সোমবার( ১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল দশটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা শহরের প্রানকেন্দ্র চাষাঢ়া মোড়ে অবস্থান নিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও দু’টি সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।এতে করে পুরো শহর যানজটে স্থবির হয়ে পড়েন, এ সময় ভোগান্তিতে পরতে হয় জনসাধারণকে।
বিক্ষুব্দ শ্রমিক অসন্তোষকৃত শ্রমিক ও শিল্প পুলিশের সাথে কথা বলে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার নয়ামাটি এলাকার রপ্তানিমূখী ইউরোটেক্স নিটওয়্যারে গত কয়েকমাস যাবৎ শ্রমিক অসন্তোষ চলছিলো।
এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বকেয়া বেতন ও ন্যায্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে কারখানাটিতে বিক্ষোভ করেন একদল পোষাক শ্রমিক। ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে আন্দোলনরত কয়েকজন শ্রমিককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করে মালিকপক্ষ।এরই মধ্যে গতকাল রোববার শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ সাঁটানো হয়।
এদিকে গতকাল রাতে আন্দোলনরত কয়েকজন পোষাক শ্রমিকের বিরুদ্ধে কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে একটি মামলাও করা হয়েছে বলে জানান শ্রমিকরা। এরই প্রতিবাদে শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, সকাল দশটার দিকে কয়েকশ’ পোষাক শ্রমিক চাষাঢ়ায় জড়ো হতে থাকে। পরে তারা চাষাঢ়া মোড়ে অবস্থান নিয়ে আশেপাশের সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে শিল্প পুলিশের সদস্যরা তাদেরকে সড়ক ছেড়ে প্রশাসনের সাথে আলোচনায় বসে সমাধানের প্রস্তাব দিলেও তারা তা প্রত্যাখ্যান।
পোষাক শ্রমিক আল মামুন বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে প্রিন্ট সেকশনের ২৭ শ্রমিককে বেতন না দিয়ে ছাঁটাই করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে কোটি টাকার মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। পাশাপাশি হঠাৎ করে গার্মেন্টস বন্ধ করে দেওয়া হয়। পূর্ব নোটিশ ছাড়া বন্ধের ঘোষণার প্রতিবাদে আজকে রাস্তায় নেমেছি।কারখানা মালিক বন্ধ করে দিতেই পারেন কিন্তু তার আগে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করতে হবে।যতক্ষন না কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে একমত হবে ততক্ষন আমরা অবরোধ চালিয়ে যাবো। সোমবার সকালে সকল শ্রমিকরা কারখানার সামনে আন্দোলনের জন্য অবস্থান নিতে চাইলে মালিকপক্ষের সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের উপর চড়াও হন বলেও অভিযোগ করেন শ্রমিকরা।
অপর আরেক শ্রমিক বলেন, গার্মেন্টসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ এনেছে। আমাদের নামে ভাঙচুরেরও অভিযোগ এনেছে। কিন্তু গার্মেন্টসে কোন ভাঙচুরের আলামত নেই। আমাদের দাবি ছাটাইকৃত শ্রমিকদের পাওনা বেতন এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই।
এদিকে, দুপুর দেড়টার দিকে সদর থানা ও শিল্প পুলিশের একটি দল শ্রমিকদের সাথে কথা বলে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হন।পরে মিছিল নিয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দিকে চলে যায়।এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিলে বেলা দুইটার দিকে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ঘটনাস্থলে থাকা ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম বলেন, মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। দু’পক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। পরে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেয়াসহ মামলা তুলে নেওয়ার আশ্বাস দেয়ায় শর্তে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়।