সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর, নারী ও শিশু, বাংলাদেশ, রাজনীতি, সিদ্ধিরগঞ্জ
বিএনপিতে ‘গণতন্ত্র’ নাই, কেন্দ্র নেতা দেয় আমরা দাসত্ব করি: গিয়াস উদ্দিন

প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৪:৪৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫ ৩০ বার পড়া হয়েছে

মোঃ লিটন চৌধুরী, সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি।।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, বিএনপিতে ‘গণতন্ত্র’ নাই। কেন্দ্র নেতা দেয় আমরা দাসত্ব করি। টাকা হলে মনোনয়ন পাওয়া যায়। বহিষ্কার হতে পারি। আমি কেয়ার করি না। তার এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এদিকে, দলের পদে থেকে দলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে নেতাকর্মীদের কাছে ক্ষমা চাইতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন যুবদলের নেতৃবৃন্দ।
এ ছাড়া চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বুধবার ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি’র একাংশের উদ্যোগে আয়োজিত নৌ-বিহারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গিয়াস উদ্দিন এসব কথা বলেন। সেই ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘বিএনপি’র গঠনতন্ত্রে কি বলে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই দল গঠন হবে, পরিচালিত হবে। সেটা কি চলে? একদম স্পষ্ট না।
যদি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই দল চলতো, তাহলে যেই নেতাকর্মীরা হতাশ, যারা দুঃখ বেদনা বুকে জ্বালা নিয়ে বক্তব্য দেয়, সেটা থাকতো না। কারণ আপনার নেতাকে নির্বাচিত করার ক্ষমতা যদি আপনার থাকতো আপনার ভোটে যদি সর্বস্তরে নেতৃত্ব তৈরি হতো, আপনাকে মর্যাদা দিতে নেতা বাধ্য হতো। নেতা ইচ্ছামতো দলকে পরিচালনা করতে পারতো না। নেতা ইচ্ছা করলে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে পারতো না।
এই গণতন্ত্রটা নাই বলে আজকে প্রকৃত নেতার কোনো মূল্য নাই। এবং নেতা যারা হয় তারা হয়ে যায় শাসকের মতোই স্বৈরতান্ত্রিক। আমার যা ইচ্ছা তাই করবো, জবাবদিহিতা করার তো কোনো জায়গা নাই। সেই জন্য যা ইচ্ছা তাই করে। দলের ভেতর গণতন্ত্র থাকবে না, আর সারাদিন চিৎকার করবো রাষ্ট্রে গণতন্ত্র চাই। এই চাইলেই হয়ে যাবে? এই চাওয়াটাও তো অন্যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিজের দলে গণতন্ত্র নাই আর রাষ্ট্রের কাছে গণতন্ত্র চাই। এটা হতে পারে না। গঠনতন্ত্র তৈরি হয়েছে দল পরিচালনা করার জন্য। সেখানে লেখা হয়েছে সর্বস্তরের কমিটি নির্বাচিত হতে হবে কাউন্সিলারের ভোটের মাধ্যমে। এই যে অধিকার আমাদেরকে না দিয়ে অ্যাপয়েন্টেড নেতাকর্মী বানানো হয়। কেন্দ্র থেকে নিয়োগ দেয়া হয়। যেন আমরা চাকরি করি। কারও গোলামি করি। দাসত্ব করি।
নিয়োগ দেয়া হলে ওই বাড়িতে ফুল দিয়ে ভরে যায়। কারণ সে তো অ্যাপয়েন্টেড হয়েছে তার বাড়িতে ফুল নিয়ে যাবে, সে যেন আবার কোন একটা পদ অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে পারে। নির্লজ্জ বেহায়ার মতো অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে জুনিয়রের কাছে গিয়ে ফুল দিতে হয়।
তোষামোদি করতে হয়। এই অবস্থা চলতে পারে না একটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে। আজকে আপনাদের সামনে আমি খোলাখুলি আলাপ করছি, এজন্য আমি বহিষ্কার হতে পারি- ‘আই ডোন্ট কেয়ার’। আমি এটাকে কেয়ার করি না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। জীবনবাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছি।
এই রাজনীতি কারও কাছে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য না, কারও কাছে মালিকানাস্বত্ব্ব দেয়ার জন্য না। সৎ মানুষের নেতৃত্বে তখনি প্রতিষ্ঠিত হবে যখন কর্মীরা ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করতে পারবে।’ মনোনয়ন প্রসঙ্গে জেলা বিএনপি’র সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘দলের মনোনয়ন নিয়ে কি হয় আপনারা জানেন? মনোনয়ন বিক্রি হয়। কোটি কোটি টাকা মনোনয়ন বিক্রি হয়।
এই দেশ এজন্য আমরা স্বাধীন করেছি? এজন্য আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করি? নিশ্চয়ই না। ভালো মানুষের কোনো অভাব নেই বিএনপি বা অন্য দলে। কিন্তু টাকা না থাকলে সমস্যা। সে নমিনেশন পাবে না। কারণ কি টাকার গাট্টি নিয়ে দিতে হবে। বিক্রি হয় নমিনেশন।
এমন রাজনীতি যদি থাকে তাহলে বাংলাদেশের আকাশে কখনো নতুন সূর্য উদয় হবে না।’ এদিকে দলের বিরুদ্ধে গিয়াসউদ্দিনের এমন বিষোদগারকে ঘিরে চরম ক্ষোভ মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে। শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদ দলের বিরুদ্ধে গিয়াসউদ্দিন এমন বক্তব্য দেয়ায় তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। তিনি বলেন, বিএনপি’র সাবেক এই এমপি বলেছেন বিএনপিতে নাকি ‘গণতন্ত্র’ নাই, আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হলো বিএনপি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া দল। তিনি ছিলেন এদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। আমাদের আদর্শের জননী হলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
উনাকে এদেশের গণতন্ত্রকে পূর্ণ উদ্ধার করার জন্য ৮০ বছর বয়সেও কিন্তু জেল খাটতে হয়েছে। আমরা কিন্তু তার মুক্তির জন্য কাঁধে কাঁধ রেখে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আপনাকে যখন জেলা বিএনপি’র দায়িত্ব দেয়া হলো তখন কিন্তু আপনি এই কথা বলেননি। আপনাকে যখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি করা হয়েছিল তখনো আপনি কিছু বলেননি।
কি উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি এই কথা বলেছেন আপনাকে অবশ্যই দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দলীয় সাধারণ নেতাকর্মীদের কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। দলকে নিয়ে খেলা করার কারও অধিকার নাই। আমি হই কিংবা যেই হোক। এ বিষয়ে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ জানান, তিনি (গিয়াসউদ্দিন) যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার ব্যক্তিগত এবং দলীয় গঠনতন্ত্র বিরোধী।
সে দলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সংবাপত্রের মাধ্যমে জেনেছেন। দলীয় শীর্ষ নীতি নির্ধারকরাই তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।