সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, আবহাওয়া ও জলবায়ু, ইসলাম ও জীবন, উপজেলা প্রশাসন, কুড়িগ্রাম, ক্যাম্পাস নিউজ, গাইবান্ধা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, দূর্নীতি দমন কমিশন(দুদক), দেশজুড়ে, নারী ও শিশু, পূর্বাভাস, বাংলাদেশ, শিক্ষাঙ্গন
গাইবান্ধায় স্কুল শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ দখল করে ধান ও মাছের চাষ

প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৫:৪৭:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৫১ বার পড়া হয়েছে

ফেরদৌস আলম, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামদেব দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠজুড়ে চলছে ধান ও মাছের চাষ। ফলে নিজেদের প্রিয় মাঠে খেলাধুলা করা তো দূরের কথা, মুক্তভাবে হাঁটাচলা করতেও বাধার সম্মুখীন হচ্ছে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বসুনিয়ার বিরুদ্ধে মাঠ বর্গা দেওয়া, মসজিদ নির্মাণের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়, ডাকঘর উচ্ছেদ এবং চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার মতো একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টির সাড়ে তিন বিঘা জমির মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে বন্দী অবস্থায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে দিগন্তজুড়ে সবুজ ধানের চারা। মাঠের একাংশে করা হয়েছে মাছের চাষ। অথচ এই মাঠেই একসময় শিক্ষার্থীদের ফুটবল, ক্রিকেটসহ নানা খেলার রমরমা থাকত। এখন মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের বারান্দা কিংবা সামনের অল্প জায়গায় সময় কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সেই জায়গাটি কাদা-পানিতে তলিয়ে যায়, ফলে শিক্ষার্থীদের কক্ষেই আবদ্ধ থাকতে হয়।
বিদ্যালয়ের অষ্টম ও দশম শ্রেণির একদল শিক্ষার্থী ক্ষোভের সুরে জানায়, তাদের খেলার মাঠ দখল করে প্রধান শিক্ষক ধান ও মাছ চাষ করছেন এবং এ থেকে বছরে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করছেন। এছাড়াও বিদ্যালয়ে একটি মসজিদ নির্মাণের নাম করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই থেকে তিনশত টাকা করে আদায় করা হয়েছে, কিন্তু মসজিদের কোনো কাজই আজ পর্যন্ত শুরু হয়নি। শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তোলে, আমাদের খেলার মাঠে ধান চাষ কেন হবে? আমরা এর ন্যায্য সমাধান চাই।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি ডাকঘর উচ্ছেদ করেছেন, যা নিয়ে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। আরও মর্মান্তিক অভিযোগ হলো, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তিন তরুণের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন, কিন্তু কোনো চাকরি দেননি কিংবা টাকা ফেরত দেননি। এমনকি একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক দাবি করেছেন, সাড়ে তিন বছর ধরে নিয়মিত পাঠদান করলেও প্রধান শিক্ষক তাকে কোনো বেতন দেননি; বরং স্থায়ী হওয়ার জন্য আরও তিন লাখ টাকা দাবি করেন।
বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বদিয়ার রহমান বলেন, তিনি এ বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই মাঠে চাষাবাদ হতে দেখছেন এবং বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক জানেন।
অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বসুনিয়া তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, তার পূর্বসূরী প্রধান শিক্ষকই মাঠটি বন্ধক রেখেছিলেন। বন্ধকী টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মাঠটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তিনি ২০০৯ সাল থেকে এ বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করলেও এত বছরেও মাঠ উদ্ধারে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেননি, সে প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার বেলাল হোসেনের বক্তব্য, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ না আসায় তারা ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তবে স্থানীয়রা এই উদাসীনতাকে একেবারেই অযৌক্তিক বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, এলাকায় বিষয়টি সরগরম থাকা সত্ত্বেও এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা একজন কর্মকর্তার অজানা থাকার কথা নয়।
এদিকে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রচারিত হওয়াপর উপজেলা প্রশাসন সচেতন হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস জানান, তিনি বিষয়টি অবগত আছেন। বিদ্যালয়টির বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণ দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ের মাঠ দখলমুক্ত করে খেলাধুলার উপযোগী করে তোলা এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগের স্বচ্ছ ও নিষ্পক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন।