মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলমান; অবৈধভাবে শিক্ষকের নাম এমপিও ভুক্ত

- আপডেট সময়- ০৪:৫৫:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫ ৩২ বার পড়া হয়েছে

ফেরদৌস আলম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি।।
গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধর্মপুর দৌলত ডাকুয়া মেমোরিয়াল উচ্চ (ডি.ডি.এম )বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে চলমান আইনি লড়াইয়ের নতুন মোড় নিয়েছে। এ নিয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও এক পক্ষের নাম অবৈধভাবে এমপিও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৯ এপ্রিল তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি শরিফুল ইসলামকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু ২০১৭ সালে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে শিরিন মোসাম্মৎ সামছাদ বেগম স্বপ্নাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়োগের বিরুদ্ধে শরিফুল ইসলাম মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। ২০১২ সালের রিট নং ১১৫০৯-এ হাইকোর্ট ৬০ দিনের মধ্যে শরিফুল ইসলামের নাম এমপিওভুক্ত করার জন্য শিক্ষা সচিব ও মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষ এ আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করে। ২০১৬ সালের আপিল নং ৩১৮৭-এ উভয় পক্ষের শুনানির পর আপিল খারিজ করে দেওয়া হয়। এরপর উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় শরিফুল ইসলাম ২০১৭ সালে কনটেম্পম মামলা (নং ৪২০/১৭) দায়ের করেন। এ মামলায় ৬০ দিনের মধ্যে আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়।
২০১৮ সালে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আপিল বিভাগের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন (নং ৫০৫/১৮) দায়ের করেন। শুনানির পর রিভিউও খারিজ করা হয়। এরপর ২০২১ সালে তথ্য গোপন করে ও আদেশ অমান্য করে শিরিন মোসাম্মৎ সামছাদ বেগম উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন (নং ৪৮৯৩/২০২১) দায়ের করলে আদালত পিটিশনারের পক্ষে রায় দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে শরিফুল ইসলাম সুপ্রিম কোর্টে আপিল (নং ২৫০৭/২১) দায়ের করেন। শুনানির পর আদালত শিরিন মোসাম্মৎ সামছাদ বেগমকে তথ্য গোপন রাখার অপরাধে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং রিট পিটিশনটি খারিজ করে দেন।
২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শরিফুল ইসলামকে সরকারি অংশের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য একটি পত্র (নং ৪জি-১৭৬৩-ম/০৭.২৬১) জারি করেন। এ পত্রের আলোকে শরিফুল ইসলামের নাম এমপিও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে এর পরেও শিরিন মোসাম্মৎ সামছাদ বেগম সুপ্রিম কোর্টে আপিল (নং ৫৯৯/২৩) দায়ের করেন, যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে শরিফুল ইসলামের দায়ের করা কনটেম্পম মামলাটিও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও শিরিন মোসাম্মৎ সামছাদ বেগমের নাম এমপিও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
শরিফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, “উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে শিরিন মোসাম্মৎ সামছাদ তার নাম এমপিওভুক্ত করায় মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব ও মহাপরিচালকের দপ্তরে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোন সুরাহা পাই নি।”
এ ব্যাপারে শিরিন মোসাম্মৎ সামছাদ বেগমের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায় নি।
এ ঘটনায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইনগত প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে এক পক্ষের নাম এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নৈতিকতা ও আইনের শাসনের প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও স্থানীয় জনগণ।।
নিউজটি শেয়ার করুন

-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ