ঢাকা ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ:-
রাজনীতি আমার কাছে মানুষের আস্থা ও দায়িত্বের প্রতীক: মাসুদুজ্জামান টেকনাফে র‍্যাবের অভিযানে দেশীয় ও নকল বিদেশি মদসহ আটক-৩ টেকনাফে গাঁজাসহ তিন নারী মাদক কারবারি আটক ক্ষুদে কারাতে প্রতিযোগীদের আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে আসলেন জেলা প্রশাসক রূপগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাজাহান ভুইঁয়া আর নেই  না’গঞ্জে পরকীয়ার জেরে হত্যাযজ্ঞ, লাশ গুম করতে হেক্সো ব্লেড দিয়ে দু’পা বিচ্ছিন্ন বিসিবি নির্বাচন ঘিরে চরম উত্তেজনা, ক্রিকেট বর্জনের ঘোষণা ৪৮ ক্লাবের বিজয়ার বেদনায় আনন্দের কোজাগরী শান্তি সমৃদ্ধির দেবী মা লক্ষ্মী ঈশ্বরদীতে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালিত ঈশ্বরদীতে নতুন ইউএনও’র যড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মানববন্ধন টেকনাফে ১৭১ রোহিঙ্গার অবৈধ ক্যাম্পের বাইরে চলাচল রোধ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ অক্টোবরের বিএ-বিএসএস পরীক্ষা স্থগিত না’গঞ্জ প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের সাথে এসপি’র সৌহার্দ্যপূর্ণ সৌজন্য সাক্ষাৎ উখিয়ায় বিজিবির অভিযানে ইয়াবা গডফাদার মনির আটক সুন্দরগঞ্জে ভ্যাকসিন কেলেঙ্কারি; ৮০ পয়সার ভ্যাকসিন, ৩০ টাকার বিল কুমিল্লার মেঘনায় চাঁদাবাজদের হামলায় টেটাবিদ্ধ ৩ নৌ-পুলিশ  পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা: পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের গভীর উদ্বেগ ইতিহাসে নজিরবিহীন’ বিজ্ঞপ্তি, অপমানে পদত্যাগ করলেন মাউশির ডিজি নারায়ণগঞ্জে ড্রামে ভর্তি পা বিচ্ছিন্ন অর্ধগলিত যুবকের মরদেহ উদ্ধার নারায়ণগঞ্জে শালিসের নামে হাতুড়িপেটায় আলমগীর হত্যাকান্ড, গ্রেপ্তার-২ দৃষ্টিহীন আলভীর পাশে মানবতার হাত বাড়ালেন: মানবিক ডিসি কানের দুল ছিনিয়ে নিতে ৪ বছরের শিশু হত্যা, দুই আসামির আদালতে স্বীকারোক্তি গাইবান্ধায় অ্যানথ্রাক্সে নারীর মৃত্যু: স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি এটা গুজব সিদ্ধিরগঞ্জে মাদকবিরোধী অভিযানে ইয়াবা ও হেরোইনসহ ৪ মাদক কারবারি আটক শুধু নিজের ভালো চিন্তা করলেই হবে না, রাষ্ট্রের ভালোও চিন্তা করতে হবে: বসতি দিবসে ডিসি নারায়ণগঞ্জে মৌমিতা বাসের ধাক্কায় অটোরিকশা চালক নিহত, আহত-২ ঈশ্বরদী জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক কোটি টাকা নিয়ে উধাও নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ৪টি ফগার মেশিনসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রদানের আস্বাস মাসুদুজ্জামানের টেকনাফে নিখোঁজের ২২ ঘণ্টা পর শিশুর মরদেহ উদ্ধার টেকনাফে রাজমিস্ত্রির ছদ্মবেশে রোহিঙ্গা দম্পতির ইয়াবা বাণিজ্য, আটক-২ রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নে দাশুড়িয়া পথসভা জনসমুদ্রে পরিনত টেকনাফে বিজিবির অভিযানে ৬ মানবপাচারকারী আটক: নস্যাৎ হলো বড় পাচারের ছক মাসুদুজ্জামানের মনোনয়ন ঠেকাতে মিশন: মামলায় ফাঁসাতে বড় অংকের চুক্তি ক্লাব সংগঠকদের দেশের ক্রিকেট বয়কটের হুমকি কাঁদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে দলের স্বার্থে’ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মাসুদুজ্জামানের বন্দর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সানুর ভাই যুবলীগ কর্মী ফকির উল্ল্যাহ গ্রেপ্তার সাত শতাধিক দৌড়বিদের অংশগ্রহণে রায়পুরা ম্যারাথন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক আর নেই.!  গাইবান্ধায় দুই শতাধিক শ্রমিকদলের নেতাকর্মীর জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান নারায়ণগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জন ঘাটের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে ডিসি-এসপি সিদ্ধিরগঞ্জে সাত কেজি গাঁজাসহ এক কারবারি গ্রেপ্তার ঈশ্বরদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাক চালক নিহত  মহেশখালীতে অস্ত্র-গোলাবারুদসহ তিন সন্ত্রাসী আটক টেকনাফে গহীন পাহাড়ে নারী ও শিশুসহ ২১ জন উদ্ধার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুতে অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় ২ট্রাক চালক নিহত এনসিপি নেতাকর্মী কর্তৃক সাংবাদিক লাঞ্ছনা, বয়কট সংবাদ সম্মেলন আজ বিজয়া দশমী, দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব উত্তাল সাগর, দুপুরের মধ্যে ৮ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস কক্সবাজারে ১৬ হাজার ৪০০ ইয়াবাসহ তিন তৃতীয় লিঙ্গের হিজরা আটক আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশকে কামড়ে পালানো সেই আসামি র‍্যাবের জালে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট ১৯ কি: মি: মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট না’গঞ্জে র‍্যাবের হাতে আটক আসামীকে ছিনিয়ে নিল সহযোগীরা, র‍্যাব সদস্যসহ আহত-৪ শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমী আজ মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে যে নিয়মের কথা জানালেন পুলিশ প্রধান আমরা কোনো ধরণের দলীয় পদ ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করতে চাই না: মাসুদুজ্জামান টেকনাফে ২৪ হাজার ইয়াবা ও সিএনজিসহ পাচারকারী আটক  আ’লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা যেকোনো সময় তুলে নেওয়া হতে পারে আজ শারদীয় দুর্গাপুজার মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা টিসিবির পণ্য তালিকায় নতুন যুক্ত হচ্ছে চা-লবণ-ডিটারজেন্ট ও সাবান রাজধানীতে অনাবিল বাসে নারী যাত্রীকে শ্লীলতাহানি, চালক-হেলপার আটক উখিয়ায় সাংবাদিক তানভীর শাহরিয়ার গ্রেপ্তার, সংবাদকর্মীদের কণ্ঠরোধের অভিযোগ পর্যটনবান্ধব নগরী গড়তে সবার ঐক্য চাই : কক্সবাজারের নতুন জেলা প্রশাসক গাইবান্ধার স্বাস্থ্যসেবায় অন্ধকার: ফুলছড়িতে সিজার বন্ধ, জনবল সংকট চরমে না’গঞ্জের আরএস কম্পোজিটে বিশ্বমানের কমপ্লায়েন্সের ভূয়সী প্রশংসা করেন শিল্প পুলিশ প্রধান প্রতিহিংসা ও বিভক্তি বর্জন করে সুশৃঙ্খল রাজনীতি করতে মাসুদুজ্জামানের আহবান দুর্গোৎসব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ: বন্দরে জেলা প্রশাসক শীর্ষস্থানীয় ব্রান্ড আড়ং’র শপিং ব্যাগের মূল্য নেয়া বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ না’গঞ্জে ওভারপাস থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যাওয়া ট্রাকের চাপায় রিকশা চালকের মৃত্যু আড়াইহাজারের সাবেক এমপি বাবুর অনুসারী ইউপি সদস্য গণপিটুনিতে নিহত নরসিংদীতে হাসপাতালে ভাংচুর ডাক্তার-নার্স ও কর্মচারীদের লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন থমথমে খাগড়াছড়ি: অনিদিৃষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা, ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন আজ শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষষ্ঠী সম্প্রীতির মেলবন্ধনকে অটুট রাখতে ২২৪টি পূজামণ্ডপে অনুদান: ডিসি  আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ বোধন’র মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরীকে বিদায় সংবর্ধনা না’গঞ্জে কিশোরী অপহরণে মূল হোতা আট বছর পর পিবিআই’র জালে উৎসবমুখর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধনে দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে: জেলা প্রশাসক উখিয়ার তুমব্রু সীমান্তে ৮০ হাজার ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা যুবক আটক দুর্গোৎসব উপলক্ষে সারাদেশে র‍্যাবের ২৮১ টহল দল মোতায়েন দুর্গোৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে ২ প্লাটুন র‍্যাব সদস্য নিয়োজিত থাকবে: সিইও ষড়যন্ত্র হলে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে জবাব দেবো, বিভক্ত হবো না;  মাসুদুজ্জামান আড়াইহাজারের নান্দনিক ইকোপার্ক প্রকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিনত হবে শ্যালিকার সঙ্গে পরকিয়ার জেরে স্ত্রীকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা দুর্গোৎসব উপলক্ষে ফতুল্লার পুজামন্ডপসহ প্রতিমা বিসর্জন ঘাট পরিদর্শনে ইউএনও নারায়ণগঞ্জে শারদীয় দুর্গোৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে মণ্ডপ পরিদর্শনে র‍্যাব-১১ টেকনাফে মানব পাচারকারী আটক, তিন ভুক্তভোগী উদ্ধার না’গঞ্জে এবারের দুর্গোৎসবে ৭০টি পূজামণ্ডপে আর্থিক অনুদান দিবেন মাসুদুজ্জামান না’গঞ্জে ফের মাদকবিরোধী ব্লক রেইড, শীর্ষ কারবারি আলম চানসহ আটক-২৪ টেকনাফে বিজিবির অভিযানে ৩৯ হাজার ২’শ ইয়াবা উদ্ধার গাইবান্ধায় সাঁওতাল শিশুদের স্কুল ও মাঠ দখলের চেষ্টা: তীব্র প্রতিবাদ গাইবান্ধায় স্কুল শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ দখল করে ধান ও মাছের চাষ ভাঙ্গায় ২ ইউনিয়নকে পূর্নবহালের দাবিতে মানববন্ধন, নিরীহ জনগণকে হয়রানি না করার আহ্বান শ্রীমঙ্গলে ৯দিন ব্যাপী নবদুর্গা পূজা শুরু কমলগঞ্জে দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত  নারায়ণগঞ্জে টাইগার সিমেন্ট কারখানায় ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট শ্রীমঙ্গলে শেভরনে ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখা নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত সন্ত্রাসী একাধিক মামলার আসামী আপেল গ্রেপ্তার  জলাবদ্ধতা নিরসনে ইউএনও তাসলিমা শিরিনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস না’গঞ্জে ডিপিডিসি ভবনে শ্রমিক ছব্দবেশে ডাকাতি ঘটনায় ৯ সদস র‍্যাবের জালে

ইসলামী শরী’য়ার দৃষ্টিতে উশরের বিধান ও বাংলাদেশের ভূমি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময়- ১১:২৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ৭৭৫ বার পড়া হয়েছে

মোঃ ফেরদৌস আলম।।

আল্লাহ তা’আলা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আর পৃথিবীকে করেছেন মানুষের জন্য বসবাস উপযোগী আবাস। যমীনকে করেছেন মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস। আর তাতে দিয়েছেন নানাবিধ ফল-ফলাদি ও ফসল। এসব ফলফলাদি ও ফসলের উপর ওশর কে করেছেন যাকাতের ন্যায় ফরজ। যা মুসলিম হিসেবে যথাযথ পদ্ধতিতে পালন করা আবশ্যক।
যেমন আল্লাহ বলেছেন, তিনি (আল্লাহ) যিনি লতাগুল্ম বিশিষ্ট আর লতা-বিশিষ্ট নয় এমন উদ্যানরাজি, খেজুর গাছ ও বিভিন্ন স্বাদের খাদ্যশস্য, একই ধরনের ও আলাদা ধরনের যায়তুন ও ডালিম সৃষ্টি করেছেন। যখন ফল ধরে তখন ফল খাও, আর ফসল তোলার দিন (নির্ধারিত উশর ও অনির্ধারিত দানের মাধ্যমে) হক আদায় কর, অপচয় করো না, নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা আনআম, আয়াত : ১৪১)
তিনি আরো বলেছেন, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক, আমি প্রচুর পানি বর্ষণ করেছি, এরপর ভূমিকে বিদীর্ণ করে দেই, অতঃপর তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যয়তুন, খেজুর, ঘন উদ্যান, আর নানান জাতের ফল আর ঘাস-লতাপাতা, তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের উপকারার্থে’ (আবাসা ৮০/২৪-৩২)।
উশর মূলত কি?
আরবী আসারা শব্দ থেকে উশর শব্দটির উৎপত্তি। আরবী ভাষায় আশারা শব্দের অর্থ দশ, আর উশরুন শব্দের অর্থ দশ ভাগের একভাগ। উশর হলো জমি থেকে উৎপন্ন ফসল ফলাদির যাকাত।
উশরী জমিনে উৎপাদিত শস্যের এক দশমাংস বা তার অর্ধেক গ্রহণ করাকে উশর বলা হয়।
যদি আল্লাহর দেয়া প্রাকৃতিক পানি দ্বারা জমি আবাদ করে, তাহলে এক দশমাংশ, আর যদি নিজস্ব পানি দ্বারা আবাদ করে, তাহলে নিসফে উশর তথা বিশ ভাগের একভাগ দান করবে।

উশরী ভূমি কি? কোন জমিতে উশর দেয়া আবশ্যক?
১. কোনো জমিনের মালিকেরা স্বেচ্ছায় মুসলমান হয়ে গেলে তাদের ভূমি উশরী হয়ে যাবে।
২. মুসলিম সেনাপতি কোনো কাফের রাষ্ট্র বিজয়ের পর সে এলাকার জমি মুসলমানদের মাঝে বন্টন করে দিলে।
৩. কোনো অনাবাদী জমি মুসলমান আবাদ করলে তার পাশের জমি ওশরী থাকলে তাও উশরী বলে সাব্যস্ত হবে।
৩. মুসলমান থেকে ওশরী জমি কিনলে তা উশরী হিসেবেই বাকি থাকবে।
৪. যে ভূমির অবস্থা জানা নেই তাও উশরী বলে ধর্তব্য হবে।

কোন কোন ফসল থেকে উশর দিতে হবে?
কোনো ফসলে উশর আসবে এ ক্ষেত্রে কুরআনের ভাষায় কর্তিত ফসল এবং জমীন থেকে যা উৎপন্ন হয় তার কথা বলেছেন। ঠিক হাদীসেও একই কথা এসেছে।
এ ক্ষেত্রে যা উৎপাদিত প্রয়োজনীয় মূল্যবান সামগ্রী তাতে উশর আসবে, অন্য কিছুতে নয়। সে হিসেবে ধান, পাট, গম, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাচা মাল ইত্যাদি, এমনকি যে বাঁশ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে উৎপন্ন করা হয়, তাতেও উশর আসবে।
ইমাম আবু হানীফার মতে ইচ্ছাকৃতভাবে উৎপাদন করা হয় এবং একেবারেই মূল্যহীন ও বেচাকেনার অযোগ্য নয় এমন যে কোন কৃষিজাত দ্রব্যের উশর দিতে হবে।
অন্য কতিপয় ফকীহ ও মুহাদ্দিস কয়েকটি নির্দিষ্ট কৃষিজাত দ্রব্যের ওপর বিশেষ শর্ত ও গুণাগুণ সাপেক্ষে উশর দেয়া বাধ্যতামূলক বলে রায় দিয়েছেন। যেমন, তা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া চাই এবং শুকিয়ে গুদামজাত করা যায় এমন হওয়া চাই। তারা দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন, “হে ঈমানদারগণ! যে সম্পদ তোমরা উপার্জন করেছ এবং যে সম্পদ আমি তোমাদের জন্য মাটি থেকে উদগত করেছি, তার মধ্য থেকে উত্তম অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় কর।”
মূসা ইবনু ত্বালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কর্তৃক মু’আয (রাঃ)- এর নিকট প্রেরিত পত্র আমাদের নিকট ছিল। যাতে তিনি গম, যব, কিসমিস ও খেজুরের যাকাত(উশর) গ্রহণ করেছেন।
উল্লিখিত হাদীছয়ে বর্ণিত চারটি শস্যের যাকাতের কথা বলা হলেও এই চারটিকেই নির্দিষ্ট করা হয়নি। বরং ওযন ও গুদামজাত সম্ভব সকল শস্যই এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন ধান, ভুট্টা ইত্যাদি।
অতএব গুদামজাত অসম্ভব এমন শস্যের যাকাত ফরয নয়। যেমন শাক-সবজি বা কাঁচা মালের কোন যাকাত (উশর) নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘শাক-সব্জিতে কোন যাকাত (ওশর) নেই’।
উল্লেখ্য যে, এ জাতীয় সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ এক বছর অতিক্রম করলে এবং নিসাব পরিমাণ হলে শতকরা ২.৫০ টাকা হারে যাকাত দিতে হবে।
আহলে ইলমরা এ ব্যাপারে একমত যে, নিশ্চয়ই গম, যব, খেজুর ও কিশমিশে সদকা (উশর) ওয়াজিব।

উশর এর নিসাব বা পরিমাণ কি?
উশর এর নিসাব আছে কী নেই, এ ব্যাপারে দুটি মত আছে। ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মতে উশর ফরয হবার জন্য নির্ধারিত কোনো নিসাব নেই। দলীল হলো, নবীজী স. এর হাদীস ও পবিত্র কুরআনের আয়াতের আম বর্ণনা কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করছে না। আর এতে গরীবদের উপকারও রয়েছে। তাই উশর ফরয হবার জন্য কোনো পরিমাণ নেই। যেমনটি বলা হয়েছে হিদায়ায়-, জমীনে কম বেশি যা-ই উৎপাদিত হবে, তাতে উশর আসবে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘বৃষ্টি ও ঝর্ণার পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা নালার পানিতে উৎপন্ন ফসলের উপর ‘ উশর’ (দশ ভাগের এক ভাগ) ওয়াজিব। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর ‘অর্ধ উশর’ (বিশ ভাগের এক ভাগ) ওয়াজিব’।(বুখারী হা/১৪৮৩, মিশকাত হা/ ১৭৯৭)
অধিকাংশ ইমামের মতে উশরের নিসাব হচ্ছে -“পাঁচ ওয়াসাক”। জমির ফসলের পরিমান “পাঁচ ওয়াসাক” হলে তার উশর আদায় করতে হবে। আর তা ফসল মাড়ায়ের দিন উশর হিসেবে বের করে দিতে হবে।
উল্লেখ্য যে, ১ ওয়াসাক সমান ৬০ ছা। অতএব ৫ ওয়াসাক সমান ৬০*৫=৩০০ ছা। ১ ছা সমান ২ কেজি ৫০০ গ্রাম হলে ৩০০ ছা সমান ৭৫০ কেজি হয়। অর্থাৎ ১৮ মণ ৩০ কেজি। এই পরিমাণ শস্য বৃষ্টির পানিতে উৎপাদিত হলে ১০ ভাগের ১ ভাগ উশর ফরজ। আর নিজে পানি সেচ দিয়ে উৎপাদন করলে ২০ ভাগের ১ ভাগ ওশর ফরজ।

এখন প্রশ্ন হতে পারে উশর খরচ বাদ দিয়ে নাকি খরচসহ দশমাংশ দিতে হবে?
ফসল করতে যা খরচ হয়েছে সেসব খরচ বাদ দিয়ে হিসেব করা যাবে না বরং জমিতে যতটুকু ফসল হয়েছে, যতটুকু উৎপাদিত হয়েছে তার মাঝে এক দশমাংশ দান করে দিতে হবে। এটাই বিধান। কর্মচারীর বেতন,গাড়ি ভাড়া কিংবা অন্যান্য খরচের জন্য ফসলের মূল্য বা ফসল বাদ দিয়ে দশমাংশ গণনা করা যাবে না বরং যা’ই উৎপন্ন হয় তার মধ্য থেকে এক দশমাংশ বা বিশ ভাগের একভাগ দান করতে হবে।
উশরের শরয়ী বিধান কি?
কুরআন ও হাদীসের দলীলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, উশরী ভূমি থেকে উশর আদায় করা ফরয। যেমন যাকাত আদায় করা ফরয।
এ ব্যাপারে কুরআনের দলীল হল- আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, “কর্তনের দিবসেই এর হক আদায় করে দাও।
ইবনে আব্বাস রা. বলেন, হকটি হলো ফরজ। আবার বলেন,এ হক হলো উশর ও নিসফে উশর ।

বাংলাদেশের ভূমি উশরী না খারাজী?
বাংলাদেশের ভূমি উশরী না খারাজী এ ব্যাপারে একদল ওলামা বলেন খারাজী। তাদের যুক্তি হলো, বাংলাদেশ ছিল পৌত্তলিকদের দেশ। এখানে সর্বপ্রথম মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান কুতুবুদ্দীন আইবেক এর সেনাপতি ইখতিয়ারউদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী ১২০৩ খ্রীষ্টাব্দে বাংলা বিজয় করেন। বিজয়ের পর তিনি বাংলাদেশের ভূমি মুসলমানদের মাঝে গণিমতের মাল হিসেবে বন্টন করেছিলেন কিনা একথা ইতিহাসে পাওয়া যায় না।
তবে স্বাভাবিক যুক্তিতে এ কথাই বুঝে আসে যে, এ বিশাল বাংলা যেমন পূর্বে হিন্দুদের হাতে ছিল, এমন জমিন ছিল রাষ্ট্রের অধীন, তেমনি রেখে দিয়েছিলেন বখতিয়ার খিলজী। তাদের সাথে খারাজের চুক্তি সাধন করেন, উশরের নয়। কারণ ওশর কাফেরদের সাথে হয় না। যা তার নিযুক্ত গভর্নরের মাধ্যমে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান পর্যন্ত পৌঁছত। আর আমরা জানি, মুসলিম বাহিনী কর্তৃক বিজিত এলাকা মুসলমানদের মাঝে বন্টন না করলে তা খারাজী ভূমি হিসেবেই বাকি থাকে। আর যে ভূমিতে একবার খারাজ সাব্যস্ত হয়, তা চিরকাল খারাজীই থাকে। সুতরাং, এ সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায় যে, বাংলাদেশের ভূমি খারাজী। উশরী নয়। (ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ন)
অপর দিকে ঐতিহাসিক গণ এ কথাই প্রমাণ করছে যে, বখতিয়ার খিলজী এ দেশে আসার পূর্বেই বাংলাদেশে প্রচুর মুসলমান ছিল। আর এ কথাও ঐতিহাসিক সত্য যে, আগত মুসলিম মনীষীদের ব্যাপক হাদিয়া তোহফা দিত এদেশের সাধারণ জনগণ। সুতরাং কয়েকটি সঙ্গত কারণ বিবেচনা করে আমাদের দেশের ভূমি উশরী, খারাজী নয়, বলেই সাব্যস্ত হয়।
ঐতিহাসিক বর্ণনা দ্বারা জানা যায় যে, খৃষ্টীয় সপ্তম শতকে হযরত ওমর রা. এর শাসনামলে কয়েক জন ধর্ম প্রচারক হযরত মামুন ও হযরত মুহাইমিনের নেতৃত্বে এ দেশে আগমন করেন। দ্বিতীয় বার হযরত হামেদুদ্দীন মুর্তজা, আব্দুল্লাহ ও আবু তালেব রহ. ইসলামের প্রচার অভিযানে এ দেশে আগমন করেন। খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে খলীফার নামাঙ্কিত মোহর প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যে পাওয়া যাওয়ায় গবেষকগণ মনে করেন যে, সে সময় হয়তো এ দেশে মুসলিম বণিকদের সমাগম হয়েছিল। এরপর ৮৭৪ খৃষ্টাব্দে হযরত বাইজিদ বোস্তামী চট্টগ্রামে, ১০৪৭ খৃষ্টাব্দে সুলতান মাহমুদ মাহীসাওয়ার বগুড়ার মহাস্থানগড়ে, শাহ মুহাম্মদ সুলতান রুমী ১০৫৩ খৃষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণা এলাকায় ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আগমণ করেন।
খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বল্লাল সেনের শাসনামলে বাবা আদম শহীদ র. এদেশে ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত ছিলেন বলে জানা যায়। এ শতাব্দীতে হযরত ফরীদ উদ্দীন গঞ্জে শকর (১১৭৭-১২৬৯ ইং) চট্টগ্রামে, হযরত শাহ মাখদুম রূপোস (১১৮৪ ইং) রাজশাহীতে ব্যাপক ভাবে ইসলাম প্রচার করেন। (হাদীস শাস্ত্র ও তার ক্রম বিকাশ)
বখতিয়ার খিলজীর ১২০৪ খৃষ্টাব্দের বাংলা বিজয়ের পূর্বেই প্রচুর পরিমাণ মুসলিম মনীষীদের সাহচর্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমানদের ভূমিকে খারাজী বলে সাব্যস্ত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং তা উশরী হিসেবেই ছিল। সেই ভূমি কতখানি বা কতগুলি তা জানা নেই। কিন্তু তাদের ভূমি যে উশরী ছিল এটা নিশ্চিত। কিন্তু বাকি হিন্দুদের অধিকৃত ভূমি খিলজী ভাগ করে দিয়েছিলেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। ঠিক তেমনি পূর্ব অবস্থায় বহাল রেখেছেন কিনা, তারও কোনো সুনির্দিষ্ট ভিত্তি নেই। তবে পূর্ব অবস্থায় রেখেছেন বলেই মনে হয়। কিন্তু মনে হওয়া এক জিনিস আর নিশ্চিত হওয়া ভিন্ন জিনিস।
সুতরাং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের ভূমি খারাজী এ কথা দ্বিধাহীন ভাবে বলা যায় না। কিন্তু কিছু ভূমি যে উশরী এ কথা সুনিশ্চিতভাবে বলা যায়।
আর উসূল হলো, যে ভূমি উশরী নাকি খারাজী তাতে সন্দেহ হয়, তাকে উশরী সাব্যস্ত করা হয়। সে হিসেবে এ দেশের ভূমি উশরী হওয়াই সঙ্গত। কেননা ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, উশর হলো মুসলমানদের অনুকূল বিষয় কারণ তাতে ইবাদাতের অর্থ আছে। আর খারাজ হলো কাফেরদের অনুকূল বিষয়, কারণ তাতে শাস্তির ধাঁচ আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

ট্যাগস:-

ইসলামী শরী’য়ার দৃষ্টিতে উশরের বিধান ও বাংলাদেশের ভূমি

আপডেট সময়- ১১:২৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

মোঃ ফেরদৌস আলম।।

আল্লাহ তা’আলা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আর পৃথিবীকে করেছেন মানুষের জন্য বসবাস উপযোগী আবাস। যমীনকে করেছেন মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস। আর তাতে দিয়েছেন নানাবিধ ফল-ফলাদি ও ফসল। এসব ফলফলাদি ও ফসলের উপর ওশর কে করেছেন যাকাতের ন্যায় ফরজ। যা মুসলিম হিসেবে যথাযথ পদ্ধতিতে পালন করা আবশ্যক।
যেমন আল্লাহ বলেছেন, তিনি (আল্লাহ) যিনি লতাগুল্ম বিশিষ্ট আর লতা-বিশিষ্ট নয় এমন উদ্যানরাজি, খেজুর গাছ ও বিভিন্ন স্বাদের খাদ্যশস্য, একই ধরনের ও আলাদা ধরনের যায়তুন ও ডালিম সৃষ্টি করেছেন। যখন ফল ধরে তখন ফল খাও, আর ফসল তোলার দিন (নির্ধারিত উশর ও অনির্ধারিত দানের মাধ্যমে) হক আদায় কর, অপচয় করো না, নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা আনআম, আয়াত : ১৪১)
তিনি আরো বলেছেন, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক, আমি প্রচুর পানি বর্ষণ করেছি, এরপর ভূমিকে বিদীর্ণ করে দেই, অতঃপর তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যয়তুন, খেজুর, ঘন উদ্যান, আর নানান জাতের ফল আর ঘাস-লতাপাতা, তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের উপকারার্থে’ (আবাসা ৮০/২৪-৩২)।
উশর মূলত কি?
আরবী আসারা শব্দ থেকে উশর শব্দটির উৎপত্তি। আরবী ভাষায় আশারা শব্দের অর্থ দশ, আর উশরুন শব্দের অর্থ দশ ভাগের একভাগ। উশর হলো জমি থেকে উৎপন্ন ফসল ফলাদির যাকাত।
উশরী জমিনে উৎপাদিত শস্যের এক দশমাংস বা তার অর্ধেক গ্রহণ করাকে উশর বলা হয়।
যদি আল্লাহর দেয়া প্রাকৃতিক পানি দ্বারা জমি আবাদ করে, তাহলে এক দশমাংশ, আর যদি নিজস্ব পানি দ্বারা আবাদ করে, তাহলে নিসফে উশর তথা বিশ ভাগের একভাগ দান করবে।

উশরী ভূমি কি? কোন জমিতে উশর দেয়া আবশ্যক?
১. কোনো জমিনের মালিকেরা স্বেচ্ছায় মুসলমান হয়ে গেলে তাদের ভূমি উশরী হয়ে যাবে।
২. মুসলিম সেনাপতি কোনো কাফের রাষ্ট্র বিজয়ের পর সে এলাকার জমি মুসলমানদের মাঝে বন্টন করে দিলে।
৩. কোনো অনাবাদী জমি মুসলমান আবাদ করলে তার পাশের জমি ওশরী থাকলে তাও উশরী বলে সাব্যস্ত হবে।
৩. মুসলমান থেকে ওশরী জমি কিনলে তা উশরী হিসেবেই বাকি থাকবে।
৪. যে ভূমির অবস্থা জানা নেই তাও উশরী বলে ধর্তব্য হবে।

কোন কোন ফসল থেকে উশর দিতে হবে?
কোনো ফসলে উশর আসবে এ ক্ষেত্রে কুরআনের ভাষায় কর্তিত ফসল এবং জমীন থেকে যা উৎপন্ন হয় তার কথা বলেছেন। ঠিক হাদীসেও একই কথা এসেছে।
এ ক্ষেত্রে যা উৎপাদিত প্রয়োজনীয় মূল্যবান সামগ্রী তাতে উশর আসবে, অন্য কিছুতে নয়। সে হিসেবে ধান, পাট, গম, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাচা মাল ইত্যাদি, এমনকি যে বাঁশ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে উৎপন্ন করা হয়, তাতেও উশর আসবে।
ইমাম আবু হানীফার মতে ইচ্ছাকৃতভাবে উৎপাদন করা হয় এবং একেবারেই মূল্যহীন ও বেচাকেনার অযোগ্য নয় এমন যে কোন কৃষিজাত দ্রব্যের উশর দিতে হবে।
অন্য কতিপয় ফকীহ ও মুহাদ্দিস কয়েকটি নির্দিষ্ট কৃষিজাত দ্রব্যের ওপর বিশেষ শর্ত ও গুণাগুণ সাপেক্ষে উশর দেয়া বাধ্যতামূলক বলে রায় দিয়েছেন। যেমন, তা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া চাই এবং শুকিয়ে গুদামজাত করা যায় এমন হওয়া চাই। তারা দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন, “হে ঈমানদারগণ! যে সম্পদ তোমরা উপার্জন করেছ এবং যে সম্পদ আমি তোমাদের জন্য মাটি থেকে উদগত করেছি, তার মধ্য থেকে উত্তম অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় কর।”
মূসা ইবনু ত্বালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কর্তৃক মু’আয (রাঃ)- এর নিকট প্রেরিত পত্র আমাদের নিকট ছিল। যাতে তিনি গম, যব, কিসমিস ও খেজুরের যাকাত(উশর) গ্রহণ করেছেন।
উল্লিখিত হাদীছয়ে বর্ণিত চারটি শস্যের যাকাতের কথা বলা হলেও এই চারটিকেই নির্দিষ্ট করা হয়নি। বরং ওযন ও গুদামজাত সম্ভব সকল শস্যই এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন ধান, ভুট্টা ইত্যাদি।
অতএব গুদামজাত অসম্ভব এমন শস্যের যাকাত ফরয নয়। যেমন শাক-সবজি বা কাঁচা মালের কোন যাকাত (উশর) নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘শাক-সব্জিতে কোন যাকাত (ওশর) নেই’।
উল্লেখ্য যে, এ জাতীয় সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ এক বছর অতিক্রম করলে এবং নিসাব পরিমাণ হলে শতকরা ২.৫০ টাকা হারে যাকাত দিতে হবে।
আহলে ইলমরা এ ব্যাপারে একমত যে, নিশ্চয়ই গম, যব, খেজুর ও কিশমিশে সদকা (উশর) ওয়াজিব।

উশর এর নিসাব বা পরিমাণ কি?
উশর এর নিসাব আছে কী নেই, এ ব্যাপারে দুটি মত আছে। ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মতে উশর ফরয হবার জন্য নির্ধারিত কোনো নিসাব নেই। দলীল হলো, নবীজী স. এর হাদীস ও পবিত্র কুরআনের আয়াতের আম বর্ণনা কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করছে না। আর এতে গরীবদের উপকারও রয়েছে। তাই উশর ফরয হবার জন্য কোনো পরিমাণ নেই। যেমনটি বলা হয়েছে হিদায়ায়-, জমীনে কম বেশি যা-ই উৎপাদিত হবে, তাতে উশর আসবে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘বৃষ্টি ও ঝর্ণার পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা নালার পানিতে উৎপন্ন ফসলের উপর ‘ উশর’ (দশ ভাগের এক ভাগ) ওয়াজিব। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর ‘অর্ধ উশর’ (বিশ ভাগের এক ভাগ) ওয়াজিব’।(বুখারী হা/১৪৮৩, মিশকাত হা/ ১৭৯৭)
অধিকাংশ ইমামের মতে উশরের নিসাব হচ্ছে -“পাঁচ ওয়াসাক”। জমির ফসলের পরিমান “পাঁচ ওয়াসাক” হলে তার উশর আদায় করতে হবে। আর তা ফসল মাড়ায়ের দিন উশর হিসেবে বের করে দিতে হবে।
উল্লেখ্য যে, ১ ওয়াসাক সমান ৬০ ছা। অতএব ৫ ওয়াসাক সমান ৬০*৫=৩০০ ছা। ১ ছা সমান ২ কেজি ৫০০ গ্রাম হলে ৩০০ ছা সমান ৭৫০ কেজি হয়। অর্থাৎ ১৮ মণ ৩০ কেজি। এই পরিমাণ শস্য বৃষ্টির পানিতে উৎপাদিত হলে ১০ ভাগের ১ ভাগ উশর ফরজ। আর নিজে পানি সেচ দিয়ে উৎপাদন করলে ২০ ভাগের ১ ভাগ ওশর ফরজ।

এখন প্রশ্ন হতে পারে উশর খরচ বাদ দিয়ে নাকি খরচসহ দশমাংশ দিতে হবে?
ফসল করতে যা খরচ হয়েছে সেসব খরচ বাদ দিয়ে হিসেব করা যাবে না বরং জমিতে যতটুকু ফসল হয়েছে, যতটুকু উৎপাদিত হয়েছে তার মাঝে এক দশমাংশ দান করে দিতে হবে। এটাই বিধান। কর্মচারীর বেতন,গাড়ি ভাড়া কিংবা অন্যান্য খরচের জন্য ফসলের মূল্য বা ফসল বাদ দিয়ে দশমাংশ গণনা করা যাবে না বরং যা’ই উৎপন্ন হয় তার মধ্য থেকে এক দশমাংশ বা বিশ ভাগের একভাগ দান করতে হবে।
উশরের শরয়ী বিধান কি?
কুরআন ও হাদীসের দলীলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, উশরী ভূমি থেকে উশর আদায় করা ফরয। যেমন যাকাত আদায় করা ফরয।
এ ব্যাপারে কুরআনের দলীল হল- আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, “কর্তনের দিবসেই এর হক আদায় করে দাও।
ইবনে আব্বাস রা. বলেন, হকটি হলো ফরজ। আবার বলেন,এ হক হলো উশর ও নিসফে উশর ।

বাংলাদেশের ভূমি উশরী না খারাজী?
বাংলাদেশের ভূমি উশরী না খারাজী এ ব্যাপারে একদল ওলামা বলেন খারাজী। তাদের যুক্তি হলো, বাংলাদেশ ছিল পৌত্তলিকদের দেশ। এখানে সর্বপ্রথম মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান কুতুবুদ্দীন আইবেক এর সেনাপতি ইখতিয়ারউদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী ১২০৩ খ্রীষ্টাব্দে বাংলা বিজয় করেন। বিজয়ের পর তিনি বাংলাদেশের ভূমি মুসলমানদের মাঝে গণিমতের মাল হিসেবে বন্টন করেছিলেন কিনা একথা ইতিহাসে পাওয়া যায় না।
তবে স্বাভাবিক যুক্তিতে এ কথাই বুঝে আসে যে, এ বিশাল বাংলা যেমন পূর্বে হিন্দুদের হাতে ছিল, এমন জমিন ছিল রাষ্ট্রের অধীন, তেমনি রেখে দিয়েছিলেন বখতিয়ার খিলজী। তাদের সাথে খারাজের চুক্তি সাধন করেন, উশরের নয়। কারণ ওশর কাফেরদের সাথে হয় না। যা তার নিযুক্ত গভর্নরের মাধ্যমে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান পর্যন্ত পৌঁছত। আর আমরা জানি, মুসলিম বাহিনী কর্তৃক বিজিত এলাকা মুসলমানদের মাঝে বন্টন না করলে তা খারাজী ভূমি হিসেবেই বাকি থাকে। আর যে ভূমিতে একবার খারাজ সাব্যস্ত হয়, তা চিরকাল খারাজীই থাকে। সুতরাং, এ সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায় যে, বাংলাদেশের ভূমি খারাজী। উশরী নয়। (ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ন)
অপর দিকে ঐতিহাসিক গণ এ কথাই প্রমাণ করছে যে, বখতিয়ার খিলজী এ দেশে আসার পূর্বেই বাংলাদেশে প্রচুর মুসলমান ছিল। আর এ কথাও ঐতিহাসিক সত্য যে, আগত মুসলিম মনীষীদের ব্যাপক হাদিয়া তোহফা দিত এদেশের সাধারণ জনগণ। সুতরাং কয়েকটি সঙ্গত কারণ বিবেচনা করে আমাদের দেশের ভূমি উশরী, খারাজী নয়, বলেই সাব্যস্ত হয়।
ঐতিহাসিক বর্ণনা দ্বারা জানা যায় যে, খৃষ্টীয় সপ্তম শতকে হযরত ওমর রা. এর শাসনামলে কয়েক জন ধর্ম প্রচারক হযরত মামুন ও হযরত মুহাইমিনের নেতৃত্বে এ দেশে আগমন করেন। দ্বিতীয় বার হযরত হামেদুদ্দীন মুর্তজা, আব্দুল্লাহ ও আবু তালেব রহ. ইসলামের প্রচার অভিযানে এ দেশে আগমন করেন। খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে খলীফার নামাঙ্কিত মোহর প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যে পাওয়া যাওয়ায় গবেষকগণ মনে করেন যে, সে সময় হয়তো এ দেশে মুসলিম বণিকদের সমাগম হয়েছিল। এরপর ৮৭৪ খৃষ্টাব্দে হযরত বাইজিদ বোস্তামী চট্টগ্রামে, ১০৪৭ খৃষ্টাব্দে সুলতান মাহমুদ মাহীসাওয়ার বগুড়ার মহাস্থানগড়ে, শাহ মুহাম্মদ সুলতান রুমী ১০৫৩ খৃষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণা এলাকায় ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আগমণ করেন।
খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বল্লাল সেনের শাসনামলে বাবা আদম শহীদ র. এদেশে ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত ছিলেন বলে জানা যায়। এ শতাব্দীতে হযরত ফরীদ উদ্দীন গঞ্জে শকর (১১৭৭-১২৬৯ ইং) চট্টগ্রামে, হযরত শাহ মাখদুম রূপোস (১১৮৪ ইং) রাজশাহীতে ব্যাপক ভাবে ইসলাম প্রচার করেন। (হাদীস শাস্ত্র ও তার ক্রম বিকাশ)
বখতিয়ার খিলজীর ১২০৪ খৃষ্টাব্দের বাংলা বিজয়ের পূর্বেই প্রচুর পরিমাণ মুসলিম মনীষীদের সাহচর্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমানদের ভূমিকে খারাজী বলে সাব্যস্ত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং তা উশরী হিসেবেই ছিল। সেই ভূমি কতখানি বা কতগুলি তা জানা নেই। কিন্তু তাদের ভূমি যে উশরী ছিল এটা নিশ্চিত। কিন্তু বাকি হিন্দুদের অধিকৃত ভূমি খিলজী ভাগ করে দিয়েছিলেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। ঠিক তেমনি পূর্ব অবস্থায় বহাল রেখেছেন কিনা, তারও কোনো সুনির্দিষ্ট ভিত্তি নেই। তবে পূর্ব অবস্থায় রেখেছেন বলেই মনে হয়। কিন্তু মনে হওয়া এক জিনিস আর নিশ্চিত হওয়া ভিন্ন জিনিস।
সুতরাং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের ভূমি খারাজী এ কথা দ্বিধাহীন ভাবে বলা যায় না। কিন্তু কিছু ভূমি যে উশরী এ কথা সুনিশ্চিতভাবে বলা যায়।
আর উসূল হলো, যে ভূমি উশরী নাকি খারাজী তাতে সন্দেহ হয়, তাকে উশরী সাব্যস্ত করা হয়। সে হিসেবে এ দেশের ভূমি উশরী হওয়াই সঙ্গত। কেননা ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, উশর হলো মুসলমানদের অনুকূল বিষয় কারণ তাতে ইবাদাতের অর্থ আছে। আর খারাজ হলো কাফেরদের অনুকূল বিষয়, কারণ তাতে শাস্তির ধাঁচ আছে।