রাষ্ট্র বিনির্মাণে সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চা
- আপডেট সময়- ০৬:০৩:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫ ২৬ বার পড়া হয়েছে
মোঃ ফেরদৌস আলম,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায় এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশীশক্তি ব্যবহার এবং নীতি হীন রাজনীতির কারণে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। রাষ্ট্র বিনির্মাণে সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চার গুরুত্ব এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
১. রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবক্ষয় থেকে মুক্তি:
বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবক্ষয় একটি উদ্বেগজনক বিষয়। রাজনীতির মাঠে অনেকেই নিজেদের স্বার্থে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। চাঁদাবাজি এবং টেন্ডারবাজি এখন যেন একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা এখন আর আদর্শের ভিত্তিতে নয়, বরং ক্ষমতা দখল এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য হয়ে থাকে। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনীতির প্রতি এক ধরনের বিরূপ মনোভাব তৈরি হচ্ছে। যা সমাজ জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
২. নৈতিক দায়িত্ব পালন:
রাষ্ট্র বিনির্মাণে সুষ্ঠু রাজনীতির জন্য নৈতিক দায়িত্ব পালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত তাদের আচরণে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে নৈতিকতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। তাদেরকে জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জনগণের সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করতে হবে।
৩. দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা:
দুর্নীতি রাষ্ট্রের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই রাষ্ট্র বিনির্মাণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। সরকারি ও বেসরকারি খাতে দুর্নীতি রোধে কার্যকরী আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এবং জনগণকে সচেতন করা প্রয়োজন।
৪. সুশাসন প্রতিষ্ঠা:
সুশাসন প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত জরুরি বিষয়। সুশাসনের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা যায়। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসনিক সংস্কার, বিচারিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসনের সকল স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. যুব সমাজের ভূমিকা:
যুব সমাজ রাষ্ট্র বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যুবকদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে তারা সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচনে সহায়তা করতে পারে। যুবকদেরকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
৬. নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ:
নাগরিক সমাজ রাষ্ট্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোকে সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করতে হবে। তারা সরকারের নীতি নির্ধারণে এবং বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে।
৭. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:
রাষ্ট্র বিনির্মাণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা গ্রহণ করা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। যা আমাদের দেশের মান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
৮. শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি:
রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা প্রদান রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য অপরিহার্য বিষয়। শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করে নতুন প্রজন্মকে সঠিক রাজনৈতিক মূল্যবোধ শেখানো উচিত। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে সুশাসন, গণতন্ত্র এবং নাগরিক অধিকার সম্পর্কে পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সেই সাথে নৈতিক শিক্ষার জন্য ধর্মীয় শিক্ষা কে বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
রাষ্ট্র বিনির্মাণে সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যা সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের উপর নির্ভর করে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং পেশীশক্তি ব্যবহার বন্ধ করে নৈতিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি। এ জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে দেশ ও জাতির উন্নয়নে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সমৃদ্ধ ও সুশাসিত রাষ্ট্র পায়।
নিউজটি শেয়ার করুন
-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ