ঢাকা ০৮:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ:-
না’গঞ্জের বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্নক সহায়তায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডিসি নান্দাইলে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার ডলফিন রক্ষায় সুন্দরবনের বনবিভাগের সচেতনতামূলক মাইকিং শরণখোলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা গাইবান্ধা বন্যার দারপ্রান্তে: নদীগুলো উত্তালে জনজীবন বিপর্যস্ত পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রমের দিকে গাইবান্ধায় দোকানের বাকি টাকা চাওয়ায় গুলি, যুবক-গৃহবধূ আহত কাশিমপুর কারাগার থেকে পালানো আসামি র‍্যাব-৯’র জালে কুষ্টিয়ায় বাকিতে সিগারেট না দেওয়ায় দোকানির কান কামড়ে ছিঁড়ে দিল যুবক বড়লেখায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার-৯ কুষ্টিয়ায় ফের সাংবাদিককে হাতুড়ি-লোহার রড দিয়ে হামলা সিদ্ধিরগঞ্জে গলাকাটা নারীসহ অজ্ঞাত যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার নারায়ণগঞ্জের যানজট নিরসনে ডিসির পাশে চেম্বার ও বিকেএমইএ দিল্লির জঙ্গলে রাজপ্রাসাদ! আওয়াধ রাজ্যের শেষ রাজপুত্রের কাহিনি টেকনাফে ৩০ হাজার পিস ইয়াবাসহ ক্রিস্টাল মেথ জব্দ রাস্তা নয় যেন মরণফাঁদ, চরমদুর্ভোগে ৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কুলাউড়ায় বিপুল পরিমাণে এসকপ কোডিনসহ আটক-১ নারায়ণগঞ্জ সদরে নতুন ইউএনও তাছলিমা শিরিনের যোগদান জায়গা জটিলতায় আটকে আছে সুন্দরগঞ্জের সড়ক উন্নয়ন, বিপাকে পৌরবাসী কমলগঞ্জে ভাইয়ের হাতে ভাই খুনের রহস্য উদ্ঘাটন,আলামত জব্দ  চাঁদপুরে অর্থ লেনদেনের বিরোধে চাচার হাতে ভাতিজা খুন, আটক-৩ না’গঞ্জে যুবদল নেতাসহ ১০জনের ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের জন্য মহা-কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্তের পথে সাংবাদিক তুহিন হত্যার বিচারের দাবিতে বন্দর উপজেলা প্রেসক্লাবের মানববন্ধন গাজীপুরে নৃশংসভাবে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে এনইউজে’র মানববন্ধন সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাবের বিক্ষোভ  শ্রীমঙ্গলে দুই কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার-১ সাংবাদিক তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে কক্সবাজারে বিক্ষোভসহ মানববন্ধন বিপন্ন উপকূল; বাগেরহাটে চারটি আসন বহালের দাবিতে সিইসিকে স্মারকলিপি গাইবান্ধায় শিশুকে জিম্মি করে সুদের টাকা দাবি; গ্রেপ্তার-৪ সাংবাদিক তুহিনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে কুষ্টিয়ায় মানবন্ধন পেশাদার সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় ‘হলুদ সাংবাদিকতার’ দৌরাত্ম উপড়ে ফেলতে হবে আদিবাসীর অধিকার ছাড়া উন্নয়ন অসম্ভব: গাইবান্ধায় আদিবাসী দিবসে দাবি দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর না’গঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এডহক কমিটির অনুমোদন গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যায় নারীসহ গ্রেপ্তার-৪ বড়লেখা সীমান্তে রোহিঙ্গাসহ আটক ৮ জনকে পুশইন শ্রীমঙ্গলে ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে বিজয়ী সদর ইউপি টেকনাফে অবৈধ ট্রলিং বোটসহ ১৭ জেলে আটক  কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নারীর মৃত্যু গাজীপুরে ট্রাভেল ব্যাগ থেকে খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ জুড়ীর আলোচিত চেয়ারম্যান শেলু অবশেষে গ্রেপ্তার চাঁদপুরের ক্ষুদে মেসি সোহানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান গত দুইদিনে দেশে সাংবাদিকসহ অন্তত ৫ জনকে প্রকাশ্যে হত্যা শরণখোলায় নদীভাঙনে রিং বাঁধ ভেঙে শতশত বিঘা জমি ও বসতবাড়ি বিলীন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নোয়াব’র গভীর উদ্বেগ বিকেলে চাঁদাবাজি নিয়ে লাইভ, রাতে সাংবাদিককে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা অবৈধ বালু উত্তোলনে তিস্তা সেতু ঝুঁকিতে আজ দেশব্যাপী বিজয় র‍্যালি করবে বিএনপি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম প্রয়াণবার্ষিকী আজ বৈরী আবহাওয়াও প্রকম্পিত সোনারগাঁয়ের বিএনপির এমপি প্রার্থী মান্নানের বিজয় র‍্যালী নারায়ণগঞ্জের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ম্যাকলিন ফের আইসিটি মামলায় গ্রেপ্তার ধর্মের আড়ালে ২২ কোটি টাকার চাল আত্মসাৎ, সাবেক এমপিসহ অভিযুক্ত-১৫ সুন্দরবনে কীটনাশক ও নৌকাসহ ৮ জেলে আটক না’গঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার নতুন এডহক কমিটির অনুমোদন ‘নতুন বাংলাদেশে’ র‍্যাব বিলুপ্তির পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সুস্পষ্ট কাঠামো করবে এনসিপি কুলাউড়ায় অজ্ঞাত কিশোরের ম*র*দেহ উদ্ধার ২৪’র ‘গণঅভ্যুত্থান’ স্মরণে বিএনপির বিজয় মিছিলে যোগ দিতে মাসুদুজ্জামানের আহ্বান পদোন্নতি পেয়ে এডিসি হলেন জাফর সাদিক, স্থলাভিষিক্ত ইউএনও তাছলিমা শিরিন শ্রীমঙ্গলে অবসরজনিত পুলিশ সদস্যকে রাজকীয় বিদায় ভেড়ামারায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের দু’জনের মৃত্যু মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত রজনীর কবরে বিমানবাহিনীর শ্রদ্ধা নিবেদন প্রবীণদের অভিজ্ঞতা আর তরুণদের উদ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিকল্পিত না’গঞ্জ গড়তে চান মাসুদুজ্জামান শ্রীমঙ্গলে অবৈধবালু কারবারি ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ গ্রেপ্তার-৩ বড়লেখায় ছিনতাইকৃত মালামালসহ আটক-২ চাঁদপুরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, হাসপাতাল ভাঙচুর গোপালগঞ্জের ঘটনা নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলো সেনাসদর সিলেট রেঞ্জে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী মৌলভীবাজারের দুই কর্মকর্তা ফতুল্লায় সাংবাদিক সামাদ মতিনের সহধর্মিণী সুরাইয়া মতিনের দাফন সম্পন্ন গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘শিখা’ প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত এবার ৩৭তম বিসিএস’র ১০২ এসি ল্যান্ডকে প্রত্যাহার কুষ্টিয়ায় গণঅভ্যুত্থানের পর জ্বলেনি শহরের ২৬৬ সৌন্দর্যবর্ধক সড়কবাতি খালেদা জিয়া-তারেক রহমানকে ঘেরাও করতে চাওয়া সেই বিএনপি নেতা বহিষ্কার নারায়ণগঞ্জে হকার্স মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে মাসুদুজ্জামান টেকনাফে র‍্যাব-১৫’র অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী ২১ মামলার আসামী শফি ডাকাত গ্রেপ্তার শরণখোলায় আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস পালিত  ভেড়ামারায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ টঙ্গীতে ৩৬ ঘণ্টা পর ম্যানহোলে নিখোঁজ নারীর মরদেহ উদ্ধার নিউইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে ৪জনের মৃত্যু: এক নাগরিক মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তিনদিন ব্যাপী কৃষি প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে আড়াইহাজারে  ‘শিখা’ প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ আগুনে পুড়ল অন্তত ২০টি বসতঘর শ্রীমঙ্গলে নারকোটিসের অভিযানে ৮৬ বোতল বিদেশি মদ জব্দ কুষ্টিয়ায় নৈশপ্রহরীর হাত-পা বেঁধে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার-২ আজ বিশ্ব বাঘ দিবস বাগেরহাটে যৌথবাহিনীর অভিযানে দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ আটক-৮ তিস্তা সেতু উদ্বোধনে চতুর্থ বিলম্ব: স্থানীয়দের ক্ষোভ  সিজুর মৃত্যু রহস্যে উত্তাল গাইবান্ধা: স্বজনদের দাবি, “পরিকল্পিত হত্যা”  নঈম নিজাম ও বোরহানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা গাজীপুরে শ্রমিকদের ১০ দফা দাবিতে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও মহাসড়ক অবরোধ গুলশানে চাঁদাবাজির সময় বৈষম্যবিরোধীর যুগ্ম আহ্বায়কসহ গ্রেপ্তার-৫ তদন্তে কোনো নিরপরাধ যেনো শাস্তির আওতায় না আসে : না’গঞ্জে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: একে একে ঝড়ে যাচ্ছে কোমলমতি প্রান, এবার চলে গেল জারিফ বড়লেখার লাতু সীমান্তে ফের ৫ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ মাইলস্টোনে মর্মান্তিক হতাহতের ঘটনায় মহিলা পরিষদের শোকসহ মৌন মিছিল শরণখোলায় ১০ ফুট লম্বা অজগর উদ্ধারের পর সুন্দরবনে অবমুক্ত জুড়ীতে ১০ হাজার মিটার অবৈধ জগৎ বেড় জাল পুড়িয়ে ধ্বংস একশ্রেণীর নব্য রাজাকার-আলবদররা আমার মৃত্যুর গুজব রটাচ্ছে: সেফুদা শিক্ষার পাশাপাশি সন্তানদের পারিবারিক সুশাসন খুবই প্রয়োজন: ডিসি তৌফিকুর রহমান মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তে নিহতের স্মরনে উদীচীর মোমবাতি প্রজ্বলন মৌলভীবাজারে বিএনপিকে জনগন থেকে বিচ্ছিন্নে মেতেছিল স্বৈরাচারী হাসিনা: রিজভী

মুন্সীগঞ্জে ভয়াবহ নদী দখল:শাহ সিমেন্টের কবলে ধলেশ্বরী-শীতলক্ষ্যার মোহনা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময়- ০৫:৪১:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫ ১৪৫ বার পড়া হয়েছে
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।।
মুন্সীগঞ্জে ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার মোহনায় বিশাল এই স্থাপনা যেন বাংলাদেশের লাগামহীন নদী দখলের এক ভয়াবহ নিদর্শন।এখানকার অধিকাংশ জায়গা ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার অংশ।কিন্তু শাহ সিমেন্ট দুটি নদীরই কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে। যার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে নদীগুলোর প্রাকৃতিক প্রবাহ ও পরিবেশব্যবস্থায়।অন্তত চারটি সরকারি প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।নথি অনুযায়ী, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ২০১৮,২০১৯ ও ২০২৩ সালে শাহ সিমেন্টকে ‘দখলদার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।কিন্তু, নদীগুলো রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।
আবুল খায়ের গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান শাহ সিমেন্ট এক লিখিত বিবৃতিতে নদীর জমি দখলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।কিন্তু,তারা দুটি নদীর মাঝের এই জমির মালিকানা সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে রাজি হয়নি।অবৈধ দখল
নথিপত্র এবং বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী,শাহ সিমেন্ট ২০০২ সালে কারখানাটি নির্মাণ করে।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই কারখানা বিস্তৃত হয় দুই নদীর ভেতরে।কোম্পানিটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী,শাহ সিমেন্ট বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ সিমেন্ট কারখানা,যার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা এক কোটি টন।২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি,মার্চ ও এপ্রিলে একাধিকবার পরিদর্শনের সময় দেখা যায়,বিশাল স্থাপনা,ভারী যন্ত্রপাতি এবং একটি গুদাম দাঁড়িয়ে আছে দুই নদীর মোহনাস্থলে।মুন্সীগঞ্জ সদর সহকারী কমিশনারের(ভূমি)অফিসও নিশ্চিত করেছে,শাহ সিমেন্ট মিরেরসরাই মৌজায় আরএস দাগ নম্বর ১৮৪ এবং পূর্ব মুক্তারপুর মৌজায় আরএস দাগ নম্বর ৩০১ থেকে ৩০৮ পর্যন্ত একটি বড় নদী এলাকা দখল করে রেখেছে।গত শনিবার রাতে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: রেজাউল করিম বলেন,আমরা ইতোমধ্যে সার্ভে শেষ করেছি এবং তদন্ত শেষ হলে শাহ সিমেন্টকে নোটিশ দেওয়া হবে।মুন্সীগঞ্জ ভূমি অফিসের রিভিশনাল সার্ভে (আরএস) রেকর্ড অনুযায়ী,দাগ নম্বর ১৮৪ এবং ৩০১ থেকে ৩০৭ নম্বর দাগ নদী ও নদীর তীর হিসেবে চিহ্নিত এবং ‘বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত।
আরএস দাগ নম্বর ৩০৮- এর জমির রেকর্ড সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।দুই দশক আগে এই সিমেন্ট কারখানাটি স্থাপনের আগে ধলেশ্বরী ছিল একটি জীবন্ত নদী।স্থানীয়রা সেখানে মাছ ধরত,গোসল করত এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য নদীর ওপর নির্ভরশীল ছিল।মুন্সকগঞ্জের নদীপাড়ের গ্রাম মোল্লারচরের বাসিন্দারা জানান,প্রথমে কারখানাটি ছোট্ট একটি জায়গায় গড়ে ওঠে।কিন্তু প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে নদীতে বালু ফেলে ধীরে ধীরে তারা জায়গা বাড়াতে থাকে।রাতের আঁধারেও সেই কাজ চলত।২০২৫ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ(বিআইডব্লিউটিএ)মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে দেওয়া এক চিঠিতে জানায়,শাহ সিমেন্টের বালু ফেলার কার্যক্রম শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীপথে নাব্যতা সংকট সৃষ্টি করছে,নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত করছে এবং পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।চিঠিতে বলা হয়,শাহ সিমেন্টসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মোহনায় বালু ও মাটি ফেলে জায়গা উঁচু করছে,যার ফলে নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়ায় জাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।চিঠিতে আরও বলা হয়,সরকারি নির্দেশনা সত্ত্বেও শাহ সিমেন্ট এখনো অবৈধভাবে ফেলা বালু ও মাটি অপসারণ করেনি।এই কর্মকাণ্ড বন্দর আইন ১৯০৮, বন্দর বিধিমালা ১৯৬৬ এবং উচ্চ আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করছে।চিঠিতে উল্লেখ করা হয়,নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব.)এম সাখাওয়াত হোসেন সাম্প্রতিক এক সফরে এলাকাটি পরিদর্শন করে অবৈধ দখল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।যোগাযোগ করা হলে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নেওয়া মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত বলেন,শাহ সিমেন্টের বিরুদ্ধে নদীর কিছু জায়গা অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে বিস্তৃত তদন্ত চলছে।সাইট পরিদর্শন ও রেকর্ড যাচাই শেষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এটিই প্রথম নয়,সরকারিভাবে নদী দখল নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়া এবং চিঠি চালাচালির ঘটনা এর আগেও ঘটেছে।দুই বছর আগে-২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি-মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন একটি তালিকা প্রস্তুত করে এবং শাহ সিমেন্টকে নদী দখলকারী হিসেবে চিহ্নিত করে।
তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টরের সই করা ওই তালিকা অনুযায়ী,১৫টি প্রতিষ্ঠান ধলেশ্বরী নদীর ৩৪ দশমিক ৯৬ একর জায়গা দখল করেছে।এর মধ্যে শাহ সিমেন্ট একাই দখল করেছে ২৪ একর।অর্থাৎ,এখানে তারাই সবচেয়ে বড় দখলদার।এর আগে ২০১৯ সালের ৬ মে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন একটি তালিকা তৈরি করে এবং ৫০টি নদী দখলকারীর মধ্যে শাহ সিমেন্টকে অন্তর্ভুক্ত করে।সেখানে বলা হয়, কোম্পানিটি মিরেরসরাই মৌজায় আরএস দাগ নম্বর ১৮৪-এর নদীর জমি দখল করেছে।তৎকালীন জেলা প্রশাসকের সই করা চিঠিতে বলা হয়,এই তালিকাটি সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে-নোটিশ প্রদান ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে।চিঠিটি দেশের সব নদীর আইনি অভিভাবক জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কাছেও পাঠানো হয়েছিল।জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনও ২০১৮ ও ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে শাহ সিমেন্টকে এই দুই নদীর দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করে।২০১৮ সালের প্রতিবেদনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন জানায়,শাহ সিমেন্ট ধীরে ধীরে নদীর জমি দখল করে ভরাট করছে এবং নদীর চরের জায়গায় সাইনবোর্ড টানিয়েছে।পরের বছর ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়,শাহ সিমেন্ট কোম্পানি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরেরসরাই মৌজায় আরএস খতিয়ান নম্বর এক ও আরএস দাগ নম্বর ১৮৪-এ নদীর প্রায় ২৪ একর জায়গা বালু ফেলে ভরাট করে দখল করেছে।জমির শ্রেণি পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে বালু ফেলার মাধ্যমে।প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,কোম্পানিটি বিশাল কারখানা নির্মাণ করেছে,যার ফলে একদিকে ধলেশ্বরী এবং অন্যদিকে শীতলক্ষ্যা নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে-যা দুটি নদীকেই গিলে ফেলার আশঙ্কা তৈরি করেছে।প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, কারখানাটি ধলেশ্বরী নদীতে তরল ও কঠিন বর্জ্য ফেলে।এতে বলা হয়,এই কারণে নদীর পানি, পরিবেশ,বাস্তুসংস্থান ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।প্রায় চার মিটার ব্যাসের একটি বড় পাইপ দিয়ে শাহ সিমেন্ট কারখানা থেকে সরাসরি দূষিত পানি নদীতে গিয়ে পড়ছে; ফ্লাই অ্যাশের দূষণে মাছ,ডলফিন ও পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে গেছে।যোগাযোগ করা হলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন,আমি ২০১৯ সালে এলাকাটি পরিদর্শন করে কারখানাটিকে নদী দখলকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলাম।এতদিন ধরে কীভাবে তারা ওই জমি দখল করে থাকে?কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছে দুটি নদী ভরাট করে।আমি চেয়ারম্যান থাকাকালে সিএস ও আরএস রেকর্ড যাচাই করে অবৈধ দখলের একটি প্রতিবেদনও দিয়েছিলাম।কর্মকর্তারা জানান,২০১৮ ও ২০১৯ সালের জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং ২০২৩ সালের মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের তালিকাটি কেবল আরএস দাগ নম্বর ১৮৪-ভিত্তিক-যেখানে শাহ সিমেন্ট ২৪ একর নদীর জমি দখল করে আছে।তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর ও ২০২৫ সালের শুরুতে করা জরিপে অতিরিক্ত আরএস দাগ নম্বর বিশ্লেষণ করা হয়েছে।এসব থেকে দেখা যায়,বর্তমানে কোম্পানিটি ২৪ একরের বেশি নদীর জমি দখল করে আছে।যোগাযোগ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন,হাইকোর্ট নদীগুলোকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেছেন।এর মানে স্থানীয় প্রশাসনের এখতিয়ার রয়েছে অবিলম্বে দখলদারদের উচ্ছেদ করার।তিনি বলেন,আমি বুঝতে পারছি না কেন তারা এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি-বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর।পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন,অন্তর্বর্তী সরকার এই স্বল্প মেয়াদের মধ্যে ১৩টি নদীকে অবৈধ দখলমুক্ত করার লক্ষ্য হাতে নিয়েছে।তিনি বলেন,এই নদীগুলো যদি ওই তালিকায় থাকে,তাহলে আমাদের মেয়াদের মধ্যেই এর ফলাফল দেখা যেতে পারে।বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের উপপরিচালক মোবারক হোসেন বলেন,নদীর যেসব অংশ দখল হয়ে গেছে, তা শিগগির পুনরুদ্ধার করা হবে।ওই এলাকার ডিজিটাল জরিপ শেষ।শিগগির সীমানা নির্ধারণকারী খুঁটি বসানো হবে।শাহ সিমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাঠানোর মাধ্যমে।কোম্পানিটি সেসব প্রশ্নের লিখিত জবাব দেওয়ার পরিবর্তে সরাসরি বৈঠকের অনুরোধ জানায়।এরপর ৫ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তাদের গুলশান অফিসে দুই দফা বৈঠক হয় এবং অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্য উপস্থাপন করা হয়।কোম্পানিটির অনুরোধে ভূমি-সংক্রান্ত কিছু নথি ও সরকারি প্রতিবেদনের নির্বাচিত অংশও তাদের দেওয়া হয়।একাধিক অনুরোধের পর কোম্পানিটি শেষ পর্যন্ত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রশ্নগুলোর লিখিত জবাব দেয়।তাদের জবাব ও দাবির ভিত্তিতে আরও নথি সংগ্রহ করে নতুন কিছু তথ্য পাওয়া যায়।সেসব তথ্যের ভিত্তিতে মার্চ মাসজুড়ে কোম্পানিটির সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করা হয় এবং তাদের ব্যাখ্যা ও মতামত চাওয়া হয়।তবে কোম্পানিটি আর কোনো জবাব দেয়নি।
২৬ ফেব্রুয়ারির লিখিত জবাবে কোম্পানিটির করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ও লিগ্যাল প্রধান শেখ শাবাব আহমেদ বলেন,দেশের সব আইনের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান বজায় রেখে আমরা কাজ করি।
তিনি বলেন,নদী দখলের বেশিরভাগ অভিযোগ সিএস রেকর্ডের ভিত্তিতে করা হয়েছে।স্বাধীনতার আগে ও পরে আরও বেশ কয়েকটি জরিপ-যেমন: আরএস,এসএ ও বিএস-সম্পন্ন হয়েছে।নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তনের কারণে সিএস রেকর্ডের পর এর প্রবাহ নতুন জায়গায় গেছে।এই পরিবর্তনের প্রতিফলন সাম্প্রতিক ভূমি জরিপে দেখা যায়।তিনি আরও বলেন,এই প্রেক্ষাপটে কিছু বিষয় এখনো আদালতে বিচারাধীন।কাজেই যেকোনো প্রতিষ্ঠান যদি সবদিক বিবেচনা না করে, সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ না করে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছে-তা হবে অযৌক্তিক।সংশ্লিষ্ট ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে (সিএস) ও রিভিশনাল সার্ভে(আরএস)রেকর্ড সংগ্রহ করেছে,যেখানে সংশ্লিষ্ট জায়গাকে নদীর জমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।সিএস ও আরএসের মধ্যবর্তী সময়কালে তৈরি হওয়া এসএ রেকর্ডও সংগ্রহ করা হয়েছে।এসএ রেকর্ডেও অধিকাংশ জমিকে নদী হিসেবে শ্রেণিবিন্যস্ত করা হয়েছে।শুধু একটি ছোট অংশকে ঘরবাড়ির সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।তবে ভূমি মন্ত্রণালয় এসএ রেকর্ডকে ‘অপ্রামাণ্য’ বলে বিবেচনা করে, কারণ এসব রেকর্ড মাঠপর্যায়ের জরিপের পরিবর্তে জমির মালিকদের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল।
তা ছাড়া, ২০০৯ সালের একটি ঐতিহাসিক রায়ে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দেন,নদীর জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হবে সিএস ও আরএস রেকর্ডের ভিত্তিতে।বুড়িগঙ্গা,তুরাগ,বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত ওই রায়ে আদালত স্বীকার করেন,বাংলাদেশের প্রতিটি নদী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করে।বাংলাদেশের নদীগুলোর এই প্রবাহপথ পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।কাজেই অত্র রীট মোকদ্দমাটিতে উত্থাপিত সমস্যা সমাধানে সর্ব প্রথম আমাদের নদীগুলির সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।নদীর সীমানা নির্ধারণ করিতে কোন পদ্ধাতি আইন সম্মত হইবে সে সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত লইতে হইবে উল্লেখ্য যে, বিভাগ পূর্ব সমগ্র বৃহত্তর বিংশ শতাদ্বীর প্রথম ভাগে ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে অনুষ্ঠিত হয় এবং উক্ত জরীপের ভিত্তিতে ম্যাপ ও খতিয়ান প্রস্তুত হয়।এই কারণে সিএস ম্যাপকেই আমরা নদীর সীমানা নির্ধারণের প্রাথমিক হিসাবে ধরিয়া লইতে পারি।অতএব,নদী বলিতে সিএস ম্যাপে যে স্থানে নদী প্রদর্শন করা হইয়াছে সেই স্থানটিকেই নদী বলিয়া আপাত স্বীকৃতি প্রদান করিতে হইবে,রায়ে বলা হয়।
হাইকোর্ট আরও উল্লেখ করেন,সিএস মানচিত্রে যেভাবে নদীর অবস্থান দেখানো হয়েছে তা থেকে নদীর প্রবাহ পথ পরিবর্তিত হলে সে পরিবর্তনের ফলে নদীর একপাশে যদি কোনো চর জাগে, তাহলেও সেই চর সরকারি মালিকানাধীন হিসেবেই বিবেচিত হবে।রায়ে বলা হয়,উপরে বর্ণিত আইনি অবস্থান অনুসারে,নদীর সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত পরবর্তী জরিপকাজ বাংলাদেশ কর্তৃক প্রণীত আরএস রেকর্ড ও মানচিত্র অনুযায়ী সম্পন্ন করতে হবে।এই জরিপকাজ দুইভাবে সম্পন্ন করতে হবে-প্রথমত,সিএস মানচিত্র অনুযায়ী এবং দ্বিতীয়ত, আরএস মানচিত্র অনুযায়ী।হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের(এইচআরপিবি)পক্ষে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এসএ ও বিএস জরিপের ভিত্তিতে নদীর জমি চিহ্নিত করা আইনগতভাবে বৈধ নয়।আদালত ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন যে নদীর জমি চিহ্নিত করতে হবে সিএস ও আরএস রেকর্ডের ভিত্তিতে।
একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও শাহ সিমেন্ট জানায়নি যে তারা সেখানে কতটুকু জমির মালিক অথবা সরকারের অনুমোদন নিয়ে কতটুকু নদীর জমি ইজারা নিয়েছে।তারা কেবল জানিয়েছে,’শাহ সিমেন্ট দেশে বিআইডব্লিউটিএর অন্যতম সর্বোচ্চ ভাড়াদাতা এবং আমরা নিকটবর্তী নদীর তীরবর্তী এলাকা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে ব্যবহার করি।বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, শাহ সিমেন্ট ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর থেকে নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ পোর্ট অফিসের লাইসেন্সে নদীর তীরবর্তী জমি ব্যবহার করছে,যা কারখানা স্থাপনের দুই বছর পর শুরু হয়।বর্তমানে কোম্পানিটির কাছে ১১ দশমিক ২৮ একর নদীর তীরবর্তী জমির ইজারা রয়েছে,যার মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হচ্ছে।ইজারা চুক্তি অনুযায়ী, কোম্পানিটি নদী বা নদী-তীরবর্তী জায়গা ভরাট করতে পারবে না,অতিরিক্ত নদীর জমি ব্যবহার করতে পারবে না,নদীতীর পরিবর্তন করতে পারবে না,নাব্যতা ব্যাহত করতে পারবে না,ইচ্ছামতো জাহাজ ভেড়াতে পারবে না এবং নদীতে বর্জ্য ফেলতে পারবে না।নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ পোর্ট অফিসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ১৩ এপ্রিল বলেন,’শাহ সিমেন্ট চুক্তির শর্ত মানছে না।তারা ধীরে ধীরে নদী ও নদীতীর ভরাট করছে-যার ফলে ওই এলাকায় নদীর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে।আমরা মাঝে মাঝে সাইট পরিদর্শন করি,মৌখিকভাবে তাদের শর্ত মানতে বলি এবং মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান চালাই।এ বিষয়ে জানতে গত মার্চে যোগাযোগ করা হয় নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.)সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে।শাহ সিমেন্ট ‘নদী দখলকারী নয়’-কোম্পানিটির এমন দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদী পরিদর্শন করেছি এবং সেখানে দেখেছি যে শাহ সিমেন্ট নদী দখল করেছে।তখনই আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম।গতকাল আবারও যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি যেন জরিপ করে এটা নির্ধারণ করে যে শাহ সিমেন্ট ও অন্যান্য কারখানাগুলো কত জমি দখল করেছে।আমি এখন নিশ্চিত না যে এখন পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।তবে আমি অবশ্যই বিষয়টি তদারকি করব।
বিস্তারিত আসছে…..! চোখ রাখুন 

নিউজটি শেয়ার করুন..

ট্যাগস:-

মুন্সীগঞ্জে ভয়াবহ নদী দখল:শাহ সিমেন্টের কবলে ধলেশ্বরী-শীতলক্ষ্যার মোহনা

আপডেট সময়- ০৫:৪১:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।।
মুন্সীগঞ্জে ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার মোহনায় বিশাল এই স্থাপনা যেন বাংলাদেশের লাগামহীন নদী দখলের এক ভয়াবহ নিদর্শন।এখানকার অধিকাংশ জায়গা ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার অংশ।কিন্তু শাহ সিমেন্ট দুটি নদীরই কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে। যার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে নদীগুলোর প্রাকৃতিক প্রবাহ ও পরিবেশব্যবস্থায়।অন্তত চারটি সরকারি প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।নথি অনুযায়ী, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ২০১৮,২০১৯ ও ২০২৩ সালে শাহ সিমেন্টকে ‘দখলদার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।কিন্তু, নদীগুলো রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।
আবুল খায়ের গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান শাহ সিমেন্ট এক লিখিত বিবৃতিতে নদীর জমি দখলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।কিন্তু,তারা দুটি নদীর মাঝের এই জমির মালিকানা সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে রাজি হয়নি।অবৈধ দখল
নথিপত্র এবং বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী,শাহ সিমেন্ট ২০০২ সালে কারখানাটি নির্মাণ করে।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই কারখানা বিস্তৃত হয় দুই নদীর ভেতরে।কোম্পানিটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী,শাহ সিমেন্ট বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ সিমেন্ট কারখানা,যার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা এক কোটি টন।২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি,মার্চ ও এপ্রিলে একাধিকবার পরিদর্শনের সময় দেখা যায়,বিশাল স্থাপনা,ভারী যন্ত্রপাতি এবং একটি গুদাম দাঁড়িয়ে আছে দুই নদীর মোহনাস্থলে।মুন্সীগঞ্জ সদর সহকারী কমিশনারের(ভূমি)অফিসও নিশ্চিত করেছে,শাহ সিমেন্ট মিরেরসরাই মৌজায় আরএস দাগ নম্বর ১৮৪ এবং পূর্ব মুক্তারপুর মৌজায় আরএস দাগ নম্বর ৩০১ থেকে ৩০৮ পর্যন্ত একটি বড় নদী এলাকা দখল করে রেখেছে।গত শনিবার রাতে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: রেজাউল করিম বলেন,আমরা ইতোমধ্যে সার্ভে শেষ করেছি এবং তদন্ত শেষ হলে শাহ সিমেন্টকে নোটিশ দেওয়া হবে।মুন্সীগঞ্জ ভূমি অফিসের রিভিশনাল সার্ভে (আরএস) রেকর্ড অনুযায়ী,দাগ নম্বর ১৮৪ এবং ৩০১ থেকে ৩০৭ নম্বর দাগ নদী ও নদীর তীর হিসেবে চিহ্নিত এবং ‘বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত।
আরএস দাগ নম্বর ৩০৮- এর জমির রেকর্ড সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।দুই দশক আগে এই সিমেন্ট কারখানাটি স্থাপনের আগে ধলেশ্বরী ছিল একটি জীবন্ত নদী।স্থানীয়রা সেখানে মাছ ধরত,গোসল করত এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য নদীর ওপর নির্ভরশীল ছিল।মুন্সকগঞ্জের নদীপাড়ের গ্রাম মোল্লারচরের বাসিন্দারা জানান,প্রথমে কারখানাটি ছোট্ট একটি জায়গায় গড়ে ওঠে।কিন্তু প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে নদীতে বালু ফেলে ধীরে ধীরে তারা জায়গা বাড়াতে থাকে।রাতের আঁধারেও সেই কাজ চলত।২০২৫ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ(বিআইডব্লিউটিএ)মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে দেওয়া এক চিঠিতে জানায়,শাহ সিমেন্টের বালু ফেলার কার্যক্রম শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীপথে নাব্যতা সংকট সৃষ্টি করছে,নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত করছে এবং পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।চিঠিতে বলা হয়,শাহ সিমেন্টসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মোহনায় বালু ও মাটি ফেলে জায়গা উঁচু করছে,যার ফলে নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়ায় জাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।চিঠিতে আরও বলা হয়,সরকারি নির্দেশনা সত্ত্বেও শাহ সিমেন্ট এখনো অবৈধভাবে ফেলা বালু ও মাটি অপসারণ করেনি।এই কর্মকাণ্ড বন্দর আইন ১৯০৮, বন্দর বিধিমালা ১৯৬৬ এবং উচ্চ আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করছে।চিঠিতে উল্লেখ করা হয়,নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব.)এম সাখাওয়াত হোসেন সাম্প্রতিক এক সফরে এলাকাটি পরিদর্শন করে অবৈধ দখল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।যোগাযোগ করা হলে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নেওয়া মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত বলেন,শাহ সিমেন্টের বিরুদ্ধে নদীর কিছু জায়গা অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে বিস্তৃত তদন্ত চলছে।সাইট পরিদর্শন ও রেকর্ড যাচাই শেষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এটিই প্রথম নয়,সরকারিভাবে নদী দখল নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়া এবং চিঠি চালাচালির ঘটনা এর আগেও ঘটেছে।দুই বছর আগে-২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি-মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন একটি তালিকা প্রস্তুত করে এবং শাহ সিমেন্টকে নদী দখলকারী হিসেবে চিহ্নিত করে।
তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টরের সই করা ওই তালিকা অনুযায়ী,১৫টি প্রতিষ্ঠান ধলেশ্বরী নদীর ৩৪ দশমিক ৯৬ একর জায়গা দখল করেছে।এর মধ্যে শাহ সিমেন্ট একাই দখল করেছে ২৪ একর।অর্থাৎ,এখানে তারাই সবচেয়ে বড় দখলদার।এর আগে ২০১৯ সালের ৬ মে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন একটি তালিকা তৈরি করে এবং ৫০টি নদী দখলকারীর মধ্যে শাহ সিমেন্টকে অন্তর্ভুক্ত করে।সেখানে বলা হয়, কোম্পানিটি মিরেরসরাই মৌজায় আরএস দাগ নম্বর ১৮৪-এর নদীর জমি দখল করেছে।তৎকালীন জেলা প্রশাসকের সই করা চিঠিতে বলা হয়,এই তালিকাটি সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে-নোটিশ প্রদান ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে।চিঠিটি দেশের সব নদীর আইনি অভিভাবক জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কাছেও পাঠানো হয়েছিল।জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনও ২০১৮ ও ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে শাহ সিমেন্টকে এই দুই নদীর দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করে।২০১৮ সালের প্রতিবেদনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন জানায়,শাহ সিমেন্ট ধীরে ধীরে নদীর জমি দখল করে ভরাট করছে এবং নদীর চরের জায়গায় সাইনবোর্ড টানিয়েছে।পরের বছর ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়,শাহ সিমেন্ট কোম্পানি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরেরসরাই মৌজায় আরএস খতিয়ান নম্বর এক ও আরএস দাগ নম্বর ১৮৪-এ নদীর প্রায় ২৪ একর জায়গা বালু ফেলে ভরাট করে দখল করেছে।জমির শ্রেণি পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে বালু ফেলার মাধ্যমে।প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,কোম্পানিটি বিশাল কারখানা নির্মাণ করেছে,যার ফলে একদিকে ধলেশ্বরী এবং অন্যদিকে শীতলক্ষ্যা নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে-যা দুটি নদীকেই গিলে ফেলার আশঙ্কা তৈরি করেছে।প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, কারখানাটি ধলেশ্বরী নদীতে তরল ও কঠিন বর্জ্য ফেলে।এতে বলা হয়,এই কারণে নদীর পানি, পরিবেশ,বাস্তুসংস্থান ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।প্রায় চার মিটার ব্যাসের একটি বড় পাইপ দিয়ে শাহ সিমেন্ট কারখানা থেকে সরাসরি দূষিত পানি নদীতে গিয়ে পড়ছে; ফ্লাই অ্যাশের দূষণে মাছ,ডলফিন ও পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে গেছে।যোগাযোগ করা হলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন,আমি ২০১৯ সালে এলাকাটি পরিদর্শন করে কারখানাটিকে নদী দখলকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলাম।এতদিন ধরে কীভাবে তারা ওই জমি দখল করে থাকে?কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছে দুটি নদী ভরাট করে।আমি চেয়ারম্যান থাকাকালে সিএস ও আরএস রেকর্ড যাচাই করে অবৈধ দখলের একটি প্রতিবেদনও দিয়েছিলাম।কর্মকর্তারা জানান,২০১৮ ও ২০১৯ সালের জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং ২০২৩ সালের মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের তালিকাটি কেবল আরএস দাগ নম্বর ১৮৪-ভিত্তিক-যেখানে শাহ সিমেন্ট ২৪ একর নদীর জমি দখল করে আছে।তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর ও ২০২৫ সালের শুরুতে করা জরিপে অতিরিক্ত আরএস দাগ নম্বর বিশ্লেষণ করা হয়েছে।এসব থেকে দেখা যায়,বর্তমানে কোম্পানিটি ২৪ একরের বেশি নদীর জমি দখল করে আছে।যোগাযোগ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন,হাইকোর্ট নদীগুলোকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেছেন।এর মানে স্থানীয় প্রশাসনের এখতিয়ার রয়েছে অবিলম্বে দখলদারদের উচ্ছেদ করার।তিনি বলেন,আমি বুঝতে পারছি না কেন তারা এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি-বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর।পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন,অন্তর্বর্তী সরকার এই স্বল্প মেয়াদের মধ্যে ১৩টি নদীকে অবৈধ দখলমুক্ত করার লক্ষ্য হাতে নিয়েছে।তিনি বলেন,এই নদীগুলো যদি ওই তালিকায় থাকে,তাহলে আমাদের মেয়াদের মধ্যেই এর ফলাফল দেখা যেতে পারে।বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের উপপরিচালক মোবারক হোসেন বলেন,নদীর যেসব অংশ দখল হয়ে গেছে, তা শিগগির পুনরুদ্ধার করা হবে।ওই এলাকার ডিজিটাল জরিপ শেষ।শিগগির সীমানা নির্ধারণকারী খুঁটি বসানো হবে।শাহ সিমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাঠানোর মাধ্যমে।কোম্পানিটি সেসব প্রশ্নের লিখিত জবাব দেওয়ার পরিবর্তে সরাসরি বৈঠকের অনুরোধ জানায়।এরপর ৫ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তাদের গুলশান অফিসে দুই দফা বৈঠক হয় এবং অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্য উপস্থাপন করা হয়।কোম্পানিটির অনুরোধে ভূমি-সংক্রান্ত কিছু নথি ও সরকারি প্রতিবেদনের নির্বাচিত অংশও তাদের দেওয়া হয়।একাধিক অনুরোধের পর কোম্পানিটি শেষ পর্যন্ত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রশ্নগুলোর লিখিত জবাব দেয়।তাদের জবাব ও দাবির ভিত্তিতে আরও নথি সংগ্রহ করে নতুন কিছু তথ্য পাওয়া যায়।সেসব তথ্যের ভিত্তিতে মার্চ মাসজুড়ে কোম্পানিটির সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করা হয় এবং তাদের ব্যাখ্যা ও মতামত চাওয়া হয়।তবে কোম্পানিটি আর কোনো জবাব দেয়নি।
২৬ ফেব্রুয়ারির লিখিত জবাবে কোম্পানিটির করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ও লিগ্যাল প্রধান শেখ শাবাব আহমেদ বলেন,দেশের সব আইনের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান বজায় রেখে আমরা কাজ করি।
তিনি বলেন,নদী দখলের বেশিরভাগ অভিযোগ সিএস রেকর্ডের ভিত্তিতে করা হয়েছে।স্বাধীনতার আগে ও পরে আরও বেশ কয়েকটি জরিপ-যেমন: আরএস,এসএ ও বিএস-সম্পন্ন হয়েছে।নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তনের কারণে সিএস রেকর্ডের পর এর প্রবাহ নতুন জায়গায় গেছে।এই পরিবর্তনের প্রতিফলন সাম্প্রতিক ভূমি জরিপে দেখা যায়।তিনি আরও বলেন,এই প্রেক্ষাপটে কিছু বিষয় এখনো আদালতে বিচারাধীন।কাজেই যেকোনো প্রতিষ্ঠান যদি সবদিক বিবেচনা না করে, সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ না করে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছে-তা হবে অযৌক্তিক।সংশ্লিষ্ট ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে (সিএস) ও রিভিশনাল সার্ভে(আরএস)রেকর্ড সংগ্রহ করেছে,যেখানে সংশ্লিষ্ট জায়গাকে নদীর জমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।সিএস ও আরএসের মধ্যবর্তী সময়কালে তৈরি হওয়া এসএ রেকর্ডও সংগ্রহ করা হয়েছে।এসএ রেকর্ডেও অধিকাংশ জমিকে নদী হিসেবে শ্রেণিবিন্যস্ত করা হয়েছে।শুধু একটি ছোট অংশকে ঘরবাড়ির সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।তবে ভূমি মন্ত্রণালয় এসএ রেকর্ডকে ‘অপ্রামাণ্য’ বলে বিবেচনা করে, কারণ এসব রেকর্ড মাঠপর্যায়ের জরিপের পরিবর্তে জমির মালিকদের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল।
তা ছাড়া, ২০০৯ সালের একটি ঐতিহাসিক রায়ে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দেন,নদীর জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হবে সিএস ও আরএস রেকর্ডের ভিত্তিতে।বুড়িগঙ্গা,তুরাগ,বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত ওই রায়ে আদালত স্বীকার করেন,বাংলাদেশের প্রতিটি নদী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করে।বাংলাদেশের নদীগুলোর এই প্রবাহপথ পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।কাজেই অত্র রীট মোকদ্দমাটিতে উত্থাপিত সমস্যা সমাধানে সর্ব প্রথম আমাদের নদীগুলির সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।নদীর সীমানা নির্ধারণ করিতে কোন পদ্ধাতি আইন সম্মত হইবে সে সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত লইতে হইবে উল্লেখ্য যে, বিভাগ পূর্ব সমগ্র বৃহত্তর বিংশ শতাদ্বীর প্রথম ভাগে ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে অনুষ্ঠিত হয় এবং উক্ত জরীপের ভিত্তিতে ম্যাপ ও খতিয়ান প্রস্তুত হয়।এই কারণে সিএস ম্যাপকেই আমরা নদীর সীমানা নির্ধারণের প্রাথমিক হিসাবে ধরিয়া লইতে পারি।অতএব,নদী বলিতে সিএস ম্যাপে যে স্থানে নদী প্রদর্শন করা হইয়াছে সেই স্থানটিকেই নদী বলিয়া আপাত স্বীকৃতি প্রদান করিতে হইবে,রায়ে বলা হয়।
হাইকোর্ট আরও উল্লেখ করেন,সিএস মানচিত্রে যেভাবে নদীর অবস্থান দেখানো হয়েছে তা থেকে নদীর প্রবাহ পথ পরিবর্তিত হলে সে পরিবর্তনের ফলে নদীর একপাশে যদি কোনো চর জাগে, তাহলেও সেই চর সরকারি মালিকানাধীন হিসেবেই বিবেচিত হবে।রায়ে বলা হয়,উপরে বর্ণিত আইনি অবস্থান অনুসারে,নদীর সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত পরবর্তী জরিপকাজ বাংলাদেশ কর্তৃক প্রণীত আরএস রেকর্ড ও মানচিত্র অনুযায়ী সম্পন্ন করতে হবে।এই জরিপকাজ দুইভাবে সম্পন্ন করতে হবে-প্রথমত,সিএস মানচিত্র অনুযায়ী এবং দ্বিতীয়ত, আরএস মানচিত্র অনুযায়ী।হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের(এইচআরপিবি)পক্ষে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এসএ ও বিএস জরিপের ভিত্তিতে নদীর জমি চিহ্নিত করা আইনগতভাবে বৈধ নয়।আদালত ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন যে নদীর জমি চিহ্নিত করতে হবে সিএস ও আরএস রেকর্ডের ভিত্তিতে।
একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও শাহ সিমেন্ট জানায়নি যে তারা সেখানে কতটুকু জমির মালিক অথবা সরকারের অনুমোদন নিয়ে কতটুকু নদীর জমি ইজারা নিয়েছে।তারা কেবল জানিয়েছে,’শাহ সিমেন্ট দেশে বিআইডব্লিউটিএর অন্যতম সর্বোচ্চ ভাড়াদাতা এবং আমরা নিকটবর্তী নদীর তীরবর্তী এলাকা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে ব্যবহার করি।বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, শাহ সিমেন্ট ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর থেকে নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ পোর্ট অফিসের লাইসেন্সে নদীর তীরবর্তী জমি ব্যবহার করছে,যা কারখানা স্থাপনের দুই বছর পর শুরু হয়।বর্তমানে কোম্পানিটির কাছে ১১ দশমিক ২৮ একর নদীর তীরবর্তী জমির ইজারা রয়েছে,যার মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হচ্ছে।ইজারা চুক্তি অনুযায়ী, কোম্পানিটি নদী বা নদী-তীরবর্তী জায়গা ভরাট করতে পারবে না,অতিরিক্ত নদীর জমি ব্যবহার করতে পারবে না,নদীতীর পরিবর্তন করতে পারবে না,নাব্যতা ব্যাহত করতে পারবে না,ইচ্ছামতো জাহাজ ভেড়াতে পারবে না এবং নদীতে বর্জ্য ফেলতে পারবে না।নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ পোর্ট অফিসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ১৩ এপ্রিল বলেন,’শাহ সিমেন্ট চুক্তির শর্ত মানছে না।তারা ধীরে ধীরে নদী ও নদীতীর ভরাট করছে-যার ফলে ওই এলাকায় নদীর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে।আমরা মাঝে মাঝে সাইট পরিদর্শন করি,মৌখিকভাবে তাদের শর্ত মানতে বলি এবং মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান চালাই।এ বিষয়ে জানতে গত মার্চে যোগাযোগ করা হয় নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.)সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে।শাহ সিমেন্ট ‘নদী দখলকারী নয়’-কোম্পানিটির এমন দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদী পরিদর্শন করেছি এবং সেখানে দেখেছি যে শাহ সিমেন্ট নদী দখল করেছে।তখনই আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম।গতকাল আবারও যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি যেন জরিপ করে এটা নির্ধারণ করে যে শাহ সিমেন্ট ও অন্যান্য কারখানাগুলো কত জমি দখল করেছে।আমি এখন নিশ্চিত না যে এখন পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।তবে আমি অবশ্যই বিষয়টি তদারকি করব।
বিস্তারিত আসছে…..! চোখ রাখুন