রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর হত্যাকান্ডে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের নির্দোষ’ উল্লেখ করে তাদের বিনা বিচারে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত এক জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব দাবি জানান।
বিডিআর হত্যাকান্ডে দেশের বাইরের একটি প্রশিক্ষিত ও প্রাতিষ্ঠানিক বাহিনীর লোকজন জড়িত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, পিলখানায় যারা শাহাদাত বরণ করেছে তাদেরকে তো ফেরত আনতে পারবো না। আর যারা এখন জেলে আছে তাদের ব্যাপারে কোনো কথাবার্তা শুনতে আমরা চাই না। বিডিআর হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, বিডিআর হত্যা দিবস আজ। দীর্ঘদিন জেল খাটার সুবাদে বিডিআরের যারা বিনা অপরাধে জেলে আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। আমরা জেনেছি, ওইদিন বাইরের একদল সন্ত্রাসী অথবা প্রশিক্ষিত প্রাতিষ্ঠানিক লোকেরা বিডিআরকে হত্যা করেছিল। প্রশিক্ষিত এবং প্রাতিষ্ঠানিক লোক, একটি বাহিনীর লোক, যারা এইদেশের লোক নয়, বিদেশ থেকে তাদের এনে আমার দেশের বিডিআরের সেনা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এই হত্যাকা-ের আজও হলো না।
যাদের বিচার হয়েছে, অনেকে ফাঁসির আদেশ নিয়ে জেলে আছেন, তারা সকলেই নির্দোষ। তারা কেউ দোষী নয়। জেলের ভেতরে তাদের কান্না দেখে আমরা আমাদের চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারি নাই।
এসময় নিহত বিডিআর অফিসারদের আত্মার মাগফেরাত ও পরিবারের লোকজনের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, যারা বিনা অপরাধে ১৪/১৫ বছর জেলে পড়ে মরছে তাদের কেন ছাড়া হচ্ছে না জানি না।
আওয়ামী লীগ ছাড়ে নাই তাদের কারণে কিন্তু এই সরকার কেন ছাড়ছে না, তা আমি জানি না। আমার দাবি, যারা বেঁচে আছেন তাদের অবিলম্বে জেলখানার গেট খুলে দিয়ে বিনা বিচারে মুক্ত করা হোক। তাদের কোনো সাজার প্রয়োজন নাই। যথেষ্ট সাজা তাদের হয়েছে।
দেশে চলমান অস্থিরতা পরিস্থিতিতে চুরি ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাট বেড়ে গেছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, এইগুলো কারা করছে এইটা আপনারা জানেন। যারা বলে, দিনের বেলায় যদি হাঁটতে না পারি, রাতের বেলায় কাউকে ঘুমাতে দেবো না। ভারতে বসে বসে আওয়ামী লীগ ও তাদের দালাল চক্র, যারা এই দেশেকে লুট করেছে, মানুষকে খুন করেছে, এখনও চক্রান্ত করছে কীভাবে এই দেশকে অশান্ত করা যায়। যত চক্রান্তই করেন না কেন এই দেশের মানুষের ঐক্য কখনও ভাঙতে পারবেন না। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের এত সহজে ছেড়ে দেবে না।দ্রব্যমূল্য কমানো, চুরি ছিনতাই, লুটতরাজ বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকরী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, এই সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন আমরা সবাই তাদেরকে সমর্থন দিয়েছিলাম। এই সরকার ব্যর্থ হলে এদেশের মানুষ ব্যর্থ হয়ে যাবে। সুতরাং সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আমরা নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করবো কিন্তু আজীবন নয়। আজীবন আমরা কোনো ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করবো না।”
বিএনপির জনপ্রিয়তাকে ধ্বংস করার জন্য একশ্রেণির লোক মাঠে নেমেছে, বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে এ বিএনপি নেতা বলেন, দেশে শৃঙ্খলা বজায় রাখুন এবং কোনো রকমের অপকর্মে লিপ্ত হবেন না। কিন্তু আপনারা অনেকে তা শুনছেন না। এতে দলের বদনাম হচ্ছে। অপকর্ম করছে আরেকজন কিন্তু নাম হচ্ছে বিএনপির। এইটা আপনারা খেয়াল রাখবেন।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “সংস্কার সংস্কার করে আপনারা কান ঝালা-ফালা করে ফেলেন। সংস্কার কী করছেন আমি জানি না। কিন্তু হাতের সামনে যে সংস্কার আছে সেটি কেন করেন না, আমি এইটাও বুঝি না। আওয়ামী লীগের দোসর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে আপনারা ভাঙেন নাই। মামলা থাকার পরও তাদের গ্রেপ্তার করেন নাই। এই সিন্ডিকেটের লোকজন লুটেরার সঙ্গে ছিল। এই সিন্ডিকেটের লোকজন দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে রেখেছে, কমতে দিচ্ছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিবেন ততদিন দ্রব্যমূল্য কমবে না।
বর্তমান সরকারের এই সমস্ত বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে বিএনপির সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন নয়। ১৭ বছর রাজপথে লড়াই করেছি, আমাদের ৫ হাজার নেতা জীবন দিয়েছে। হাজার হাজার কর্মী আহত অবস্থায় আছে। আমি নিজে ১৩ বার জেল খেটেছি। এই মঞ্চে সবাই মামলা খেয়েছে। এইটা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য নয়, এইটা করেছি সংসদ নির্বাচনের জন্য।
কোনো দল বা গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, একদল লোক বলে, যারা নির্বাচনের কথা বলে তারা নাকি জাতির শত্রু। তাহলে একটা কাজ করেন, বলে দেন, বাংলাদেশে আর নির্বাচনের প্রয়োজন নাই। যেমনি হাসিনা করেছিল, তেমনি আপনিও থাকেন। দেখা যাক থাকতে পারেন কিনা। গণতন্ত্রের জন্য এই দেশের মানুষ লড়াই করেছে। গণতন্ত্র আমরা চাই। আমরা কথা বলতে চাই, ভোটের অধিকার চাই।”
যারা স্থানীয় নির্বাচন আগে চান তাদের উদ্দেশ্য দূরভিসন্ধিমূলক, ষড়যন্ত্রমূলক। কোনো পরিস্থিতিতে দেশের মঙ্গল আপনারা চান না, যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, দেশে অনেক কিছু হচ্ছে। তার একটাই কারণ হচ্ছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তাদের অনেক সুবিধা হয়। কারণ, গ্রামে-গঞ্জে অনেকের পায়ের তলায় মাটি নাই। তাই এই স্থানীয় নির্বাচন করে পায়ের তলায় মাটি তৈরি করতে চাচ্ছে। ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়তে হয় না। ঘোড়ার পরে গাড়ি জুড়লে গাড়ি চলবে ভালো। জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের আহ্বান জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জে নবাব সলিমুল্লাহ সড়কের উপর মিশনপাড়া অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি এ জনসমাবেশের আয়োজন করেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মিছিল ও জমায়েতের কারণে শহরে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। আশেপাশের কয়েকটি সড়কে তীব্র যানজটে ভয়াবহ জনদূর্ভোগ দেখা যায়।
সমাবেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সভাপতিত্ব ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীবের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহম্মেদ টিুট, কেন্দ্রীয় সহ অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু, সোনারগাঁ বিএনপির সভাপতি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান, রেজাউল করিম, কাজী মনিরুজ্জামান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ খান টিপু, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেক, সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি প্রমুখ।