সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, গণমাধ্যম, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, দেশজুড়ে, নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পুলিশ
না’গঞ্জ প্রেসক্লাবে দুর্বৃত্তদের হামলায় সাংবাদিক আবু সাউদসহ আহত-৫
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৪:০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ২৫ বার পড়া হয়েছে
প্রেসক্লাব দখলের উদ্দেশ্যেই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই তান্ডব সংঘটিত …!?
ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
নারায়ণগঞ্জের প্রানকেন্দ্র চাষাড়ায় সংবাদিকদের বড় সংগঠন প্রেসক্লাবে দুর্বৃত্তদের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার ২৯ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ৫৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে দুর্বৃত্তরা হামলার ঘটনা ঘটায়। এসময় নিউজরুমে থাকা টেলিভিশন, কম্পিউটার সহ বেশ কিছু আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
হামলা আহত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক,সোজা সাপটা পত্রিকার সম্পাদক, আবু সাউদ মাসুদ এছাড়া সময় টেলিভিশনের চিত্র সাংবাদিক আরিফ হোসেন এবং প্রতিষ্ঠানের স্টাফ সহ অন্তত ৫ জন।
এ হামলার নেতৃত্বে থাকা মাসুদ রানা রনি (৪২) কে আটক করেছে নারায়ণগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ।
হামলার ঘটনায় পরে ১৪ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় একটি মামলা করে প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ।
প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপক মো: মাসুম বিল্লাহ বাদী হয়ে সন্ধ্যায় এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে হামলার নেতৃত্বে থাকা মাসুদ রানা রনিকে।
জানা গেছে, আটককৃত মাসুদ রানা রনি (৪২) হামলার মূল মাষ্টার মাইন্ড ফতুল্লার মাসদাইর তালা ফ্যাক্টরি এলাকার বাসিন্দা।
এছাড়াও মামলায় এজাহারনামীয় অন্য আসামিরা হলো-ফতুল্লার কাশীপুর ইউনিয়নের বাঁশমুলী এলাকার মো: রাশেদুল ইসলাম (৪২), সদর উপজেলার সৈয়দপুর থানার আলামীন নগর এলাকার আলী হোসেনের ছেলে হত্যা মামলার আসামী ও মাদক ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর (৪৬), ফতুল্লার কাশীপুর বাঁশমুলী এলাকার মো: কাইয়ুম (৪৩), রফিকুল্লাহ রিপন, শহীদ (৪০), ফতুল্লার কাশীপুরের বাংলাবাজার এলাকার আলী হোসেন টিটু দেওয়ান (৫০), মশিউর (৪২), জাহিদ (৩৮), মেহেদী (৩৫), লিমন দেওয়ান (২৮), মো. ইমরান (৪০), আশিক (৩৫) ও মো.কমল (৩৮)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর একটার দিকে প্রেসক্লাব ভবনের পাঁচ তলার নিউজ রুমে প্রতিদিনের ন্যায় সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে কাজ করছিলেন। এসময় ১নং এজাহারনামীয় আসামি মাসুদ রানা রনির নেতৃত্বে এজাহারে থাকা অপর আসামিরা সহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনের একটি দুর্বৃত্ত দল পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সেখানে প্রবেশ করে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়।এসময়ে অফিসে থাকা বেশ কয়েকটি কম্পিউটার সহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। পরে প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কার্যকরী কমিটির সদস্য আবু সাউদ মাসুদকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার উপর অতর্কিত হামলা চালায়।
পরবর্তীতে সাংবাদিক নেতা আবু সাউদ মাসুদকে রক্ষা করতে উপস্থিত অন্যান্য সাংবাদিক ও স্টাফরা এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তাদের উপরও চড়াও হয়ে এলোপাথারি মারধর করে।
হামলায় সাংবাদিক ও স্টাফ সহ অন্তত ৫ জন গুরুতর আহত হন।
পরে প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে অবহিত করলে তারা ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেন।
এ ঘটনার খবর পুলিশকে জানানো হলে সাথে সাথে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে হামলার নেতৃত্বে থাকা মাষ্টার মাইন্ড মাসুদ রানা রনিকে হাতেনাতে আটক করে। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তার অন্য সহযোগী হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
হামলায় আহত নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাউদ মাসুদ বলেন, ‘আটককৃত রনি হামলার মাষ্টার মাইন্ড নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সে মহানগর যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব দখল করা সহ আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রনির নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জন যুবক নিউজ রুমে ঢুকে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এসময় আমি প্রতিবাদ করলে রনি আমার শরীরে আঘাত করে। এসময় রনির সাথে তার সহযোগীরাও সন্ত্রাসী কায়দায় আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালায়। আমি হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবী জানাচ্ছি।’
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন বলেন, ‘আমরা দুপুরে নিউজ রুমে বসে কাজ করছিলাম। হঠাৎ রনির নেতৃত্ব থাকা বেশ কয়েকজন যুবক হামলা চালায়। রনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলেও তবে সে কোন পত্রিকায় কাজ করে সেটা আমার জানা নেই। আমার জানামতে সে ছাত্রদল করতো। রনির নেতৃত্বে তার সাথে ২৫/৩০ জনের একটি গ্রুপ নিউজ রুমে ঢুকে প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাউদ মাসুদ সাহেবকে কিল ঘুষি মারে। রনির সাথে থাকা তার অন্যান্য সহযোগীরাও হামলা চালায়। এসময় আমাদের সাংবাদিক ও স্টাফ সহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পূর্বে স্থাপিত সাংবাদিক সংগঠন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের একটা ঐতিহ্য ও সুনাম আছে। সব সরকারের আমলেই বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা এই প্রেসক্লাবে এসেছেন। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ইতিপূর্বে কখনও ঘটেনি। এই প্রেসক্লাবের অনেক প্রবীণ সাংবাদিক জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বড় বড় দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা অন্যান্য সদস্যরা প্রত্যেকেই সকল জাতীয় সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলে কর্মরত আছি। আমাদের প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সামাজিক মর্যাদা আছে। এখানে কোনো সাহেল সে বাহির থেকে এসে হামলা করল, কি উদ্দেশ্যে করলো, কিংবা করা এর নেপথ্যে আছে আমরা তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি প্রেস ক্লাবের মতো জায়গায় যদি সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়ে থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোন পর্যায়ে আছে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আমরা এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন সহ ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সরকারকে আহবান করছি তারা যেন এ ঘটনার ন্যায়বিচার করেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে মামলাটি গ্রহণ করেছি। হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে একজনকে আটকও করা হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।