কে এই মালা খান..?
- আপডেট সময়- ১১:২৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫৮ বার পড়া হয়েছে
মালা খান। ছবি: সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক।।
সম্প্রতি বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক(ডিজি) ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলোচিত মালা খানের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে। উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের নিকলা মহাব্বত (ঘাইনঞ্জানি) গ্রামের আবুল ফজল খানের মেয়ে। বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকতেন তিনি, সেখানেই বেড়ে ওঠা ও লেখাপড়া করেছেন।
তার চাচা গরু ব্যবসায়ী তোফাজ্জল খানের মাধ্যমে এলাকায় জমি ক্রয় ও গরু-ছাগল বেচাকেনা করতেন।
এছাড়াও এলাকার বেশ কয়েকজনকে সরকারি-বেসরকারিভাবে চাকরি দিয়েছেন এই মালা খান।
সম্প্রতি সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল মালা খানের এমন খবর দেখে হতবাক স্থানীয়রা জনসাধারণ।
সরেজমিনে অলোয়ার নিকলা মহাব্বত এলাকায় গিয়ে এমন অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বিআরআইসিএম’র মহাপরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খানের চাকরির পাশাপাশি ঢাকার মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রজাতির গরু ও ছাগলের একাধিক খামার রয়েছে। এসব খামারের পরিচালনা করতেন তার আপন ছোট ভাই। এছাড়াও বসিলাতেই তার জায়গা ও বাসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
টাঙ্গাইলসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চাচা তোফাজ্জল খানের মাধ্যমে গরু ও ছাগল কিনে মোটাতাজা করা হতো তার খামারে।
পরবর্তীতে চাচা ও ঢাকার বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে সেসকল গরু-ছাগল টাঙ্গাইলে এনেও বিক্রি করা হতো।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর বসিলার ওই খামার থেকে অনেকেই গরু-ছাগল নিয়ে গেছে। এছাড়া তার কয়েক মাস আগেও তার চাচা তোফাজ্জল এক ট্রাক গরু টাঙ্গাইলে নিয়ে বিক্রি করেছেন। এছাড়াও তার ভাই মন্তাজ খানের ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জেও গরুর খামার রয়েছে। ভাই মন্তাজ গত বছরখানেক আগে মারা গেছেন।
এছাড়া তার চাচার মাধ্যমে এলাকায় ৫৯ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি। মালা খান বিআরআইসিএমতে এলাকার বেশ কয়েকজনকে চাকরি দিয়ে হাতিয়েছে কোটি টাকা। তারা এখনও সেখানে বিভিন্ন পদে কর্মরত রয়েছেন।
জানা গেছে, মালা খানের তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে কানাডায় পড়াশোনা করছে। স্বামীও মোস্তফা আনোয়ার একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। বর্তমানে তিনি দুই মেয়ের সঙ্গেই কানাডায় বসবাস করছেন। তবে গুঞ্জন রয়েছে স্বামী ও মেয়েদের জন্য কানাডায় বাড়ি কিনেছেন মালা খান।
মালা খানের বিরুদ্ধে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সনদ জালের অভিযোগও রয়েছে তথ্য সূত্রে। এ নিয়ে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। ‘জালিয়াতির মালা গেঁথেছেন ডিজি মালা খান’ শিরোনামে ওই সংবাদে ‘জাল সনদ ও নিয়োগ পরীক্ষায় (লিখিত) সর্বনিম্ন নম্বর পেয়ে অকৃতকার্য হয়েও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন বলে বলা হয়।
এতে আরো বলা হয়েছে- ‘জালিয়াতির মাধ্যমে মালা খান অর্জন করেছেন পিএইচডি ডিগ্রি। আর ওই পিএইচডি কোর্সের কো-সুপারভাইজার ছিলেন তার স্বামী মোস্তফা আনোয়ার। তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো অনুমোদন। ভুয়া প্রতিষ্ঠানটি টাকার বিনিময়ে দিয়েছে পিএইচডির সনদ।
নিকলা এলাকার অনেকেই জানান, মালা খান এলাকার বেকার অনেককে চাকরি দিয়েছেন। তবে টাকার বিনিময়ে দিয়েছেন কি না সেটা কেউ কিছুই বলতে পারেননি।
এছাড়াও এলাকায় তার চাচা তোফাজ্জলকে বিভিন্নভাবে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে সহায়তা করতেন। চাচা ভুঞাপুর শিয়ালকোল হাটের একজন ইজারাদার।
বিআরআইসিএমে চাকরি পাওয়া অলোয়া ইউনিয়নের ঘাইনঞ্জানি গ্রামের সোহান জানান, ‘কেরানীগঞ্জে জায়গা লিজ নিয়ে তার ভাইয়ের গরু ও ছাগলের খামার ছিল বলে জেনেছি। তবে বসিলাতে ছিল কি না তা জানি না।
৫ আগস্টের পরই অফিসের লোকজন যারা বিরোধিতা করেছেন তাদের কাছেই চাবি ছিল অফিসের। যেখানে অবৈধ কোন কার্যকলাপ ছিল না ম্যাডামের। বিআরআইসিএমের কার্যালয়ে গরু ও ছাগল নিয়ে আসা হত বিক্রির জন্য। ঝামেলার কারণে খামার ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে আমি দুইটি গরু ও দুইটি রাম ছাগল নিয়েছি। ঢাকায় তার কোন সম্পত্তি নেই ম্যাডাম পরিবার ও তার বাবা, ভাই সহ কোয়াটারের থাকতেন।’
এ ঘটনায় বিষয়ে চাচা তোফাজ্জল খান বলেন, ‘মালা খানের ঘটনাটি দেখেছি। আমার ভাতিজি সৎ একজন কর্মকর্তা ও বৈজ্ঞানিক জানতাম। অফিসের লোকজন তার বিরুদ্ধে লেগেছেন। তার অফিসের আয়নাঘর থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলছেন। তার ভাইয়ের খামার ছিল বসিলাতে। আন্দোলনের আগে এক ট্রাক গরু এনে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেছি। এলাকায় কিছু জায়গা কিনে দিয়েছিলাম কিন্তু পরবর্তীতে ওই জমি আমি কিনে নিয়েছি।
বিআরআইসিএম’র মহাপরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খান বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও গুজব।
৫ আগস্টের পর অফিসেই যাইনি কয়েকদিন। এরমধ্যে তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে, মিথ্যা ঘটনা তৈরি করেছে। এছাড়া তারা মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগ দিয়েছে আমার বিরুদ্ধে। মিথ্যা ঘটনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আইনগত কোন কিছুই করতে পারবো না। সরকার পতনের পর কয়েকদিন অফিস করেছি। আগে থেকেই ওই কক্ষের বিষয়ে জানতো অফিসের লোকজন। কিন্তু এখন সেটি গোপনকক্ষ নাম দিয়ে প্রচার করছে। মূলত আমাকে অপদস্থ করার জন্যই এমন নাটক সাজিয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘আমার ভাইয়ের গরু-ছাগলের খামার ছিল। আমার তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে কানাডায় থাকে। আমার স্বামীও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। তিনিও কানাডায় থাকেন এসব সবই সত্যি।