ঢাকা ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ:-
হিংসা-বিদ্বেষ ভূলে কাঁদে কাঁধ মিলিয়ে না’গঞ্জের উন্নয়নে কাজ করতে চাই: জেলা প্রশাসক  চট্টগ্রামে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত-৫ শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে, সোমবার ঈদুল ফিতর বাউফলে কলেজ ছাত্রী হেনস্তার শিকার  সাতক্ষীরায় দরদীর উদ্যোগে ইফতার পুনর্মিলনী ও কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত এক টাকায় ঈদের হাসি: ‘আমাদের গাইবান্ধার’ অসামান্য উদ্যোগ ঈশ্বরদীতে মটর শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ঈদ সামগ্রী বিতরন শ্রীনগরে ছিনতাইয়ের সময় গণপিটুনিতে নিহত-১, আহত-২ মুন্সীগঞ্জে পদ্মা সেতুতে এক দিনে প্রায় সোয়া ৪ কোটি টাকার টোল আদায় ঈশ্বরদীতে হাবিবুর রহমানের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত  ঈশ্বরদীতে রেল ইঞ্জিনের ধাক্কায়  নানা-নাতনী নিহত জাগরণ সংস্থা’র উদ্দ্যোগে অসহায় পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরন জেলা প্রশাসকদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার ১২ নির্দেশনা নারায়ণগঞ্জে সুবিধাবঞ্চিত ৫ শতাধিক শিশু পেল ঈদের নতুন পোশাক কুষ্টিয়ায় ট্রাকচাপায় মা-ছেলের মৃ*ত্যু  ৬৬৮১ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ কমিটির মুন্সীগঞ্জে পদ্মা সেতুতে ১২ঘন্টায় ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা টোল আদায় গাইবান্ধার মরিচের হাট: লাল সোনার বাণিজ্যে জমজমাট  কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-২ হতদরিদ্রের মাঝে খাবার বিতরণ করলেন মানবিক জেলা প্রশাসক বিজ্ঞ আদালতের রায়ে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ঘোষণা কাল থেকে টানা ৯ দিনের ছুটিতে সরকারি চাকরিজীবীরা আজ পবিত্র ‘লাইলাতুল কদর’ মেট্রোর আদলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে যুক্ত হলো দেশে তৈরি কমিউটার ট্রেন নারায়ণগঞ্জে যথাযোগ্য মর্যাদায় বীর শহীদদের স্মরণে মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত  মুন্সীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে নির্বিঘ্নে ঈদযাত্রা সিদ্ধিরগঞ্জে জিয়া সৈনিক দলের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত  মুন্সীগঞ্জে বর্ণিল আয়োজনে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন পথশিশু ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদ উপহার যথাযথ মর্যাদায় ঈশ্বরদীতে মহান স্বাধীনতা দিবস পালন  মৌলভীবাজারে রণাঙ্গন’র অভিষেকসহ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত  চল্লিশ বছরেও অসম্পূর্ণ গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল: ৭ দফা দিয়ে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ আজ ২৬শে মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস ঈশ্বরদীতে যুবদলের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত সিদ্ধিরগঞ্জে গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল মুন্সীগঞ্জে স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে নৈশপ্রহরীকে গণপিটুনি রূপগঞ্জে তারেক রহমানের পক্ষে ঈদ সামগ্রী বিতরণ ঈদের ছুটিতে পাহাড়ি পথ চা-বাগানের স্নিগ্ধতায় বেড়াতে ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দায়িত্বে শপথ নিলেন নতুন দুই বিচারপতি কক্সবাজারে আরাকান আর্মির শতাধিক পোশাকসহ আটক-৩ বড়লেখায় বিষপানে তরুণীর আত্মহত্যা  শহীদ আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিলেন সেনাপ্রধান জেলা পরিষদ’র উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে আর্থিক অনুদানের চেক প্রদান ঈশ্বরদীর রূপপুরে আলোচিত মানিক হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার-৩ কুলাউড়া সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে গ্রেপ্তার-৫ টংঙ্গীবাড়ীতে ৩ কসমেটিক্সের দোকানকে ভোক্তার ২০ হাজার টাকা জরিমানা মুন্সীগঞ্জে ১৭৩ কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ কুলাউড়ায় শুরু হচ্ছে অভিযান, অবৈধ কাজে সুপারিশ না করার আহ্বান  না’গঞ্জ জেলা সাউন্ড মালিক সমিতির ইফতার মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত শ্রীমঙ্গলে চুরি হওয়া পিকআপসহ চোর আটক জেলা প্রশাসক ও প্রাণীসম্পদের সহায়তা সূলভ মূল্যে পন্য পাবে স্বল্প আয়ের ভোক্তা  পুণ্যময় রজনী শবে কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত বাউফলে সাংবাদিক ক্লাবের ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আত্মপ্রকাশ সোনারগাঁয়ে দলিল লিখকের সনদের সাময়িক স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবি সাগরে নিখোঁজের ৩০ ঘণ্টা পর অবশেষে বিজিবি জওয়ানের মরদেহ উদ্ধার মুন্সীগঞ্জের হিমাগারে যান্ত্রিক ত্রুটি:  কৃষকের ৩ কোটি টাকার আলু পঁচে যাওয়ার শঙ্কা মৌলভীবাজারে দীর্ঘ খরায় কাঙ্ক্ষিত চা উৎপাদন ব্যহত নাফ নদীতে রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলারডুবির ঘটনায়  বিজিবি জওয়ান নিখোঁজ বাউফলে ভিজিএফ’র চাল কম দেওয়ার প্রতিবাদ করায় জেলেদের ওপর হামলা গাজায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ‘আমরা জনতা-নারায়ণগঞ্জ’র মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ  দুই অ্যাম্বুলেন্স ১ চালক: সিন্ডিকেটের কবলে জিম্মি গাইবান্ধা হাসপাতালের রোগীরা মেয়াদ উত্তীর্ণপণ্য সহ অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রির দায়ে ৩ প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা মুন্সীগঞ্জে বিপণিবিতান ও ফুটপাতে জমে উঠছে ঈদের ধুম বেচাকেনা কুষ্টিয়ায় তুলা চাষীদের সাফল্যে দাম বৃদ্ধির দাবি টংঙ্গীবাড়ী হিমাগারে জায়গা না থাকায়  হতাশায় ভুগছেন কৃষক মহাকাশ অভিযানে বিশ্বরেকর্ডধারী সুনিতা উইলিয়াম ৪৫ দিন চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে যানজট নিরসনে ভারতে আসছে প্রথম উড়ন্ত ট্যাক্সি  আজ ২২ মার্চ ‘বিশ্ব পানি দিবস’ মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গুলিবর্ষনে এক বাংলাদেশিসহ আহত-২ বন্দরের লাঙ্গলবন্দে পূণ্যস্নান উৎসবের সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক কুমেক হাসপাতালে মধ্যরাতে ৪ সাংবাদিকের ওপর হামলা, যৌথ বাহিনীর ফাঁকা গুলিবর্ষণ নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, ৪ জনকে কুপিয়ে জখম সারাদেশে কালবৈশাখী ঝড়সহ বৃষ্টির আভাস কিশোরগঞ্জে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ-ভাঙচুর, আহত-১৫ ফিলিস্তিনে ইসরাইলী হামলার প্রতিবাদে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ  গাইবান্ধায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রদলের আহ্বায়ক বহিষ্কার রাজনগরে হত্যা মামলার আসামি আজাদ র‍্যাব-৯ এর জালে শ্রমিকদল সভাপতির বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার: ভালুকা উপজেলা বিএনপির নিন্দা  দেশের অস্থিতিশীলতা দূরীকরণে গনতান্ত্রিক সরকার গঠন গুরুত্বপূর্ণ -যুবদল নেতা জিয়া  সাংবাদিক প্রীতির সহায়তায় সৌদি থেকে ফিরল গার্মেন্টস কর্মী শায়েরার লাশ সিদ্ধিরগঞ্জে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত একই পরিবারের ৩ আসামি গ্রেপ্তার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ পুলিশি হেফাজতে সোনারগাঁয়ে অপহৃত কিশোরীরকে ৩৭ দিন পর উদ্ধার করলো পিবিআই  দুমকীতে শহিদকন্যার ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের দাবিতে থানা ঘেরাও ভালুকায় বিএনপি নেতার উদ্যোগে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ সাতক্ষীরা-৪ আসনের জামায়াতের ভোটকেন্দ্র পরিচালক ও প্রধান পোলিং এজেন্ট  সম্মেলন অনুষ্ঠিত  নারায়ণগঞ্জে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা, বিপনিবিতান গুলোতে উপচে পরা ভিড় জব্দ অর্থের উৎস প্রমাণ করতে ব্যর্থ: বরখাস্ত গাইবান্ধার এলজিইডি প্রকৌশলী বাউফলে নির্মাণের একদিন পরেই ধসে পড়লো সড়ক পাবনা ও ঈশ্বরদী মটর শ্রমিক ইউনিয়নের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত  কুষ্টিয়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে নয় বছর বয়সী কন্যাশিশুর আত্মহত্যা ৩১ দিনেও উদ্ধার হয়নি সুন্দরগঞ্জের অপহৃত স্কুলছাত্রী আর্জিনা, প্রশাসন নিশ্চুপ মৌলভীবাজারে সাংবাদিকের উপর অতর্কিত হামলা মহাকাশ থেকে দীর্ঘ ৯ মাস পর পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন সুনিতা-উইলিয়াম  মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত  কুষ্টিয়া বৃদ্ধাশ্রমের বদ্ধ ঘরে আধপেট খেয়ে রোজা রাখছেন ৩০ অসহায় মা সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সাংবাদিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত  শিবপুর ও আগরদাড়ী ইউনিয়ন জামায়াতের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ভালুকায় কাচিনা ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত মিয়ানমারের আরাকান সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা প্রধান ও রোহিঙ্গা নারীসহ গ্রেপ্তার-১০

বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও চিৎপুর রয়েছে চিৎপুরেই

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময়- ০৪:৫০:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ৪১ বার পড়া হয়েছে
ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা।।
উওর কলকাতার এক সংস্কৃতি, ইতিহাস সমৃদ্ধ অঞ্চল হলো আজকের চিৎপুর। এই অঞ্চল বাবু কালচারের জন্য এক সময় ছিল প্রসিদ্ধ। জমিদারেরা পায়রা উড়াতেন, হারমোনিয়াম ও এসরাজের আওয়াজের সঙ্গে ঝুমুরের শব্দে মুখর হয়ে উঠতো সন্ধ্যার বাইজী নাচের আসর। গান,বাজনা,নাচের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল চিৎপুর। এখনো চিৎপুরের যাত্রা পাড়া সেই ঐতিহ্যকে কিছুটা টেনে রেখেছে।চিৎপুর এক ঐতিহ্যপূর্ণ জায়গা। এখন নামটি বাদলে রবীন্দ্র সরণি রাখা হলেও সকলেই চিৎপুর হিসাবেই জানে এখনো।
কোথায় এই চিৎপুর?
চিৎপুর হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা শহরের উত্তরাংশের একটি অঞ্চল। রবীন্দ্র সরণি-সংলগ্ন (এই রাস্তাটির পূর্বতন নাম চিৎপুর রোড) সমগ্র এলাকাটিকে কখনও কখনও চিৎপুর বলে অভিহিত করা হলেও, উক্ত এলাকার বিভিন্ন অংশের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে।
  চিৎপুর ইতিহাস
চিৎপুর অঞ্চলের ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো। মনোহর ঘোষ এই অঞ্চলে দেবী চিত্তেশ্বরীর (কালী) একটি মন্দির নির্মাণ করেন। সেই মন্দিরের নামানুসারেই এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয়। কথিত আছে, উক্ত মন্দিরে সেকালে নরবলি দেওয়া হত। এই মন্দিরের নবরত্ন চূড়াটি ১৭৩৭ সালের ঘূর্ণিঘড়ে ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রাচীন মন্দিরটি একটি ধ্বংসস্তুপ হয়ে রয়েছে।
অন্য মতে, এই অঞ্চলের প্রকৃত নাম ছিল ‘চিত্রপুর’। ১৪৯৫ সালে রচিত বিপ্রদাস পিপলাইয়ের মনসামঙ্গল কাব্যে এই অঞ্চলের উল্লেখ আছে। এই মত অনুসারে, চক্রপাণি নামে বাংলার নবাবের এক সেনাপতি এখানে বাস করতেন। এটি ছিল শিল্পীদের একটি বর্ধিষ্ণু অঞ্চল। ১৬১০ সালে জনৈক গোবিন্দ ঘোষ চিত্তেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চিতে ডাকাত নামে এই অঞ্চলের এক কুখ্যাত ডাকাত এই মন্দিরে নরবলি দিত। চিতে ডাকাতের নাম অনুসারেও এই অঞ্চলের নামকরণ হওয়া সম্ভব।[
১৭১৭ সালে মুঘল সম্রাট ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে ইংরেজরা যে ৩৮টি গ্রামের স্বত্ত্ব লাভ করে, তার মধ্যে চিৎপুর ছিল অন্যতম। পরবর্তীকালে চিৎপুর, টালা, বীরপাড়া ও কালীদহ গ্রামগুলিকে নিয়ে ডিহি চিৎপুর গঠিত হয়।
চিৎপুরের নবাব মহম্মদ রেজা খাঁর একটি বাগানবাড়ি এখানে ছিল। দিল্লির মুঘল সম্রাটদের কাছ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভের পর কয়েক বছর মহম্মদ রেজা খাঁর হাতে বাংলার প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। তৎকালীন শাসকশক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই চিৎপুরের নবাব পদে বহাল ছিলেন এবং শাসকশক্তি তাকে প্রথম সারির ব্যক্তিত্বের স্থান দিয়েছিল। ড্যানিশ, ফরাসি ও ডাচ গভর্নররা যথাক্রমে শ্রীরামপুর, চন্দননগর ও চুঁচুড়া থেকে কলকাতায় এলে প্রথানুসারে লাটভবনে যাবার আগে চিৎপুরে খানিকক্ষণ অবস্থান করতেন।
সার্কুলার খাল চিৎপুরেই হুগলি নদীতে মিশেছে। ২০শ শতাব্দীতে একটি বিশাল লক অ্যান্ড টাইডাল বেসিন এই খালের মুখে নির্মিত হয়।
এন্টালি, মানিকতলা, বেলগাছিয়া, উল্টোডাঙ্গা, চিৎপুর, কাশীপুর, বেনিয়াপুকুরের অংশবিশেষ, বালিগঞ্জ, ওয়াটগঞ্জ, একবালপুর এবং গার্ডেনরিচ ও টালিগঞ্জের অংশবিশেষ ১৮৮৮ সালে কলকাতা পৌরসংস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়।
কলকাতার সুদূর দক্ষিণাঞ্চল থেকে একটি রাস্তা উত্তর দিকে এসেছে। এই রাস্তার মধ্যে অঞ্চল বিশেষে রসা রোড, চৌরঙ্গি রোড, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, চিৎপুর রোড ও ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড নামে পরিচিত। এরপর এটি দমদম রোড নাম নিয়েছে। মুর্শিদাবাদ ও কালীঘাটের মধ্যে এটি একটি প্রাচীন যোগসূত্র। কথিত আছে, কলকাতার আদি জমিদার বরিশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার এই রাস্তাটি তৈরি করিয়েছিলেন। বরিশায় এই পরিবারের নবীন শাখাটি এবং ব্যারাকপুরের উত্তরে হালিশহরে এঁদের প্রাচীন শাখাটি বাস করেন।
 পুরনো চিৎপুর রোডটি ছিল একটি জনপ্রিয় তীর্থপথ। এই পথের ধারে অনেক ধর্মশালা ও দোকান-বাজার ছিল। তাই এই রাস্তাটিকে ঘিরে দ্রুত জনবসতি গড়ে ওঠে, এখানকার মুরগির বাজার ‘মুরগিহাটা’, একটি ছোটো নালার উপর দুটি সাঁকো ‘জোড়াসাঁকো’, মাংসের বাজার ‘কসাইটোলা’ ও মৃৎশিল্পীদের বসতি অঞ্চলটি ‘কুমারটুলি’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে এই কুমারটুলি অঞ্চলের শিল্পীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা মেটাতে মাটির মূর্তি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ১৭৫০-এর দশকে গোবিন্দপুরে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণের কাজ শুরু হলে উক্ত অঞ্চলের অধিবাসীরা উত্তর কলকাতায় চলে আসেন।
চিৎপুর রোড
চিৎপুর রোড ছিল কলকাতার প্রাচীনতম রাস্তা। ধনীদের পাশাপাশি এই অঞ্চলে বহু সাধারণ ব্যবসায়ীর বাস ছিল। বাংলা পঞ্জিকা এখানে ছাপা হত। এটিই ছিল বটতলা বইবাজারের কেন্দ্র। চিৎপুর রোডের সঙ্গে যুক্ত অনেক কিছুই কলকাতার বাঙালি জীবন ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল – পান, আড্ডা, যাত্রা ও বিবাহ উৎসবে ‘হি ইজ আ জলি গুড ফেলো’ গাওয়া ব্রাস ব্যান্ডের কেন্দ্র ছিল এই রাস্তা।
লোয়ার চিৎপুর রোডের একটি অংশ দিল্লির চাঁদনি চকের সমতুল্য এলাকা ছিল। এখানেই ১৯২৬ সালে নাখোদা মসজিদ নির্মিত হয়। নবাবদের সর্বশেষ অবশিষ্টাংশ চিৎপুর রোডেই পাওয়া যেত। এই রাস্তাতেই রামমোহন রায় ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই পরে আদি ব্রাহ্মসমাজে পরিণত হয়। স্বাধীনতার পর এই রাস্তাটি এখানকার বিশিষ্টতম বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে নামাঙ্কিত হয়ে ‘রবীন্দ্র সরণি’ নামে পরিচিত হয়। কলকাতার বিভিন্ন জাতি ও ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ এই রাস্তার বাসিন্দা।
ঠাকুর পরিবারের আদি বাসভবন তথা অধুনা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো শিক্ষাপ্রাঙ্গন ‘জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি’ এই রাস্তার ধারেই অবস্থিত।
এই কলকাতার জান বাজারে জমিদার ছিলেন ,
তার স্ত্রী রানী রাসমণি একসময় কলকাতাকে চির স্মরণীয় করে তুলেছেন। অসাধারণ বুদ্ধিমতী, ধর্ম পরায়না রানী রাসমণি প্রবল পরাক্রমশালী ব্রিটিশের বিরুদ্ধে একের পর এক সংঘর্ষ করে চলেছেন। বিশাল সাম্রাজ্যকে সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে এক ভব্য ও বিশাল কালী মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এই মন্দিরের নাম সারা বিশ্বেই পারিচিত। এখানেই সাধনা ও পুজো করতেন স্বনামধন্য রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। এই মন্দির বিখ্যাত হয়ে উঠেছে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, তার স্ত্রী সারদা দেবী, এবং রানী রাসমণির জন্য। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের পরম আদরের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি জড়িত এই কলকাতা। এখান থেকেই স্বামীজি শিকাগো গিয়ে সনাতন ধর্মের প্রচারের গিয়ে সারা বিশ্বে সাড়া জাগিয়ে তুলেছিলেন। তার সেই আবেগপূর্ণ ভাষণের আগে তিনি আমেরিকা বাসীদের উদ্দেশ্যে , আমার ভাই ও বোনেরা বলে বক্তব্য শুরু করেছিলেন। করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল। এই বাগবাজারের আনাচে কানাচে সেবায় ব্রতী হয়েছিলেন স্বামীজির অনুগামী সিস্টার নিবেদিতা। তিনি দুস্থ মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।
এই সেই তৎকালীন চিৎপুরের এক পাশে ভবানীপুরে ছিল ভারতের শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাস গৃহ ও কর্মকাণ্ডের অন্যতম স্থান। চিৎপুর এর অধীনে বাগবাজারে একসময় নাট্য সম্রাট গিরিশ ঘোষ বিপ্লব এনেছিলেন নাট্য জগতে। তারই নাটকে অভিনয় করে নটি বিনোদিনী সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন এখান থেকেই।
আরেকটি নাম না লিখলে অন্যায় হয়ে যাবে,তিনি হলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। চিৎপুর এলাকার অধীন শোভাবাজার অঞ্চলের আহিরীটোলায় তার জীবন শুরু হয়েছিল একজন সাধারণ চাকুরীজীবী হিসাবে।
    পৌরসংস্থার ওয়ার্ড ও থানা
১৮৭৬ সালে কলকাতার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিকে একটি একক সাব-আর্বান মিউনিসিপ্যালিটির অধীনে আনা হয়। ১৮৯৯ সালে শহরতলি এলাকাকে ভেঙে ‘সাব-আর্বান মিউনিসিপ্যালিটি অফ কাশীপুর অ্যান্ড চিৎপুর’ গঠিত হয়। ১৯৩১ সালে এটি কলকাতার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। চিৎপুর এখন কলকাতা পৌরসংস্থার ৬ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এই এলাকার পশ্চিম দিকে হুগলি নদী এবং অন্য তিন দিকে রয়েছে কাশীপুর, সিঁথি, পাইকপাড়া, বেলগাছিয়া ও বাগবাজার এলাকা। হুগলি নদীর পশ্চিমে হাওড়া শহরের সালকিয়া অবস্থিত।
চিৎপুর থানা কলকাতা পুলিশের উত্তর ও উত্তর শহরতলি বিভাগের অধীনস্থ।
     রেল পরিবহন
চিৎপুরে কলকাতা রেল স্টেশন অবস্থিত। এটি কলকাতার চতুর্থ ও সাম্প্রতিকতম যাত্রীবাহী ট্রেনের টার্মিনাল স্টেশন। কলকাতার প্রথম দুটি টার্মিনাল স্টেশন হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন এক শতাব্দীরও আগে নির্মিত হয়। এই দুই স্টেশনের যাত্রীর চাপ কমাতে কলকাতা স্টেশন স্থাপিত হয়েছে। কলকাতার তৃতীয় স্টেশন শালিমার দক্ষিণ পূর্ব রেলের অধীনস্থ এবং হাওড়া জেলায় অবস্থিত হওয়ায় কলকাতার নগরকেন্দ্র থেকে অনেকটাই দূরে। নতুন টার্মিনালটির নামকরণ করা হয়েছে ‘কলকাতা’। চিৎপুর এর আগে এক শতাব্দীকাল রেলের একটি ইয়ার্ড ছিল। নতুন টার্মিনাল কোথায় হওয়া উচিত তা নিয়ে বিস্তর চিন্তাভাবনার পর শহরকেন্দ্র থেকে এর নৈকট্যের কারণে ভারতীয় রেল এখানেই টার্মিনাল স্থাপন করে ।
খুব কাছেই রয়েছে সেই বুক কাঁপানো মারাঠা ডিচ খাল। এই খালের এক ভয়াবহ ইতিহাস রয়েছে। মারাঠা দস্যুরা একসময় এই খাল বেয়ে কলকাতায় ঢুকে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। সাধারণ মানুষের আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের ব্যাপক লুটতরাজ।এই খাল এখন আর তেমন সতেজ নেই। আশেপাশে গজিয়ে উঠেছে অনেক ঝুগগী ঝুপড়ি।কাছেই রয়েছে আলোর নিচে অন্ধকারের মতো সম্ভ্রান্ত পতিতা পল্লী সোনাগাছি। অনেকের চোখের জল,অনেকের জীবিকার কেন্দ্রস্থল এটি।
চিৎপুর ট্রাম লাইনের দুপাশে অসংখ্য যাত্রা পার্টির অফিস রয়েছে। যাত্রা আমাদের বাংলা সংস্কৃতি বিশেষ করে গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত রয়েছে। শীতের মরসুমের আগেই যাত্রা জগতে তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। সারা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে অসম, ত্রিপুরা এমনকি বিহার,ঝাড়খণ্ডের কিছু এলাকায় দাপিয়ে চলে এই যাত্রা উৎসব। চিৎপুর এবং অন্যত্র ছাড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যাত্রা জগতে প্রায় লক্ষাধিক শিল্পী কর্মী জড়িয়ে রয়েছেন। প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ লোকের জীবিকা নির্বাহ চলে এই যাত্রা থেকে। এজন্য যাত্রাকে শিল্পের পর্যায়ে রাখা হয়েছে। প্রতিবছর এই চিৎপুর থেকে শিল্পী কর্মী বোঝাই যাত্রী বাসের চাকা সারা দেশ পরিক্রম করে থাকে। সরকারের উদ্যোগে যাত্রা সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন জায়গায়।
আরো একটু দূরে গেলে দেখা যাবে গঙ্গা নদী। এই গঙ্গার ধারে পর পর রয়েছে বিখ্যাত শ্মশান ঘাট নিমতলা, কেওড়াতলা। দূর দূর থেকে শব দাহ করার জন্য পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব এখানে আসেন। ২৪ ঘণ্টা চলে নাম কীর্তন। চিতার আগুন জ্বলতে দেখা যায় সারাক্ষণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও এখানেই দাহ করা হয়েছিল। এই গঙ্গার বুকেই রয়েছে সারিসারি নৌকো, লঞ্চ। লঞ্চে করে হাওড়া স্টেশন ছাড়াও অনেক জায়গায় যাওয়া যায়।
গঙ্গার ঘাট এবং বাগবাজার , শ্যামবাজারের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে দীর্ঘ রাস্তা গিরিশ এভিনিউ। এই রাস্তার ওপর কিছু দূরে গিরিশ পার্ক। তারই গায়ে কবিগুরুর জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি। পাশেই রয়েছে বিখ্যাত নাখোদা মসজিদ।
সেদিনের এই চিৎপুর এখন ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হয়েও উঠেছে। বড় বাজার সবথেকে বড় পাইকারি বাজার কলকাতার।
তৎকালীন চিৎপুর এলাকায় রয়েছে মিনার্ভা, স্টার,বিশ্বরূপ থিয়েটার। বহু সিনেমা হল রয়েছে।তবে আগের জৌলুস কারো নেই। বহু বৈচিত্রের মধ্যেও চিৎপুর এখনো আছে চিৎপুরেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস:-

বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও চিৎপুর রয়েছে চিৎপুরেই

আপডেট সময়- ০৪:৫০:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪
ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা।।
উওর কলকাতার এক সংস্কৃতি, ইতিহাস সমৃদ্ধ অঞ্চল হলো আজকের চিৎপুর। এই অঞ্চল বাবু কালচারের জন্য এক সময় ছিল প্রসিদ্ধ। জমিদারেরা পায়রা উড়াতেন, হারমোনিয়াম ও এসরাজের আওয়াজের সঙ্গে ঝুমুরের শব্দে মুখর হয়ে উঠতো সন্ধ্যার বাইজী নাচের আসর। গান,বাজনা,নাচের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল চিৎপুর। এখনো চিৎপুরের যাত্রা পাড়া সেই ঐতিহ্যকে কিছুটা টেনে রেখেছে।চিৎপুর এক ঐতিহ্যপূর্ণ জায়গা। এখন নামটি বাদলে রবীন্দ্র সরণি রাখা হলেও সকলেই চিৎপুর হিসাবেই জানে এখনো।
কোথায় এই চিৎপুর?
চিৎপুর হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা শহরের উত্তরাংশের একটি অঞ্চল। রবীন্দ্র সরণি-সংলগ্ন (এই রাস্তাটির পূর্বতন নাম চিৎপুর রোড) সমগ্র এলাকাটিকে কখনও কখনও চিৎপুর বলে অভিহিত করা হলেও, উক্ত এলাকার বিভিন্ন অংশের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে।
  চিৎপুর ইতিহাস
চিৎপুর অঞ্চলের ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো। মনোহর ঘোষ এই অঞ্চলে দেবী চিত্তেশ্বরীর (কালী) একটি মন্দির নির্মাণ করেন। সেই মন্দিরের নামানুসারেই এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয়। কথিত আছে, উক্ত মন্দিরে সেকালে নরবলি দেওয়া হত। এই মন্দিরের নবরত্ন চূড়াটি ১৭৩৭ সালের ঘূর্ণিঘড়ে ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রাচীন মন্দিরটি একটি ধ্বংসস্তুপ হয়ে রয়েছে।
অন্য মতে, এই অঞ্চলের প্রকৃত নাম ছিল ‘চিত্রপুর’। ১৪৯৫ সালে রচিত বিপ্রদাস পিপলাইয়ের মনসামঙ্গল কাব্যে এই অঞ্চলের উল্লেখ আছে। এই মত অনুসারে, চক্রপাণি নামে বাংলার নবাবের এক সেনাপতি এখানে বাস করতেন। এটি ছিল শিল্পীদের একটি বর্ধিষ্ণু অঞ্চল। ১৬১০ সালে জনৈক গোবিন্দ ঘোষ চিত্তেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চিতে ডাকাত নামে এই অঞ্চলের এক কুখ্যাত ডাকাত এই মন্দিরে নরবলি দিত। চিতে ডাকাতের নাম অনুসারেও এই অঞ্চলের নামকরণ হওয়া সম্ভব।[
১৭১৭ সালে মুঘল সম্রাট ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে ইংরেজরা যে ৩৮টি গ্রামের স্বত্ত্ব লাভ করে, তার মধ্যে চিৎপুর ছিল অন্যতম। পরবর্তীকালে চিৎপুর, টালা, বীরপাড়া ও কালীদহ গ্রামগুলিকে নিয়ে ডিহি চিৎপুর গঠিত হয়।
চিৎপুরের নবাব মহম্মদ রেজা খাঁর একটি বাগানবাড়ি এখানে ছিল। দিল্লির মুঘল সম্রাটদের কাছ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভের পর কয়েক বছর মহম্মদ রেজা খাঁর হাতে বাংলার প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। তৎকালীন শাসকশক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই চিৎপুরের নবাব পদে বহাল ছিলেন এবং শাসকশক্তি তাকে প্রথম সারির ব্যক্তিত্বের স্থান দিয়েছিল। ড্যানিশ, ফরাসি ও ডাচ গভর্নররা যথাক্রমে শ্রীরামপুর, চন্দননগর ও চুঁচুড়া থেকে কলকাতায় এলে প্রথানুসারে লাটভবনে যাবার আগে চিৎপুরে খানিকক্ষণ অবস্থান করতেন।
সার্কুলার খাল চিৎপুরেই হুগলি নদীতে মিশেছে। ২০শ শতাব্দীতে একটি বিশাল লক অ্যান্ড টাইডাল বেসিন এই খালের মুখে নির্মিত হয়।
এন্টালি, মানিকতলা, বেলগাছিয়া, উল্টোডাঙ্গা, চিৎপুর, কাশীপুর, বেনিয়াপুকুরের অংশবিশেষ, বালিগঞ্জ, ওয়াটগঞ্জ, একবালপুর এবং গার্ডেনরিচ ও টালিগঞ্জের অংশবিশেষ ১৮৮৮ সালে কলকাতা পৌরসংস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়।
কলকাতার সুদূর দক্ষিণাঞ্চল থেকে একটি রাস্তা উত্তর দিকে এসেছে। এই রাস্তার মধ্যে অঞ্চল বিশেষে রসা রোড, চৌরঙ্গি রোড, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, চিৎপুর রোড ও ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড নামে পরিচিত। এরপর এটি দমদম রোড নাম নিয়েছে। মুর্শিদাবাদ ও কালীঘাটের মধ্যে এটি একটি প্রাচীন যোগসূত্র। কথিত আছে, কলকাতার আদি জমিদার বরিশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার এই রাস্তাটি তৈরি করিয়েছিলেন। বরিশায় এই পরিবারের নবীন শাখাটি এবং ব্যারাকপুরের উত্তরে হালিশহরে এঁদের প্রাচীন শাখাটি বাস করেন।
 পুরনো চিৎপুর রোডটি ছিল একটি জনপ্রিয় তীর্থপথ। এই পথের ধারে অনেক ধর্মশালা ও দোকান-বাজার ছিল। তাই এই রাস্তাটিকে ঘিরে দ্রুত জনবসতি গড়ে ওঠে, এখানকার মুরগির বাজার ‘মুরগিহাটা’, একটি ছোটো নালার উপর দুটি সাঁকো ‘জোড়াসাঁকো’, মাংসের বাজার ‘কসাইটোলা’ ও মৃৎশিল্পীদের বসতি অঞ্চলটি ‘কুমারটুলি’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে এই কুমারটুলি অঞ্চলের শিল্পীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা মেটাতে মাটির মূর্তি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ১৭৫০-এর দশকে গোবিন্দপুরে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণের কাজ শুরু হলে উক্ত অঞ্চলের অধিবাসীরা উত্তর কলকাতায় চলে আসেন।
চিৎপুর রোড
চিৎপুর রোড ছিল কলকাতার প্রাচীনতম রাস্তা। ধনীদের পাশাপাশি এই অঞ্চলে বহু সাধারণ ব্যবসায়ীর বাস ছিল। বাংলা পঞ্জিকা এখানে ছাপা হত। এটিই ছিল বটতলা বইবাজারের কেন্দ্র। চিৎপুর রোডের সঙ্গে যুক্ত অনেক কিছুই কলকাতার বাঙালি জীবন ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল – পান, আড্ডা, যাত্রা ও বিবাহ উৎসবে ‘হি ইজ আ জলি গুড ফেলো’ গাওয়া ব্রাস ব্যান্ডের কেন্দ্র ছিল এই রাস্তা।
লোয়ার চিৎপুর রোডের একটি অংশ দিল্লির চাঁদনি চকের সমতুল্য এলাকা ছিল। এখানেই ১৯২৬ সালে নাখোদা মসজিদ নির্মিত হয়। নবাবদের সর্বশেষ অবশিষ্টাংশ চিৎপুর রোডেই পাওয়া যেত। এই রাস্তাতেই রামমোহন রায় ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই পরে আদি ব্রাহ্মসমাজে পরিণত হয়। স্বাধীনতার পর এই রাস্তাটি এখানকার বিশিষ্টতম বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে নামাঙ্কিত হয়ে ‘রবীন্দ্র সরণি’ নামে পরিচিত হয়। কলকাতার বিভিন্ন জাতি ও ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ এই রাস্তার বাসিন্দা।
ঠাকুর পরিবারের আদি বাসভবন তথা অধুনা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো শিক্ষাপ্রাঙ্গন ‘জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি’ এই রাস্তার ধারেই অবস্থিত।
এই কলকাতার জান বাজারে জমিদার ছিলেন ,
তার স্ত্রী রানী রাসমণি একসময় কলকাতাকে চির স্মরণীয় করে তুলেছেন। অসাধারণ বুদ্ধিমতী, ধর্ম পরায়না রানী রাসমণি প্রবল পরাক্রমশালী ব্রিটিশের বিরুদ্ধে একের পর এক সংঘর্ষ করে চলেছেন। বিশাল সাম্রাজ্যকে সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে এক ভব্য ও বিশাল কালী মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এই মন্দিরের নাম সারা বিশ্বেই পারিচিত। এখানেই সাধনা ও পুজো করতেন স্বনামধন্য রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। এই মন্দির বিখ্যাত হয়ে উঠেছে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, তার স্ত্রী সারদা দেবী, এবং রানী রাসমণির জন্য। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের পরম আদরের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি জড়িত এই কলকাতা। এখান থেকেই স্বামীজি শিকাগো গিয়ে সনাতন ধর্মের প্রচারের গিয়ে সারা বিশ্বে সাড়া জাগিয়ে তুলেছিলেন। তার সেই আবেগপূর্ণ ভাষণের আগে তিনি আমেরিকা বাসীদের উদ্দেশ্যে , আমার ভাই ও বোনেরা বলে বক্তব্য শুরু করেছিলেন। করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল। এই বাগবাজারের আনাচে কানাচে সেবায় ব্রতী হয়েছিলেন স্বামীজির অনুগামী সিস্টার নিবেদিতা। তিনি দুস্থ মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।
এই সেই তৎকালীন চিৎপুরের এক পাশে ভবানীপুরে ছিল ভারতের শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাস গৃহ ও কর্মকাণ্ডের অন্যতম স্থান। চিৎপুর এর অধীনে বাগবাজারে একসময় নাট্য সম্রাট গিরিশ ঘোষ বিপ্লব এনেছিলেন নাট্য জগতে। তারই নাটকে অভিনয় করে নটি বিনোদিনী সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন এখান থেকেই।
আরেকটি নাম না লিখলে অন্যায় হয়ে যাবে,তিনি হলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। চিৎপুর এলাকার অধীন শোভাবাজার অঞ্চলের আহিরীটোলায় তার জীবন শুরু হয়েছিল একজন সাধারণ চাকুরীজীবী হিসাবে।
    পৌরসংস্থার ওয়ার্ড ও থানা
১৮৭৬ সালে কলকাতার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিকে একটি একক সাব-আর্বান মিউনিসিপ্যালিটির অধীনে আনা হয়। ১৮৯৯ সালে শহরতলি এলাকাকে ভেঙে ‘সাব-আর্বান মিউনিসিপ্যালিটি অফ কাশীপুর অ্যান্ড চিৎপুর’ গঠিত হয়। ১৯৩১ সালে এটি কলকাতার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। চিৎপুর এখন কলকাতা পৌরসংস্থার ৬ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এই এলাকার পশ্চিম দিকে হুগলি নদী এবং অন্য তিন দিকে রয়েছে কাশীপুর, সিঁথি, পাইকপাড়া, বেলগাছিয়া ও বাগবাজার এলাকা। হুগলি নদীর পশ্চিমে হাওড়া শহরের সালকিয়া অবস্থিত।
চিৎপুর থানা কলকাতা পুলিশের উত্তর ও উত্তর শহরতলি বিভাগের অধীনস্থ।
     রেল পরিবহন
চিৎপুরে কলকাতা রেল স্টেশন অবস্থিত। এটি কলকাতার চতুর্থ ও সাম্প্রতিকতম যাত্রীবাহী ট্রেনের টার্মিনাল স্টেশন। কলকাতার প্রথম দুটি টার্মিনাল স্টেশন হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন এক শতাব্দীরও আগে নির্মিত হয়। এই দুই স্টেশনের যাত্রীর চাপ কমাতে কলকাতা স্টেশন স্থাপিত হয়েছে। কলকাতার তৃতীয় স্টেশন শালিমার দক্ষিণ পূর্ব রেলের অধীনস্থ এবং হাওড়া জেলায় অবস্থিত হওয়ায় কলকাতার নগরকেন্দ্র থেকে অনেকটাই দূরে। নতুন টার্মিনালটির নামকরণ করা হয়েছে ‘কলকাতা’। চিৎপুর এর আগে এক শতাব্দীকাল রেলের একটি ইয়ার্ড ছিল। নতুন টার্মিনাল কোথায় হওয়া উচিত তা নিয়ে বিস্তর চিন্তাভাবনার পর শহরকেন্দ্র থেকে এর নৈকট্যের কারণে ভারতীয় রেল এখানেই টার্মিনাল স্থাপন করে ।
খুব কাছেই রয়েছে সেই বুক কাঁপানো মারাঠা ডিচ খাল। এই খালের এক ভয়াবহ ইতিহাস রয়েছে। মারাঠা দস্যুরা একসময় এই খাল বেয়ে কলকাতায় ঢুকে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। সাধারণ মানুষের আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের ব্যাপক লুটতরাজ।এই খাল এখন আর তেমন সতেজ নেই। আশেপাশে গজিয়ে উঠেছে অনেক ঝুগগী ঝুপড়ি।কাছেই রয়েছে আলোর নিচে অন্ধকারের মতো সম্ভ্রান্ত পতিতা পল্লী সোনাগাছি। অনেকের চোখের জল,অনেকের জীবিকার কেন্দ্রস্থল এটি।
চিৎপুর ট্রাম লাইনের দুপাশে অসংখ্য যাত্রা পার্টির অফিস রয়েছে। যাত্রা আমাদের বাংলা সংস্কৃতি বিশেষ করে গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত রয়েছে। শীতের মরসুমের আগেই যাত্রা জগতে তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। সারা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে অসম, ত্রিপুরা এমনকি বিহার,ঝাড়খণ্ডের কিছু এলাকায় দাপিয়ে চলে এই যাত্রা উৎসব। চিৎপুর এবং অন্যত্র ছাড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যাত্রা জগতে প্রায় লক্ষাধিক শিল্পী কর্মী জড়িয়ে রয়েছেন। প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ লোকের জীবিকা নির্বাহ চলে এই যাত্রা থেকে। এজন্য যাত্রাকে শিল্পের পর্যায়ে রাখা হয়েছে। প্রতিবছর এই চিৎপুর থেকে শিল্পী কর্মী বোঝাই যাত্রী বাসের চাকা সারা দেশ পরিক্রম করে থাকে। সরকারের উদ্যোগে যাত্রা সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন জায়গায়।
আরো একটু দূরে গেলে দেখা যাবে গঙ্গা নদী। এই গঙ্গার ধারে পর পর রয়েছে বিখ্যাত শ্মশান ঘাট নিমতলা, কেওড়াতলা। দূর দূর থেকে শব দাহ করার জন্য পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব এখানে আসেন। ২৪ ঘণ্টা চলে নাম কীর্তন। চিতার আগুন জ্বলতে দেখা যায় সারাক্ষণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও এখানেই দাহ করা হয়েছিল। এই গঙ্গার বুকেই রয়েছে সারিসারি নৌকো, লঞ্চ। লঞ্চে করে হাওড়া স্টেশন ছাড়াও অনেক জায়গায় যাওয়া যায়।
গঙ্গার ঘাট এবং বাগবাজার , শ্যামবাজারের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে দীর্ঘ রাস্তা গিরিশ এভিনিউ। এই রাস্তার ওপর কিছু দূরে গিরিশ পার্ক। তারই গায়ে কবিগুরুর জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি। পাশেই রয়েছে বিখ্যাত নাখোদা মসজিদ।
সেদিনের এই চিৎপুর এখন ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হয়েও উঠেছে। বড় বাজার সবথেকে বড় পাইকারি বাজার কলকাতার।
তৎকালীন চিৎপুর এলাকায় রয়েছে মিনার্ভা, স্টার,বিশ্বরূপ থিয়েটার। বহু সিনেমা হল রয়েছে।তবে আগের জৌলুস কারো নেই। বহু বৈচিত্রের মধ্যেও চিৎপুর এখনো আছে চিৎপুরেই।