ঢাকা ১১:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
মৌলভীবাজার কৃষকলীগ সভাপতি সাদেকুল গ্রেপ্তার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ৪০০ কোটির পিয়ন জাহাঙ্গীরকে দুদকে তলব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপিদের পিএস-এপিএসরাও বানিয়েছেন অঢেল সম্পদসহ অর্থের পাহাড় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে যা বললেন ভারতের পররাষ্ট্র মুখপাত্র পুলিশের আরও ৪ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের অনুমতি দিলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টেকনাফে চাচার যোগসাজশে ভাতিজা অপহরণ: অস্ত্রসহ গ্রেফতার-৩ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক বেলাল শ্রীঘরে কুলাউড়া ছাত্রলীগ সভাপতি নিয়াজুল তায়েফ গ্রেপ্তার বিয়ের পরে একসঙ্গে এইচএসসি পাস করলেন নাঈম-শারমিন দম্পতি মতিয়া চৌধুরীর জানাজা আজ বাদ জোহর আওয়ামী জোট নেতা মেননের ২৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদের খোঁজে দুদক জাতীয় দিবস হিসেবে ৭ই মার্চ বাতিল করায় ক্ষুব্ধ শাওন সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা আজ নুনের আবিষ্কার ও অসাধারণ গুনাগুন নীরবেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জায়েদ আলী গ্রেপ্তার ডিএনসিসির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম গ্রেপ্তার সিআইডি প্রধানের দায়িত্ব নিলেন অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান ২৪ ঘন্টার মধ্যে টমটম চালক হত্যার আসামি জসিম গ্রেপ্তার  সোনারগাঁয়ে বিএনপি নেতা মান্নানের দুঃশাসনের স্বর্গরাজ্য জাতীয় ৮ দিবস বাতিলের প্রতিবাদ জানিয়ে আ’লীগের বিবৃতি আজ থেকে ৩দিন ব্যাপী লালন স্মরণোৎসব শুরু ৮ জাতীয় দিবস বাতিলের আদেশ জারি গণহত্যায় জড়িত সাংবাদিকরাও ছাড় পাবে না: আইন উপদেষ্টা  অবকাশকালীন বেঞ্চ ভেঙে দিলেন প্রধান বিচারপতি এবার এইচএসসিতে ৬৫টি কলেজের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি এইচএসসিতে এইবছর শতভাগ পাস করেছে ১৩৮৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিনতাইয়ের অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জে কৃষকদলের ৪ নেতা আটক ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার কমলেও বেড়েছে জিপিএ-৫ শ্রীমঙ্গলে পৃথক স্থান থেকে দুইটি মরদেহ উদ্ধার কুষ্টিয়ায় চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার মায়ানমারে অপহৃত ১৬ জেলেকে ফেরত আনলো বিজিবি নালার পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু মৌলভীবাজারে মাছ ধরা নিয়ে ঝগড়ার জেরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ: নিহত-১  মুন্সীগঞ্জের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এমিলির অর্থের যোগানদাতা জামাতা তারেক  সাতক্ষীরায় নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে লাপাত্তা গৃহবধূ   ময়মনসিংহে বিএসটিআই’র আয়োজনে ‘বিশ্ব মান দিবস-২০২৪’ অনুষ্ঠিত কুলাউড়ায় পূজামণ্ডপে শিশুদের মারধরের ঘটনায় এক তরুণী আটক ডিজিএফআই’র নতুন ডিজি জাহাঙ্গীর আলম খোকন দাসের সর্বজনীন পূজা এককথায় দরিদ্রদের সেবা মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলে আ’লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ: ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা সাতক্ষীরার বাংলাদেশ-ভারত সীমানায় ইছামতীতে প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হলো দূর্গাপূজা পাকশীতে রেলের সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত কুতুবদিয়ায় এখনো জ্বলছে এলপিজিবাহী জাহাজের আগুন, নিয়ন্ত্রণে আসেনি রাউজানে বিএনপির দু’গ্রুপের ভয়াবহ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ-২ দূর্গোৎসবে পুজামন্ডপ কেন পাহারা দিতে হবে প্রশ্ন❓মুন্সীগঞ্জে রিজভী বকশীগঞ্জে ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস’ পালিত দৌলতপুরে মসজিদ-কবরস্থানের টাকা নিয়ে বিএনপির দু’গ্রুপ সংঘর্ষে আহত-৮ দূর্গোৎসবকে ঘিরে সারাদেশে ৩১৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন শ্রীমঙ্গলে লাইন মেরামত করতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে যুবকের মৃত্যু চাঁদাবাজ ও দখলদারদের বিএনপিতে স্থান নেই: ইকবাল হোসেন  সাবেক এমপি জিল্লুর রহমানের ছোট ভাই আতাউর গ্রেপ্তার বকশীগঞ্জে সাপ্তাহিক ১দিন দোকান-কর্মচারীদের ছুটির দাবীতে বিক্ষোভ ময়মনসিংহে শান্তিপূর্ন পরিবেশে পালিত হচ্ছে দুর্গোৎসব ঈশ্বরদীতে চলন্ত ট্রেন থেকে পরে যুবকের মৃত্যু  ভারতে পালানোর সময় সাবেক এমপি শিমুলের দুই সহযোগীসহ আটক-৩ সৌরশক্তি থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী মন্দিরে প্রতিমার মাথার স্বর্ণের মুকুট চুরি সাতক্ষীরায় গৃহবধূকে জ*বা*ই করে হ*ত্যা  বিএনপি নেতা রবিকে গ্রেফতারে বাসায় পুলিশের অভিযান তাঁতীবাজার পূজামণ্ডপে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ,ছুরিকাঘাতে আহত-৫ কমলগঞ্জ আ’লীগের সহ-সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাদশা গ্রেপ্তার সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সিদ্ধিরগঞ্জে ছাত্রদলের বিক্ষোভ এমপিওভুক্ত সহ ৩ দফা দাবিতে ১৫ অক্টোবর লংমার্চ কর্মসূচি  দীপ্ত টিভির তামিম হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার-৫ দীপ্ত টিভির তামিম খূনের ঘটনায় বিএনপি নেতা রবিকে শো’কজ শারদীয় দুর্গোৎসবে সব ধরনের নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে: সেনাপ্রধান দীপ্ত টিভির তামিম হত্যাকান্ডে বিএনপি নেতা রবি ও মাদক কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা মিলেছে দুর্গোৎসবে এখন পর্যন্ত ৩৫ অপ্রীতিকর ঘটনায় আটক-১৭ : আইজিপি কণ্ঠশিল্পী ইভার বিরুদ্ধে ফকির গ্রুপের এমডির মানহানি মামলা দুর্গাপূজায় কোন বিশৃঙ্খলা বা অপতৎপরতার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: আইজিপি শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমী ও কুমারীপূজা আজ না’গঞ্জ মহিলা পরিষদ নেতৃবৃন্দের পূজামণ্ডপ পরিদর্শনসহ শুভেচ্ছা বিনিময়  কলকাতা বাঙালির দুর্গাপূজা মুসলিমদেরও বড় আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের উৎসব শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা রিসোর্ট থেকে সাবেক সচিবের মরদেহ উদ্ধার  কাকডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের সময় নারীসহ আটক-৪  সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হেনেস্তার শিকার এশিয়ান টিভির স্টাফ রিপোর্টার ফরিদ রায়পুরায় পূজামণ্ডপ ভাঙচুর গুজব ছড়ানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনগর ইউপি চেয়ারম্যানের গোডাউন থেকে অবৈধ ভারতীয় চিনি উদ্ধার ময়মনসিংহ সাব-রেজিস্টার জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ মায়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি জেলে নিহত আহত-২  ঈশ্বরদীতে লিচু বাগান থেকে যুবকের র*ক্তা*ক্ত লা*শ উদ্ধার দৌলতপুরে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা অভাবে হাজার হেক্টর ফসলি জমি নষ্ঠ ফ্লোরিডার অঙ্গরাজ্যে আছড়ে পড়েছে হারিকেন মিল্টন, ভয়াবহ বিপর্যয়ের শঙ্কা  আজ মহা সপ্তমী পুজার্চনা মৌলভীবাজারে ডিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক-২ ভারতের বিখ্যাত শিল্পপতি টাটা গ্রুপের কর্ণধার রতন টাটা মারা গেছেন পুলিশের কাজের অগ্রগতি ফেরাতে ১০ থানায় ৫০ গাড়ি হস্তান্তর  এবার সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের জামিন মঞ্জুর  বিঘ্নে পূজা উৎযাপনের লক্ষ্যে র‍্যাব সচেষ্ট রয়েছে: র‍্যাব ডিজি সাতক্ষীরায় আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু ও মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উৎযাপিত টংঙ্গীবাড়ীতে বালু দস্যুদের অস্ত্রের মহড়ায় আতংকে এলাকাবাসী  চলছে ষষ্ঠী পূজা; শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু আজ সদরপুরের চরবিষ্ণুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ হাজারো মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায় বেঁচে আছেন নাজমুল হক হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু আজ মহাষষ্ঠী শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি বাড়লো আরও একদিন হাজত থেকেই মুক্ত সাবেক এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী ফতুল্লার যুবলীগ নেতা আজমত উল্লাহ্ গ্রেপ্তার ঈশ্বরদী ইউএনও অফিস লুটপাট ও ভাঙচুর

কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই ‘আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময়- ০১:৩৫:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪ ৭৩ বার পড়া হয়েছে
ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায় , কলকাতা।।
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই’ আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক । যেখানে বাঙালি সেখানেই আড্ডা । বাঙালি আছে ,আড্ডা নেই এটা হতেই পারে না ।এই আড্ডা চলছে যুগযুগ ধরে । কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (চরিত্রহীন খ্যাত), শবৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (বিদূষক খ্যাত) , দামোদর মুখোপাধ্যায় , কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রসালো আড্ডা জমিয়ে রাখতেন।বাঙালির এই চিরাচরিত আড্ডাকেই আজকের পাতায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন — ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায়
 বাঙালি আছে, আড্ডা নেই! এটা কোনদিন ভাবাই যায় না। আড্ডার পীঠস্থান অখণ্ড বাংলা ছিল,আছে আর থাকবেও। আড্ডার সঙ্গে বাড়ি,অফিসের রক গুলির কিন্তু গভীর,ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আর আছে ক্লাব,রেস্তোঁরা,হোটেল, বাড়ি ও পার্ক বা ময়দান। শুধু কি তাই, আড্ডা পাগল বাঙালি লঞ্চ,স্টিমার রেলেও আড্ডার আসর বসিয়ে থাকে। মাঠে,ময়দানে আড্ডায় অনেক সময় বেগুনি,ফুলুরি,মসলা মুড়ি অনবদ্য।চায়ের কাপে চুমুক চলে ঘণ্টার ব্যবধানে।
বাঙালি মাত্রই আড্ডাপ্রিয়। এই আড্ডা তুলনাহীন। পৃথিবীর কোনো দেশের, জাতির মানুষের সাথে এই আড্ডার তুলনা মেলে না। বুদ্ধদেব বসুর ভাষায়, বাঙালির আড্ডার মেজাজ নেই অন্য কোনো দেশে, কিংবা থাকলেও যথোচিত পরিবেশ নেই। অন্যান্য দেশের লোক বক্তৃতা দেয়, রসিকতা করে, তর্ক চালায়, ফূর্তি করে রাত কাটিয়ে দেয়, কিন্তু আড্ডা দেয় না। আমাদের ঋতুগুলো যেমন কবিতা জাগায়, তেমনই আড্ডাও জমায়। আমাদের চৈত্রসন্ধ্যা, বর্ষার সন্ধ্যা, শরতের জ্যোৎস্না-ঢালা রাত্রি, শীতের মধুর উজ্জ্বল সকাল- সবই আড্ডার নীরব ঘণ্টা বাজিয়ে যায়, কেউ শুনতে পায়, কেউ পায় না।
বাঙালির মতো আড্ডার মেজাজ আর কোনো জাতির মানুষের মাঝে খুঁজে পাওয়া দুস্কর; I
তাই এ ভূ-সংসারে এমন কোনো বাঙালি পাওয়া যাবে না যে জীবনে একবারও আড্ডা দেয়নি। বাঙালির আড্ডার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বাংলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের আড্ডা নিয়ে কত মজার কাহিনী চালু রয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় দুই বাংলায় বেশ কয়েকটি জমাট আড্ডার ঠেক ছিল। বাংলার বহু জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন সেসব আড্ডার মধ্যমণি। সেই আড্ডাগুলো ছিল প্রাণোচ্ছ্বল। দুই বাংলার এমন কয়েকটি বিস্মৃত আড্ডার স্থান নিয়ে আজকের এই নিবন্ধ।
      চৌরঙ্গীর কফি হাউজ
চল্লিশের দশকে বাংলার বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিকদের এক জমজমাট আড্ডার আসর ছিল চৌরঙ্গীর কফি হাউজ। ১৯৪৫-৪৬ সালে এই আড্ডায় নিত্য যাতায়াত ছিল সত্যজিৎ রায়, কমলকুমার মজুমদার, চঞ্চল কুমার চট্টোপাধ্যায় ও রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো ব্যক্তিদের। সত্যজিতের অনবদ্য চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালি’র ভাবনাও এই আড্ডা থেকেই শুরু।
রাধাপ্রসাদ গুপ্তের এক লেখা থেকে জানা যায়, চৌরঙ্গি কফি হাউজের ছোট ঘরে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন চরিত্রের ও পেশার লোকজনের সমাগম হতো। সত্যজিৎ, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, চিদানন্দ দাশগুপ্তরা সেসব আড্ডায় ইউরোপিয়ান চলচ্চিত্র নিয়ে বিদগ্ধ আলোচনা করতেন।
রায়বাড়ির আড্ডা
কলকাতার অনেক বনেদি বাড়ি বা বিখ্যাত ব্যক্তির বাড়ির বৈঠকখানায় বেশ জমাট আড্ডা বসতো। ঐ রকমই একটি আড্ডার আসর ছিল লেক অ্যাভিনিউ, ৩ নম্বর লেক টেম্পল রোড এবং ১/১, বিশপ লেফ্রয় রোডে তিন তলার পূর্বদিকের এক ফ্ল্যাটে। রায় পরিবারের এই আড্ডা প্রায় তিন প্রজন্মের। এই আড্ডার প্রাণপুরুষ বিংশ শতাব্দীর বাংলার প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় ও তার বন্ধুদের ‘মন্ডা ক্লাব’ আজও কিংবদন্তী হয়ে আছে।
বিশপ লেফ্রয় রোডে অবস্থিত রায় বাড়িতে বসতো আড্ডার আসর।
শুধু অবান্তর কৌতুক ছড়াই নয়, এই আড্ডায় অনেক গুরুগম্ভীর আলোচনাও হতো। মন্ডা ক্লাবের একেকজন সভ্য ছিলেন নামকরা ব্যক্তিত্ব। সুকুমার রায়ের মৃত্যুতে এই আড্ডা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সুকুমার রায়ের সুযোগ্য পুত্র সত্যজিৎ রায় আবার নতুন করে আয়োজন করেন সেই আড্ডার। রবিবার সকালে রায়বাড়ির এই আড্ডায় উপস্থিত থাকতেন বিভিন্ন পেশার মানুষজন। কমলকুমার মজুমদার, রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো নামকরা লেখক ছাড়াও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বরুণ চন্দ, দীপঙ্কর দে, ধৃতিমান চ্যাটার্জিসহ অনেক নামকরা অভিনেতাই হাজির হতেন এই সকালের আড্ডায়। সিনেমা সংক্রান্ত আলোচনা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো এই আড্ডায়। সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায় এখনও এ আড্ডা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন।
কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজের আড্ডা
কলকাতা কলেজ স্ট্রিটের আলবার্ট হল একসময় ভারতীয় কফিবোর্ডের মালিকানাধীন ছিল। পরবর্তীকালে একে তারা কফি হাউজে রূপান্তর করেন। কবি-লেখকে সর্বদা গমগম করতো কফি হাউসের বিশাল হলঘর, তিলধারণের জায়গা থাকতো না।
সত্তরের শুরুর দিকেই এই কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজে কবি-সাহিত্যিকদের তুখোড় আড্ডা জমতো। সে সময়ে প্রতি সন্ধ্যায় কবি আর গল্প লেখকদের মিলনমেলায় কফি হাউজে দাঁড়ানোর মতো জায়গা থাকতো না। কবিদের আড্ডার মধ্যমণি হয়ে থাকতেন পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল। তার সতীর্থদের মধ্যে ছিলেন নিশীথ ভড়, সমরেন্দ্র দাস, অরণি বসু, অমিতাভ গুপ্ত, তুষার চৌধুরী মতো কবিরা। আর গল্পকারদের আড্ডার প্রধান ছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। তার বিষয় উপস্থাপন, কথা বলার ভঙ্গি শ্রোতাদের চুম্বকের মতো টানতো।
কবিদের মধ্যে আরও আসতেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কৃত্তিবাস পত্রিকার কবিদের দলবল নিয়ে উপস্থিত হতেন। সত্যজিৎ রায়ের গল্পের কাহিনীকার হিসেবে, আধুনিক বাংলা কবিতার তুমুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘কৃত্তিবাস’ আন্দোলনের নেতা এবং লেখক হিসেবে তখন সুনীল কফি হাউজের মেগাস্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এছাড়া কবিতা সিংহের মতো ক্ষুরধার নারীব্যক্তিত্ব সেসব আড্ডাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেন।
আমার বাবা যখন কলকাতার হিন্দু হোস্টেলে থাকতেন পড়াশোনার জন্য।তখন নিয়মিত কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে যেতেন। খুব কাছে এই কফি হাউস। সেখানে তখন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত আসতেন। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে পর পর অভিনয় করে বেশ নামডাক হয়েছে। তিনি আলাদা করে বেশ বড়সর আড্ডার আসর বসিয়ে নিতেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অনেক কবি, সাহিত্যিক শরণার্থী হিসেবে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর সে সময় এই কফি হাউজ হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের আর এক শিবির, অন্যরকম এক ঘাঁটি। আল মাহমুদ, বেলাল চৌধুরি, আব্দুল গাফফার চৌধুরী প্রমুখ লেখক এই কফি হাউজে সে সময় নিত্য যাতায়াত করতেন। কফি হাউজের সেই আড্ডা আজ আর আগের মতো না থাকলেও তার রেশ একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে তা বলার উপায় নেই। এখনও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের ভিড়ে কফি হাউজ মুখরিত থাকে। কফি হাউজের আড্ডার সেই আবেগ ছড়িয়ে দিয়েছেন মান্না দে তার বিখ্যাত ‘কফি হাউজ’ গানটিতে,
“কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই”।
বুধ সন্ধ্যা
আড্ডা দিতে খুব ভালবাসতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ তার সমসাময়িক সকল লেখক। সেই লক্ষ্যেই ১৯৮০ সালের দিকে সাগরময় ঘোষ, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ‘বুধ সন্ধ্যা’। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে এই আড্ডা বসতো না। সপ্তাহে প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় স্বনামধন্য সব সাহিত্যিক তাদের পরিচিত কারো বাড়ির বৈঠকখানায় জড়ো হয়ে ভাবের দেওয়া-নেওয়া, আলাপ-আলোচনায় মেতে উঠতেন।
এই আড্ডায় কে না ছিলেন? শঙ্খ ঘোষ, সুবোধ সরকার, মল্লিকা সেনগুপ্ত, জয় গোস্বামী, আবুল বাশার, আফসার আহমেদ, তারাপদ রায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেনের মতো বিখ্যাত সাহিত্যিকরা এ আড্ডার নিয়মিত সদস্য ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, অসীম সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, সৈয়দ আল ফারুক, তারিক সুজাতসহ বাংলাদেশের অনেক কবি-সাহিত্যিকের আনাগোনা ছিল এই আড্ডায়।
এই আড্ডাকে তারা নিজেদের চিন্তা-ভাবনার আদান-প্রদানের উৎকৃষ্ট স্থান বলে মনে করতেন। এই আড্ডায় পাঠ করা হতো সদ্য লেখা কোনো কবিতা। চলতো প্রকাশিত কোনো লেখার উপর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। এছাড়া আড্ডায় কেউ স্বরচিত গান আবার কেউ তারা ভাল লাগা কোনো গানের কলি খালি গলায় পরিবেশন করে আড্ডাকে জমিয়ে তুলতেন।
পুরনো ঢাকার বিউটি বোর্ডিং
চল্লিশের দশকে পুরনো ঢাকার ১নং শ্রীশ উনদাস লেনে অবস্থিত বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডা বেশ সুখ্যাতি লাভ করে। এই দোতলা পুরাতন বাড়ির সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির এক অনন্য ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এই বোর্ডিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গায়ক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের এক মিলনমেলা ছিল এই বিউটি বোর্ডিং।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস:-

কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই ‘আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক’

আপডেট সময়- ০১:৩৫:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪
ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায় , কলকাতা।।
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই’ আড্ডা ও বাঙালি সমার্থক । যেখানে বাঙালি সেখানেই আড্ডা । বাঙালি আছে ,আড্ডা নেই এটা হতেই পারে না ।এই আড্ডা চলছে যুগযুগ ধরে । কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (চরিত্রহীন খ্যাত), শবৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (বিদূষক খ্যাত) , দামোদর মুখোপাধ্যায় , কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রসালো আড্ডা জমিয়ে রাখতেন।বাঙালির এই চিরাচরিত আড্ডাকেই আজকের পাতায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন — ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায়
 বাঙালি আছে, আড্ডা নেই! এটা কোনদিন ভাবাই যায় না। আড্ডার পীঠস্থান অখণ্ড বাংলা ছিল,আছে আর থাকবেও। আড্ডার সঙ্গে বাড়ি,অফিসের রক গুলির কিন্তু গভীর,ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আর আছে ক্লাব,রেস্তোঁরা,হোটেল, বাড়ি ও পার্ক বা ময়দান। শুধু কি তাই, আড্ডা পাগল বাঙালি লঞ্চ,স্টিমার রেলেও আড্ডার আসর বসিয়ে থাকে। মাঠে,ময়দানে আড্ডায় অনেক সময় বেগুনি,ফুলুরি,মসলা মুড়ি অনবদ্য।চায়ের কাপে চুমুক চলে ঘণ্টার ব্যবধানে।
বাঙালি মাত্রই আড্ডাপ্রিয়। এই আড্ডা তুলনাহীন। পৃথিবীর কোনো দেশের, জাতির মানুষের সাথে এই আড্ডার তুলনা মেলে না। বুদ্ধদেব বসুর ভাষায়, বাঙালির আড্ডার মেজাজ নেই অন্য কোনো দেশে, কিংবা থাকলেও যথোচিত পরিবেশ নেই। অন্যান্য দেশের লোক বক্তৃতা দেয়, রসিকতা করে, তর্ক চালায়, ফূর্তি করে রাত কাটিয়ে দেয়, কিন্তু আড্ডা দেয় না। আমাদের ঋতুগুলো যেমন কবিতা জাগায়, তেমনই আড্ডাও জমায়। আমাদের চৈত্রসন্ধ্যা, বর্ষার সন্ধ্যা, শরতের জ্যোৎস্না-ঢালা রাত্রি, শীতের মধুর উজ্জ্বল সকাল- সবই আড্ডার নীরব ঘণ্টা বাজিয়ে যায়, কেউ শুনতে পায়, কেউ পায় না।
বাঙালির মতো আড্ডার মেজাজ আর কোনো জাতির মানুষের মাঝে খুঁজে পাওয়া দুস্কর; I
তাই এ ভূ-সংসারে এমন কোনো বাঙালি পাওয়া যাবে না যে জীবনে একবারও আড্ডা দেয়নি। বাঙালির আড্ডার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বাংলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের আড্ডা নিয়ে কত মজার কাহিনী চালু রয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় দুই বাংলায় বেশ কয়েকটি জমাট আড্ডার ঠেক ছিল। বাংলার বহু জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন সেসব আড্ডার মধ্যমণি। সেই আড্ডাগুলো ছিল প্রাণোচ্ছ্বল। দুই বাংলার এমন কয়েকটি বিস্মৃত আড্ডার স্থান নিয়ে আজকের এই নিবন্ধ।
      চৌরঙ্গীর কফি হাউজ
চল্লিশের দশকে বাংলার বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিকদের এক জমজমাট আড্ডার আসর ছিল চৌরঙ্গীর কফি হাউজ। ১৯৪৫-৪৬ সালে এই আড্ডায় নিত্য যাতায়াত ছিল সত্যজিৎ রায়, কমলকুমার মজুমদার, চঞ্চল কুমার চট্টোপাধ্যায় ও রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো ব্যক্তিদের। সত্যজিতের অনবদ্য চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালি’র ভাবনাও এই আড্ডা থেকেই শুরু।
রাধাপ্রসাদ গুপ্তের এক লেখা থেকে জানা যায়, চৌরঙ্গি কফি হাউজের ছোট ঘরে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন চরিত্রের ও পেশার লোকজনের সমাগম হতো। সত্যজিৎ, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, চিদানন্দ দাশগুপ্তরা সেসব আড্ডায় ইউরোপিয়ান চলচ্চিত্র নিয়ে বিদগ্ধ আলোচনা করতেন।
রায়বাড়ির আড্ডা
কলকাতার অনেক বনেদি বাড়ি বা বিখ্যাত ব্যক্তির বাড়ির বৈঠকখানায় বেশ জমাট আড্ডা বসতো। ঐ রকমই একটি আড্ডার আসর ছিল লেক অ্যাভিনিউ, ৩ নম্বর লেক টেম্পল রোড এবং ১/১, বিশপ লেফ্রয় রোডে তিন তলার পূর্বদিকের এক ফ্ল্যাটে। রায় পরিবারের এই আড্ডা প্রায় তিন প্রজন্মের। এই আড্ডার প্রাণপুরুষ বিংশ শতাব্দীর বাংলার প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় ও তার বন্ধুদের ‘মন্ডা ক্লাব’ আজও কিংবদন্তী হয়ে আছে।
বিশপ লেফ্রয় রোডে অবস্থিত রায় বাড়িতে বসতো আড্ডার আসর।
শুধু অবান্তর কৌতুক ছড়াই নয়, এই আড্ডায় অনেক গুরুগম্ভীর আলোচনাও হতো। মন্ডা ক্লাবের একেকজন সভ্য ছিলেন নামকরা ব্যক্তিত্ব। সুকুমার রায়ের মৃত্যুতে এই আড্ডা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সুকুমার রায়ের সুযোগ্য পুত্র সত্যজিৎ রায় আবার নতুন করে আয়োজন করেন সেই আড্ডার। রবিবার সকালে রায়বাড়ির এই আড্ডায় উপস্থিত থাকতেন বিভিন্ন পেশার মানুষজন। কমলকুমার মজুমদার, রাধাপ্রসাদ গুপ্তের মতো নামকরা লেখক ছাড়াও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বরুণ চন্দ, দীপঙ্কর দে, ধৃতিমান চ্যাটার্জিসহ অনেক নামকরা অভিনেতাই হাজির হতেন এই সকালের আড্ডায়। সিনেমা সংক্রান্ত আলোচনা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো এই আড্ডায়। সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায় এখনও এ আড্ডা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন।
কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজের আড্ডা
কলকাতা কলেজ স্ট্রিটের আলবার্ট হল একসময় ভারতীয় কফিবোর্ডের মালিকানাধীন ছিল। পরবর্তীকালে একে তারা কফি হাউজে রূপান্তর করেন। কবি-লেখকে সর্বদা গমগম করতো কফি হাউসের বিশাল হলঘর, তিলধারণের জায়গা থাকতো না।
সত্তরের শুরুর দিকেই এই কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজে কবি-সাহিত্যিকদের তুখোড় আড্ডা জমতো। সে সময়ে প্রতি সন্ধ্যায় কবি আর গল্প লেখকদের মিলনমেলায় কফি হাউজে দাঁড়ানোর মতো জায়গা থাকতো না। কবিদের আড্ডার মধ্যমণি হয়ে থাকতেন পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল। তার সতীর্থদের মধ্যে ছিলেন নিশীথ ভড়, সমরেন্দ্র দাস, অরণি বসু, অমিতাভ গুপ্ত, তুষার চৌধুরী মতো কবিরা। আর গল্পকারদের আড্ডার প্রধান ছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। তার বিষয় উপস্থাপন, কথা বলার ভঙ্গি শ্রোতাদের চুম্বকের মতো টানতো।
কবিদের মধ্যে আরও আসতেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কৃত্তিবাস পত্রিকার কবিদের দলবল নিয়ে উপস্থিত হতেন। সত্যজিৎ রায়ের গল্পের কাহিনীকার হিসেবে, আধুনিক বাংলা কবিতার তুমুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘কৃত্তিবাস’ আন্দোলনের নেতা এবং লেখক হিসেবে তখন সুনীল কফি হাউজের মেগাস্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এছাড়া কবিতা সিংহের মতো ক্ষুরধার নারীব্যক্তিত্ব সেসব আড্ডাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেন।
আমার বাবা যখন কলকাতার হিন্দু হোস্টেলে থাকতেন পড়াশোনার জন্য।তখন নিয়মিত কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে যেতেন। খুব কাছে এই কফি হাউস। সেখানে তখন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত আসতেন। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে পর পর অভিনয় করে বেশ নামডাক হয়েছে। তিনি আলাদা করে বেশ বড়সর আড্ডার আসর বসিয়ে নিতেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অনেক কবি, সাহিত্যিক শরণার্থী হিসেবে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর সে সময় এই কফি হাউজ হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের আর এক শিবির, অন্যরকম এক ঘাঁটি। আল মাহমুদ, বেলাল চৌধুরি, আব্দুল গাফফার চৌধুরী প্রমুখ লেখক এই কফি হাউজে সে সময় নিত্য যাতায়াত করতেন। কফি হাউজের সেই আড্ডা আজ আর আগের মতো না থাকলেও তার রেশ একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে তা বলার উপায় নেই। এখনও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের ভিড়ে কফি হাউজ মুখরিত থাকে। কফি হাউজের আড্ডার সেই আবেগ ছড়িয়ে দিয়েছেন মান্না দে তার বিখ্যাত ‘কফি হাউজ’ গানটিতে,
“কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই”।
বুধ সন্ধ্যা
আড্ডা দিতে খুব ভালবাসতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ তার সমসাময়িক সকল লেখক। সেই লক্ষ্যেই ১৯৮০ সালের দিকে সাগরময় ঘোষ, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ‘বুধ সন্ধ্যা’। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে এই আড্ডা বসতো না। সপ্তাহে প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় স্বনামধন্য সব সাহিত্যিক তাদের পরিচিত কারো বাড়ির বৈঠকখানায় জড়ো হয়ে ভাবের দেওয়া-নেওয়া, আলাপ-আলোচনায় মেতে উঠতেন।
এই আড্ডায় কে না ছিলেন? শঙ্খ ঘোষ, সুবোধ সরকার, মল্লিকা সেনগুপ্ত, জয় গোস্বামী, আবুল বাশার, আফসার আহমেদ, তারাপদ রায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেনের মতো বিখ্যাত সাহিত্যিকরা এ আড্ডার নিয়মিত সদস্য ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, অসীম সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, সৈয়দ আল ফারুক, তারিক সুজাতসহ বাংলাদেশের অনেক কবি-সাহিত্যিকের আনাগোনা ছিল এই আড্ডায়।
এই আড্ডাকে তারা নিজেদের চিন্তা-ভাবনার আদান-প্রদানের উৎকৃষ্ট স্থান বলে মনে করতেন। এই আড্ডায় পাঠ করা হতো সদ্য লেখা কোনো কবিতা। চলতো প্রকাশিত কোনো লেখার উপর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। এছাড়া আড্ডায় কেউ স্বরচিত গান আবার কেউ তারা ভাল লাগা কোনো গানের কলি খালি গলায় পরিবেশন করে আড্ডাকে জমিয়ে তুলতেন।
পুরনো ঢাকার বিউটি বোর্ডিং
চল্লিশের দশকে পুরনো ঢাকার ১নং শ্রীশ উনদাস লেনে অবস্থিত বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডা বেশ সুখ্যাতি লাভ করে। এই দোতলা পুরাতন বাড়ির সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির এক অনন্য ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এই বোর্ডিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গায়ক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের এক মিলনমেলা ছিল এই বিউটি বোর্ডিং।