অক্টোবরেই চূড়ান্ত হবে বিএনপির ২০০ প্রার্থীর ভাগ্য

- আপডেট সময়- ১১:৪৬:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫ ২১ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন নিউজ ডেস্ক।।
এমাসেই ২০০ আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবে বিএনপি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারা প্রার্থী হবেন, তা দল থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে দলটির স্থায়ী কমিটির কোনো কোনো সদস্য চান, বিভ্রান্তি এড়াতে এসব প্রার্থিতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হোক।দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে এমন পরামর্শ দিয়ে তারা বলেছেন, নইলে নির্বাচনের মাঠে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা থেকে যাবে।
গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জানা গেছে, প্রার্থী বাছাইয়ে তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে পাঁচটি জরিপ হয়েছে। এ ছাড়া দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও মত নিয়েছেন তিনি। সবকিছু বিবেচনায় প্রায় ১৫০ আসনে প্রার্থিতা মোটামুটি চূড়ান্ত। তবে একাধিক প্রার্থী এবং কোন্দল থাকায় শতাধিক আসন ‘জটিলতা’ বিবেচনা করে সংকট নিরসনে সাংগঠনিক উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এসব আসনের প্রার্থীকে কেন্দ্রে ডেকে দল থেকে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।
আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণার পক্ষে নেতারা
দলের এই সাংগঠনিক উদ্যোগের পরই মূলত আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপি। অবশ্য এ ক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীদের না জানাতে কেন্দ্র থেকে দেওয়া হচ্ছে কঠোর নির্দেশনা। তবে মাঠে একাধিক প্রার্থী থাকায় এভাবে গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে একজনকে সবুজ সংকেত দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি। এ পরিস্থিতিতে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সর্বশেষ বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠে না থাকায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকেই বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে জামায়াত ইতোমধ্যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে মাঠে থাকলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত তাদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেনি। এ অবস্থায় দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা গত মাসে তাদের প্রতিবেদনে দ্রুত সময়ে প্রার্থিতা ঘোষণা করতে পরামর্শ দেন।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আজ বৈঠক
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচন সামনে রেখে চলতি অক্টোবরের মধ্যেই ‘ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল’ প্রস্তুত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসে, সারাদেশে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার যে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে, সেটির অধিকাংশ কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে শিবির এবং বর্তমানে জামায়াতপন্থি। এমনটা হলে নির্বাচনে তারা একটা বিশেষ দলকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখতে পারে। এতে করে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই সতর্কভাবে দল-মত নির্বিশেষে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে যাতে এই তালিকা প্রণয়ন করা হয়, সে ব্যাপারে ইসিকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এ লক্ষ্যে তারা বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানাবে।
প্রশাসনে জামায়াতীকরণ বিষয়ে উদ্বেগ
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়েও আলোচনা হয়। বিএনপি নেতারা মনে করছেন– কিছু কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য, তৎপরতা ও কার্যক্রমে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন নিয়ে কিছু উপদেষ্টা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন। বিশেষ করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জামায়াতীকরণ করা হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে এসব রদবদল করা হচ্ছে বলেও নেতাদের অভিযোগ। এসব ঘটনায় বিএনপি উদ্বিগ্ন। এই উদ্বেগের কথা জানাতে এবং একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরতে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে।
ধর্মীয় প্রচারের বিপরীতে রাজনৈতিক কৌশল
নির্বাচন সামনে রেখে একটি রাজনৈতিক দলের ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ ভোটারকে বিভ্রান্ত করার বিষয়ে আলোচনা করেন বিএনপি নেতারা। সেখানে ধর্মীয় প্রচারের বিপরীতে রাজনৈতিক কৌশল নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এক্ষেত্রে দলের নারী সংগঠনকে প্রত্যেক আসনে পুরো মাত্রায় মাঠে নামানো হবে। সেখানে ধর্মকে ব্যবহার করে যারা প্রচারণায় নেমেছেন, তাদের মুখোশ উন্মোচন ছাড়াও দেশের গণতন্ত্র উন্নয়নে ধর্মের কোনো সংযোগ নেই জানানো হবে।
এদিকে জেন-জি প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে ছাত্র ও যুব সংগঠনকেও পুরোপুরি সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এই উদ্যোগে বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের সচেষ্ট করতে, তাদের চাহিদা অনুধাবন করে দলের প্রচার করা হবে। সেখানে বিএনপি ক্ষমতায় এলে এক বছরের মধ্যে এক কোটি তরুণের কর্মসংস্থান, কৃষক কার্ড দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সংগৃহীত:
নিউজটি শেয়ার করুন..

-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ