বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার বর্তমান পরিস্থিতি ও কুফল
- আপডেট সময়- ০৫:৪৯:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫ ৬৪ বার পড়া হয়েছে
খন্দকার তাইকুল আলম,ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়।।
বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের যুবসমাজের মধ্যে অনলাইন জুয়া একটি উদ্বেগজনক আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। এদেশের খেলাধুলা প্রেমি যুব সমাজের জন্য যা একটি মহামারী বটে। যদিও অনলাইন জুয়া বাংলাদেশের আইনে নিষিদ্ধ, তথাপি প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এ কার্যকলাপের সাথে যুক্ত বলে বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। ১৮৬৭ সালের ‘পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট’ অনুযায়ী সমস্ত ধরনের জুয়া নিষিদ্ধ হলেও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে জুয়া খেলার জন্য আলাদা কোনো নিয়ম নেই, যা আইনের ফাঁক তৈরি করেছে। ১৫০ বছরের পুরনো একটি আইন বর্তমানে কতটা অকেজো তা বলা বাহুল্য।
আইনের দুর্বলতা এবং প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের বর্তমান আইন যুগোপযোগী নয়। ১৮৬৭ সালের আইনটি প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে মানানসই নয় বলে অনলাইন জুয়া রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রায় ৩৩১টি জুয়ার সাইট ব্লক করলেও নতুন সাইট গজিয়ে ওঠার কারণে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। সেই সাথে সাইবার নিরাপত্তা আইনের দুর্বলতা এবং আন্তর্জাতিক সাইটগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
অনলাইন জুয়ার কুফল
১. আর্থিক ক্ষতি: জুয়া আসক্তির ফলে অনেক মানুষ তাদের সঞ্চয় হারাচ্ছে এবং ঋণগ্রস্ত হচ্ছে।
২. সামাজিক বিপর্যয়: পরিবারের মধ্যে অশান্তি, বিচ্ছেদ এবং অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।
৩. মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা: জুয়া খেলায় আসক্তরা হতাশা, উদ্বেগ এবং ডিপ্রেশনে ভুগছে।
৪. অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন: অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে অবৈধ অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়নের ঝুঁকি রয়েছে।
সম্ভাব্য সমাধান
১. আইন সংস্কার: অনলাইন জুয়ার জন্য একটি আধুনিক আইন প্রণয়ন করে স্পষ্ট নিয়মাবলী ও শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
২. ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম: উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে জুয়া সাইটগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
৩. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: অনলাইন জুয়ার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে গণমাধ্যম এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
৪. আর্থিক নিয়ন্ত্রণ: ব্যাংক এবং মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসগুলোকে কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের আওতায় এনে সন্দেহজনক লেনদেন বন্ধ করতে হবে।
৫. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সীমান্ত পারাপারের অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার বিস্তার রোধে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। আইন সংস্কার, প্রযুক্তি ব্যবহারের উন্নয়ন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। অন্যথায় এর কুফল আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
নিউজটি শেয়ার করুন
-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ