সংসদীয় আসন পুনঃবিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরে মহাসড়কে মানববন্ধন

- আপডেট সময়- ০৯:০০:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৪৯ বার পড়া হয়েছে

ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি।।
ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ভাঙ্গা উপজেলার দু’টি ইউনিয়ন বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে মহাসড়কে গাছ ফেলে, টায়ার জ্বালিয়ে কমপক্ষে ২৩টি জেলার সড়ক যোগাযোগের প্রবেশদ্বার অবরোধ করেছে স্থানীয়রা। পরে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) আশ্বাসে ৩দিনের জন্য সন্ধ্যা ৭টায় সাময়িকভাবে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে স্থানীয় জনগণ।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার পর থেকে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের পুকুরিয়াসহ ভাঙ্গা-গোপালগঞ্জ রুটের শুয়াদি, মনসুরাবাদ সহ প্রায় ৮টি স্থানে এই অবরোধ শুরু হয়। এতে ভাঙ্গার উপর দিয়ে সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে জরুরী সেবা যেমন-অ্যাম্বুলেন্স, ঔষধের গাড়ি ইত্যাদি যানবাহনগুলো ছেড়ে দিতে দেখা যায়।
দুপুরে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমানের আশ্বাসে ভাঙ্গার মুনসুরাবাদ নামক স্থানের সড়ক অবরোধ স্থগিত করা হলেও বিকেল ৩টায় পুনরায় ভাঙ্গার হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়ের গোলচক্কর, ফরিদপুর- বরিশাল-মাওয়া, মহাসড়কের দক্ষিণপাড় বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান পালন করা হয়। এসময় পন্যবাহী গাড়ি সহ হাজার হাজার যাত্রীবাহী বাস আটকা পড়ে। অবরোধ তুলে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলেও বিক্ষোপ্ত জনতা তাদের দাবি না মানলে কর্মসূচি বন্ধ করবেন না বলে জানান। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আশ্বাসে সন্ধ্যা ৭টায় ৩দিনের জন্য কর্মসূচি সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়।
এসময় সড়ক অবরোধকারীদের কাছে এসে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ভাঙ্গার সাথে বহাল রাখার ব্যাপারে যা যা করণীয় তিনি তা করবেন বলে স্থানীয় জনগণদের অবহিত করেন। এ জন্য তিনি তিন দিনের সময় নেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে বলেন, ‘ভাঙ্গা আমাদের ঐতিহ্য, ভাঙ্গা আমাদের ইতিহাস, আমাদের গৌরবের স্থান, আমাদের জন্মভূমি। ৩০০ বছর ধরে আমরা ভাঙ্গার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
এ দাবি আমাদের প্রতিটি মেহনত মানুষের প্রাণের দাবি।’
‘আমাদের জীবন থাকতে নগরকান্দার/সালথার সঙ্গে যুক্ত হবো না। গেজেট বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ইউএনও স্যারের আশ্বাসে আমরা সাময়িকভাবে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি। আমাদের যৌক্তিক দাবি না মানলে এরপরে লাগাতার কর্মসূচি শুরু হবে, ইনশা আল্লাহ।’
মানববন্ধনে শেষের দিকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়
আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম. ম. সিদ্দিক মিয়া বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনকে পুজি করে, ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য লুকিয়ে থাকা উশৃংখল কিছু ব্যক্তি পোস্টার ফেস্টুন ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
বিক্ষোভের বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান সাংবাদিক দের বলেন, ‘দুই ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে স্মারকলিপি পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ কর্মসূচিতে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থীরা, আলগী, হামিরদী সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা, কৃষক- দিনমজুর, দলবল নির্বিশেষে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাগণ সহ স্থানীয়রা শান্তিপূর্ন একর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য যে, গত বৃহস্পতিবার আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ সংসদীয় আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে ফরিদপুর-৪ আসনের অন্তর্ভুক্ত ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে কেটে নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নির্বাহী গঠিত ফরিদপুর-২ আসনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইসির এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই তালিকা প্রকাশের পর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। এরপর তারা এই সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন।
সরকারি গেজেট সংশোধনের দাবি নিয়ে শুরু হওয়া এ আন্দোলন এখন ভাঙ্গা উপজেলার মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্নে রূপ নিয়েছে। তাই প্রশাসন তাদের দাবি দ্রুত মেনে নিবেন বলে মনে করেন স্থানীয় জনগণ।
তারা ফরিদপুর-৪আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী এ দু’টি ইউনিয়ন কেটে নেয়ার পরিবর্তে ভাঙ্গা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৫ আসন পুনঃপ্রবর্তনের দাবি জানান স্থানীয়রা।