সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, আন্তর্জাতিক, ইসলাম ও জীবন, উপজেলা প্রশাসন, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দেশজুড়ে, নারী ও শিশু, বাংলাদেশ
ইউএনও’র হস্তক্ষেপে আশার আলো দেখছে মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত রিয়া মনি

প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ১২:৫৩:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫ ৫২ বার পড়া হয়েছে

ফেরদৌস আলম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি।।
প্রাণোচ্ছ্বল রিয়া মনি (১২) এখন প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে সময় কাটায়। গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের গোদারহাট গ্রামের দিনমজুর রাজু মিয়া ও সাজেদা বেগমের একমাত্র সন্তান রিয়া স্থানীয় রায়দাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। ইউনিয়ন পর্যায়ের দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া এই কিশোরী খেলাধুলা ও পড়াশোনায় ছিল অদম্য। কিন্তু গত ঈদুল ফিতরের দিন বালাসিঘাটে একদল যুবকের উচ্ছৃঙ্খল উদযাপনে চলন্ত নৌকার ছই ভেঙে পড়ে তার মেরুদণ্ড চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়।
ঈদের দিন রিয়া তার তিন বান্ধবীসহ বালাসিঘাটে ঘুরতে গিয়েছিল। ফেরার সময় নৌকায় একদল যুবক ও হিজড়ার নাচানাচির সময় ছইটি ভেঙে রিয়ার শরীরের ওপর পড়ে। বান্ধবী রাদিয়া জানায়, “বাকিরা বেরিয়ে এলেও রিয়াকে টেনে তোলা হয়। সে সময় ভাবিনি এত বড় বিপদ হবে।” স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে পাঁচ দিন পর তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা নির্ণয় করেন, রিয়ার মেরুদণ্ড মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মূত্রথলিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
রিয়ার মা সাজেদা বেগম, যিনি ঢাকার একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন, মেয়ের দুর্ঘটনার পর চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরেছেন। তিনি বলেন, “চিকিৎসকরা বলেছেন, উন্নত ফিজিওথেরাপি ও অপারেশন করালে রিয়া সুস্থ হতে পারে। কিন্তু ঋণ করে চলা চিকিৎসা এখন অসম্ভব।” পরিবারের সমস্ত সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে, এবং বাড়িওয়ালার ভাড়ার দাবির মুখেও তারা সংকটে ।
গতকাল ২২ জুলাই, গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ আল হাসান রিয়ার বাড়ি পরিদর্শন করেন। তার নির্দেশে রিয়াকে একটি হুইলচেয়ার, এক সপ্তাহের শুকনো খাবার (চাল, ডাল, তেল) এবং প্রাথমিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
ইউএনও বলেন, “এই ঘটনা শুধু একটি শিশুর দুর্ভাগ্য নয়, সমাজের জন্য করুণ বাস্তবতা। প্রশাসন সার্বিক সহায়তা দেবে।” রিয়ার মা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “হুইলচেয়ার পেয়ে রিয়া ঘরে নড়াচড়া করতে পারবে। এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি।”
রিয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহাজাদী হাবিবা সুলতানা বলেন, “ওর মতো মেধাবী শিশুর জীবন থেমে যাক, তা মেনে নেওয়া যায় না।” রিয়ার বাবা রাজু মিয়া আশা প্রকাশ করেন, “দেশবাসী এগিয়ে এলে রিয়া আবার হাঁটবে, স্কুলে যাবে।”
স্থানীয়রা রিয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি মানসম্মত হুইলচেয়ার ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা তহবিলের দাবি জানিয়েছেন।
রিয়ার পুনর্বাসনে প্রয়োজন নিয়মিত ফিজিওথেরাপি, বিশেষায়িত সার্জারি এবং দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ। চিকিৎসকরা অনুমান করেন, এই খরচ কয়েক লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে রিয়ার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় রিয়ার নামে তহবিল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানা যায়।
ইউএনও মাহমুদ আল হাসান বলেন, “আমরা রিয়াকে ভ্যানসহ মাসিক ভাতা ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিশেষ সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা জরুরি।”
নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগস:-

-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ