৩১ দিনেও উদ্ধার হয়নি সুন্দরগঞ্জের অপহৃত স্কুলছাত্রী আর্জিনা, প্রশাসন নিশ্চুপ

- আপডেট সময়- ০৬:০৪:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫ ১৩ বার পড়া হয়েছে

ফেরদৌস আলম, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১৩ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রী পরিকল্পিতভাবে অপহরণের শিকার হয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় উপজেলার শোভাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর এই ছাত্রীকে স্থানীয় ডিগ্রি কলেজ মোড় থেকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের ৩১ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও তাকে উদ্ধার করা যায়নি। এ ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরাও রয়ে গেছে অধরা।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অপহৃতার প্রতিবেশী ও একই স্কুলের ছাত্রী রঞ্জিনা আক্তার (আর্জিনা) তাকে মোবাইলফোনে মিনিটকার্ড রিচার্জের কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। রঞ্জিনার ছোট ভাই কামরুজ্জামানসহ আরও দুইজনকে নিয়ে অপহৃতা কলেজ মোড়ে পৌঁছালে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা জোরপূর্বক তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। ঘটনার পর রঞ্জিনা প্রথমে ঘটনা অস্বীকার করলেও পরে তার ছোট ভাই কামরুজ্জামান স্থানীয়দের কাছে ঘটনার কথা প্রকাশ করে। তবে রঞ্জিনা বারবার তার বক্তব্য পরিবর্তন করে এবং একেক সময় একেক নাম ও ঠিকানা বলে।
রঞ্জিনার মোবাইলফোন ও সিমকার্ড যাচাই করে অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে তার গোপন যোগসূত্রের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, অপহৃতার বাবার পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের পক্ষেরও এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। অপহরণকারীদের বেশিরভাগই পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সমস গ্রামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে আব্দুল ওরফে আঃ রহিমের ছেলে মমিন মিয়া (১৮), মোস্তফা মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া (১৮), আলমগীর হোসেনের ছেলে মাহিদ ইসলাম (১৭), আঃ মতিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), আঃ রহিম ওরফে আব্দুলের ছেলে আব্দুল মোত্তালেব (১৭), মোহাম্মদ আলীর ছেলে সফিউল ইসলাম (৪০) ও স্বাধীন মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনের নাম উঠে এসেছে।
ঘটনার পর অপহৃতার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে। অপহরণকারী চক্রটি অপহৃতার বাবার পরিবারকে জমি সংক্রান্ত বিরোধের সমাধান ও অনৈতিক দাবি পূরণের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। অপহৃতার পরিবার জানায়, ঘটনার আগে থেকেই অপহৃতা বাড়ির নিজের শয়নঘরে পড়তে বসেছিল। তার মা রান্নার কাজ করছিলেন। এ সময় রঞ্জিনা তাকে মোবাইলফোনে মিনিটকার্ড রিচার্জের কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়।
ঘটনার দুদিন পর, ১৮ ফেব্রুয়ারি, অপহৃতাকে ফেরত দেওয়ার কথা বলে শ্রীপুর ইউনিয়নের কাজী আব্দুল মান্নান একটি সালিশের আয়োজন করেন। এই সালিশে অপহৃতার পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। এরপর অপহৃতাকে সালিশস্থলে আনার জন্য কাজী আব্দুল মান্নান, তার ছেলে সামিউল ইসলাম ওরফে সোহেল এবং আব্দুল হক ওরফে আঃ রহিম মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান। তারা অপহৃতাকে জেলা শহরে রেখে গভীর রাতে একাকী ফিরে এসে অপহৃতার পরিবারকে মিথ্যা কথা বলে কিছু ব্যক্তির নামে মামলা করার পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় অপহৃতার পরিবারকে চরমভাবে প্রতারণা ও হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম রাজা। তিনি বলেন, সালিশনামা ও অঙ্গীকারনামা লেখা শেষে তিনি স্বাক্ষর করেননি। এ ঘটনায় অপহৃতার পরিবারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হতে হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অপহৃতার উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ। তবে এখনও পর্যন্ত অপহৃতা স্কুলছাত্রী উদ্ধার হয়নি এবং জড়িতদের কেউই গ্রেপ্তার হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত চলমান রয়েছে। অপহৃতার পরিবার মেয়ের সুরক্ষা ও দ্রুত উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
নিউজটি শেয়ার করুন

-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ