নারায়ণগঞ্জে ধানের শীষের কান্ডারী মাসুদুজ্জামানের জনসমাবেশ জনসমুদ্র পরিনত
- আপডেট সময়- ০৬:০০:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ১ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি।।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিতে বিভক্তি নতুন কিছু নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও এই বিভক্তি ছিল প্রকাশ্য। গণঅভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি বদলালেও দলীয় কোন্দলের পুরোনো ছায়া কাটেনি। বরং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়েছে। কিন্তু সেই বিভক্ত বিএনপিকেই এক সুতোয় গেঁথে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বিশিষ্ট সমাজসেবক ব্যবসায়ী এবং ক্রীড়াসংগঠক মাসুদুজ্জামান মাসুদ।
মতপার্থক্যে বিভক্ত সকল নেতা কর্মীদের এক মঞ্চে দাঁড় করানোর তার এই ‘ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব’ অনেককে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মাসুদুজ্জামান।
এক সময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা মাসুদুজ্জামান মাসুদ তরুণ বয়সেই ব্যবসায়ে মনোনিবেশ করেন সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। এত ব্যস্ততা সত্বেও কিন্তু দলের দুর্দিনে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলেন সবসময়।
এরই পুরষ্কার হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৫ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে বিএনপি তাকে মূল্যয়ান করে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নির্ধারণ করে। কিন্তু পথটা তত সহজ ছিলো না..! কিন্তু মনোনয়ন পাওয়ার আগ থেকেই মহানগর বিএনপির নেতৃত্বের বড় একটি অংশ তার ঘোর বিরোধীতা শুরু করেন।
মনোনয়ন পাওয়ার পর অনেক নেতাই দলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় থাকলেও মনোনয়ন-বঞ্চিত কয়েকজন শীর্ষ নেতারা বেঁকে বসেন। তারা উল্টো দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন শুরু করেন। এমনকি তার প্রার্থীতা বাতিলেরও দাবি জানান।কিন্তু শুরু থেকে ঐক্যের আহ্বান জানানো মাসুদুজ্জামান ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়ে বারবারই নেতাদের মান ভাঙাতেও চেষ্টা চালিয়ে সফল হন। নবীন ও প্রবীণসহ তৃণমূলের সকলেই এখন মাসুদুজ্জামানের পক্ষে কাজ করছেন।
মাসুদুজ্জামানের ধৈর্যের ফল শ্রুতিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মহানগর বিএনপির ডাকা বিএনপির বিশাল জনসমাবেশের ঢাক দেন মহানগর বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা টিপু। সদর ও বন্দরের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এ সমাবেশে যোগ দিয়ে বিভক্ত বিএনপির বৃহৎ স্বার্থে ঐক্যের প্রমাণ দিয়েছেন। এ ঐক্য সাড়া ফেলেছে সাধারণ ভোটারদের মাঝেও।
প্রসঙ্গেত উল্লেখ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি বহু বছর ধরে দুই ভাগে বিভক্ত। এই প্রথম- দলীয় কোন্দল ভুলে সব শীর্ষ নেতা একমঞ্চে উপস্থিত। এ জনসভা ছিল সেই ঐক্যের প্রতীক।
নগরীর বরফকল মাঠে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। দুপুর থেকেই বরফকল মাঠে মানুষের ঢল নামে। এতে দেখা যায় বিএনপির নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকেও। মঞ্চে বক্তৃতা চলছে, আর শহর মুখর স্লোগানে। এর মধ্যেই মঞ্চে উঠে মাসুদুজ্জামান উচ্চারণ করেন ধানের শীষের স্লোগান। তার কণ্ঠের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গর্জে ওঠে জনসমুদ্র।
এ-র আগে সভাকে ঘিরে দুপুরের পর থেকেই সদর ও বন্দরের সব ওয়ার্ড থেকে মিছিল আসতে থাকে। নৌপথে ট্রলার ও খেয়া পার হয়ে আসে মানুষ। বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, ওলামা দল, সবাই ব্যানার নিয়ে মিছিলে যোগ দেয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও আলাদা মিছিলে হাজির হন। সবার হাতেই মাসুদুজ্জামানের ছবি-সংবলিত প্ল্যাকার্ড, ব্যানার আর মাথায় ছিল প্রার্থীর ছবি-যুক্ত কাপড়।
বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে মাসুদুজ্জামান শুধু একজন ব্যবসায়ী নন; তিনি সমাজসেবক, ক্রীড়া অনুরাগী ও মানবিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সংকটে তিনি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মডেল ডি ক্যাপিটাল গ্রুপের পরিচালক হিসেবে ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলেও তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
দলীয় নেতাকর্মীদের কাছেও তিনি একজন আস্থার জায়গা।
মনোনয়ন প্রত্যাশা ঘোষণা করার পর থেকেই বিএনপির একটি অংশ তাকে তীব্রভাবে সমালোচনা করে আসছে। নানাভাবে তাকে হেয় করা হয়েছে, জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিতর্কে, সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা বাতিলের দাবি পর্যন্ত ওঠেছে।
কিন্তু এসব আক্রমণে পাল্টা প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে তিনি বেছে নিয়েছেন ‘সহনশীলতা’। ব্যক্তিগত আক্রমণেও তিনি প্রতিশোধমুখী হননি। বরং অভিমানী নেতাদের মন ভাঙাতে নিয়মিত যোগাযোগ করেছেন। এমনকি যিনি প্রকাশ্যে তাকে অপমান করেছেন, অসুস্থ হওয়ার পর সেই নেতার শয্যার পাশে গিয়েও বসেছেন মাসুদুজ্জামান।
এরই ফল পেয়েছেন বৃহস্পতিবার জনসভার মধ্য দিয়ে। এ সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদ, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, সরকার হুমায়ুন কবির, বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, মনির হোসেন খান, নুর উদ্দিন আহমেদ, আনোয়ার হোসেন আনুসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতা।
দলীয় কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, মাসুদুজ্জামান শুধু জনপ্রিয়ই নন, তিনি বিভক্ত বিএনপিকে ঐক্যের পথে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। বৃহস্পতিবারের জনসভা সেই সত্যকেই স্পষ্ট করেছে। দীর্ঘদিনের কোন্দলে বিপর্যস্ত দলকে এক মঞ্চে দাঁড় করানো, বিরোধী নেতাদের মন জয় করা এবং তৃণমূল পর্যন্ত সাড়া জাগানো, সব মিলিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন এক সমন্বয়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পেরেছেন তিনি।
নিউজটি শেয়ার করুন..

-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ


















































































































































































