ঢাকা ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ:-
গুলিবিদ্ধ হাদির সকল চিকিৎসার ব্যয় সরকার বহন করবে: প্রধান উপদেষ্টা রূপগঞ্জ’কে স্বপ্নের উপজেলায় রূপান্তরিত করতে চান বিএনপির মনোনীত প্রার্থী দিপু ভূঁইয়া খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় বিভিন্ন মসজিদে মাসুদুজ্জামানের বিশেষ দোয়া টেকনাফে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ৫০ হাজার ইয়াবাসহ আটক-১ খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় জাকির খানের উদ্যোগে দোয়া অনুষ্ঠিত গুলিবিদ্ধ স্বতন্ত্র প্রার্থী ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি, অবস্থা সংকটাপন্ন আজ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ১৪৬তম জন্মদিন বেঁচে নেই রাজশাহীতে গর্তে পড়া ২ বছরের শিশু সাজিদ কক্সবাজারে বিজিবির বিশেষ অভিযানে ১০ হাজার ইয়াবাসহ আটক-১ গাইবান্ধায় বিনামূল্যে বীজ-সার পেয়ে প্রান্তিক কৃষকের মুখে স্বস্তির হাসি টেকনাফে র‍্যাবের অভিযানে এক লক্ষ ইয়াবাসহ আটক-২ কক্সবাজারে শরীফ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী করিম র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার কুষ্টিয়ায় নারী পুলিশ কনস্টেবলের মোবাইল ছিনতাইয়ের চেষ্টা, যুবক আটক বড়লেখায় রহস্যঘেরা বাংলো বাড়িটি পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারিতে কুলাউড়ায় আগুনের লেলিহান শিখায় দগ্ধ হয়ে ছোট্ট শিশু রায়হানে মৃত্যু মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যাযজ্ঞ, নতুন যে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলো পুলিশ আমার নির্বাচনী এলাকার নাগরিকের মতামতের ভিত্তিতেই আগামীর না’গঞ্জ গড়বো: মাসুদুজ্জামান নাসিক সিটি পার্কের লেকের ঝোপ থেকে ভাসমান মরদেহ উদ্ধার না’গঞ্জে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের বৃক্ষমেলা নিয়ে ব্যতিক্রমী প্রচারণা নদী দখলমুক্ত করাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ: নৌ উপদেষ্টা কারওয়ান বাজারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ, মোহাম্মদপুরে জোড়া খুন; মা-মেয়েকে হত্যার কারন জানালেন গৃহকর্মীর স্বামী কারাবন্দি সাংবাদিকদের মুক্তি চেয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে সিপিজের চিঠি মৌলভীবাজারে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালিত  মাদক নির্মূলে কুষ্টিয়া শহরে যৌথ বাহিনীর অভিযান আগামী দিনে রাষ্ট্র কাঠামো নির্মান করা হবে ৩১ দফার মাধ্যমে: মাসুদুজ্জামান না’গঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে মানবতার কান্ডারী মাসুদুজ্জামান আমরা সবসময় জনগণের পাশে আছি: এসপি মিজানুর নারায়ণগঞ্জের লাখ লাখ শ্রমঘণ্টা যানজটে নষ্ট হচ্ছে; মতবিনিময় সভায় মাসুদুজ্জামান টেকনাফ সীমান্তে মানবপাচার চক্রের ২ সদস্য আটক নির্বাচন বিলম্বের ষড়যন্ত্র জনগণ বরদাস্ত করবে না: ফয়জুল করীম টেকনাফে সড়কে ট্রাক-সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে ঝড়লো ২ যুবকের তাজা প্রান দুর্নীতিমুক্ত থাকতে সচেতনতার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা অত্যাবশ্যকীয়: ডিসি রায়হান কবির রাজধানীতে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুন; হাতে গ্লাভস পরে মা-মেয়েকে হত্যা বেগম রোকেয়া দিবস আজ খালেদা জিয়ার কিডনি জটিলতায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা, অবস্থা অপরিবর্তিত নারায়ণগঞ্জে একযোগে সাত থানায় নতুন ওসিদের যোগদান না’গঞ্জে সুগন্ধা প্লাস রেস্টুরেন্টে বাসি খাবার রাখার দায়ে ১ লাখ টাকা অর্থদন্ড বন্দরবাসীর কাছে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে দোয়া চাইলেন: মাসুদুজ্জামান মৌলভীবাজার মুক্ত দিবস পালিত পালাবদলে হারাতে বসেছে ‘গরু দিয়ে ধান মারাইয়ের ঐতিহ্য  টেকনাফের গহিন পাহাড়ে কোস্ট গার্ডের অভিযান: ৭ নারী শিশু উদ্ধার, আটক-৩ নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে শ্রমিকের মৃত্যু; ডিপিডিসির ২ প্রকৌশলী বরখাস্ত না’গঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি প্রার্থী মাসুদুজ্জামান ছাত্র জনতার মুখোমুখি ‎শুধুমাত্র দেশকে ভালবেসেই বেগম খালেদা জিয়ার জীবন আজ বিপন্ন: শাহ্ আলম অগ্রহায়নের ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক গাইবান্ধা হানাদার মুক্তির ৫৩ বছর: মুক্তিযোদ্ধাদের দেখেই পালালো পাকিস্তানি বাহিনী বন্দর উপজেলার নতুন ইউএনও শিবানী সরকারের যোগদান নাফ নদী সীমান্তে বিজিবির অভিযান: ৫০ হাজার ইয়াবা জব্দ টেকনাফের শীর্ষ সন্ত্রাসী লম্বা মিজানের ঘর থেকে দেশি–বিদেশি অস্ত্রভাণ্ডার উদ্ধার মুন্সীগঞ্জে একই দিনে পৃথক স্থান থেকে নারীসহ ২ মরদেহ উদ্ধার সোনারগাঁয়ে সড়কের পাশে ডোবা থেকে যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার সোনারগাঁয়ে গ্যাস বিস্ফোরণে একই পরিবারের শিশুসহ দগ্ধ-৪ নারায়ণগঞ্জ শহরে আগুনে পুড়লো ৩৫টি কারখানা রায়পুরায় র‍্যাবের অভিযানে ১শ কেজি গাঁজাসহ আটক-২ শীতের দাপটে কাঁপছে চায়ের জনপদ শ্রীমঙ্গল মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন দ্বন্দ্ব: বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত-৮ খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়ার সিদ্ধান্ত আরও পেছাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে ঝুট মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড স্বাধীনতার পরবর্তী ৫৪ বছরে স্বৈরাচারের সর্বোচ্চ নির্যাতনের শিকার খালেদা জিয়া: মাসুদুজ্জামান শ্রীমঙ্গলে নিখোঁজের ৪ দিন পর মানুষিক প্রতিবন্ধী নারীর লাশ মিললো খালে কুষ্টিয়ায় রাজমিস্ত্রীর বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার কমলগঞ্জে ১৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের শঙ্কা, সতর্ক থাকার পরামর্শ আবহাওয়া অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জে ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার সূধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্যে যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা কুলাউড়ার-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যুবক নিহত গাইবান্ধায় নির্জন ভিটায় চা দোকানির রক্তাক্ত নিথর মরদেহ উদ্ধার রামু সীমান্তে বিজিবি অভিযানে ৪০ হাজার ইয়াবাসহ আটক-১ নরসিংদীতে ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্প, আবারও ২দিনের মাথায় কেঁপে উঠল ঢাকা টেকনাফ সীমান্তে আবারও উত্তেজনা; নাফ নদী থেকে ২ বাংলাদেশি জেলে নিখোঁজ শরণখোলায় আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত টেকনাফে কোস্টগার্ডের অভিযানে গোলা-বারুদসহ দেশীয় অস্ত্র জব্দ না’গঞ্জে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস হত্যাকান্ড; স্ত্রীর পরকীয়ার বলি সুমন, স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার-৬ নারায়ণগঞ্জ ও বন্দরবাসীর দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত কদম-রসুল সেতুর টেস্ট পাইলিংয়ের উদ্বোধন অসুস্থ খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ধানের শীষের কান্ডারী মাসুদুজ্জামানের দোয়া দেশজুড়ে আলোচিত ৮ কুকুরছানাকে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগে নিশি খাতুন গ্রেপ্তার নারায়ণগঞ্জে পোষা বিড়ালে কবুতরের বাচ্চা খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত-১ সারাদেশে ১ মাসের জন্য অবকাশে নিম্ন আদালত বাংলা একাডেমির ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ রায়পুরায় জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে গু*লি করে হ*ত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা শতকোটি ঘনফুট গ্যাস মজুদ মৌলভীবাজারে খালেদা জিয়া’র সুস্থতা কামনায় তারেক জিয়া পরিষদ না’গঞ্জ মহানগরের দোয়া অনুষ্ঠিত উখিয়ায় বস্তাবন্দী নারীর লাশ উদ্ধার;  মামলার মূল আসামি স্বামী জসিম উদ্দিন গ্রেপ্তার গাইবান্ধায় প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ধর্ষণের শিকার মাদ্রাসার ছাত্রী আবারও মধ্যরাতে ঢাকাসহ ৪ বিভাগে ৪.৯ মাত্রার ভূমিকম্প  সেন্ট মার্টিনমুখী জাহাজ আবারও সমুদ্রে আরও ৭৭ উপজেলায় নতুন ইউএনও নিয়োগ দিয়েছে সরকার আজ ১লা ডিসেম্বর, মহান গৌরবময় বিজয়ের মাস শুরু সব ধরনের জ্বালানি তেলের বাড়তি দাম, আজ থেকে কার্যকর তিন মাসেই কোটিপতি বনে গেছেন রাজনগর উপজেলা পরিষদের সিএ অনুপ দাস টেকনাফের দক্ষিণ শিলখালী থেকে ৫ জন অপহৃত সারা দেশের মানুষের দোয়া আল্লাহ তায়ালা ফিরিয়ে দেবেন না; মাসুদুজ্জামান খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মাসুদুজ্জামানের দোয়াসহ গরু সদকা ‎ভুল তথ্যের কারণে ৫৪ বছর যাবৎ বাংলাদেশ দাঁড়াতে পারেনি: নঈম জাহাঙ্গীর নারায়ণগঞ্জে নতুন পুলিশ সুপার(এসপি) মিজানুর রহমানের যোগদান এবার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নতুন মোর; নির্বাচনের ঘোষণা ‘কিং মেকার’ মো. আলীর সিদ্ধিরগঞ্জে চাঞ্চল্যকর তাকবির হত্যাকান্ড ও মুক্তিপন রহস্য উদ্ঘাটন কক্সবাজারে ৯০ হাজার ইয়াবাসহ বাস হেল্পার আটক নান্দাইলে আগুনে পুড়ে ছাই হলো বসতঘর,সর্বস্ব হারিয়ে অসহায় পরিবার

বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও চিৎপুর রয়েছে চিৎপুরেই

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময়- ০৪:৫০:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৫০ বার পড়া হয়েছে
ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা।।
উওর কলকাতার এক সংস্কৃতি, ইতিহাস সমৃদ্ধ অঞ্চল হলো আজকের চিৎপুর। এই অঞ্চল বাবু কালচারের জন্য এক সময় ছিল প্রসিদ্ধ। জমিদারেরা পায়রা উড়াতেন, হারমোনিয়াম ও এসরাজের আওয়াজের সঙ্গে ঝুমুরের শব্দে মুখর হয়ে উঠতো সন্ধ্যার বাইজী নাচের আসর। গান,বাজনা,নাচের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল চিৎপুর। এখনো চিৎপুরের যাত্রা পাড়া সেই ঐতিহ্যকে কিছুটা টেনে রেখেছে।চিৎপুর এক ঐতিহ্যপূর্ণ জায়গা। এখন নামটি বাদলে রবীন্দ্র সরণি রাখা হলেও সকলেই চিৎপুর হিসাবেই জানে এখনো।
কোথায় এই চিৎপুর?
চিৎপুর হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা শহরের উত্তরাংশের একটি অঞ্চল। রবীন্দ্র সরণি-সংলগ্ন (এই রাস্তাটির পূর্বতন নাম চিৎপুর রোড) সমগ্র এলাকাটিকে কখনও কখনও চিৎপুর বলে অভিহিত করা হলেও, উক্ত এলাকার বিভিন্ন অংশের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে।
  চিৎপুর ইতিহাস
চিৎপুর অঞ্চলের ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো। মনোহর ঘোষ এই অঞ্চলে দেবী চিত্তেশ্বরীর (কালী) একটি মন্দির নির্মাণ করেন। সেই মন্দিরের নামানুসারেই এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয়। কথিত আছে, উক্ত মন্দিরে সেকালে নরবলি দেওয়া হত। এই মন্দিরের নবরত্ন চূড়াটি ১৭৩৭ সালের ঘূর্ণিঘড়ে ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রাচীন মন্দিরটি একটি ধ্বংসস্তুপ হয়ে রয়েছে।
অন্য মতে, এই অঞ্চলের প্রকৃত নাম ছিল ‘চিত্রপুর’। ১৪৯৫ সালে রচিত বিপ্রদাস পিপলাইয়ের মনসামঙ্গল কাব্যে এই অঞ্চলের উল্লেখ আছে। এই মত অনুসারে, চক্রপাণি নামে বাংলার নবাবের এক সেনাপতি এখানে বাস করতেন। এটি ছিল শিল্পীদের একটি বর্ধিষ্ণু অঞ্চল। ১৬১০ সালে জনৈক গোবিন্দ ঘোষ চিত্তেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চিতে ডাকাত নামে এই অঞ্চলের এক কুখ্যাত ডাকাত এই মন্দিরে নরবলি দিত। চিতে ডাকাতের নাম অনুসারেও এই অঞ্চলের নামকরণ হওয়া সম্ভব।[
১৭১৭ সালে মুঘল সম্রাট ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে ইংরেজরা যে ৩৮টি গ্রামের স্বত্ত্ব লাভ করে, তার মধ্যে চিৎপুর ছিল অন্যতম। পরবর্তীকালে চিৎপুর, টালা, বীরপাড়া ও কালীদহ গ্রামগুলিকে নিয়ে ডিহি চিৎপুর গঠিত হয়।
চিৎপুরের নবাব মহম্মদ রেজা খাঁর একটি বাগানবাড়ি এখানে ছিল। দিল্লির মুঘল সম্রাটদের কাছ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভের পর কয়েক বছর মহম্মদ রেজা খাঁর হাতে বাংলার প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। তৎকালীন শাসকশক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই চিৎপুরের নবাব পদে বহাল ছিলেন এবং শাসকশক্তি তাকে প্রথম সারির ব্যক্তিত্বের স্থান দিয়েছিল। ড্যানিশ, ফরাসি ও ডাচ গভর্নররা যথাক্রমে শ্রীরামপুর, চন্দননগর ও চুঁচুড়া থেকে কলকাতায় এলে প্রথানুসারে লাটভবনে যাবার আগে চিৎপুরে খানিকক্ষণ অবস্থান করতেন।
সার্কুলার খাল চিৎপুরেই হুগলি নদীতে মিশেছে। ২০শ শতাব্দীতে একটি বিশাল লক অ্যান্ড টাইডাল বেসিন এই খালের মুখে নির্মিত হয়।
এন্টালি, মানিকতলা, বেলগাছিয়া, উল্টোডাঙ্গা, চিৎপুর, কাশীপুর, বেনিয়াপুকুরের অংশবিশেষ, বালিগঞ্জ, ওয়াটগঞ্জ, একবালপুর এবং গার্ডেনরিচ ও টালিগঞ্জের অংশবিশেষ ১৮৮৮ সালে কলকাতা পৌরসংস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়।
কলকাতার সুদূর দক্ষিণাঞ্চল থেকে একটি রাস্তা উত্তর দিকে এসেছে। এই রাস্তার মধ্যে অঞ্চল বিশেষে রসা রোড, চৌরঙ্গি রোড, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, চিৎপুর রোড ও ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড নামে পরিচিত। এরপর এটি দমদম রোড নাম নিয়েছে। মুর্শিদাবাদ ও কালীঘাটের মধ্যে এটি একটি প্রাচীন যোগসূত্র। কথিত আছে, কলকাতার আদি জমিদার বরিশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার এই রাস্তাটি তৈরি করিয়েছিলেন। বরিশায় এই পরিবারের নবীন শাখাটি এবং ব্যারাকপুরের উত্তরে হালিশহরে এঁদের প্রাচীন শাখাটি বাস করেন।
 পুরনো চিৎপুর রোডটি ছিল একটি জনপ্রিয় তীর্থপথ। এই পথের ধারে অনেক ধর্মশালা ও দোকান-বাজার ছিল। তাই এই রাস্তাটিকে ঘিরে দ্রুত জনবসতি গড়ে ওঠে, এখানকার মুরগির বাজার ‘মুরগিহাটা’, একটি ছোটো নালার উপর দুটি সাঁকো ‘জোড়াসাঁকো’, মাংসের বাজার ‘কসাইটোলা’ ও মৃৎশিল্পীদের বসতি অঞ্চলটি ‘কুমারটুলি’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে এই কুমারটুলি অঞ্চলের শিল্পীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা মেটাতে মাটির মূর্তি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ১৭৫০-এর দশকে গোবিন্দপুরে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণের কাজ শুরু হলে উক্ত অঞ্চলের অধিবাসীরা উত্তর কলকাতায় চলে আসেন।
চিৎপুর রোড
চিৎপুর রোড ছিল কলকাতার প্রাচীনতম রাস্তা। ধনীদের পাশাপাশি এই অঞ্চলে বহু সাধারণ ব্যবসায়ীর বাস ছিল। বাংলা পঞ্জিকা এখানে ছাপা হত। এটিই ছিল বটতলা বইবাজারের কেন্দ্র। চিৎপুর রোডের সঙ্গে যুক্ত অনেক কিছুই কলকাতার বাঙালি জীবন ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল – পান, আড্ডা, যাত্রা ও বিবাহ উৎসবে ‘হি ইজ আ জলি গুড ফেলো’ গাওয়া ব্রাস ব্যান্ডের কেন্দ্র ছিল এই রাস্তা।
লোয়ার চিৎপুর রোডের একটি অংশ দিল্লির চাঁদনি চকের সমতুল্য এলাকা ছিল। এখানেই ১৯২৬ সালে নাখোদা মসজিদ নির্মিত হয়। নবাবদের সর্বশেষ অবশিষ্টাংশ চিৎপুর রোডেই পাওয়া যেত। এই রাস্তাতেই রামমোহন রায় ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই পরে আদি ব্রাহ্মসমাজে পরিণত হয়। স্বাধীনতার পর এই রাস্তাটি এখানকার বিশিষ্টতম বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে নামাঙ্কিত হয়ে ‘রবীন্দ্র সরণি’ নামে পরিচিত হয়। কলকাতার বিভিন্ন জাতি ও ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ এই রাস্তার বাসিন্দা।
ঠাকুর পরিবারের আদি বাসভবন তথা অধুনা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো শিক্ষাপ্রাঙ্গন ‘জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি’ এই রাস্তার ধারেই অবস্থিত।
এই কলকাতার জান বাজারে জমিদার ছিলেন ,
তার স্ত্রী রানী রাসমণি একসময় কলকাতাকে চির স্মরণীয় করে তুলেছেন। অসাধারণ বুদ্ধিমতী, ধর্ম পরায়না রানী রাসমণি প্রবল পরাক্রমশালী ব্রিটিশের বিরুদ্ধে একের পর এক সংঘর্ষ করে চলেছেন। বিশাল সাম্রাজ্যকে সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে এক ভব্য ও বিশাল কালী মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এই মন্দিরের নাম সারা বিশ্বেই পারিচিত। এখানেই সাধনা ও পুজো করতেন স্বনামধন্য রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। এই মন্দির বিখ্যাত হয়ে উঠেছে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, তার স্ত্রী সারদা দেবী, এবং রানী রাসমণির জন্য। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের পরম আদরের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি জড়িত এই কলকাতা। এখান থেকেই স্বামীজি শিকাগো গিয়ে সনাতন ধর্মের প্রচারের গিয়ে সারা বিশ্বে সাড়া জাগিয়ে তুলেছিলেন। তার সেই আবেগপূর্ণ ভাষণের আগে তিনি আমেরিকা বাসীদের উদ্দেশ্যে , আমার ভাই ও বোনেরা বলে বক্তব্য শুরু করেছিলেন। করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল। এই বাগবাজারের আনাচে কানাচে সেবায় ব্রতী হয়েছিলেন স্বামীজির অনুগামী সিস্টার নিবেদিতা। তিনি দুস্থ মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।
এই সেই তৎকালীন চিৎপুরের এক পাশে ভবানীপুরে ছিল ভারতের শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাস গৃহ ও কর্মকাণ্ডের অন্যতম স্থান। চিৎপুর এর অধীনে বাগবাজারে একসময় নাট্য সম্রাট গিরিশ ঘোষ বিপ্লব এনেছিলেন নাট্য জগতে। তারই নাটকে অভিনয় করে নটি বিনোদিনী সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন এখান থেকেই।
আরেকটি নাম না লিখলে অন্যায় হয়ে যাবে,তিনি হলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। চিৎপুর এলাকার অধীন শোভাবাজার অঞ্চলের আহিরীটোলায় তার জীবন শুরু হয়েছিল একজন সাধারণ চাকুরীজীবী হিসাবে।
    পৌরসংস্থার ওয়ার্ড ও থানা
১৮৭৬ সালে কলকাতার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিকে একটি একক সাব-আর্বান মিউনিসিপ্যালিটির অধীনে আনা হয়। ১৮৯৯ সালে শহরতলি এলাকাকে ভেঙে ‘সাব-আর্বান মিউনিসিপ্যালিটি অফ কাশীপুর অ্যান্ড চিৎপুর’ গঠিত হয়। ১৯৩১ সালে এটি কলকাতার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। চিৎপুর এখন কলকাতা পৌরসংস্থার ৬ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এই এলাকার পশ্চিম দিকে হুগলি নদী এবং অন্য তিন দিকে রয়েছে কাশীপুর, সিঁথি, পাইকপাড়া, বেলগাছিয়া ও বাগবাজার এলাকা। হুগলি নদীর পশ্চিমে হাওড়া শহরের সালকিয়া অবস্থিত।
চিৎপুর থানা কলকাতা পুলিশের উত্তর ও উত্তর শহরতলি বিভাগের অধীনস্থ।
     রেল পরিবহন
চিৎপুরে কলকাতা রেল স্টেশন অবস্থিত। এটি কলকাতার চতুর্থ ও সাম্প্রতিকতম যাত্রীবাহী ট্রেনের টার্মিনাল স্টেশন। কলকাতার প্রথম দুটি টার্মিনাল স্টেশন হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন এক শতাব্দীরও আগে নির্মিত হয়। এই দুই স্টেশনের যাত্রীর চাপ কমাতে কলকাতা স্টেশন স্থাপিত হয়েছে। কলকাতার তৃতীয় স্টেশন শালিমার দক্ষিণ পূর্ব রেলের অধীনস্থ এবং হাওড়া জেলায় অবস্থিত হওয়ায় কলকাতার নগরকেন্দ্র থেকে অনেকটাই দূরে। নতুন টার্মিনালটির নামকরণ করা হয়েছে ‘কলকাতা’। চিৎপুর এর আগে এক শতাব্দীকাল রেলের একটি ইয়ার্ড ছিল। নতুন টার্মিনাল কোথায় হওয়া উচিত তা নিয়ে বিস্তর চিন্তাভাবনার পর শহরকেন্দ্র থেকে এর নৈকট্যের কারণে ভারতীয় রেল এখানেই টার্মিনাল স্থাপন করে ।
খুব কাছেই রয়েছে সেই বুক কাঁপানো মারাঠা ডিচ খাল। এই খালের এক ভয়াবহ ইতিহাস রয়েছে। মারাঠা দস্যুরা একসময় এই খাল বেয়ে কলকাতায় ঢুকে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। সাধারণ মানুষের আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের ব্যাপক লুটতরাজ।এই খাল এখন আর তেমন সতেজ নেই। আশেপাশে গজিয়ে উঠেছে অনেক ঝুগগী ঝুপড়ি।কাছেই রয়েছে আলোর নিচে অন্ধকারের মতো সম্ভ্রান্ত পতিতা পল্লী সোনাগাছি। অনেকের চোখের জল,অনেকের জীবিকার কেন্দ্রস্থল এটি।
চিৎপুর ট্রাম লাইনের দুপাশে অসংখ্য যাত্রা পার্টির অফিস রয়েছে। যাত্রা আমাদের বাংলা সংস্কৃতি বিশেষ করে গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত রয়েছে। শীতের মরসুমের আগেই যাত্রা জগতে তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। সারা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে অসম, ত্রিপুরা এমনকি বিহার,ঝাড়খণ্ডের কিছু এলাকায় দাপিয়ে চলে এই যাত্রা উৎসব। চিৎপুর এবং অন্যত্র ছাড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যাত্রা জগতে প্রায় লক্ষাধিক শিল্পী কর্মী জড়িয়ে রয়েছেন। প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ লোকের জীবিকা নির্বাহ চলে এই যাত্রা থেকে। এজন্য যাত্রাকে শিল্পের পর্যায়ে রাখা হয়েছে। প্রতিবছর এই চিৎপুর থেকে শিল্পী কর্মী বোঝাই যাত্রী বাসের চাকা সারা দেশ পরিক্রম করে থাকে। সরকারের উদ্যোগে যাত্রা সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন জায়গায়।
আরো একটু দূরে গেলে দেখা যাবে গঙ্গা নদী। এই গঙ্গার ধারে পর পর রয়েছে বিখ্যাত শ্মশান ঘাট নিমতলা, কেওড়াতলা। দূর দূর থেকে শব দাহ করার জন্য পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব এখানে আসেন। ২৪ ঘণ্টা চলে নাম কীর্তন। চিতার আগুন জ্বলতে দেখা যায় সারাক্ষণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও এখানেই দাহ করা হয়েছিল। এই গঙ্গার বুকেই রয়েছে সারিসারি নৌকো, লঞ্চ। লঞ্চে করে হাওড়া স্টেশন ছাড়াও অনেক জায়গায় যাওয়া যায়।
গঙ্গার ঘাট এবং বাগবাজার , শ্যামবাজারের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে দীর্ঘ রাস্তা গিরিশ এভিনিউ। এই রাস্তার ওপর কিছু দূরে গিরিশ পার্ক। তারই গায়ে কবিগুরুর জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি। পাশেই রয়েছে বিখ্যাত নাখোদা মসজিদ।
সেদিনের এই চিৎপুর এখন ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হয়েও উঠেছে। বড় বাজার সবথেকে বড় পাইকারি বাজার কলকাতার।
তৎকালীন চিৎপুর এলাকায় রয়েছে মিনার্ভা, স্টার,বিশ্বরূপ থিয়েটার। বহু সিনেমা হল রয়েছে।তবে আগের জৌলুস কারো নেই। বহু বৈচিত্রের মধ্যেও চিৎপুর এখনো আছে চিৎপুরেই।

নিউজটি শেয়ার করুন..

ট্যাগস:-

বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও চিৎপুর রয়েছে চিৎপুরেই

আপডেট সময়- ০৪:৫০:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪
ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা।।
উওর কলকাতার এক সংস্কৃতি, ইতিহাস সমৃদ্ধ অঞ্চল হলো আজকের চিৎপুর। এই অঞ্চল বাবু কালচারের জন্য এক সময় ছিল প্রসিদ্ধ। জমিদারেরা পায়রা উড়াতেন, হারমোনিয়াম ও এসরাজের আওয়াজের সঙ্গে ঝুমুরের শব্দে মুখর হয়ে উঠতো সন্ধ্যার বাইজী নাচের আসর। গান,বাজনা,নাচের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল চিৎপুর। এখনো চিৎপুরের যাত্রা পাড়া সেই ঐতিহ্যকে কিছুটা টেনে রেখেছে।চিৎপুর এক ঐতিহ্যপূর্ণ জায়গা। এখন নামটি বাদলে রবীন্দ্র সরণি রাখা হলেও সকলেই চিৎপুর হিসাবেই জানে এখনো।
কোথায় এই চিৎপুর?
চিৎপুর হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা শহরের উত্তরাংশের একটি অঞ্চল। রবীন্দ্র সরণি-সংলগ্ন (এই রাস্তাটির পূর্বতন নাম চিৎপুর রোড) সমগ্র এলাকাটিকে কখনও কখনও চিৎপুর বলে অভিহিত করা হলেও, উক্ত এলাকার বিভিন্ন অংশের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে।
  চিৎপুর ইতিহাস
চিৎপুর অঞ্চলের ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো। মনোহর ঘোষ এই অঞ্চলে দেবী চিত্তেশ্বরীর (কালী) একটি মন্দির নির্মাণ করেন। সেই মন্দিরের নামানুসারেই এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয়। কথিত আছে, উক্ত মন্দিরে সেকালে নরবলি দেওয়া হত। এই মন্দিরের নবরত্ন চূড়াটি ১৭৩৭ সালের ঘূর্ণিঘড়ে ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রাচীন মন্দিরটি একটি ধ্বংসস্তুপ হয়ে রয়েছে।
অন্য মতে, এই অঞ্চলের প্রকৃত নাম ছিল ‘চিত্রপুর’। ১৪৯৫ সালে রচিত বিপ্রদাস পিপলাইয়ের মনসামঙ্গল কাব্যে এই অঞ্চলের উল্লেখ আছে। এই মত অনুসারে, চক্রপাণি নামে বাংলার নবাবের এক সেনাপতি এখানে বাস করতেন। এটি ছিল শিল্পীদের একটি বর্ধিষ্ণু অঞ্চল। ১৬১০ সালে জনৈক গোবিন্দ ঘোষ চিত্তেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চিতে ডাকাত নামে এই অঞ্চলের এক কুখ্যাত ডাকাত এই মন্দিরে নরবলি দিত। চিতে ডাকাতের নাম অনুসারেও এই অঞ্চলের নামকরণ হওয়া সম্ভব।[
১৭১৭ সালে মুঘল সম্রাট ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে ইংরেজরা যে ৩৮টি গ্রামের স্বত্ত্ব লাভ করে, তার মধ্যে চিৎপুর ছিল অন্যতম। পরবর্তীকালে চিৎপুর, টালা, বীরপাড়া ও কালীদহ গ্রামগুলিকে নিয়ে ডিহি চিৎপুর গঠিত হয়।
চিৎপুরের নবাব মহম্মদ রেজা খাঁর একটি বাগানবাড়ি এখানে ছিল। দিল্লির মুঘল সম্রাটদের কাছ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভের পর কয়েক বছর মহম্মদ রেজা খাঁর হাতে বাংলার প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। তৎকালীন শাসকশক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই চিৎপুরের নবাব পদে বহাল ছিলেন এবং শাসকশক্তি তাকে প্রথম সারির ব্যক্তিত্বের স্থান দিয়েছিল। ড্যানিশ, ফরাসি ও ডাচ গভর্নররা যথাক্রমে শ্রীরামপুর, চন্দননগর ও চুঁচুড়া থেকে কলকাতায় এলে প্রথানুসারে লাটভবনে যাবার আগে চিৎপুরে খানিকক্ষণ অবস্থান করতেন।
সার্কুলার খাল চিৎপুরেই হুগলি নদীতে মিশেছে। ২০শ শতাব্দীতে একটি বিশাল লক অ্যান্ড টাইডাল বেসিন এই খালের মুখে নির্মিত হয়।
এন্টালি, মানিকতলা, বেলগাছিয়া, উল্টোডাঙ্গা, চিৎপুর, কাশীপুর, বেনিয়াপুকুরের অংশবিশেষ, বালিগঞ্জ, ওয়াটগঞ্জ, একবালপুর এবং গার্ডেনরিচ ও টালিগঞ্জের অংশবিশেষ ১৮৮৮ সালে কলকাতা পৌরসংস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়।
কলকাতার সুদূর দক্ষিণাঞ্চল থেকে একটি রাস্তা উত্তর দিকে এসেছে। এই রাস্তার মধ্যে অঞ্চল বিশেষে রসা রোড, চৌরঙ্গি রোড, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, চিৎপুর রোড ও ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড নামে পরিচিত। এরপর এটি দমদম রোড নাম নিয়েছে। মুর্শিদাবাদ ও কালীঘাটের মধ্যে এটি একটি প্রাচীন যোগসূত্র। কথিত আছে, কলকাতার আদি জমিদার বরিশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার এই রাস্তাটি তৈরি করিয়েছিলেন। বরিশায় এই পরিবারের নবীন শাখাটি এবং ব্যারাকপুরের উত্তরে হালিশহরে এঁদের প্রাচীন শাখাটি বাস করেন।
 পুরনো চিৎপুর রোডটি ছিল একটি জনপ্রিয় তীর্থপথ। এই পথের ধারে অনেক ধর্মশালা ও দোকান-বাজার ছিল। তাই এই রাস্তাটিকে ঘিরে দ্রুত জনবসতি গড়ে ওঠে, এখানকার মুরগির বাজার ‘মুরগিহাটা’, একটি ছোটো নালার উপর দুটি সাঁকো ‘জোড়াসাঁকো’, মাংসের বাজার ‘কসাইটোলা’ ও মৃৎশিল্পীদের বসতি অঞ্চলটি ‘কুমারটুলি’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে এই কুমারটুলি অঞ্চলের শিল্পীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা মেটাতে মাটির মূর্তি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ১৭৫০-এর দশকে গোবিন্দপুরে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণের কাজ শুরু হলে উক্ত অঞ্চলের অধিবাসীরা উত্তর কলকাতায় চলে আসেন।
চিৎপুর রোড
চিৎপুর রোড ছিল কলকাতার প্রাচীনতম রাস্তা। ধনীদের পাশাপাশি এই অঞ্চলে বহু সাধারণ ব্যবসায়ীর বাস ছিল। বাংলা পঞ্জিকা এখানে ছাপা হত। এটিই ছিল বটতলা বইবাজারের কেন্দ্র। চিৎপুর রোডের সঙ্গে যুক্ত অনেক কিছুই কলকাতার বাঙালি জীবন ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল – পান, আড্ডা, যাত্রা ও বিবাহ উৎসবে ‘হি ইজ আ জলি গুড ফেলো’ গাওয়া ব্রাস ব্যান্ডের কেন্দ্র ছিল এই রাস্তা।
লোয়ার চিৎপুর রোডের একটি অংশ দিল্লির চাঁদনি চকের সমতুল্য এলাকা ছিল। এখানেই ১৯২৬ সালে নাখোদা মসজিদ নির্মিত হয়। নবাবদের সর্বশেষ অবশিষ্টাংশ চিৎপুর রোডেই পাওয়া যেত। এই রাস্তাতেই রামমোহন রায় ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই পরে আদি ব্রাহ্মসমাজে পরিণত হয়। স্বাধীনতার পর এই রাস্তাটি এখানকার বিশিষ্টতম বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে নামাঙ্কিত হয়ে ‘রবীন্দ্র সরণি’ নামে পরিচিত হয়। কলকাতার বিভিন্ন জাতি ও ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ এই রাস্তার বাসিন্দা।
ঠাকুর পরিবারের আদি বাসভবন তথা অধুনা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো শিক্ষাপ্রাঙ্গন ‘জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি’ এই রাস্তার ধারেই অবস্থিত।
এই কলকাতার জান বাজারে জমিদার ছিলেন ,
তার স্ত্রী রানী রাসমণি একসময় কলকাতাকে চির স্মরণীয় করে তুলেছেন। অসাধারণ বুদ্ধিমতী, ধর্ম পরায়না রানী রাসমণি প্রবল পরাক্রমশালী ব্রিটিশের বিরুদ্ধে একের পর এক সংঘর্ষ করে চলেছেন। বিশাল সাম্রাজ্যকে সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে এক ভব্য ও বিশাল কালী মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এই মন্দিরের নাম সারা বিশ্বেই পারিচিত। এখানেই সাধনা ও পুজো করতেন স্বনামধন্য রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। এই মন্দির বিখ্যাত হয়ে উঠেছে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, তার স্ত্রী সারদা দেবী, এবং রানী রাসমণির জন্য। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের পরম আদরের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি জড়িত এই কলকাতা। এখান থেকেই স্বামীজি শিকাগো গিয়ে সনাতন ধর্মের প্রচারের গিয়ে সারা বিশ্বে সাড়া জাগিয়ে তুলেছিলেন। তার সেই আবেগপূর্ণ ভাষণের আগে তিনি আমেরিকা বাসীদের উদ্দেশ্যে , আমার ভাই ও বোনেরা বলে বক্তব্য শুরু করেছিলেন। করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল। এই বাগবাজারের আনাচে কানাচে সেবায় ব্রতী হয়েছিলেন স্বামীজির অনুগামী সিস্টার নিবেদিতা। তিনি দুস্থ মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।
এই সেই তৎকালীন চিৎপুরের এক পাশে ভবানীপুরে ছিল ভারতের শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাস গৃহ ও কর্মকাণ্ডের অন্যতম স্থান। চিৎপুর এর অধীনে বাগবাজারে একসময় নাট্য সম্রাট গিরিশ ঘোষ বিপ্লব এনেছিলেন নাট্য জগতে। তারই নাটকে অভিনয় করে নটি বিনোদিনী সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন এখান থেকেই।
আরেকটি নাম না লিখলে অন্যায় হয়ে যাবে,তিনি হলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। চিৎপুর এলাকার অধীন শোভাবাজার অঞ্চলের আহিরীটোলায় তার জীবন শুরু হয়েছিল একজন সাধারণ চাকুরীজীবী হিসাবে।
    পৌরসংস্থার ওয়ার্ড ও থানা
১৮৭৬ সালে কলকাতার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিকে একটি একক সাব-আর্বান মিউনিসিপ্যালিটির অধীনে আনা হয়। ১৮৯৯ সালে শহরতলি এলাকাকে ভেঙে ‘সাব-আর্বান মিউনিসিপ্যালিটি অফ কাশীপুর অ্যান্ড চিৎপুর’ গঠিত হয়। ১৯৩১ সালে এটি কলকাতার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। চিৎপুর এখন কলকাতা পৌরসংস্থার ৬ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এই এলাকার পশ্চিম দিকে হুগলি নদী এবং অন্য তিন দিকে রয়েছে কাশীপুর, সিঁথি, পাইকপাড়া, বেলগাছিয়া ও বাগবাজার এলাকা। হুগলি নদীর পশ্চিমে হাওড়া শহরের সালকিয়া অবস্থিত।
চিৎপুর থানা কলকাতা পুলিশের উত্তর ও উত্তর শহরতলি বিভাগের অধীনস্থ।
     রেল পরিবহন
চিৎপুরে কলকাতা রেল স্টেশন অবস্থিত। এটি কলকাতার চতুর্থ ও সাম্প্রতিকতম যাত্রীবাহী ট্রেনের টার্মিনাল স্টেশন। কলকাতার প্রথম দুটি টার্মিনাল স্টেশন হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন এক শতাব্দীরও আগে নির্মিত হয়। এই দুই স্টেশনের যাত্রীর চাপ কমাতে কলকাতা স্টেশন স্থাপিত হয়েছে। কলকাতার তৃতীয় স্টেশন শালিমার দক্ষিণ পূর্ব রেলের অধীনস্থ এবং হাওড়া জেলায় অবস্থিত হওয়ায় কলকাতার নগরকেন্দ্র থেকে অনেকটাই দূরে। নতুন টার্মিনালটির নামকরণ করা হয়েছে ‘কলকাতা’। চিৎপুর এর আগে এক শতাব্দীকাল রেলের একটি ইয়ার্ড ছিল। নতুন টার্মিনাল কোথায় হওয়া উচিত তা নিয়ে বিস্তর চিন্তাভাবনার পর শহরকেন্দ্র থেকে এর নৈকট্যের কারণে ভারতীয় রেল এখানেই টার্মিনাল স্থাপন করে ।
খুব কাছেই রয়েছে সেই বুক কাঁপানো মারাঠা ডিচ খাল। এই খালের এক ভয়াবহ ইতিহাস রয়েছে। মারাঠা দস্যুরা একসময় এই খাল বেয়ে কলকাতায় ঢুকে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। সাধারণ মানুষের আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের ব্যাপক লুটতরাজ।এই খাল এখন আর তেমন সতেজ নেই। আশেপাশে গজিয়ে উঠেছে অনেক ঝুগগী ঝুপড়ি।কাছেই রয়েছে আলোর নিচে অন্ধকারের মতো সম্ভ্রান্ত পতিতা পল্লী সোনাগাছি। অনেকের চোখের জল,অনেকের জীবিকার কেন্দ্রস্থল এটি।
চিৎপুর ট্রাম লাইনের দুপাশে অসংখ্য যাত্রা পার্টির অফিস রয়েছে। যাত্রা আমাদের বাংলা সংস্কৃতি বিশেষ করে গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত রয়েছে। শীতের মরসুমের আগেই যাত্রা জগতে তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। সারা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে অসম, ত্রিপুরা এমনকি বিহার,ঝাড়খণ্ডের কিছু এলাকায় দাপিয়ে চলে এই যাত্রা উৎসব। চিৎপুর এবং অন্যত্র ছাড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যাত্রা জগতে প্রায় লক্ষাধিক শিল্পী কর্মী জড়িয়ে রয়েছেন। প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ লোকের জীবিকা নির্বাহ চলে এই যাত্রা থেকে। এজন্য যাত্রাকে শিল্পের পর্যায়ে রাখা হয়েছে। প্রতিবছর এই চিৎপুর থেকে শিল্পী কর্মী বোঝাই যাত্রী বাসের চাকা সারা দেশ পরিক্রম করে থাকে। সরকারের উদ্যোগে যাত্রা সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন জায়গায়।
আরো একটু দূরে গেলে দেখা যাবে গঙ্গা নদী। এই গঙ্গার ধারে পর পর রয়েছে বিখ্যাত শ্মশান ঘাট নিমতলা, কেওড়াতলা। দূর দূর থেকে শব দাহ করার জন্য পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব এখানে আসেন। ২৪ ঘণ্টা চলে নাম কীর্তন। চিতার আগুন জ্বলতে দেখা যায় সারাক্ষণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও এখানেই দাহ করা হয়েছিল। এই গঙ্গার বুকেই রয়েছে সারিসারি নৌকো, লঞ্চ। লঞ্চে করে হাওড়া স্টেশন ছাড়াও অনেক জায়গায় যাওয়া যায়।
গঙ্গার ঘাট এবং বাগবাজার , শ্যামবাজারের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে দীর্ঘ রাস্তা গিরিশ এভিনিউ। এই রাস্তার ওপর কিছু দূরে গিরিশ পার্ক। তারই গায়ে কবিগুরুর জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি। পাশেই রয়েছে বিখ্যাত নাখোদা মসজিদ।
সেদিনের এই চিৎপুর এখন ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হয়েও উঠেছে। বড় বাজার সবথেকে বড় পাইকারি বাজার কলকাতার।
তৎকালীন চিৎপুর এলাকায় রয়েছে মিনার্ভা, স্টার,বিশ্বরূপ থিয়েটার। বহু সিনেমা হল রয়েছে।তবে আগের জৌলুস কারো নেই। বহু বৈচিত্রের মধ্যেও চিৎপুর এখনো আছে চিৎপুরেই।