সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, আন্তর্জাতিক, আবহাওয়া ও জলবায়ু, কলকাতা, দেশজুড়ে, নারী ও শিশু, ফিচার, বাংলাদেশ, বৃটেন, যুক্তরাজ্য
মহাকাশ অভিযানে বিশ্বরেকর্ডধারী সুনিতা উইলিয়াম ৪৫ দিন চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে

প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ১২:৫৩:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫ ১৬ বার পড়া হয়েছে

ঋতম্ভরা ব্যানার্জি, কলকাতা প্রতিনিধি।।
মার্কিন নাগরিক ,ভারতীয় বংশোদ্ভুত বিজ্ঞানী, গবেষক,মহাকাশচারী সুনিতা পান্ডিয় উইলিয়াম সফল ভাবে মহা শূন্যে দীর্ঘ ৯ মাস ভাসমান অবস্থায় থাকলেও তার গবেষণায় কোণ খামতি ছিল না।
একের পর এক গবেষণা চালিয়ে গিয়েছেন। মাত্র ৮ দিনের নির্ধারিত অভিযানে গেলেও তার এবং সহযোগী মহাকাশচারী বুচ্ কখনো মানসিক ভারসাম্য হারান নি।
নাসার এই মহাকাশ অভিযানের বেশ কিছুদিন আগে সুনিতা উইলিয়াম ও তার স্বামী ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংগে দেখা করেছিলেন।
সুনিতার দুর্ধর্ষ অভিযানে তিনি শুধু বিশ্ব রেকর্ডই করেন নি, তিনি সারা বিশ্বের সংগে সংগে ভারতীয়দের গৌরবান্বিত করেছেন।
এলেন মাস্কের সৌজন্যে শেষ পর্যন্ত তারা পৃথিবীর আটলান্টিক মহাসাগরে ফ্লোরিডা উপকূলে অবতরণ করলে সারা বিশ্ব আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়।
সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী, মহাকাশচারী, রাষ্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রী সহ লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে একবার ভারতে তার গুজরাটের গ্রামে সফরের আমন্ত্রণ জানালে সুনিতা সাগ্রহে রাজি হয়েছেন।
তবে এখন আমেরিকায় নাসার তত্বাবধানে তাকে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে ৪৫ দিন। কারণ দীর্ঘ মহাকাশ অভিযানের ফলে তারা দুজনে বসার সুযোগ পান নি। সবসময় ভাসমান অবস্থায় থাকতে হয়েছে। তাই এখন পৃথিবীতে চেনা পরিবেশে হাঁটতে অসুবিধা হবে বেশ কিছু দিন। তেমনি রক্ত সঞ্চালন, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে।
৪৫ দিনের পর আমেরিকাতে তাকে নিয়ে প্রচণ্ড উত্তেজনা থাকবে। তারপর তিনি ভারতে আসতে পারেন।
এরপর বেশ কয়েক বার সুনীতাদের ফেরানোর চেষ্টা করা হলেও সফল হয়নি নাসা। শেষমেষ ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স’র পাঠানো ড্রাগন বুধবার ভোরে আটলান্টিক মহাসাগরের ফ্লোরিডা উপকূলে এসে নামলো। নোঙ্গর করে রাখা এক ফেরির সাথে গিয়ে জোড়া লাগলো। বিজ্ঞানের কি অবিশ্বাস্য জয়যাত্রা!
কিছুদেশ এবং কট্টরপন্থী দেশ গুলিতে মানুষ যখন নারীদেরকে টেনে হিঁচড়ে ঘরে বন্দী করার খেলায় মেতে উঠেছে, তখন আরেক প্রান্তের এক নারী মহাকাশে কাটিয়ে এলেন টানা ৯ মাস! তা-ও নির্ধারিত ৮ দিনের বদলে ৯ মাস!!!
এই ৯ মাস সুনীতারা কি করলেন ওখানে?
তারা গবেষণা করে দেখেছেন, মাইক্রো গ্রাভিটিতে কী কী ফসল উৎপাদন করা যায়! কোন্ ফুল ফুটতে পারে? কোন জীবাণু এই ধরনের প্রতিকূল পরিবেশে কাবু হয়? তার উদ্ভিদবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণার নাম ভেজি। ওহ্ সেখানে কিন্তু সুনীতা তার প্রিয় জিনিয়া ফুল ফুটিয়েছেন। জানিয়েছেন, ওখানে লেটুস, গাজর উৎপাদন করাও সম্ভব। একজন মহাকাশচারীকে শারীরবৃত্তীয় নানা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। হার্ট, কিডনি কিভাবে কতটা সক্রিয় থাকে তার পরীক্ষা খুব জরুরী। সেরে নিয়েছেন সেসব গবেষণাও। সুনীতা স্বপ্ন দেখেন, একদিন মানুষ মঙ্গলে যাবে। চাঁদে যাবে ঘর বাঁধতে, মধুচন্দ্রিমা করতে।
এর আগেও সুনীতা মহাকাশে গিয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট তিনবার। তিনটি অভিযান ধরলে এখন পর্যন্ত ৫১৭ দিন মহাকাশে ছিলেন তিনি। এটাই বিশ্ব রেকর্ড। স্টেশন থেকে বেরিয়ে মহাকাশে হাঁটাহাঁটি করেছেন মোট ৫১ ঘণ্টা! সেটাও বিশ্ব রেকর্ড!
আমরা যখন ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীদের ঘরে আটকে রাখার যাবতীয় কূটকৌশল চালিয়ে যাচ্ছি, তখন এই উপমহাদেশেরই এক নারী মহাকাশে থেকে এলেন পাক্কা ৯ মাস! তাও মানুষের উদ্ভাবিত যানে চড়ে, মানুষেরই বানানো জামা কাপড়, অক্সিজেন আর খাবার খেয়ে। সুনীতা সেসব মানুষদেরই মিথ্যা প্রমাণ করে দিলেন যারা যাবতীয় কূটবুদ্ধি দিয়ে নারীদেরকে বস্তায় বন্দি করে রাখে, আবার সেসব সঙ্কীর্ণ মানুষ যারা স্বেচ্ছায় বন্দী হয়। কিছু মানুষ, যারা এই বলে ফতোয়া দেয় যে, বাড়ির বাইরে যেতে হলে সাথে এক পুরুষকে বাধ্যতামূলক ভাবে নিতে হয়।
জ্ঞান বিজ্ঞানে মানুষ কোথায় এগিয়ে গেলো, আর কিছু মানুষ কোন্ পথে হাঁটছে।
ওয়েলকাম ব্যাক, সুনীতা উইলিয়ামস। আপনাকে দেখে মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে। শেখার আছে যে, শুধুমাত্র জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ দ্বারাই এই পৃথিবীর মানুষ এটা প্রমাণ করতে পারে যে, ”মানুষেরই মাঝে ম্বর্গ নরক, মানুষেই আছে জাগতিক সুখ , কর্ম জগৎ.”।
কয়েক মিনিটের জন্য লিফটে আটকা পড়লে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসে। টয়লেটের লক আটকে গেলে চিৎকার, আতংক ছড়িয়ে পড়ে।আর সুনীতা আটকে ছিলেন মহাকাশে। একদিন , দুদিন নয়। ৯ টি মাস। এই সময় মহাকাশ যানে বাসতেও পারেন নি। শুধু ভেসে চলেছেন।ব
মহাকাশ থেকে এক সাক্ষাৎকারে সুনীতা জানিয়েছিলেন, ”যদি পৃথিবীতে ফিরে যাই, তবে এই মহাকাশের সবকিছু মিস করবো।”
সবচেয়ে বড় কথা, সম্পূর্ণ মহাশূন্যে একনাগাড়ে ভাসমান অবস্থায় থাকা সুনিতা মাধ্যাকর্ষণ শূন্য মহাকাশকে নিজের পরিবার বানিয়ে নিয়েছিলেন।
রহস্যে ভরপুর বিস্তীর্ণ মহাকাশও কি সুনীতাকে মিস করবে না?
মহাকাশ থেকে সুনিতা বিজ্ঞান গবেষণায় বহু কিছু নতুন নতুন তথ্য পেয়েছেন। যেগুলি বিশ্বের উত্তরসূরিদের প্রভূত উন্নয়ন করতে পারবে।
নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগস:-

-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ