সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, আবহাওয়া ও জলবায়ু, উপজেলা প্রশাসন, খুলনা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, দেশজুড়ে, নারী ও শিশু, পূর্বাভাস, বাগেরহাট, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পুলিশ, শরণখোলা
পূর্ব সুন্দরবনের দু’সহস্রাধিক জেলেরা বনদস্যু আতঙ্কে

প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৫:১৮:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৪৬ বার পড়া হয়েছে

মোঃ কামরুল ইসলাম টিটু,
শরনখোলা প্রতিনিধি
বনদস্যু আতঙ্কে পূর্ব সুন্দররবনের দুই সহস্রাধিক জেলে। দীর্ঘ তিন মাস পর জেলেদের যখন বনে মাছ ধরতে যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন এমন সময় বনদস্যুদের অপহরণের খবর তাদের মাঝে নতুন আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে সম্প্রতি পশ্চিম সুন্দরবন থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার সাত জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ এবং চাদঁপাই রেঞ্জে দুই দস্যু আটকের ঘটনায় পূর্ব সুন্দরবনের জেলেদের মাঝেও দস্যুভিতি ছড়িয়ে পড়েছে।
পূর্ব সুন্দর বন বিভাগ শরণখোলা রেঞ্জের বনরক্ষীরা জানিয়েছেন, জেলেদের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে এবং বনদস্যুদের প্রতিহত করা হবে।
বনসংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার বগি, চালিতাবুনিয়া, খুড়িয়াখালী, সোনাতলা গ্রামের জেলেরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বনবিভাগের দেয়া জুন, জুলাই, আগস্ট এই তিন মাসের অবরোধে সাধারণ জেলেরা খুবই আর্থিক সংকটে ভুগে থাকে। এসময় তাদের অন্যকোন কাজ- কর্ম থাকে না। কোন রকম ধার দেনা করে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন। অবরোধ শেষে ধারদেনা করে মহাজনদের কাছ থেকে দাদন এনে বনে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহন করেন।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক জেলেরা আরও জানান, সুন্দরবনে আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। এছাড়া শরণখোলা রেঞ্জের শতকরা ৮৫ ভাগ জায়গা অভয়অরণ্য এলাকার ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কারণে এমনিতেই যখন জেলেরা সুন্দরবনে মাছ ধরতে যেতে অনিহা বোধ করছেন। সেখানে আবার নতুন করে দেখা দিয়েছে বনদস্যুদের অপতৎপরতা।
জেলেরা জানান, মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে বনঅফিস থেকে বি এলসি ও পারমিট গ্রহণ করে বনে যেতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। তার উপর যদি বনদস্যুদের আক্রমণ হয়। মুক্তিপণের দাবিতে জেলেদের অপহরণ করা হয়। তখন সাধারণ ছেলেদের দুর্দশার সীমা থাকে না । দরিদ্র জেলেদের পক্ষে ৫০ থেকে ১ লক্ষ টাকা মুক্তি পণ দিয়ে বাড়ি ফেরার সম্ভব হয় না। অনেক সময় মুক্তি পণের টাকা দিতে না পারায় দস্যুরা নির্মম অত্যাচারের শিকার হন। এমনকি দস্যুদের হামলায় জেলেদের জীবনও বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা থাকে।
জানা যায়, গত মধু আহরণ মৌসুমেও মৌয়ালদের কাছে বনদস্যুরা ফোন করে চাঁদা আদায় করে। গত ৭/৮ মাস আগে বঙ্গোপসাগর থেকে এবং সুন্দরবনের শ্যালা সহ একাধিক বন অফিস এলাকা থেকে বেশ কয়েকজন ছেলেকে মুক্তি পনের দাবিতে অপহরণ করে বনদস্যুরা। এসব কারণে এবছর অবরোধ শেষে জেলেরা দস্যুদের ভয়ে বনে যেতে সাহস করছে না। তবে অনেক জেলে আর্থিক সংকটের হাত থেকে বাঁচতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে সুন্দরবনের যাত্রা করছেন।
সুন্দরবন ব্যবস্থাপনা কমিটি ভিলেজ টাইগার রেসপন স্টিম (ভিটিআর টির) শরণখোলা উপজেলার ফ্যাসিলেটেটর মোঃ আলম হাওলাদার জানান, গত ১০-১২ বছর পর্যন্ত বনদস্যুদের তৎপরতা কম ছিল। কিন্তু বেশ কয়েক মাস আগে থেকে বঙ্গোপসাগরসহ সুন্দর বনে বনদস্যু ও জলদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে বনের বিভিন্ন জায়গায় বনদস্যুদের জেলে অপহরণের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। ফলে শরণখোলার জেলেদের মাঝে অনেকটা ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। আশা করি বনবিভাগ এবং কোস্টগার্ডের ব্যাপক তৎপরতা থাকলে বনদস্যুরা আক্রমণ করতে সাহস পাবে না
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুদীপ্ত কুমার সিংহ জানান উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিশেষ সভায় সুন্দরবনের জেলেদের সুরক্ষায় সব ধরনের প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শরণখোলা রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ খলিলুর রহমান জানান, ৬ শতাধিক বিএলসির (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) মাধ্যমে ইতোমধ্য শরণখোলা ও বগী স্টেশন থেকে সহাস্রাধিক জেলে পারমিট করে বনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। ০১ সেপ্টেম্বর বনে প্রবেশ করবেন। বনবিভাগ জেলেদের সার্বিক সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। তবে পূর্বের তুলনায় জেলেদের সংখ্যা কিছুটা কম বলে মনে হচ্ছে। কত সংখ্যক নৌকা ও জেলে এ বছর পূর্ব সুন্দরবনে মাছ ধরবে তার সঠিক নিরূপণ করতে আরো কিছু সময় লাগবে।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব জানান, বন বিভাগের স্মার্ট টিম ছেলেদের সুরক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও কোস্টগার্ডের পশ্চিমজোন কমান্ড সার্বক্ষণিক টহলে থাকবেন।