সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, আন্তর্জাতিক, আবহাওয়া ও জলবায়ু, উপজেলা প্রশাসন, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, দূর্নীতি দমন কমিশন(দুদক), দেশজুড়ে, নারী ও শিশু, পূর্বাভাস, বাংলাদেশ, রংপুর
গাইবান্ধায় শিক্ষা অফিসার নকিবুলের তিন উপজেলা জুড়ে ঘুষের রাজত্ব
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৬:০২:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ৮ বার পড়া হয়েছে
ফেরদৌস আলম,
গাইবান্ধা প্রতিনিধি।।
[গাইবান্ধায় শিক্ষা সেক্টরের ঘুষ সিন্ডিকেট: ভুয়া নিয়োগে এমপিও বাণিজ্য, অভিযুক্ত অফিসার নকিবুল বহাল তবিয়তে]
গাইবান্ধায় শিক্ষা বিভাগে এক সুপরিকল্পিত ঘুষ ও জালিয়াতি চক্রের তীব্র অভিযোগ উঠেছে। ভুয়া নিয়োগ ও তৈরি করা নথিপত্র দিয়ে সরকারি এমপিওভুক্তির আবেদন দাখিলের একাধিক কেলেঙ্কারি ধারাবাহিকভাবে উন্মোচিত হচ্ছে। এই কেলেঙ্কারির কেন্দ্রে রয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবিএম নকিবুল হাসান। তার বিরুদ্ধে সরাসরি যোগাযোগ ও অর্থের বিনিময়ে ভুয়া আবেদন অগ্রাহ্য করার অভিযোগ রয়েছে।
গত নভেম্বর মাসে সাদুল্লাপুর, সুন্দরগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলার সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ১১ জন ভুয়া শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও আবেদনে ব্যাপক অনিয়ম ও জাল নথির প্রমাণ মিলেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কথিত নিয়োগপ্রাপ্তরা নকিবুল হাসানের সঙ্গে ‘ম্যানেজ’ করে এবং মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে আবেদনগুলো অগ্রায়ন করিয়েছেন।
নকিবুল হাসান দীর্ঘদিন পলাশবাড়ীর দায়িত্বে থাকাকালীন সাদুল্লাপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পান। তিন উপজেলার এই দায়িত্বকে তিনি অনিয়মের সুবিধা হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলেই শিক্ষকদের অভিযোগ। ঘটনা প্রকাশ পেলে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আতাউর রহমান নড়েচড়ে বসেন এবং নকিবুলকে ব্যাখ্যা তলব করে নোটিশ দেন। তিনি স্বীকার করেন যে নকিবুলের মাধ্যমে অগ্রায়নকৃত কিছু ভুয়া আবেদন বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছিল, যা পরে বাতিল বা আলাদা করা হয়।
জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান জানান, নকিবুলের জবাব নেয়া হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে শিক্ষক সমাজে প্রশ্ন উঠেছে, অধীনস্ত কর্মকর্তার এত বড় অনিয়মে জেলা শিক্ষা অফিসারের নিজের সম্পৃক্ততা বা অজ্ঞতা কেমন করে সম্ভব? একাধিক জাল আবেদন অগ্রায়নের ঘটনায় জেলা শিক্ষা অফিসারের ভূমিকাও সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন অনেকে।
বিশেষ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সুন্দরগঞ্জের শান্তিরাম বাগানচালী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুইজন, শোভাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন এবং আব্দুল কাদের মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক-কর্মচারীর সব নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রই জাল ও সৃজনকৃত। একইভাবে সাদুল্লাপুরের হিংগারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কথিত আইসিটি শিক্ষক মোজাম্মেল হকের আবেদনও ভুয়া প্রমাণিত হয়েছিল। পলাশবাড়ীর মাদারহাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দুইজনের আবেদনও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে শেষ পর্যন্ত সবই ভুয়া বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠান প্রধান হায়দার আলী ৪ লাখ টাকা ঘুষ চুক্তিতে তাদের আবেদন দাখিল করান।
গত ১০ ডিসেম্বর নকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ছয়জন শিক্ষক-কর্মচারী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কার্যকর তদন্ত শুরু হয়নি বলে তারা জানান। বরং তারা নানা চাপ ও হুমকির মুখে রয়েছেন। এমনকি একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবিরকে ফোনে হুমকি দেয়ার ঘটনাও সামনে এসেছে।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে অভিযুক্ত শিক্ষা অফিসার নকিবুল হাসান মূল অভিযোগ এড়িয়ে যান এবং তার পক্ষে ‘পজিটিভ’ সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ করে ফোন কেটে দেন। অভিযোগকারীদের দাবি, তার চাকরির মেয়াদ দেড়-দুই বছর বাকি থাকায় তিনি জেলা শহরের বাসা থেকেই দাপট দেখাচ্ছেন এবং ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে আখের গোছাতে মরিয়া। তিনি তদবির, সংবাদকর্মী ‘ম্যানেজ’ ও অভিযোগকারীদের হুমকি দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছেন বলে অভিযোগ।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তবে শিক্ষক সমাজ দ্রুত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও দৃশ্যমান তদন্ত চাইছেন এবং দুর্নীতিবাজ নকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছেন। গাইবান্ধার শিক্ষা প্রশাসনে এই কেলেঙ্কারি এখনও চলমান সংকট হিসেবে রয়ে গেছে, যার নিষ্পত্তি সবার প্রতীক্ষায়
নিউজটি শেয়ার করুন..
ট্যাগস:-

-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ












































































































































































