সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, আবহাওয়া ও জলবায়ু, উপজেলা প্রশাসন, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, দেশজুড়ে, নারী ও শিশু, ফিচার, বাংলাদেশ, রংপুর
অবৈধ বালু উত্তোলনে তিস্তা সেতু ঝুঁকিতে

প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৯:০৬:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫ ৪৮ বার পড়া হয়েছে

ফেরদৌস আলম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি।।
গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম সীমান্তে নির্মিত ১,৪৯০ মিটার দীর্ঘ তিস্তা সেতু উদ্বোধনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ভৌত ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ২৫ আগস্ট এই সেতু সাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও, এরই মধ্যে সেতুর অদূরে তিস্তা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলামের সহায়তায় একটি প্রভাবশালী চক্র আইন লঙ্ঘন করে বালু উত্তোলন করছে, যা সেতুর স্থায়িত্ব ও সংলগ্ন কৃষিজমির জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে।
সেতুর উত্তর-পূর্ব পাশে মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ মিটার দূরে তিস্তা নদীতে ড্রাম ও বাঁশের তৈরি ভাসমান বাল্কহেডে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলিত বালু সরাসরি সেতুর সংযোগ সড়ক সংলগ্ন জমিতে ফেলা হচ্ছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৪(খ) অনুযায়ী, সেতু বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা নিষিদ্ধ। কিন্তু এই আইনকে উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।
প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও চক্রের প্রতিরোধের কারণে বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না। গত জুলাই মাসে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানা পুলিশ অভিযান চালালে চক্রের হুমকির মুখে তারা পিছু হটতে বাধ্য হন। এরপর চিলমারী নৌপুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা খননযন্ত্র বন্ধ করতে গিয়ে একজনকে আটক করলে, সংঘবদ্ধ বালু উত্তোলনকারীরা নৌপুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিকে ছিনিয়ে নেয়। নৌপুলিশের করা মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ থাকলেও তারা জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় একই কাজ চালাচ্ছে, যা সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল হাকিম আজাদ নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা ভয় ও প্রভাবের কারণে সরাসরি প্রতিবাদ করতে পারছেন না। এক কলেজ শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে জানা গেছে, প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পর কয়েকদিন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল, কিন্তু এখন তা আবারও শুরু হয়েছে।
গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী সতর্ক করেছেন, সেতুর আশপাশে নিয়মবহির্ভূত বালু উত্তোলনের ফলে সেতুর বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়া বা ভিত্তি দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং সরকারি কাজ ছাড়া নদীতে বালু তোলা হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে শুরু হয় ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুর কাজ, যা চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেডের দায়িত্বে ছিল। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজ কুমার বিশ্বাস দাবি করেছেন, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্থানীয়দের আশঙ্কা, উদ্বোধনের আগেই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ না হলে দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এই সেতু ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে।
নিউজটি শেয়ার করুন..
ট্যাগস:-

-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ