ঢাকা ০৫:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ:-
ক্ষুদে কারাতে প্রতিযোগীদের আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে আসলেন জেলা প্রশাসক রূপগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাজাহান ভুইঁয়া আর নেই  না’গঞ্জে পরকীয়ার জেরে হত্যাযজ্ঞ, লাশ গুম করতে হেক্সো ব্লেড দিয়ে দু’পা বিচ্ছিন্ন বিসিবি নির্বাচন ঘিরে চরম উত্তেজনা, ক্রিকেট বর্জনের ঘোষণা ৪৮ ক্লাবের বিজয়ার বেদনায় আনন্দের কোজাগরী শান্তি সমৃদ্ধির দেবী মা লক্ষ্মী ঈশ্বরদীতে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালিত ঈশ্বরদীতে নতুন ইউএনও’র যড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মানববন্ধন টেকনাফে ১৭১ রোহিঙ্গার অবৈধ ক্যাম্পের বাইরে চলাচল রোধ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ অক্টোবরের বিএ-বিএসএস পরীক্ষা স্থগিত না’গঞ্জ প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের সাথে এসপি’র সৌহার্দ্যপূর্ণ সৌজন্য সাক্ষাৎ উখিয়ায় বিজিবির অভিযানে ইয়াবা গডফাদার মনির আটক সুন্দরগঞ্জে ভ্যাকসিন কেলেঙ্কারি; ৮০ পয়সার ভ্যাকসিন, ৩০ টাকার বিল কুমিল্লার মেঘনায় চাঁদাবাজদের হামলায় টেটাবিদ্ধ ৩ নৌ-পুলিশ  পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা: পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের গভীর উদ্বেগ ইতিহাসে নজিরবিহীন’ বিজ্ঞপ্তি, অপমানে পদত্যাগ করলেন মাউশির ডিজি নারায়ণগঞ্জে ড্রামে ভর্তি পা বিচ্ছিন্ন অর্ধগলিত যুবকের মরদেহ উদ্ধার নারায়ণগঞ্জে শালিসের নামে হাতুড়িপেটায় আলমগীর হত্যাকান্ড, গ্রেপ্তার-২ দৃষ্টিহীন আলভীর পাশে মানবতার হাত বাড়ালেন: মানবিক ডিসি কানের দুল ছিনিয়ে নিতে ৪ বছরের শিশু হত্যা, দুই আসামির আদালতে স্বীকারোক্তি গাইবান্ধায় অ্যানথ্রাক্সে নারীর মৃত্যু: স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি এটা গুজব সিদ্ধিরগঞ্জে মাদকবিরোধী অভিযানে ইয়াবা ও হেরোইনসহ ৪ মাদক কারবারি আটক শুধু নিজের ভালো চিন্তা করলেই হবে না, রাষ্ট্রের ভালোও চিন্তা করতে হবে: বসতি দিবসে ডিসি নারায়ণগঞ্জে মৌমিতা বাসের ধাক্কায় অটোরিকশা চালক নিহত, আহত-২ ঈশ্বরদী জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক কোটি টাকা নিয়ে উধাও নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ৪টি ফগার মেশিনসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রদানের আস্বাস মাসুদুজ্জামানের টেকনাফে নিখোঁজের ২২ ঘণ্টা পর শিশুর মরদেহ উদ্ধার টেকনাফে রাজমিস্ত্রির ছদ্মবেশে রোহিঙ্গা দম্পতির ইয়াবা বাণিজ্য, আটক-২ রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নে দাশুড়িয়া পথসভা জনসমুদ্রে পরিনত টেকনাফে বিজিবির অভিযানে ৬ মানবপাচারকারী আটক: নস্যাৎ হলো বড় পাচারের ছক মাসুদুজ্জামানের মনোনয়ন ঠেকাতে মিশন: মামলায় ফাঁসাতে বড় অংকের চুক্তি ক্লাব সংগঠকদের দেশের ক্রিকেট বয়কটের হুমকি কাঁদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে দলের স্বার্থে’ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মাসুদুজ্জামানের বন্দর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সানুর ভাই যুবলীগ কর্মী ফকির উল্ল্যাহ গ্রেপ্তার সাত শতাধিক দৌড়বিদের অংশগ্রহণে রায়পুরা ম্যারাথন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক আর নেই.!  গাইবান্ধায় দুই শতাধিক শ্রমিকদলের নেতাকর্মীর জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান নারায়ণগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জন ঘাটের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে ডিসি-এসপি সিদ্ধিরগঞ্জে সাত কেজি গাঁজাসহ এক কারবারি গ্রেপ্তার ঈশ্বরদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাক চালক নিহত  মহেশখালীতে অস্ত্র-গোলাবারুদসহ তিন সন্ত্রাসী আটক টেকনাফে গহীন পাহাড়ে নারী ও শিশুসহ ২১ জন উদ্ধার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুতে অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় ২ট্রাক চালক নিহত এনসিপি নেতাকর্মী কর্তৃক সাংবাদিক লাঞ্ছনা, বয়কট সংবাদ সম্মেলন আজ বিজয়া দশমী, দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব উত্তাল সাগর, দুপুরের মধ্যে ৮ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস কক্সবাজারে ১৬ হাজার ৪০০ ইয়াবাসহ তিন তৃতীয় লিঙ্গের হিজরা আটক আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশকে কামড়ে পালানো সেই আসামি র‍্যাবের জালে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট ১৯ কি: মি: মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট না’গঞ্জে র‍্যাবের হাতে আটক আসামীকে ছিনিয়ে নিল সহযোগীরা, র‍্যাব সদস্যসহ আহত-৪ শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমী আজ মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে যে নিয়মের কথা জানালেন পুলিশ প্রধান আমরা কোনো ধরণের দলীয় পদ ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করতে চাই না: মাসুদুজ্জামান টেকনাফে ২৪ হাজার ইয়াবা ও সিএনজিসহ পাচারকারী আটক  আ’লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা যেকোনো সময় তুলে নেওয়া হতে পারে আজ শারদীয় দুর্গাপুজার মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা টিসিবির পণ্য তালিকায় নতুন যুক্ত হচ্ছে চা-লবণ-ডিটারজেন্ট ও সাবান রাজধানীতে অনাবিল বাসে নারী যাত্রীকে শ্লীলতাহানি, চালক-হেলপার আটক উখিয়ায় সাংবাদিক তানভীর শাহরিয়ার গ্রেপ্তার, সংবাদকর্মীদের কণ্ঠরোধের অভিযোগ পর্যটনবান্ধব নগরী গড়তে সবার ঐক্য চাই : কক্সবাজারের নতুন জেলা প্রশাসক গাইবান্ধার স্বাস্থ্যসেবায় অন্ধকার: ফুলছড়িতে সিজার বন্ধ, জনবল সংকট চরমে না’গঞ্জের আরএস কম্পোজিটে বিশ্বমানের কমপ্লায়েন্সের ভূয়সী প্রশংসা করেন শিল্প পুলিশ প্রধান প্রতিহিংসা ও বিভক্তি বর্জন করে সুশৃঙ্খল রাজনীতি করতে মাসুদুজ্জামানের আহবান দুর্গোৎসব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ: বন্দরে জেলা প্রশাসক শীর্ষস্থানীয় ব্রান্ড আড়ং’র শপিং ব্যাগের মূল্য নেয়া বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ না’গঞ্জে ওভারপাস থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যাওয়া ট্রাকের চাপায় রিকশা চালকের মৃত্যু আড়াইহাজারের সাবেক এমপি বাবুর অনুসারী ইউপি সদস্য গণপিটুনিতে নিহত নরসিংদীতে হাসপাতালে ভাংচুর ডাক্তার-নার্স ও কর্মচারীদের লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন থমথমে খাগড়াছড়ি: অনিদিৃষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা, ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন আজ শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষষ্ঠী সম্প্রীতির মেলবন্ধনকে অটুট রাখতে ২২৪টি পূজামণ্ডপে অনুদান: ডিসি  আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ বোধন’র মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরীকে বিদায় সংবর্ধনা না’গঞ্জে কিশোরী অপহরণে মূল হোতা আট বছর পর পিবিআই’র জালে উৎসবমুখর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধনে দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে: জেলা প্রশাসক উখিয়ার তুমব্রু সীমান্তে ৮০ হাজার ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা যুবক আটক দুর্গোৎসব উপলক্ষে সারাদেশে র‍্যাবের ২৮১ টহল দল মোতায়েন দুর্গোৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে ২ প্লাটুন র‍্যাব সদস্য নিয়োজিত থাকবে: সিইও ষড়যন্ত্র হলে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে জবাব দেবো, বিভক্ত হবো না;  মাসুদুজ্জামান আড়াইহাজারের নান্দনিক ইকোপার্ক প্রকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিনত হবে শ্যালিকার সঙ্গে পরকিয়ার জেরে স্ত্রীকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা দুর্গোৎসব উপলক্ষে ফতুল্লার পুজামন্ডপসহ প্রতিমা বিসর্জন ঘাট পরিদর্শনে ইউএনও নারায়ণগঞ্জে শারদীয় দুর্গোৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে মণ্ডপ পরিদর্শনে র‍্যাব-১১ টেকনাফে মানব পাচারকারী আটক, তিন ভুক্তভোগী উদ্ধার না’গঞ্জে এবারের দুর্গোৎসবে ৭০টি পূজামণ্ডপে আর্থিক অনুদান দিবেন মাসুদুজ্জামান না’গঞ্জে ফের মাদকবিরোধী ব্লক রেইড, শীর্ষ কারবারি আলম চানসহ আটক-২৪ টেকনাফে বিজিবির অভিযানে ৩৯ হাজার ২’শ ইয়াবা উদ্ধার গাইবান্ধায় সাঁওতাল শিশুদের স্কুল ও মাঠ দখলের চেষ্টা: তীব্র প্রতিবাদ গাইবান্ধায় স্কুল শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ দখল করে ধান ও মাছের চাষ ভাঙ্গায় ২ ইউনিয়নকে পূর্নবহালের দাবিতে মানববন্ধন, নিরীহ জনগণকে হয়রানি না করার আহ্বান শ্রীমঙ্গলে ৯দিন ব্যাপী নবদুর্গা পূজা শুরু কমলগঞ্জে দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত  নারায়ণগঞ্জে টাইগার সিমেন্ট কারখানায় ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট শ্রীমঙ্গলে শেভরনে ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখা নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত সন্ত্রাসী একাধিক মামলার আসামী আপেল গ্রেপ্তার  জলাবদ্ধতা নিরসনে ইউএনও তাসলিমা শিরিনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস না’গঞ্জে ডিপিডিসি ভবনে শ্রমিক ছব্দবেশে ডাকাতি ঘটনায় ৯ সদস র‍্যাবের জালে শ্রীমঙ্গলে ২৫ কেজি ওজনের ১৪ফুট অজগর সাপ উদ্ধার  গাইবান্ধায় একদিনে দুই যুবকের রহস্যজনক মৃ*ত্যু রায়পুরায় রেললাইনের পাশ থেকে অজ্ঞাত কিশোরের লাশ উদ্ধার

জীবনের শেষ লেখায় অনেক অভিযোগসহ প্রশ্ন রেখে গেলেন সাংবাদিক বিভুরঞ্জন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময়- ০৭:২৮:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫ ১৮৪ বার পড়া হয়েছে

নিখোঁজের একদিন পর মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদী থেকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকারের (৭১) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিখোঁজ হওয়ার দিন, অর্থাৎ ২১ আগস্ট সকাল সোয়া ৯টায় এই সাংবাদিক সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে একটি ‘খোলা চিঠি’ পাঠান। মেইলে পাঠানো ফুটনোটে তিনি লেখেন, ‘জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।’

পরিবারের সদস্যরা জানান, ওইদিন ১০টার দিকে অফিসে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি আর ফেরেননি। তার নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে থানায় জিডি করে পরিবার। শুক্রবার বিকালে মুন্সীগঞ্জের মেঘনায় তার লাশ পাওয়ার খবর জানায় পুলিশ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে প্রেরণ করা সেই শেষ লেখাটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

আমি বিভুরঞ্জন সরকার, ‘আজকের পত্রিকা’র সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করি। সাংবাদিকতার সঙ্গে আমার সম্পর্ক পাঁচ দশকের বেশি সময়ের। দেশের নানা পরিবর্তন, আন্দোলন, গণআন্দোলন এবং রাজনৈতিক উত্থান-পতন প্রত্যক্ষ করেছি। এই দীর্ঘ সময় আমি লিখেছি সত্যের পক্ষে, মানুষের পক্ষে, দেশের পক্ষে। কিন্তু আজ, যখন নিজের জীবনকে দেখি, অনুভব করি—সত্য লিখে বাঁচা সহজ নয়।

আমার পেশা আমাকে শিখিয়েছে—সত্য প্রকাশ করা মানে সাহসের সঙ্গে ঝুঁকি নেবার নাম। ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে করতে শিখেছি, কখনো কখনো নাম গোপন রাখতেই হয়। সত্য প্রকাশ করতে গেলে জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলা প্রয়োজন হয়। এরশাদের আমল, নানা রাজনৈতিক আন্দোলন—সবক্ষেত্রে সাহস ছাড়া লেখা সম্ভব ছিল না। আমরা, আমার মতো সাংবাদিকরা, গোপন নাম ব্যবহার করেছি, তাতে স্বার্থের কিছু নেই, বরং নিরাপত্তার জন্য।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার অবস্থান স্পষ্ট ছিল—স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানো মানে দেশের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা। আমার এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে কোনো অবদান না রেখেও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট বাগিয়ে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, নিচ্ছেন। আমি ও পথে হাঁটিনি।

স্কুল ছাত্র থাকতেই সাংবাদিকতার পেশায় জড়িয়েছি। দৈনিক আজাদের মফস্বল সাংবাদিক। স্কুলে পড়ার সময় আমাদের নামে আজাদে বড় বড় লেখা ছাপা হয়েছে। আবার বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়াও সেই স্কুল থেকেই। রাজনৈতিক আদর্শবোধ ও সাংবাদিকতার নৈতিক সততা আমাকে ব্যক্তিগত সুখভোগের জন্য তাড়িত করেনি। একটাই তাড়না–দায়িত্ববোধ। আমি জ্ঞানত কখনো দায়িত্ব পালনে অবহেলা করিনি। নিজের কাজে ফাঁকি দেইনি। খুব সাহসী মানুষ হয়তো আমি নই, কিন্তু চোখ রাঙিয়ে কেউ আমাকে দিয়ে কিছু লেখাতে পারিনি। অবশ্য বছর কয়েক আগে কথায় পটিয়ে আমাকে দিয়ে নাঈমুল ইসলাম খান তার স্ত্রী মন্টি আপার সুখ্যাতি লিখিয়ে নিয়েছিলেন!

আজকের সময়ে সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ অন্যরূপ। অনেকেই সুবিধা, স্বার্থ, সামাজিক মর্যাদা বা আর্থিক স্বার্থের জন্য সত্যকে আড়াল করে লেখেন। আমি নাম আড়াল করলেও সত্য গোপন করিনি। তাই হয়তো দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময় এই পেশায় কাটিয়ে সম্মানজনক বেতন-ভাতা পাই না। এখন আমার যা বেতন তা বলে কাউকে বিব্রত করতে চাই না। তবে শুনেছি, আমার বিভাগীয় প্রধানের বেতন আমার প্রায় দ্বিগুণ। আহা, যদি ওই বেতনের একটি চাকরি পেতাম তাহলেও হয়তো সংসার চালানোর জন্য নিয়মিত ধার-দেনা করার পেশাটি আমাকে বেছে নিতে হতো না! অন্যসব খরচের হিসাব বাদ দিয়ে মাসে আমার একার ওষুধের ব্যয় ২০–২২ হাজার টাকা। বাড়িয়ে নয়, একটুবকমিয়েই হয়তো বললাম! আমার আর্থরাইটিস, লিভার সিরোসিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ কত যে রোগ! আর্থরাইটিস ও লিভারের চিকিৎসার জন্য কত যে ধারদেনা করতে হয়েছে। আমার ছেলেও অসুস্থ, ওরও নিয়মিত চিকিৎসাব্যয় আছে। তাই ধার-দেনা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

শেখ হাসিনার শাসনামলে নানা পরিচয়ে অনেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। একপর্যায়ে লাজলজ্জা ভুলে আমিও শেখ হাসিনার দরবারে সাহায্যের আবেদন করে কোনো ফল পাইনি। অনেক সাংবাদিক প্লট পেয়েছেন। আমি দুইবার আবেদন করেও সফল হইনি। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে বই লিখেও নাকি কতজন ভাগ্য বদলেছেন। অথচ আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত দুটি বইয়ের জন্য আমি দুই টাকাও রয়্যালিটি পাইনি। একেই বলে কপাল! তবে হ্যাঁ, একবার শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছিল। ওই সফরের জন্য কিছু হাত খরচের টাকা আমি পেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা তো ওই কোটপ্যান্টজুতো কিনতেই শুধু শেষ হয়, আরও দেনা হয়েছে। ওই সুবাদে আমার কোট-টাই জুতা কেনা! সারাজীবন তো স্যান্ডেল পরেই কাটল।

শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে অবিচল অবস্থানের কারণে আমাকে আজও ‘আওয়ামী ট্যাগ’ দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী আমলেও কোনো বাস্তব পুরস্কার পাইনি। আমি পেলাম না একটি প্লট, না একটি ভালো চাকরি। বরং দীর্ঘ সময় চাকরিহীন থেকে ঋণের বোঝা বেড়েছে। স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে পরিবারের দায়বদ্ধতা আমাকে প্রতিনিয়ত চাপের মধ্যে রাখে।

‘আজকের পত্রিকা’য় কাজ করছি ৪ বছর হলো। এই সময়ে না হলো পদোন্নতি, না বাড়ল বেতন। অথচ জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে প্রতিদিন। সংবাদপত্র আর কীভাবে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবে, ঘরের মধ্যেই যেখানে অনিয়ম।

সাপ্তাহিক ‘যায়যায়দিন’ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যাদের লেখার কারণে তাদের একজন তারিখ ইব্রাহিম। ওই নামে আমিই লিখতাম এরশাদের কোপানল থেকে রক্ষা পেতে। ক্ষমতা ছাড়ার পর দু-একবার দেখা হলে অবশ্য এরশাদও ‘দেশি’ হিসেবে আমাকে খাতির করেছেন।

আমি চাকরি করেছি দৈনিক সংবাদে, সাপ্তাহিক একতায়, দৈনিক রূপালীতে। নিজে সম্পাদনা করেছি সাপ্তাহিক ‘চলতিপত্র’। নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি ‘মৃদুভাষণ’ নামের সাপ্তাহিকে। ‘দৈনিক মাতৃভূমি’ নামের একটি দৈনিকের সম্পাদনার দায়িত্বও আমি পালন করেছি। দেশের প্রায় সবগুলো দৈনিক পত্রিকা এবং অনলাইনে আমার লেখা একসময় নিয়মিত ছাপা হতো। দৈনিক ‘জনকণ্ঠ’ যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তখন প্রথম পৃষ্ঠায় আমার লেখা মন্তব্য প্রতিবেদন ছাপা হতো।

অথচ এখন কোনো কোনো পত্রিকায় লেখা পাঠিয়ে ছাপার জন্য অনুরোধ করেও ফল পাই না। আমার লেখা নাকি পাঠক আর সেভাবে ‘খায়’ না।

এক সময় কত খ্যাতিমান লোকেরা আমার লেখা পড়ে ফোন করে তারিফ করেছেন। অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, অধ্যক্ষ সাইদুর রহমানের প্রশংসাও আমি পেয়েছি। রাজনীতিবিদ অলি আহাদ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, লেখক অধ্যাপক শওকত ওসমান, ড. রংগলাল সেন, অধ্যাপক ড. অজয় রায়ের মতো কতজনের প্রশংসা পেয়েছি। বিএনপির এক সময়ের মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়াও আমাকে লেখার জন্য স্নেহ করতেন। ওহ হ্যাঁ, ড. মুহাম্মদ ইউনূসও অন্তত দুবার নিজে আমাকে ফোন করে আমার লেখার কথা বলেছেন। এখন অবশ্য এত সাধারণ বিষয় তার মনে থাকার কথা নয়। আজ আমার লেখা নাকি পাঠক টানে না। হতেই পারে, বয়সের ভারে বুঝি লেখা হালকা হয়ে গেছে।

নামে-বেনামে হাজার হাজার লেখা লিখেছি। সম্মানী কিন্তু পেয়েছি খুবই কম। কোনো কোনো পত্রিকা তো কয়েক বছর লেখার পরও একটা টাকা দেওয়ার গরজ বোধ করেনি। সেদিক থেকে অনলাইনগুলো অনেক ভালো। একটি বড় অনলাইনের কাছেও আমার মোটা টাকা এখনো পাওনা আছে।

অথচ এখন আমার দৈনন্দিন জীবন শুরু হয় ওষুধ খেয়ে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিয়ে এবং ওষুধ কেনার টাকার চিন্তায়।

এর মধ্যে গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর গণমাধ্যমের অবস্থা আরও কাহিল হয়েছে। মন খুলে সমালোচনা করার কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। কিন্তু তার প্রেস বিভাগ তো মনখোলা নয়। মিডিয়ার যারা নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন তারা সবাই আতঙ্কে থাকেন সব সময়। কখন না কোন খবর বা লেখার জন্য ফোন আসে। তুলে নিতে হয় লেখা বা খবর! এর মধ্যে আমার একটি লেখার জন্য ‘আজকের পত্রিকা’র অনলাইন বিভাগকে লালচোখ দেখানো হয়েছে। মাজহারুল ইসলাম বাবলার একটি লেখার জন্যও চোটপাট করা হয়েছে। আপত্তিকর কি লিখেছেন বাবলা? লিখেছেন, সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে সামরিক হেলিকপ্টারে দিল্লি পাঠিয়েছে। আর শুধু পুলিশের গুলিতে নয়, মেটিকুলাস ডিজাইনের মাধ্যমে জঙ্গিরাও মানুষ হত্যা করেছে। এখানে অসত্য তথ্য কোথায়? শেখ হাসিনা কি হেলিকপ্টার ভাড়া করে গোপনে পালিয়েছেন? হাসিনার পুলিশ না হয় ছাত্র জনতাকে হত্যা করলো কিন্তু পুলিশ হত্যা করলো কে বা কারা? এইটুকু লেখার জন্য পত্রিকার বিরুদ্ধে তোপ দাগা একেবারেই অনুচিত।

সব মিলিয়ে পত্রিকায় আমার অবস্থা তাই খুবই নাজুক। সজ্জন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক চাপ সইতে না পেরে আমার সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করেছেন।

আমি এখন কী করি? কোন পথে হাঁটি?

আমি লিখি, কারণ আমি জানতাম সাংবাদিকতা মানে সাহস। সত্য প্রকাশ মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়ার নাম। দীর্ঘ পাঁচ দশকের অভিজ্ঞতা বলছে, সত্য লিখতে হলে কখনো কখনো ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য হারাতে হয়। আমি তেমন স্বাচ্ছন্দ্য চাইনি কখনো। তবে সারাজীবন হাত পেতে চলতে হবে এটাও চাইনি।

আমার সাংবাদিক বন্ধু মাহবুব কামাল মনে করেন, আমার কোনো বড় ধরনের সমস্যা আছে। না হলে তিনি এখন অনেকটা নিরাপদ জীবন কাটালেও আমার অনিশ্চয়তা কেন দূর হলো না? আসলে তাই তো? আমার অভাব কেন দূর হয় না? মাহবুব ভাই শেখ হাসিনার কাছ থেকে জমি পেয়েছেন, চিকিৎসার জন্য দুই দফায় নগদ টাকাও পেয়েছেন। তারপর পৃথিবীজুড়ে তার অগণিত ভক্তকুল তাকে কত উপলক্ষেই না মুক্তহস্তে দান করেন। চিকিৎসার জন্য লাগবে লাখ কয়েক তিনি পেয়ে যান কোটি খানেক। আমার তো কপাল মন্দ। কোনো ভক্ত নেই। তবে আমিও একেবারে ঋণধার পাই না, সেটা বললে অসত্য বলা হবে। আমারও কিছু খুচরা দরদি আছে বলেই না এখনো বেঁচেবর্তে আছি।

আবার দেখুন, মাহবুব কামালের দুই পুত্র সন্তান। তারাও পিতার মতো সাফল্যের পরীক্ষায় পাস করে দেশে বিদেশে ভালো চাকরি করছে। আর আমার এক কন্যা ও এক পুত্র। ছাত্র হিসেবে মেধাবী কিন্তু…

এত এত মানুষ থাকতে মাহবুব কামালের কথাই কেন লিখছি? কারণ তার আজকের অবস্থানের পেছনে খুব সামান্য হলেও আমি ভূমিকা রেখেছিলাম! ‘যায়যায়দিনে’ কাজের জন্য পাটগ্রাম থেকে ঢাকা নিয়ে আসার জন্য শফিক রেহমানকে প্রভাবিত করেছিলাম। ‘যায়যায়দিনে’ লিখেই তো এখন বিশ্বসেরা সাংবাদিক।

আমি ক্ষুদ্র মানুষ। মনটাও সংকীর্ণ। সেজন্য আমার প্রতি সবাই বিদ্বেষ পোষণ করতেই পারে। আমি কিন্তু কারও প্রতি সামান্য বিদ্বিষ্ট নই। উপকার করার ক্ষমতা নেই বলে কারও অপকারের কথা স্বপ্নেও ভাবি না। নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। আমি যে খুব কম জানাবোঝা একজন মানুষ, সেটা আমি খুব ভালো জানি।

আমার সংসারে স্ত্রী ছাড়া দুই সন্তান। এক মেয়ে, এক ছেলে। ছেলেমেয়েরাও আমার মতো একটু বোকাসোকা। বর্তমান সময়ের সঙ্গে বেমানান। মেয়ে বড়। জীবনে কখনো কোনো পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেনি। ডাক্তার হয়েছে। বিসিএস পাস করে চাকরিও পেয়েছে। গ্যাসট্রোএনটোরোলোজিতে এমডি করতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে এসে ধরা খেল। সরকার বদলের পর বিভাগীয় প্রধানের কোপানলে পড়ে আমার মেধাবী মেয়েটি থিসিস পরীক্ষায় অসফল হলো। অথচ ও কোনো রাজনীতির সাতে-পাঁচে নেই। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় অবশ্য পাস করেছে, এখন থিসিসের জন্য আবার অপেক্ষা। এর মধ্যে আবার কোন নিভৃত অঞ্চলে পোস্টিং দিয়ে দেবে, কে জানে!

আমার ছেলেটি বুয়েট থেকে এমএমইতে পাস করেছে। আমেরিকায় একটি বৃত্তি পেয়েও শারীরিক কিছু সমস্যার কারণে সময়মতো যেতে পারেনি। আমার ছেলেটি চার বছর বয়সে গুলেনবারি সিনডর্ম রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনমৃত্যুর সঙ্গে কয়েক মাস পাঞ্জা লড়ে তবে বেঁচেছে। ওর ব্যয়বহুল চিকিৎসার ধকল আমি সয়েছি। বুয়েট পাস হয়ে দেশে কত চাকরির পরীক্ষা দিয়ে পাস করেও এখন পর্যন্ত নিয়োগ নিশ্চিত হলো না। অপরাধ কি ওর নাম, নাকি বাবা হিসেবে আমি, বুঝতে পারছি না।

আমি কেন এই খোলা চিঠি লিখছি, সেটাও যে খুব ভালো বুঝতে পারছি তা নয়। তবে কয়দিন ধরে আমার কান কেন যেন কু ডাক শুনছে। মনটাও কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। মাহবুব কামাল কিছু অর্থ সাহায্য করতে চেয়েও আমার কোনো ব্যবহারে কুপিত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

শেষে ‘প্রথম আলো’ সম্পাদক মতিউর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছি না। আমি একতায় মতি ভাইয়ের সহযোগী ছিলাম। তিনিই আমাকে শফিক রেহমানকে বলে ‘যায়যায়দিন’র সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে স্নেহ করতেন, বিশ্বাস করতেন। তার পত্রিকায় (তখন ভোরের কাগজ) আমাকে যোগ দিতে বলেছিলেন। আমার বাসায়ও এসেছিলেন। কিন্তু আমি তখন ‘যায়যায়দিন’ ছাড়তে চাইনি। জীবনে এর চেয়ে বড় ভুল আর আমার কোনোটা নয়। মতি ভাই, পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।

আমার জীবনে কোনো সাফল্যের গল্প নেই। সাংবাদিক হিসেবেও এ-ডাল ও-ডাল করে কোনো শক্ত ডাল ধরতে পারিনি। আমার কোথাও না কোথাও বড় ঘাটতি আছে। এই ঘাটতি আর কাটিয়ে ওঠা হলো না।

দুঃখই হোক আমার জীবনের শেষ সঙ্গী। আর পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক।

২১ অগাস্ট, ভোর ৫টা। সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা।

★ জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।

সংগৃহীত;

নিউজটি শেয়ার করুন..

ট্যাগস:-

জীবনের শেষ লেখায় অনেক অভিযোগসহ প্রশ্ন রেখে গেলেন সাংবাদিক বিভুরঞ্জন

আপডেট সময়- ০৭:২৮:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

নিখোঁজের একদিন পর মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদী থেকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকারের (৭১) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিখোঁজ হওয়ার দিন, অর্থাৎ ২১ আগস্ট সকাল সোয়া ৯টায় এই সাংবাদিক সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে একটি ‘খোলা চিঠি’ পাঠান। মেইলে পাঠানো ফুটনোটে তিনি লেখেন, ‘জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।’

পরিবারের সদস্যরা জানান, ওইদিন ১০টার দিকে অফিসে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি আর ফেরেননি। তার নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে থানায় জিডি করে পরিবার। শুক্রবার বিকালে মুন্সীগঞ্জের মেঘনায় তার লাশ পাওয়ার খবর জানায় পুলিশ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে প্রেরণ করা সেই শেষ লেখাটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

আমি বিভুরঞ্জন সরকার, ‘আজকের পত্রিকা’র সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করি। সাংবাদিকতার সঙ্গে আমার সম্পর্ক পাঁচ দশকের বেশি সময়ের। দেশের নানা পরিবর্তন, আন্দোলন, গণআন্দোলন এবং রাজনৈতিক উত্থান-পতন প্রত্যক্ষ করেছি। এই দীর্ঘ সময় আমি লিখেছি সত্যের পক্ষে, মানুষের পক্ষে, দেশের পক্ষে। কিন্তু আজ, যখন নিজের জীবনকে দেখি, অনুভব করি—সত্য লিখে বাঁচা সহজ নয়।

আমার পেশা আমাকে শিখিয়েছে—সত্য প্রকাশ করা মানে সাহসের সঙ্গে ঝুঁকি নেবার নাম। ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে করতে শিখেছি, কখনো কখনো নাম গোপন রাখতেই হয়। সত্য প্রকাশ করতে গেলে জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলা প্রয়োজন হয়। এরশাদের আমল, নানা রাজনৈতিক আন্দোলন—সবক্ষেত্রে সাহস ছাড়া লেখা সম্ভব ছিল না। আমরা, আমার মতো সাংবাদিকরা, গোপন নাম ব্যবহার করেছি, তাতে স্বার্থের কিছু নেই, বরং নিরাপত্তার জন্য।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার অবস্থান স্পষ্ট ছিল—স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানো মানে দেশের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা। আমার এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে কোনো অবদান না রেখেও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট বাগিয়ে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, নিচ্ছেন। আমি ও পথে হাঁটিনি।

স্কুল ছাত্র থাকতেই সাংবাদিকতার পেশায় জড়িয়েছি। দৈনিক আজাদের মফস্বল সাংবাদিক। স্কুলে পড়ার সময় আমাদের নামে আজাদে বড় বড় লেখা ছাপা হয়েছে। আবার বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়াও সেই স্কুল থেকেই। রাজনৈতিক আদর্শবোধ ও সাংবাদিকতার নৈতিক সততা আমাকে ব্যক্তিগত সুখভোগের জন্য তাড়িত করেনি। একটাই তাড়না–দায়িত্ববোধ। আমি জ্ঞানত কখনো দায়িত্ব পালনে অবহেলা করিনি। নিজের কাজে ফাঁকি দেইনি। খুব সাহসী মানুষ হয়তো আমি নই, কিন্তু চোখ রাঙিয়ে কেউ আমাকে দিয়ে কিছু লেখাতে পারিনি। অবশ্য বছর কয়েক আগে কথায় পটিয়ে আমাকে দিয়ে নাঈমুল ইসলাম খান তার স্ত্রী মন্টি আপার সুখ্যাতি লিখিয়ে নিয়েছিলেন!

আজকের সময়ে সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ অন্যরূপ। অনেকেই সুবিধা, স্বার্থ, সামাজিক মর্যাদা বা আর্থিক স্বার্থের জন্য সত্যকে আড়াল করে লেখেন। আমি নাম আড়াল করলেও সত্য গোপন করিনি। তাই হয়তো দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময় এই পেশায় কাটিয়ে সম্মানজনক বেতন-ভাতা পাই না। এখন আমার যা বেতন তা বলে কাউকে বিব্রত করতে চাই না। তবে শুনেছি, আমার বিভাগীয় প্রধানের বেতন আমার প্রায় দ্বিগুণ। আহা, যদি ওই বেতনের একটি চাকরি পেতাম তাহলেও হয়তো সংসার চালানোর জন্য নিয়মিত ধার-দেনা করার পেশাটি আমাকে বেছে নিতে হতো না! অন্যসব খরচের হিসাব বাদ দিয়ে মাসে আমার একার ওষুধের ব্যয় ২০–২২ হাজার টাকা। বাড়িয়ে নয়, একটুবকমিয়েই হয়তো বললাম! আমার আর্থরাইটিস, লিভার সিরোসিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ কত যে রোগ! আর্থরাইটিস ও লিভারের চিকিৎসার জন্য কত যে ধারদেনা করতে হয়েছে। আমার ছেলেও অসুস্থ, ওরও নিয়মিত চিকিৎসাব্যয় আছে। তাই ধার-দেনা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

শেখ হাসিনার শাসনামলে নানা পরিচয়ে অনেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। একপর্যায়ে লাজলজ্জা ভুলে আমিও শেখ হাসিনার দরবারে সাহায্যের আবেদন করে কোনো ফল পাইনি। অনেক সাংবাদিক প্লট পেয়েছেন। আমি দুইবার আবেদন করেও সফল হইনি। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে বই লিখেও নাকি কতজন ভাগ্য বদলেছেন। অথচ আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত দুটি বইয়ের জন্য আমি দুই টাকাও রয়্যালিটি পাইনি। একেই বলে কপাল! তবে হ্যাঁ, একবার শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছিল। ওই সফরের জন্য কিছু হাত খরচের টাকা আমি পেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা তো ওই কোটপ্যান্টজুতো কিনতেই শুধু শেষ হয়, আরও দেনা হয়েছে। ওই সুবাদে আমার কোট-টাই জুতা কেনা! সারাজীবন তো স্যান্ডেল পরেই কাটল।

শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে অবিচল অবস্থানের কারণে আমাকে আজও ‘আওয়ামী ট্যাগ’ দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী আমলেও কোনো বাস্তব পুরস্কার পাইনি। আমি পেলাম না একটি প্লট, না একটি ভালো চাকরি। বরং দীর্ঘ সময় চাকরিহীন থেকে ঋণের বোঝা বেড়েছে। স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে পরিবারের দায়বদ্ধতা আমাকে প্রতিনিয়ত চাপের মধ্যে রাখে।

‘আজকের পত্রিকা’য় কাজ করছি ৪ বছর হলো। এই সময়ে না হলো পদোন্নতি, না বাড়ল বেতন। অথচ জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে প্রতিদিন। সংবাদপত্র আর কীভাবে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবে, ঘরের মধ্যেই যেখানে অনিয়ম।

সাপ্তাহিক ‘যায়যায়দিন’ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যাদের লেখার কারণে তাদের একজন তারিখ ইব্রাহিম। ওই নামে আমিই লিখতাম এরশাদের কোপানল থেকে রক্ষা পেতে। ক্ষমতা ছাড়ার পর দু-একবার দেখা হলে অবশ্য এরশাদও ‘দেশি’ হিসেবে আমাকে খাতির করেছেন।

আমি চাকরি করেছি দৈনিক সংবাদে, সাপ্তাহিক একতায়, দৈনিক রূপালীতে। নিজে সম্পাদনা করেছি সাপ্তাহিক ‘চলতিপত্র’। নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি ‘মৃদুভাষণ’ নামের সাপ্তাহিকে। ‘দৈনিক মাতৃভূমি’ নামের একটি দৈনিকের সম্পাদনার দায়িত্বও আমি পালন করেছি। দেশের প্রায় সবগুলো দৈনিক পত্রিকা এবং অনলাইনে আমার লেখা একসময় নিয়মিত ছাপা হতো। দৈনিক ‘জনকণ্ঠ’ যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তখন প্রথম পৃষ্ঠায় আমার লেখা মন্তব্য প্রতিবেদন ছাপা হতো।

অথচ এখন কোনো কোনো পত্রিকায় লেখা পাঠিয়ে ছাপার জন্য অনুরোধ করেও ফল পাই না। আমার লেখা নাকি পাঠক আর সেভাবে ‘খায়’ না।

এক সময় কত খ্যাতিমান লোকেরা আমার লেখা পড়ে ফোন করে তারিফ করেছেন। অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, অধ্যক্ষ সাইদুর রহমানের প্রশংসাও আমি পেয়েছি। রাজনীতিবিদ অলি আহাদ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, লেখক অধ্যাপক শওকত ওসমান, ড. রংগলাল সেন, অধ্যাপক ড. অজয় রায়ের মতো কতজনের প্রশংসা পেয়েছি। বিএনপির এক সময়ের মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়াও আমাকে লেখার জন্য স্নেহ করতেন। ওহ হ্যাঁ, ড. মুহাম্মদ ইউনূসও অন্তত দুবার নিজে আমাকে ফোন করে আমার লেখার কথা বলেছেন। এখন অবশ্য এত সাধারণ বিষয় তার মনে থাকার কথা নয়। আজ আমার লেখা নাকি পাঠক টানে না। হতেই পারে, বয়সের ভারে বুঝি লেখা হালকা হয়ে গেছে।

নামে-বেনামে হাজার হাজার লেখা লিখেছি। সম্মানী কিন্তু পেয়েছি খুবই কম। কোনো কোনো পত্রিকা তো কয়েক বছর লেখার পরও একটা টাকা দেওয়ার গরজ বোধ করেনি। সেদিক থেকে অনলাইনগুলো অনেক ভালো। একটি বড় অনলাইনের কাছেও আমার মোটা টাকা এখনো পাওনা আছে।

অথচ এখন আমার দৈনন্দিন জীবন শুরু হয় ওষুধ খেয়ে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিয়ে এবং ওষুধ কেনার টাকার চিন্তায়।

এর মধ্যে গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর গণমাধ্যমের অবস্থা আরও কাহিল হয়েছে। মন খুলে সমালোচনা করার কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। কিন্তু তার প্রেস বিভাগ তো মনখোলা নয়। মিডিয়ার যারা নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন তারা সবাই আতঙ্কে থাকেন সব সময়। কখন না কোন খবর বা লেখার জন্য ফোন আসে। তুলে নিতে হয় লেখা বা খবর! এর মধ্যে আমার একটি লেখার জন্য ‘আজকের পত্রিকা’র অনলাইন বিভাগকে লালচোখ দেখানো হয়েছে। মাজহারুল ইসলাম বাবলার একটি লেখার জন্যও চোটপাট করা হয়েছে। আপত্তিকর কি লিখেছেন বাবলা? লিখেছেন, সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে সামরিক হেলিকপ্টারে দিল্লি পাঠিয়েছে। আর শুধু পুলিশের গুলিতে নয়, মেটিকুলাস ডিজাইনের মাধ্যমে জঙ্গিরাও মানুষ হত্যা করেছে। এখানে অসত্য তথ্য কোথায়? শেখ হাসিনা কি হেলিকপ্টার ভাড়া করে গোপনে পালিয়েছেন? হাসিনার পুলিশ না হয় ছাত্র জনতাকে হত্যা করলো কিন্তু পুলিশ হত্যা করলো কে বা কারা? এইটুকু লেখার জন্য পত্রিকার বিরুদ্ধে তোপ দাগা একেবারেই অনুচিত।

সব মিলিয়ে পত্রিকায় আমার অবস্থা তাই খুবই নাজুক। সজ্জন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক চাপ সইতে না পেরে আমার সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করেছেন।

আমি এখন কী করি? কোন পথে হাঁটি?

আমি লিখি, কারণ আমি জানতাম সাংবাদিকতা মানে সাহস। সত্য প্রকাশ মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়ার নাম। দীর্ঘ পাঁচ দশকের অভিজ্ঞতা বলছে, সত্য লিখতে হলে কখনো কখনো ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য হারাতে হয়। আমি তেমন স্বাচ্ছন্দ্য চাইনি কখনো। তবে সারাজীবন হাত পেতে চলতে হবে এটাও চাইনি।

আমার সাংবাদিক বন্ধু মাহবুব কামাল মনে করেন, আমার কোনো বড় ধরনের সমস্যা আছে। না হলে তিনি এখন অনেকটা নিরাপদ জীবন কাটালেও আমার অনিশ্চয়তা কেন দূর হলো না? আসলে তাই তো? আমার অভাব কেন দূর হয় না? মাহবুব ভাই শেখ হাসিনার কাছ থেকে জমি পেয়েছেন, চিকিৎসার জন্য দুই দফায় নগদ টাকাও পেয়েছেন। তারপর পৃথিবীজুড়ে তার অগণিত ভক্তকুল তাকে কত উপলক্ষেই না মুক্তহস্তে দান করেন। চিকিৎসার জন্য লাগবে লাখ কয়েক তিনি পেয়ে যান কোটি খানেক। আমার তো কপাল মন্দ। কোনো ভক্ত নেই। তবে আমিও একেবারে ঋণধার পাই না, সেটা বললে অসত্য বলা হবে। আমারও কিছু খুচরা দরদি আছে বলেই না এখনো বেঁচেবর্তে আছি।

আবার দেখুন, মাহবুব কামালের দুই পুত্র সন্তান। তারাও পিতার মতো সাফল্যের পরীক্ষায় পাস করে দেশে বিদেশে ভালো চাকরি করছে। আর আমার এক কন্যা ও এক পুত্র। ছাত্র হিসেবে মেধাবী কিন্তু…

এত এত মানুষ থাকতে মাহবুব কামালের কথাই কেন লিখছি? কারণ তার আজকের অবস্থানের পেছনে খুব সামান্য হলেও আমি ভূমিকা রেখেছিলাম! ‘যায়যায়দিনে’ কাজের জন্য পাটগ্রাম থেকে ঢাকা নিয়ে আসার জন্য শফিক রেহমানকে প্রভাবিত করেছিলাম। ‘যায়যায়দিনে’ লিখেই তো এখন বিশ্বসেরা সাংবাদিক।

আমি ক্ষুদ্র মানুষ। মনটাও সংকীর্ণ। সেজন্য আমার প্রতি সবাই বিদ্বেষ পোষণ করতেই পারে। আমি কিন্তু কারও প্রতি সামান্য বিদ্বিষ্ট নই। উপকার করার ক্ষমতা নেই বলে কারও অপকারের কথা স্বপ্নেও ভাবি না। নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। আমি যে খুব কম জানাবোঝা একজন মানুষ, সেটা আমি খুব ভালো জানি।

আমার সংসারে স্ত্রী ছাড়া দুই সন্তান। এক মেয়ে, এক ছেলে। ছেলেমেয়েরাও আমার মতো একটু বোকাসোকা। বর্তমান সময়ের সঙ্গে বেমানান। মেয়ে বড়। জীবনে কখনো কোনো পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেনি। ডাক্তার হয়েছে। বিসিএস পাস করে চাকরিও পেয়েছে। গ্যাসট্রোএনটোরোলোজিতে এমডি করতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে এসে ধরা খেল। সরকার বদলের পর বিভাগীয় প্রধানের কোপানলে পড়ে আমার মেধাবী মেয়েটি থিসিস পরীক্ষায় অসফল হলো। অথচ ও কোনো রাজনীতির সাতে-পাঁচে নেই। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় অবশ্য পাস করেছে, এখন থিসিসের জন্য আবার অপেক্ষা। এর মধ্যে আবার কোন নিভৃত অঞ্চলে পোস্টিং দিয়ে দেবে, কে জানে!

আমার ছেলেটি বুয়েট থেকে এমএমইতে পাস করেছে। আমেরিকায় একটি বৃত্তি পেয়েও শারীরিক কিছু সমস্যার কারণে সময়মতো যেতে পারেনি। আমার ছেলেটি চার বছর বয়সে গুলেনবারি সিনডর্ম রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনমৃত্যুর সঙ্গে কয়েক মাস পাঞ্জা লড়ে তবে বেঁচেছে। ওর ব্যয়বহুল চিকিৎসার ধকল আমি সয়েছি। বুয়েট পাস হয়ে দেশে কত চাকরির পরীক্ষা দিয়ে পাস করেও এখন পর্যন্ত নিয়োগ নিশ্চিত হলো না। অপরাধ কি ওর নাম, নাকি বাবা হিসেবে আমি, বুঝতে পারছি না।

আমি কেন এই খোলা চিঠি লিখছি, সেটাও যে খুব ভালো বুঝতে পারছি তা নয়। তবে কয়দিন ধরে আমার কান কেন যেন কু ডাক শুনছে। মনটাও কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। মাহবুব কামাল কিছু অর্থ সাহায্য করতে চেয়েও আমার কোনো ব্যবহারে কুপিত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

শেষে ‘প্রথম আলো’ সম্পাদক মতিউর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছি না। আমি একতায় মতি ভাইয়ের সহযোগী ছিলাম। তিনিই আমাকে শফিক রেহমানকে বলে ‘যায়যায়দিন’র সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে স্নেহ করতেন, বিশ্বাস করতেন। তার পত্রিকায় (তখন ভোরের কাগজ) আমাকে যোগ দিতে বলেছিলেন। আমার বাসায়ও এসেছিলেন। কিন্তু আমি তখন ‘যায়যায়দিন’ ছাড়তে চাইনি। জীবনে এর চেয়ে বড় ভুল আর আমার কোনোটা নয়। মতি ভাই, পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।

আমার জীবনে কোনো সাফল্যের গল্প নেই। সাংবাদিক হিসেবেও এ-ডাল ও-ডাল করে কোনো শক্ত ডাল ধরতে পারিনি। আমার কোথাও না কোথাও বড় ঘাটতি আছে। এই ঘাটতি আর কাটিয়ে ওঠা হলো না।

দুঃখই হোক আমার জীবনের শেষ সঙ্গী। আর পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক।

২১ অগাস্ট, ভোর ৫টা। সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা।

★ জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।

সংগৃহীত;