শিগ্রই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চূড়ান্ত তালিকা দেয়া হবে: নাহিদ
- আপডেট সময়- ০৪:০৬:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ অগাস্ট ২০২৪ ৫১ বার পড়া হয়েছে
অনলাইন ডেস্ক।।
নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের চূড়ান্ত তালিকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ১৩ সমন্বয়ক এবং সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতিও এই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন। তাঁকে প্রধান করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হবে। এই সরকারের একটি প্রাথমিক তালিকা দেওয়া হয়েছে। যেখানে নাগরিক সমাজসহ ছাত্র প্রতিনিধিত্বও রয়েছে।
অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই তালিকাটি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।
নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করার সিদ্ধান্ত নিলেও এই সরকারে অন্য কারও নাম এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। আমরা ১০ থেকে ১৫ জনের নাম প্রস্তাব করেছি। সবার সঙ্গে আলোচনা করে এই সরকার গঠন করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা সমন্বয়কবৃন্দ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটি আমাদের সঙ্গে সম্মানিত শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান একত্রে বঙ্গভবনে এসেছিলাম। মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের একটি ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। ছাত্র ও নাগরিক অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষ থেকে যে সরকারের প্রস্তাব করা হবে, সেই প্রস্তাবিত সরকারই চূড়ান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে সেই নিশ্চয়তা আমরা বঙ্গভবন থেকে পেয়েছি।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, তিনবাহিনীর প্রধান ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা অভ্যুত্থানকারী ছাত্র–নাগরিকদের সম্মান জানিয়েছেন। পাশাপাশি দেশে যে অরাজক পরিস্থিত চলছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাবো, অভ্যুত্থানকারী ছাত্র–জনতার প্রস্তাবকারী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। জনগণ যাতে সেই আস্থা রাখেন।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদেরকে অবশ্যই স্থাপনা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে হবে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে দ্রুতই জনগণের মধ্যে শান্তি–শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়োগ করা হবে। ছাত্র নাগরিকেরা আজকেও ঢাকা শহরে ট্রাফিকের দায়িত্ব নিয়েছেন, মন্দির পাহারা দিচ্ছেন সবাই এটির প্রশংসা করেছেন। দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কোনো ধরনের নাশকতা, লুটপাট না হয় সেজন্য পাহারা দিতে হবে, সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। সবাই মিলে দেশ গঠনের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করব।
ড. ইউনূস বর্তমানে ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে কবে আসবেন সাংবাদিকেরা সেটি জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, ওনার (ড. ইউনূস) একটি মাইনর অপারেশন হয়েছে। উনি আগামীকালই দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। হয়তোবা আগামীকাল রাতে অথবা পরশুদিন সকালের মধ্যে দেশে এসে পৌঁছাবেন। এর মধ্যে আমাদের তালিকাটিও চূড়ান্ত হয়ে যাবে। হয়তো আমরা ২৪ ঘণ্টা কিংবা অধিক সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথের বিষয়টি করে ফেলতে পারব।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের ওপর হামলা প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা সবাইকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্র-জনতা একটি অভ্যুত্থান করেছে, সেটি রক্ষা করে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করার দায়িত্ব তাদের। আমরা দেখেছি, বিভিন্নভাবে নাশকতা করা হচ্ছে, পরিকল্পতিভাবে হামলা করে এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সবার প্রতি আহ্বান থাকবে এই ধরনের হামলা, লুটপাট বন্ধের। তারা এসব রুখে দেবেন এবং সংবাদকর্মীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। আপনারা থানাগুলোকেও প্রয়োজনে পাহারা দেবেন। যারা গণহত্যায় জড়িত ছিলো, দুর্নীতিতে জড়িত ছিলো তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় আনা হবে। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আমরা প্রতিহিংসা রক্তপাত চাই না। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ চাই।
বৈঠকের আলোচনা নিয়ে নাহিদ ইসলাম ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চান, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার বিধান রয়েছে কিনা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা একটা এক্সট্রাঅর্ডিনারি সিচুয়েশনে (অস্বাভাবিক পরিস্থিতি) এই সরকার গঠন করতে যাচ্ছি। এই সময়ে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে বৈধতা দেওয়ার সাংবিধানিক রীতি আছে। নিয়ম আছে সেটা ফলো করা হবে। সরকারের মেয়াদ এখনো ঠিক করা হয়নি।
আসিফ নজরুল আরও বলেন, আমাদের ছাত্র–জনতা, সমন্বয়কেরা ওনাদের প্রস্তাবক্রমে ড. ইউনূসকে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি সম্মতি জানিয়েছেন। তিনি দেশে আসার পরে এই ব্যাপারে একটা ঘোষণা আসবে।
বৈঠক নিয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাদেরকে আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই, জানাচ্ছি ।