ঢাকা ০২:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুন্সীগঞ্জে শতাধিক ড্রেজারে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞে ভাঙ্গন আতংক 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৩০:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪ ২২ বার পড়া হয়েছে
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি।।
বর্ষা মৌসুমের সামনে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে গ্রামঘেষে শতাধিক ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ চলছে।মেঘনায় বালু উত্তোলনের বৈধ ইজারা নিয়ে গ্রামঘেষে বালু উত্তোলন চালাচ্ছেন ইজারাদার প্রতিষ্ঠান।এরই সঙ্গে জড়িত রয়েছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। আর এ বালু উত্তোলনে আতংকিত হয়ে পড়েছে সেখানকার বাসিন্দারা।তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন আতংক।সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পসহ বসতভিটে আর ফসলি জমি মেঘনায় বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন গ্রামবাসী।মেঘনা তীরের এ গ্রামের পশ্চিম ও দক্ষিন দিকে রয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি।বর্ষার সামনে ওই জমিতে জোয়ারের সময় হাটু পানি বিরাজ করে।দিনের বেলায় গ্রাম লাগোয়া ওই জমি থেকে কিছুটা দুরেই ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।আর রাতের আঁধারে জমিঘেষেই বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ চলে। সরেজমিনে জেলার গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের চরকালীপুরা গ্রামের নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলে বালু উত্তোলনের এ চিত্র পাওয়া গেছে। এ সময় তারা গ্রামঘেষে বালু উত্তোলনের অভিযোগ তোলেন।তারা জানিয়েছেন,ইজারা প্রতিষ্ঠানকে তারা চিনেন না।তবে ইজারা প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিলে-মিশে এ বালু উত্তোলন করছে।
এদিকে,উপজেলার চরকালীপুরা,নয়ানগর, রমজানবেগ ও ষোলআনি গ্রাম সংলগ্ন মেঘনার বালু মহাল ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।এ বালু মহালের ১২৮ একর জুড়ে মেঘনাবক্ষে বালু উত্তোলন করা যাবে।এ বালু মহালটি ইজারা পেয়েছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।সম্প্রতি ওই মহালে শতাধিক ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন শুরু করে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান।রাজধানীর দিলকুশার ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মেঘনায় বালু উত্তোলনের কাজ দেখভাল করে আসছেন গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ।গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে মেমনা তীরের ওই গ্রামঘেষে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার পেছনে ওই উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম উঠে এসেছে।উপজেলার চরকালীপুরা গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস প্রধানের স্ত্রী নার্গিস আক্তার(৫০)জানান,এ গ্রামের একেবারে নদীঘেষে রয়েছে সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্প। ১২ বছর আগে এ আশ্রয়ন প্রকল্পে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে ১২০ টি পরিবারের। এছাড়া এ গ্রামে আরো ২০০ টি পরিবার বসবাস করে আসছে বংশ পরম্পরায়।৩ শতাধিক পরিবারের বসবাসের এ গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার রোজগারের একমাত্র উপায় মেঘনা নদীতে মাছ শিকার।এক কথায় অধিকাংশ পরিবার হতদরিদ্র।গ্রামের ওই নারী বলেন, আমাগো চোখের সামনেই গ্রামের জমি গুলোর ধারেই বালু উত্তোলনের জন্য ড্রেজার লাগাইতাছে।চোখে দেখতাছি,তয় বাঁধ সাধতে পারি না।কিছু কইতে গেলেই মারতে আসে।ভয়ে তো আছি কহন জানি গ্রাম সুদ্ধ কাইটা নিয়ে যাইবো বালু খেকোরা।এমনে কইরা বালু কাটলে তো বর্ষায় আমাগো ঘর-বাড়িই ভাঙ্গিয়া লইয়া যাইবো রাক্ষুসি মেঘনা।গ্রামের জুলহাস প্রধান(৫৫)বলেন,বর্ষা আইলেই নদীর ভাঙ্গনের ভয়ে আমাগো বুক কাপে।এহন আবার গ্রামের কাছেই ড্রেজারে বালু কাটতাছে।আমাগো উপজেলা চেয়ারম্যান জিন্নাহ বড় একটা কোম্পানীর সঙ্গে মিলে এ বালু উত্তোলন করতাছে। যেভাবে ড্রেজার লাগাইছে,তাতে গ্রামের জমি ও বসতভিটা এ বর্ষাতেই ভেঙ্গে যাইবো।গ্রামের আক্কাস প্রধান(৬০)জানান,গ্রাম লাগোয়া তার জমি রয়েছে ১২০ শতাংশ।জমির পরই মেঘনা নদী।আর ওই জমির কাছে মেঘায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজারের মাধ্যমে এ বালু উত্তোলন করায় ভাঙ্গন আতংক বেড়েছে।তিনি বলেন,প্রতিবাদ করার সাহস নেই আমাদের।প্রতিবাদ করলে ইজারাদারের লোকজন চড়াও হয়।এভাবে বালু কাটলে এ বর্ষায় মেঘনায় ভাঙ্গন দেখা দিবে।আমার ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে।গ্রামের মামুন প্রধানের স্ত্রী নাজনীন(২১) বলেন,রাতে ঘুম আহে না।কখন জানি ড্রেজারে জমিসুদ্ধ আমাগো বসতভিটে কাইটা লইয়্যা যায়।গ্রামঘেষে ড্রেজারের বালু উত্তোলনের কথা অস্বীকার করেছেন গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ। তিনি বলেন,সরকারি ভাবে ইজারা পেয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।সর্বোচ্চ রয়েলিটি দিয়েই বালু বালু কাটা হচ্ছে।নির্দিষ্ট স্থানেই বালু কাটা হচ্ছে। তীরঘেষে নয়।আপনারা সরেজমিনে ঘুরে দেখে যান।তিনি আরো বলেন,এটা আপনাদের গ্রাম না। এটা আমার গ্রাম,আমার ইউনিয়ন।আমার জন্মস্থান।বালু উত্তোলন কাজে ইজারা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা-জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন,জড়িত থাকলে কি হইছে।ব্যবসা তো সবাই করে।তবে আমার গ্রাম বিলিয়ে দিয়ে ব্যবসা করবো না।এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো:আবুজাফর রিপন বিপিএএ সাংবাদিকদের বলেন,সীমানা অতিক্রম করে বালু কাটার কথা শুনেছি।তাৎক্ষনিক গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।যাতে নির্ধারিত সীমানার বাইরে বালু কাটা না হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মুন্সীগঞ্জে শতাধিক ড্রেজারে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞে ভাঙ্গন আতংক 

আপডেট সময় : ০৭:৩০:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি।।
বর্ষা মৌসুমের সামনে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে গ্রামঘেষে শতাধিক ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ চলছে।মেঘনায় বালু উত্তোলনের বৈধ ইজারা নিয়ে গ্রামঘেষে বালু উত্তোলন চালাচ্ছেন ইজারাদার প্রতিষ্ঠান।এরই সঙ্গে জড়িত রয়েছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। আর এ বালু উত্তোলনে আতংকিত হয়ে পড়েছে সেখানকার বাসিন্দারা।তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন আতংক।সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পসহ বসতভিটে আর ফসলি জমি মেঘনায় বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন গ্রামবাসী।মেঘনা তীরের এ গ্রামের পশ্চিম ও দক্ষিন দিকে রয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি।বর্ষার সামনে ওই জমিতে জোয়ারের সময় হাটু পানি বিরাজ করে।দিনের বেলায় গ্রাম লাগোয়া ওই জমি থেকে কিছুটা দুরেই ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।আর রাতের আঁধারে জমিঘেষেই বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ চলে। সরেজমিনে জেলার গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের চরকালীপুরা গ্রামের নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলে বালু উত্তোলনের এ চিত্র পাওয়া গেছে। এ সময় তারা গ্রামঘেষে বালু উত্তোলনের অভিযোগ তোলেন।তারা জানিয়েছেন,ইজারা প্রতিষ্ঠানকে তারা চিনেন না।তবে ইজারা প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিলে-মিশে এ বালু উত্তোলন করছে।
এদিকে,উপজেলার চরকালীপুরা,নয়ানগর, রমজানবেগ ও ষোলআনি গ্রাম সংলগ্ন মেঘনার বালু মহাল ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।এ বালু মহালের ১২৮ একর জুড়ে মেঘনাবক্ষে বালু উত্তোলন করা যাবে।এ বালু মহালটি ইজারা পেয়েছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।সম্প্রতি ওই মহালে শতাধিক ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন শুরু করে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান।রাজধানীর দিলকুশার ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মেঘনায় বালু উত্তোলনের কাজ দেখভাল করে আসছেন গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ।গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে মেমনা তীরের ওই গ্রামঘেষে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার পেছনে ওই উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম উঠে এসেছে।উপজেলার চরকালীপুরা গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস প্রধানের স্ত্রী নার্গিস আক্তার(৫০)জানান,এ গ্রামের একেবারে নদীঘেষে রয়েছে সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্প। ১২ বছর আগে এ আশ্রয়ন প্রকল্পে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে ১২০ টি পরিবারের। এছাড়া এ গ্রামে আরো ২০০ টি পরিবার বসবাস করে আসছে বংশ পরম্পরায়।৩ শতাধিক পরিবারের বসবাসের এ গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার রোজগারের একমাত্র উপায় মেঘনা নদীতে মাছ শিকার।এক কথায় অধিকাংশ পরিবার হতদরিদ্র।গ্রামের ওই নারী বলেন, আমাগো চোখের সামনেই গ্রামের জমি গুলোর ধারেই বালু উত্তোলনের জন্য ড্রেজার লাগাইতাছে।চোখে দেখতাছি,তয় বাঁধ সাধতে পারি না।কিছু কইতে গেলেই মারতে আসে।ভয়ে তো আছি কহন জানি গ্রাম সুদ্ধ কাইটা নিয়ে যাইবো বালু খেকোরা।এমনে কইরা বালু কাটলে তো বর্ষায় আমাগো ঘর-বাড়িই ভাঙ্গিয়া লইয়া যাইবো রাক্ষুসি মেঘনা।গ্রামের জুলহাস প্রধান(৫৫)বলেন,বর্ষা আইলেই নদীর ভাঙ্গনের ভয়ে আমাগো বুক কাপে।এহন আবার গ্রামের কাছেই ড্রেজারে বালু কাটতাছে।আমাগো উপজেলা চেয়ারম্যান জিন্নাহ বড় একটা কোম্পানীর সঙ্গে মিলে এ বালু উত্তোলন করতাছে। যেভাবে ড্রেজার লাগাইছে,তাতে গ্রামের জমি ও বসতভিটা এ বর্ষাতেই ভেঙ্গে যাইবো।গ্রামের আক্কাস প্রধান(৬০)জানান,গ্রাম লাগোয়া তার জমি রয়েছে ১২০ শতাংশ।জমির পরই মেঘনা নদী।আর ওই জমির কাছে মেঘায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজারের মাধ্যমে এ বালু উত্তোলন করায় ভাঙ্গন আতংক বেড়েছে।তিনি বলেন,প্রতিবাদ করার সাহস নেই আমাদের।প্রতিবাদ করলে ইজারাদারের লোকজন চড়াও হয়।এভাবে বালু কাটলে এ বর্ষায় মেঘনায় ভাঙ্গন দেখা দিবে।আমার ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে।গ্রামের মামুন প্রধানের স্ত্রী নাজনীন(২১) বলেন,রাতে ঘুম আহে না।কখন জানি ড্রেজারে জমিসুদ্ধ আমাগো বসতভিটে কাইটা লইয়্যা যায়।গ্রামঘেষে ড্রেজারের বালু উত্তোলনের কথা অস্বীকার করেছেন গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ। তিনি বলেন,সরকারি ভাবে ইজারা পেয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।সর্বোচ্চ রয়েলিটি দিয়েই বালু বালু কাটা হচ্ছে।নির্দিষ্ট স্থানেই বালু কাটা হচ্ছে। তীরঘেষে নয়।আপনারা সরেজমিনে ঘুরে দেখে যান।তিনি আরো বলেন,এটা আপনাদের গ্রাম না। এটা আমার গ্রাম,আমার ইউনিয়ন।আমার জন্মস্থান।বালু উত্তোলন কাজে ইজারা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা-জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন,জড়িত থাকলে কি হইছে।ব্যবসা তো সবাই করে।তবে আমার গ্রাম বিলিয়ে দিয়ে ব্যবসা করবো না।এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো:আবুজাফর রিপন বিপিএএ সাংবাদিকদের বলেন,সীমানা অতিক্রম করে বালু কাটার কথা শুনেছি।তাৎক্ষনিক গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।যাতে নির্ধারিত সীমানার বাইরে বালু কাটা না হয়।