ব্যবসায়ী হত্যাকান্ডের ঘটনায় এজাহারনামীয় আসামী রাসেল র‍্যাবের জালে ফতুল্লায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরনসহ ৩ প্রতিষ্ঠানকে অর্থদন্ড কুলাউড়ার হাকালুকি হাওরে অবৈধ জাল ধ্বংস ও জরিমানা কুমারখালিতে সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে ভাবিকে ‘ধর্ষণ’, দেবর কারাগারে চাঁদপুরে ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড, দুর্ভোগ চরমে মৌলভীবাজারে অর্ধকোটি টাকার ভারতীয় পন্যসহ আটক-২ ভুল করে স্টেশনে নেমে ধর্ষণের শিকার কিশোরী, যুবক গ্রেপ্তার কুলাউড়া ট্রেন স্টেশনে ভূলবশত নেমে ধর্ষণের শিকার কিশোরী দীর্ঘ ৫১ বছরেও নামফলক নেই মুন্সীগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামের শরণখোলা বিএনপির কমিটির নির্বাচন নিয়ে বিরোধ এখন তুঙ্গে আবরার ফাহাদের দেখানো পথেই রাজনীতি করছে এনসিপি-নাহিদ কুতুবপুরে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ’সহ নবায়ন কর্মসূচীর উদ্বোধন লোকসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের মৃত্যুর গুজব, যা জানালেন স্বামী যেভাবে দেখা যাবে এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল শরীয়তপুরের নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম মিডিয়ার প্রতি হুমকি: জাতীয় প্রেস ক্লাবের উদ্বেগ সাংবাদিকদের হুমকি প্রদর্শন অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য: বিএফইউজে-ডিইউজের ‘গ্রিন এন্ড ক্লিন’ কর্মসূচির আওতায় ১ দিনে দেড় হাজার বৃক্ষরোপণ করলেন ডিসি নারায়ণগঞ্জ-০৫’র এমপি প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের মায়ের মৃত্যু বার্ষিকীতে দোয়া অনুষ্ঠিত সুন্দরবনে ১’শ ফুট মালা ফাঁদ উদ্ধার, হরিণ শিকারের চেষ্টা ব্যর্থ শ্রীমঙ্গলে চা বাগানে গাছে বাঁধা অবস্থা যুবকের মরদেহ উদ্ধার কমলগঞ্জে ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা চোর চক্রের ৪ সদস্য আটক কুলাউড়ায় ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে যুবকের আ/ত্ম/হ/ত্যা মৌলভীবাজারে কিশোর গ্যাংয়ের ছয় সদস্য ছুরিসহ গ্রেপ্তার ২৪’র গণঅভ্যুত্থানকে কোনোভাবেই বেহাত হতে দেব না : নওগাঁয় নাহিদ ইসলাম গাজীপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপির চার নেতা বহিষ্কার সাংবাদিকদের নয়, বসুন্ধরা মিডিয়াকেই হুমকি দিয়েছি’: হাসনাত আবদুল্লাহ নারায়ণগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যার পর ঘাতক স্বামীর থানায় আত্নসমর্পণ কুষ্টিয়ায় অবৈধভাবে পদ্মা নদীর বালু উত্তোলনের দায়ে জেল-জরিমানা চাঁদপুর শহরে হাসান আলী মাঠে অবৈধ দোকানপাট, খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত শিশুরা শরণখোলায় আনোয়ার হোসেন পঞ্চায়েত’র বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন 

কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই ‘আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময়- ০১:৩৫:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪ ৩০৮ বার পড়া হয়েছে
ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায় , কলকাতা।।
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই’ আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক । যেখানে বাঙালি সেখানেই আড্ডা । বাঙালি আছে ,আড্ডা নেই এটা হতেই পারে না ।এই আড্ডা চলছে যুগযুগ ধরে । কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (চরিত্রহীন খ্যাত), শবৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (বিদূষক খ্যাত) , দামোদর মুখোপাধ্যায় , কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রসালো আড্ডা জমিয়ে রাখতেন।বাঙালির এই চিরাচরিত আড্ডাকেই আজকের পাতায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন — ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায়
 বাঙালি আছে, আড্ডা নেই! এটা কোনদিন ভাবাই যায় না। আড্ডার পীঠস্থান অখণ্ড বাংলা ছিল,আছে আর থাকবেও। আড্ডার সঙ্গে বাড়ি,অফিসের রক গুলির কিন্তু গভীর,ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আর আছে ক্লাব,রেস্তোঁরা,হোটেল, বাড়ি ও পার্ক বা ময়দান। শুধু কি তাই, আড্ডা পাগল বাঙালি লঞ্চ,স্টিমার রেলেও আড্ডার আসর বসিয়ে থাকে। মাঠে,ময়দানে আড্ডায় অনেক সময় বেগুনি,ফুলুরি,মসলা মুড়ি অনবদ্য।চায়ের কাপে চুমুক চলে ঘণ্টার ব্যবধানে।
বাঙালি মাত্রই আড্ডাপ্রিয়। এই আড্ডা তুলনাহীন। পৃথিবীর কোনো দেশের, জাতির মানুষের সাথে এই আড্ডার তুলনা মেলে না। বুদ্ধদেব বসুর ভাষায়, বাঙালির আড্ডার মেজাজ নেই অন্য কোনো দেশে, কিংবা থাকলেও যথোচিত পরিবেশ নেই। অন্যান্য দেশের লোক বক্তৃতা দেয়, রসিকতা করে, তর্ক চালায়, ফূর্তি করে রাত কাটিয়ে দেয়, কিন্তু আড্ডা দেয় না। আমাদের ঋতুগুলো যেমন কবিতা জাগায়, তেমনই আড্ডাও জমায়। আমাদের চৈত্রসন্ধ্যা, বর্ষার সন্ধ্যা, শরতের জ্যোৎস্না-ঢালা রাত্রি, শীতের মধুর উজ্জ্বল সকাল- সবই আড্ডার নীরব ঘণ্টা বাজিয়ে যায়, কেউ শুনতে পায়, কেউ পায় না।
বাঙালির মতো আড্ডার মেজাজ আর কোনো জাতির মানুষের মাঝে খুঁজে পাওয়া দুস্কর; I
তাই এ ভূ-সংসারে এমন কোনো বাঙালি পাওয়া যাবে না যে জীবনে একবারও আড্ডা দেয়নি। বাঙালির আড্ডার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বাংলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের আড্ডা নিয়ে কত মজার কাহিনী চালু রয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় দুই বাংলায় বেশ কয়েকটি জমাট আড্ডার ঠেক ছিল। বাংলার বহু জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন সেসব আড্ডার মধ্যমণি। সেই আড্ডাগুলো ছিল প্রাণোচ্ছ্বল। দুই বাংলার এমন কয়েকটি বিস্মৃত আড্ডার স্থান নিয়ে আজকের এই নিবন্ধ।
      চৌরঙ্গীর কফি হাউজ
চল্লিশের দশকে বাংলার বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিকদের এক জমজমাট আড্ডার আসর ছিল চৌরঙ্গীর কফি হাউজ। ১৯৪৫-৪৬ সালে এই আড্ডায় নিত্য যাতায়াত ছিল সত্যজিৎ রায়, কমলকুমার মজুমদার, চঞ্চল কুমার চট্টোপাধ্যায় ও রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো ব্যক্তিদের। সত্যজিতের অনবদ্য চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালি’র ভাবনাও এই আড্ডা থেকেই শুরু।
রাধাপ্রসাদ গুপ্তের এক লেখা থেকে জানা যায়, চৌরঙ্গি কফি হাউজের ছোট ঘরে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন চরিত্রের ও পেশার লোকজনের সমাগম হতো। সত্যজিৎ, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, চিদানন্দ দাশগুপ্তরা সেসব আড্ডায় ইউরোপিয়ান চলচ্চিত্র নিয়ে বিদগ্ধ আলোচনা করতেন।
রায়বাড়ির আড্ডা
কলকাতার অনেক বনেদি বাড়ি বা বিখ্যাত ব্যক্তির বাড়ির বৈঠকখানায় বেশ জমাট আড্ডা বসতো। ঐ রকমই একটি আড্ডার আসর ছিল লেক অ্যাভিনিউ, ৩ নম্বর লেক টেম্পল রোড এবং ১/১, বিশপ লেফ্রয় রোডে তিন তলার পূর্বদিকের এক ফ্ল্যাটে। রায় পরিবারের এই আড্ডা প্রায় তিন প্রজন্মের। এই আড্ডার প্রাণপুরুষ বিংশ শতাব্দীর বাংলার প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় ও তার বন্ধুদের ‘মন্ডা ক্লাব’ আজও কিংবদন্তী হয়ে আছে।
বিশপ লেফ্রয় রোডে অবস্থিত রায় বাড়িতে বসতো আড্ডার আসর।
শুধু অবান্তর কৌতুক ছড়াই নয়, এই আড্ডায় অনেক গুরুগম্ভীর আলোচনাও হতো। মন্ডা ক্লাবের একেকজন সভ্য ছিলেন নামকরা ব্যক্তিত্ব। সুকুমার রায়ের মৃত্যুতে এই আড্ডা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সুকুমার রায়ের সুযোগ্য পুত্র সত্যজিৎ রায় আবার নতুন করে আয়োজন করেন সেই আড্ডার। রবিবার সকালে রায়বাড়ির এই আড্ডায় উপস্থিত থাকতেন বিভিন্ন পেশার মানুষজন। কমলকুমার মজুমদার, রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো নামকরা লেখক ছাড়াও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বরুণ চন্দ, দীপঙ্কর দে, ধৃতিমান চ্যাটার্জিসহ অনেক নামকরা অভিনেতাই হাজির হতেন এই সকালের আড্ডায়। সিনেমা সংক্রান্ত আলোচনা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো এই আড্ডায়। সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায় এখনও এ আড্ডা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন।
কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজের আড্ডা
কলকাতা কলেজ স্ট্রিটের আলবার্ট হল একসময় ভারতীয় কফিবোর্ডের মালিকানাধীন ছিল। পরবর্তীকালে একে তারা কফি হাউজে রূপান্তর করেন। কবি-লেখকে সর্বদা গমগম করতো কফি হাউসের বিশাল হলঘর, তিলধারণের জায়গা থাকতো না।
সত্তরের শুরুর দিকেই এই কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজে কবি-সাহিত্যিকদের তুখোড় আড্ডা জমতো। সে সময়ে প্রতি সন্ধ্যায় কবি আর গল্প লেখকদের মিলনমেলায় কফি হাউজে দাঁড়ানোর মতো জায়গা থাকতো না। কবিদের আড্ডার মধ্যমণি হয়ে থাকতেন পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল। তার সতীর্থদের মধ্যে ছিলেন নিশীথ ভড়, সমরেন্দ্র দাস, অরণি বসু, অমিতাভ গুপ্ত, তুষার চৌধুরী মতো কবিরা। আর গল্পকারদের আড্ডার প্রধান ছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। তার বিষয় উপস্থাপন, কথা বলার ভঙ্গি শ্রোতাদের চুম্বকের মতো টানতো।
কবিদের মধ্যে আরও আসতেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কৃত্তিবাস পত্রিকার কবিদের দলবল নিয়ে উপস্থিত হতেন। সত্যজিৎ রায়ের গল্পের কাহিনীকার হিসেবে, আধুনিক বাংলা কবিতার তুমুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘কৃত্তিবাস’ আন্দোলনের নেতা এবং লেখক হিসেবে তখন সুনীল কফি হাউজের মেগাস্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এছাড়া কবিতা সিংহের মতো ক্ষুরধার নারীব্যক্তিত্ব সেসব আড্ডাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেন।
আমার বাবা যখন কলকাতার হিন্দু হোস্টেলে থাকতেন পড়াশোনার জন্য।তখন নিয়মিত কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে যেতেন। খুব কাছে এই কফি হাউস। সেখানে তখন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত আসতেন। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে পর পর অভিনয় করে বেশ নামডাক হয়েছে। তিনি আলাদা করে বেশ বড়সর আড্ডার আসর বসিয়ে নিতেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অনেক কবি, সাহিত্যিক শরণার্থী হিসেবে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর সে সময় এই কফি হাউজ হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের আর এক শিবির, অন্যরকম এক ঘাঁটি। আল মাহমুদ, বেলাল চৌধুরি, আব্দুল গাফফার চৌধুরী প্রমুখ লেখক এই কফি হাউজে সে সময় নিত্য যাতায়াত করতেন। কফি হাউজের সেই আড্ডা আজ আর আগের মতো না থাকলেও তার রেশ একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে তা বলার উপায় নেই। এখনও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের ভিড়ে কফি হাউজ মুখরিত থাকে। কফি হাউজের আড্ডার সেই আবেগ ছড়িয়ে দিয়েছেন মান্না দে তার বিখ্যাত ‘কফি হাউজ’ গানটিতে,
“কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই”।
বুধ সন্ধ্যা
আড্ডা দিতে খুব ভালবাসতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ তার সমসাময়িক সকল লেখক। সেই লক্ষ্যেই ১৯৮০ সালের দিকে সাগরময় ঘোষ, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ‘বুধ সন্ধ্যা’। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে এই আড্ডা বসতো না। সপ্তাহে প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় স্বনামধন্য সব সাহিত্যিক তাদের পরিচিত কারো বাড়ির বৈঠকখানায় জড়ো হয়ে ভাবের দেওয়া-নেওয়া, আলাপ-আলোচনায় মেতে উঠতেন।
এই আড্ডায় কে না ছিলেন? শঙ্খ ঘোষ, সুবোধ সরকার, মল্লিকা সেনগুপ্ত, জয় গোস্বামী, আবুল বাশার, আফসার আহমেদ, তারাপদ রায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেনের মতো বিখ্যাত সাহিত্যিকরা এ আড্ডার নিয়মিত সদস্য ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, অসীম সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, সৈয়দ আল ফারুক, তারিক সুজাতসহ বাংলাদেশের অনেক কবি-সাহিত্যিকের আনাগোনা ছিল এই আড্ডায়।
এই আড্ডাকে তারা নিজেদের চিন্তা-ভাবনার আদান-প্রদানের উৎকৃষ্ট স্থান বলে মনে করতেন। এই আড্ডায় পাঠ করা হতো সদ্য লেখা কোনো কবিতা। চলতো প্রকাশিত কোনো লেখার উপর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। এছাড়া আড্ডায় কেউ স্বরচিত গান আবার কেউ তারা ভাল লাগা কোনো গানের কলি খালি গলায় পরিবেশন করে আড্ডাকে জমিয়ে তুলতেন।
পুরনো ঢাকার বিউটি বোর্ডিং
চল্লিশের দশকে পুরনো ঢাকার ১নং শ্রীশ উনদাস লেনে অবস্থিত বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডা বেশ সুখ্যাতি লাভ করে। এই দোতলা পুরাতন বাড়ির সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির এক অনন্য ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এই বোর্ডিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গায়ক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের এক মিলনমেলা ছিল এই বিউটি বোর্ডিং।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস:-

কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই ‘আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক’

আপডেট সময়- ০১:৩৫:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪
ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায় , কলকাতা।।
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই’ আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক । যেখানে বাঙালি সেখানেই আড্ডা । বাঙালি আছে ,আড্ডা নেই এটা হতেই পারে না ।এই আড্ডা চলছে যুগযুগ ধরে । কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (চরিত্রহীন খ্যাত), শবৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (বিদূষক খ্যাত) , দামোদর মুখোপাধ্যায় , কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রসালো আড্ডা জমিয়ে রাখতেন।বাঙালির এই চিরাচরিত আড্ডাকেই আজকের পাতায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন — ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায়
 বাঙালি আছে, আড্ডা নেই! এটা কোনদিন ভাবাই যায় না। আড্ডার পীঠস্থান অখণ্ড বাংলা ছিল,আছে আর থাকবেও। আড্ডার সঙ্গে বাড়ি,অফিসের রক গুলির কিন্তু গভীর,ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আর আছে ক্লাব,রেস্তোঁরা,হোটেল, বাড়ি ও পার্ক বা ময়দান। শুধু কি তাই, আড্ডা পাগল বাঙালি লঞ্চ,স্টিমার রেলেও আড্ডার আসর বসিয়ে থাকে। মাঠে,ময়দানে আড্ডায় অনেক সময় বেগুনি,ফুলুরি,মসলা মুড়ি অনবদ্য।চায়ের কাপে চুমুক চলে ঘণ্টার ব্যবধানে।
বাঙালি মাত্রই আড্ডাপ্রিয়। এই আড্ডা তুলনাহীন। পৃথিবীর কোনো দেশের, জাতির মানুষের সাথে এই আড্ডার তুলনা মেলে না। বুদ্ধদেব বসুর ভাষায়, বাঙালির আড্ডার মেজাজ নেই অন্য কোনো দেশে, কিংবা থাকলেও যথোচিত পরিবেশ নেই। অন্যান্য দেশের লোক বক্তৃতা দেয়, রসিকতা করে, তর্ক চালায়, ফূর্তি করে রাত কাটিয়ে দেয়, কিন্তু আড্ডা দেয় না। আমাদের ঋতুগুলো যেমন কবিতা জাগায়, তেমনই আড্ডাও জমায়। আমাদের চৈত্রসন্ধ্যা, বর্ষার সন্ধ্যা, শরতের জ্যোৎস্না-ঢালা রাত্রি, শীতের মধুর উজ্জ্বল সকাল- সবই আড্ডার নীরব ঘণ্টা বাজিয়ে যায়, কেউ শুনতে পায়, কেউ পায় না।
বাঙালির মতো আড্ডার মেজাজ আর কোনো জাতির মানুষের মাঝে খুঁজে পাওয়া দুস্কর; I
তাই এ ভূ-সংসারে এমন কোনো বাঙালি পাওয়া যাবে না যে জীবনে একবারও আড্ডা দেয়নি। বাঙালির আড্ডার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বাংলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের আড্ডা নিয়ে কত মজার কাহিনী চালু রয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় দুই বাংলায় বেশ কয়েকটি জমাট আড্ডার ঠেক ছিল। বাংলার বহু জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন সেসব আড্ডার মধ্যমণি। সেই আড্ডাগুলো ছিল প্রাণোচ্ছ্বল। দুই বাংলার এমন কয়েকটি বিস্মৃত আড্ডার স্থান নিয়ে আজকের এই নিবন্ধ।
      চৌরঙ্গীর কফি হাউজ
চল্লিশের দশকে বাংলার বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিকদের এক জমজমাট আড্ডার আসর ছিল চৌরঙ্গীর কফি হাউজ। ১৯৪৫-৪৬ সালে এই আড্ডায় নিত্য যাতায়াত ছিল সত্যজিৎ রায়, কমলকুমার মজুমদার, চঞ্চল কুমার চট্টোপাধ্যায় ও রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো ব্যক্তিদের। সত্যজিতের অনবদ্য চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালি’র ভাবনাও এই আড্ডা থেকেই শুরু।
রাধাপ্রসাদ গুপ্তের এক লেখা থেকে জানা যায়, চৌরঙ্গি কফি হাউজের ছোট ঘরে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন চরিত্রের ও পেশার লোকজনের সমাগম হতো। সত্যজিৎ, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, চিদানন্দ দাশগুপ্তরা সেসব আড্ডায় ইউরোপিয়ান চলচ্চিত্র নিয়ে বিদগ্ধ আলোচনা করতেন।
রায়বাড়ির আড্ডা
কলকাতার অনেক বনেদি বাড়ি বা বিখ্যাত ব্যক্তির বাড়ির বৈঠকখানায় বেশ জমাট আড্ডা বসতো। ঐ রকমই একটি আড্ডার আসর ছিল লেক অ্যাভিনিউ, ৩ নম্বর লেক টেম্পল রোড এবং ১/১, বিশপ লেফ্রয় রোডে তিন তলার পূর্বদিকের এক ফ্ল্যাটে। রায় পরিবারের এই আড্ডা প্রায় তিন প্রজন্মের। এই আড্ডার প্রাণপুরুষ বিংশ শতাব্দীর বাংলার প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় ও তার বন্ধুদের ‘মন্ডা ক্লাব’ আজও কিংবদন্তী হয়ে আছে।
বিশপ লেফ্রয় রোডে অবস্থিত রায় বাড়িতে বসতো আড্ডার আসর।
শুধু অবান্তর কৌতুক ছড়াই নয়, এই আড্ডায় অনেক গুরুগম্ভীর আলোচনাও হতো। মন্ডা ক্লাবের একেকজন সভ্য ছিলেন নামকরা ব্যক্তিত্ব। সুকুমার রায়ের মৃত্যুতে এই আড্ডা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সুকুমার রায়ের সুযোগ্য পুত্র সত্যজিৎ রায় আবার নতুন করে আয়োজন করেন সেই আড্ডার। রবিবার সকালে রায়বাড়ির এই আড্ডায় উপস্থিত থাকতেন বিভিন্ন পেশার মানুষজন। কমলকুমার মজুমদার, রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো নামকরা লেখক ছাড়াও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বরুণ চন্দ, দীপঙ্কর দে, ধৃতিমান চ্যাটার্জিসহ অনেক নামকরা অভিনেতাই হাজির হতেন এই সকালের আড্ডায়। সিনেমা সংক্রান্ত আলোচনা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো এই আড্ডায়। সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায় এখনও এ আড্ডা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন।
কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজের আড্ডা
কলকাতা কলেজ স্ট্রিটের আলবার্ট হল একসময় ভারতীয় কফিবোর্ডের মালিকানাধীন ছিল। পরবর্তীকালে একে তারা কফি হাউজে রূপান্তর করেন। কবি-লেখকে সর্বদা গমগম করতো কফি হাউসের বিশাল হলঘর, তিলধারণের জায়গা থাকতো না।
সত্তরের শুরুর দিকেই এই কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজে কবি-সাহিত্যিকদের তুখোড় আড্ডা জমতো। সে সময়ে প্রতি সন্ধ্যায় কবি আর গল্প লেখকদের মিলনমেলায় কফি হাউজে দাঁড়ানোর মতো জায়গা থাকতো না। কবিদের আড্ডার মধ্যমণি হয়ে থাকতেন পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল। তার সতীর্থদের মধ্যে ছিলেন নিশীথ ভড়, সমরেন্দ্র দাস, অরণি বসু, অমিতাভ গুপ্ত, তুষার চৌধুরী মতো কবিরা। আর গল্পকারদের আড্ডার প্রধান ছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। তার বিষয় উপস্থাপন, কথা বলার ভঙ্গি শ্রোতাদের চুম্বকের মতো টানতো।
কবিদের মধ্যে আরও আসতেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কৃত্তিবাস পত্রিকার কবিদের দলবল নিয়ে উপস্থিত হতেন। সত্যজিৎ রায়ের গল্পের কাহিনীকার হিসেবে, আধুনিক বাংলা কবিতার তুমুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘কৃত্তিবাস’ আন্দোলনের নেতা এবং লেখক হিসেবে তখন সুনীল কফি হাউজের মেগাস্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এছাড়া কবিতা সিংহের মতো ক্ষুরধার নারীব্যক্তিত্ব সেসব আড্ডাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেন।
আমার বাবা যখন কলকাতার হিন্দু হোস্টেলে থাকতেন পড়াশোনার জন্য।তখন নিয়মিত কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে যেতেন। খুব কাছে এই কফি হাউস। সেখানে তখন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত আসতেন। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে পর পর অভিনয় করে বেশ নামডাক হয়েছে। তিনি আলাদা করে বেশ বড়সর আড্ডার আসর বসিয়ে নিতেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অনেক কবি, সাহিত্যিক শরণার্থী হিসেবে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর সে সময় এই কফি হাউজ হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের আর এক শিবির, অন্যরকম এক ঘাঁটি। আল মাহমুদ, বেলাল চৌধুরি, আব্দুল গাফফার চৌধুরী প্রমুখ লেখক এই কফি হাউজে সে সময় নিত্য যাতায়াত করতেন। কফি হাউজের সেই আড্ডা আজ আর আগের মতো না থাকলেও তার রেশ একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে তা বলার উপায় নেই। এখনও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের ভিড়ে কফি হাউজ মুখরিত থাকে। কফি হাউজের আড্ডার সেই আবেগ ছড়িয়ে দিয়েছেন মান্না দে তার বিখ্যাত ‘কফি হাউজ’ গানটিতে,
“কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই”।
বুধ সন্ধ্যা
আড্ডা দিতে খুব ভালবাসতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ তার সমসাময়িক সকল লেখক। সেই লক্ষ্যেই ১৯৮০ সালের দিকে সাগরময় ঘোষ, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ‘বুধ সন্ধ্যা’। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে এই আড্ডা বসতো না। সপ্তাহে প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় স্বনামধন্য সব সাহিত্যিক তাদের পরিচিত কারো বাড়ির বৈঠকখানায় জড়ো হয়ে ভাবের দেওয়া-নেওয়া, আলাপ-আলোচনায় মেতে উঠতেন।
এই আড্ডায় কে না ছিলেন? শঙ্খ ঘোষ, সুবোধ সরকার, মল্লিকা সেনগুপ্ত, জয় গোস্বামী, আবুল বাশার, আফসার আহমেদ, তারাপদ রায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেনের মতো বিখ্যাত সাহিত্যিকরা এ আড্ডার নিয়মিত সদস্য ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, অসীম সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, সৈয়দ আল ফারুক, তারিক সুজাতসহ বাংলাদেশের অনেক কবি-সাহিত্যিকের আনাগোনা ছিল এই আড্ডায়।
এই আড্ডাকে তারা নিজেদের চিন্তা-ভাবনার আদান-প্রদানের উৎকৃষ্ট স্থান বলে মনে করতেন। এই আড্ডায় পাঠ করা হতো সদ্য লেখা কোনো কবিতা। চলতো প্রকাশিত কোনো লেখার উপর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। এছাড়া আড্ডায় কেউ স্বরচিত গান আবার কেউ তারা ভাল লাগা কোনো গানের কলি খালি গলায় পরিবেশন করে আড্ডাকে জমিয়ে তুলতেন।
পুরনো ঢাকার বিউটি বোর্ডিং
চল্লিশের দশকে পুরনো ঢাকার ১নং শ্রীশ উনদাস লেনে অবস্থিত বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডা বেশ সুখ্যাতি লাভ করে। এই দোতলা পুরাতন বাড়ির সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির এক অনন্য ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এই বোর্ডিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গায়ক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের এক মিলনমেলা ছিল এই বিউটি বোর্ডিং।