প্রার্থী বারবার ছুটে গেলেও, দলীয় সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করলেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা
- আপডেট সময়- ০৬:৫৩:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫ ১ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিতদের দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার আহ্বান জানালেও নির্দেশনা মানলেন না (নারায়নগঞ্জ-৫) মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ও মনোনয়ন বঞ্চিতরা।
শনিবার(১৫ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির সিদ্ধান্তের প্রতি অনাস্থা ও অগ্রাহ্য পোষণ করেন তারা। তাদের দাবি, দলীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে গৃহীত ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থীর পরিবর্তে তাদের মধ্যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।
এদিকে, মনোনয়ন বঞ্চিত মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের এমন অবস্থানকে দলের সঙ্গে বিদ্রোহ হিসেবে দেখছেন সাধারণত জনগণ ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এভাবে প্রকাশ্যে বিএনপির হাইকমাণ্ডের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সকলে একাট্টা হয়ে তারা কার স্বার্থ বাস্তবায়নে নীলনকশা আঁকছেন সে প্রশ্নও এখন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনেও এসব বিএনপি নেতাদের একাট্টা হতে দেখা যায়নি। বরং তাদের মধ্যে বারবারই বিরোধী মনোভাব নিয়ে বিরোধ লেগেই ছিল।
কিন্তু এখন দলীয়ভাবে মনোনীত ধানের শীষে প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাদের এক মঞ্চে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধচারন করতে দেখা গিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে দলের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থ তাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।যা আগামীতে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিকে দুর্বল করতে বিরোধীদের সহযোগিতা করবে।
নগরীর নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে আয়োজিত দলীয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে সংবাদ সম্মেলনে অংশ গ্রহন করেন বিএনপির সাংসদ ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল ও কালাম পুত্র আবুল কাউছার আশা। তারা প্রত্যেকেই আসন্নবর্তী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এছাড়াও বন্দর থানার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক রানা ও সদর থানার সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধান ছাড়া দলের ও অঙ্গ সংগঠনের অন্য কোন নেতা উপস্থিত ছিলেন না সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গত ৩ নভেম্বর দলীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হন সাবেক যুবদল নেতা, সমাজসেবক, ও ক্রীড়ানুরাগী একাধারে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান মাসুদ। এরপর থেকে প্রকাশ্যেই ধানের শীষের দলীয় সিদ্ধান্তে গৃহীত প্রার্থীর বিরোধীতা শুরু করেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা। দলের নির্দেশে নিজে নত হয়ে বারবার সকলের কাছে ছুটে গিয়েছেন,।পাশাপাশি সকলকে ঐক্যের মাধ্যমে এক কাতারে এনে সব নেতাকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে সর্বাত্নক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মাসুদুজ্জামান।
সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে বন্দরে দলীয় কর্মীদের হামলায় আহত হন আবু আল ইউসুফ খান টিপু। ওই সময় হামলার ঘটনায় মামলায় টিপু মামলায় আবুল কাউসার আশাসহ তার ঘনিষ্ঠদের আসামি করেন। তখন থেকেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়। তবে, দলীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে উড়িয়ে দিয়ে অগ্রাহ্য করে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরোধীতা করতেই তাদেরকে এক মঞ্চে এনেছে।
এনিয়ে পুরো জেলায় সমালোচনার ঝড় বইছে, কেউ কেউ বলছে দলের শীর্ষ নেতাদের এমন অবস্থানকে ভালো চোখে দেখছেন না তৃণমূলের কর্মীরা। তারা এটিকে দলের ভাঙনের প্রচেষ্টা হিসেবেও সন্দেহ করছেন। এতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে।
এদিকে সারাদেশে মনোনয়ন ঘোষণার একদিন আগে ২ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকার ফলে সবাই মনোনয়ন পাওয়া সম্ভব নয়। ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাজপথে ছিল এমন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই বাস্তবতার কারণে হয়তো দেশের অনেক সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন।সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা- দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতা মেনে নেবেন এবং দলের সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য করবেন।সারা দেশজুড়ে গুপ্ত স্বৈরাচার ওৎ পেতে রয়েছে। প্রতিপক্ষ যেন আপনাদের বিরোধের সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়েও সতর্ক করেন তিনি।
গণঅভ্যুত্থানের পর প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিএনপি ক্লিন ইমেজ, মাঠে জনসম্পৃক্ততা, সাংগঠনিক অবদান, বিরোধহীন মনোভাব ও ত্যাগী নেতৃত্বের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন বলে দলের সূত্রে জানা যায়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যেসব নেতার এলাকার মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে, স্থানীয় সমস্যা জানেন এবং সমাধানে সক্ষম- তাদেরই এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে। এই বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মাসুদুজ্জামান উপযুক্ত প্রার্থী বলে মনে করছে বিএনপি।
মাসুদুজ্জামান তরুণ বয়সে যুবদল থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হন। পরবর্তীতে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্ব দেন এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষা, ক্রীড়া ও সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততার কারণে নগরীর সাধারণ মানুষের মধ্যেও রয়েছে তার বিশাল গ্রহণযোগ্যতা। কোভিড, ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব কিংবা তল্লার মসজিদ বিস্ফোরণের মতো সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে ছিলেন তিনি। গণঅভ্যুত্থানের সময়ও ছাত্র-জনতার প্রতি সহায়তা রাখেন নেপথ্যে থেকে। এসব কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যেও তার প্রভাব ও আস্থা তৈরি হয়েছে বলে দলীয় সূত্র মতে জানা গেছে।
তিনি তরুণ বয়সে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। শিক্ষা, ক্রীড়া ও সমাজসেবায় অবদান রাখা মাসুদুজ্জামান সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত এক মুখ। বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও তার অবদানের কথা তুলে ধরেছেন বিভিন্ন সময়। এ বিএনপি নেতা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেপথ্যে থেকে নানাভাবে দল ও দলের নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্র-জনতার পক্ষে ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
মহানগর যুবদলের আহবায়ক মনিরুল ইসলাম সজল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজকের নারায়ণগঞ্জ সংসদীয় ৫ আসনের প্রার্থীর বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন দেখে মনে হল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে উড়িয়ে দিচ্ছেন।
মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদ বলেন, দল ও তারেক রহমান এর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ষড়যন্ত্র হয়নি শেষ সজাগ থেকো বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে , গত ২৭ অক্টোবর গুলশান কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জে পাঁচটি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডাকা হয়। ওই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওইদিন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করার পরামর্শ দেন দলের হাইকমাণ্ড। তখন নেতা-কর্মীরা তাতে সায় দিলেও নারায়ণগঞ্জে ধানের শীষের প্রার্থীর সরাসরি বিরোধীতার মধ্য দিয়ে বিএনপিতে ভিন্ন বার্তা যাচ্ছে।






































































































