’প্রাইজ পোস্টিং’ পেয়ে আবেগাপ্লুত বিদায় নিলেন ডিসি জাহিদুল ইসলাম মিঞা
- আপডেট সময়- ০৬:১৩:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ১০ বার পড়া হয়েছে
বিশেষ প্রতিবেদক।।
প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বদলি রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে দীর্ঘসময় নিয়ে কেউই থাকেন না। কমবেশি মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রায় ১১ মাস কর্মরত ছিলেন সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক(ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। কর্মদক্ষতা, সেবামূলক উদ্যোগ সুশাসন আর গতিশীল প্রশাসনিক নেতৃত্বের মূল্যায়নের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বদলি করে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পদায়ন করা হয়।
প্রশাসনে এই পোস্টিংকে ‘প্রাইজ পোস্টিং’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তার এই বদলির আদেশ জারি করা হয়।
২৫তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞাকে ২০২৫ সালের ৯ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক(ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
নারায়াণগঞ্জে এসে মাত্র কয়েক মাসে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি পরিচিত হন মানবিক ও উদ্যোগী ডিসি হিসেবে। প্রশাসনের নানা খাতে সুশাসন, জনসেবা, পরিবেশ, সুরক্ষা সবক্ষেত্রেই তার সক্রিয়তা ও দৃশ্যমান উদ্যোগ তাকে দ্রুতই আলোচনায় নিয়ে আসে।
কাজের মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে তাকে নতুন দায়িত্বে পদায়ন করা হয় চট্টগ্রামে। এটি জেলা হিসেবে শুধুই বড় নয়, দেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। দেশে প্রশাসনিক গুরুত্বের বিচারে চট্টগ্রামকে শীর্ষ ক্যাটাগরির জেলা বলা হয়। যেখানে রয়েছে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, নৌ–বিমান–সেনা ঘাঁটি, রপ্তানিমুখী শিল্পাঞ্চল ও একাধিক কৌশলগত অবকাঠামো প্রকল্প। দেশজুড়ে পণ্য পরিবহন, আমদানি–রপ্তানি এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বড় অংশই পরিচালিত হয় এই জেলার ওপর ভর করে। তাই এখানে জেলার নেতৃত্ব দেওয়া মানে সরকারের সামগ্রিক প্রশাসনে আরও উচ্চপর্যায়ের দায়িত্ব পালন।
এ জেলায় দায়িত্ব পালনকালে জাহিদুল ইসলাম মিঞা নানা মানবিক ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপে আলোচিত হন। গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন কর্মসূচির আওতায় এক লাখ বৃক্ষরোপণ, জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খনন, ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ, শহীদ পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা, খেলাধুলার উন্নয়নে কোচ খেলোয়াড়দের সহায়তা, সরকারি নানা দপ্তরে দালালবিরোধী অভিযান, সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় পেশাদার ড্রাইভারদের ডাটাবেজের আওতায় আনা, নিরাপদ খাদ্যের জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিষয়েও জোর দেন তিনি, স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি চাকরিতে স্বচ্ছতা আনা, ধর্মীয় নানা উৎসবে নিরাপত্তা প্রদানে বিশেষ উদ্যোগ, মাদক, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যৌথ অভিযান, সমাজের নানা স্তরে সমস্যায় থাকা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সরকারি অনুদান ও পুর্নবাসনে কাজ করা, ডেঙ্গু রোগীদের সহায়তা ও এনআইসিইউ চালু এমন বহু উদ্যোগ তাকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে।
শিল্পসমৃদ্ধ ও ঘনবসতিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জে প্রশাসনিক নেতৃত্বে গতিশীল কাজ করার পর তাকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পাঠানোকে অনেকেই যোগ্যতার স্বীকৃতি ও বৃহত্তর দায়িত্বে দেয়া হিসেবে দেখছেন। চট্টগ্রামে যোগদানের মাধ্যমে তিনি এখন আরও বৃহত্তর পরিসরে প্রশাসনিক দক্ষতা প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। রাষ্ট্রের প্রধান অর্থনৈতিক ও কৌশলগত জেলার নেতৃত্বের এই দায়িত্ব কেবল বদলি নয় নিজের কর্মদক্ষতার পুরস্কার ও নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে এই ‘প্রাইজ পোস্টিং’ পেলেন তিনি।
সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জে আসার আগে পত্র-পত্রিকায় নিউজ দেখে এক রকম ধারণা ছিল। কিন্তু এখানে পোস্টিং হয়ে আসার পর তিনি দেখেছেন, ধারণার সাথে বাস্তবতার সম্পূর্ণ উল্টো ছবি। আমি যখন যে কাজে হাত দিয়েছি আপনাদের সকলের সহযোগিতা পেয়েছি। আমার চাকরিজীবন ২০ বছর পেরিয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করেছি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি যে, যে দুই-একটি স্টেশন মনে থাকবে তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ অন্যতম। এখানকার রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও মিডিয়া আমাকে যে ভাবে সাপোর্ট করেছে, একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এটা পাওয়া খুব সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমি নারায়ণগঞ্জবাসী ভালোবাসায় ঋনি।
নিউজটি শেয়ার করুন..

-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ
















































































































