সর্বশেষ:-
মুন্সীগঞ্জের শ্রম বিক্রির হাটে কাজের সন্ধানে শত শত নারী-পুরুষ
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৫:৩০:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮ বার পড়া হয়েছে
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।।
বালিগাঁও বাজারটি পড়েছে মুন্সীগঞ্জের টংঙ্গীবাড়ী ও লৌহজং উপজেলার সীমানায়।ভোরে ওই বাজারে সড়কের দুই পাশে কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষের জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য চোখে পড়ল।দুর থেকে দেখলে মনে হবে কিছু একটা হয়েছে সেখানে।কাছে গিয়ে জানা গেলো,সেখানে আসলে তেমন কিছুই হয়নি।মানুষের ভিড় থাকা স্থানে দাঁড়িয়ে আছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকেরা।গ্রামে কাজ না থাকায় পরিবারের অভাব-অনটন মেটাতে কাজের সন্ধানে নিজের জেলা ছেড়ে এখানে এসেছেন তারা। প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবার(১২ ডিসেম্বর) সকালেও শ্রম বিক্রির হাট বসেছে দুই উপজেলার মধ্যস্থল বালিগাঁও বাজারের ওপর দিয়ে বয়ে চলা সড়কে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়,টংঙ্গীবাড়ীর বালিগাঁও বাজারের মতো মুন্সীগঞ্জ জেলার ৬৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ও হাট-বাজারগুলোতে প্রতিদিন ভোরে নীলফামারী, গাইবান্ধা,দিনাজপুর, রংপুর,কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত নারী-পুরুষ শ্রমিকের শ্রম বিক্রির হাট বসে। চুক্তি অনুযায়ী অথবা দিন প্রতি পারিশ্রমিকে চুক্তিবদ্ধ হয়েই আলু রোপণ করার কাজ করে থাকেন এসব শ্রমিকেরা।স্থানীয় শ্রমিক সঙ্কটের কারনে কৃষকরাও উত্তরবঙ্গের এসব শ্রমিকদের পেয়ে আলু রোপণ কাজে তাদেরকে সম্পৃক্ত করছেন।আর এই শ্রমিকরাই কয়েক মাস পর জমি থেকে আলু উত্তোলন শেষে তা বস্তায় ভরে হিমাগারে ও কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে থাকেন।তাই জেলার গ্রামে গ্রামে এখন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের পদচারণায় মুখর।সরেজমিনে বৃহস্পতিবার(১২ ডিসেম্বর)বাজারে গিয়ে দেখা গেছে,ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল পৌনে ৬টা। মুন্সীগঞ্জের টংঙ্গীবাড়ীর বালিগাঁও বাজারে সড়কের দু’পাশে দেখা গেল অসংখ্য নারী-পুরুষের জটলা। কৃষি জমির মালিকদের সঙ্গে দেনদরবারে ব্যস্ত শ্রমিকরা।কেউ পেশাদার,কেউবা আবার অপেশাদার শ্রমিক হিসেবে এ শ্রম বিক্রির হাটে এসেছে।তারা একেকজন একেক পেশায় শ্রমিক বা দিনমজুর।এখান থেকে কেউ একজন,কেউ আবার একের অধিক শ্রমিক দর কষাকষির মাধ্যমে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পারিশ্রমিকে কিনে নিচ্ছেন।কেউ বাড়ির কাজে,কেউ খেত-খামারে,কেউবা আবার আলু রোপণ করবে।জানা গেছে,মাত্র দেড় থেকে দুই ঘণ্টা হাট বসে জেলার বিভিন্ন বাজারে।বালিগাঁও ছাড়াও টংঙ্গীবাড়ীর দিঘিরপাড় বাজার,আলদী বাজার,হাসাইল বাজার,বেতকা বাজার,মুন্সীগঞ্জ সদরের মুক্তারপুর,মুন্সীরহাট বাজার,চিতলিয়া বাজার,চরডুমুরিয়া বাজার,শিলই,বাংলাবাজার, মদিনা বাজার,গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড,সিরাজদীখান উপজেলার নিমতলা, ইছাপুরা চৌরাস্তা, বালুচর,লৌহজংয়ের হলদিয়া বাজার,মাওয়া চৌরাস্তা ও শ্রীনগর উপজেলার চকবাজারসহ একাধিক স্থানে।এসব হাটে দৈনিক চুক্তির বাইরেও কোনো শ্রমিক সাত দিনের জন্য, কেউ আবার এক মাসের জন্য কৃষকের সঙ্গে চলে যান।আবার কেউ কেউ বিক্রি হন পুরো মৌসুমের জন্য।কৃষকরা জানান,শুধু আলু তোলা নয়,অন্যান্য ফসলের কাজে তাদের শ্রম কাজে লাগে।হিসাবে মিললেই মাঠের কাজে ছোটেন এসব শ্রমিক।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,আলু আবাদ মৌসুম এলেই দিনাজপুর,গাইবান্ধা,নীলফামারী, ময়মনসিংহ,রংপুর,কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক আসে মুন্সীগঞ্জ জেলায়।আর আগত এসব শ্রমিকরা আলু রোপণ কাজে যুক্ত হতে প্রতিদিন ভোরে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে জড়ো হচ্ছেন।চুক্তি হওয়ার পর তারা কৃষকের সঙ্গে জমিতে চলে যাচ্ছেন কাজের জন্য।
গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর থেকে আসা শ্রমিক তাইবুর হোসেন বলেন,বর্তমানে আমাদের গ্রামের বাড়িতে কোনো কাজকর্ম নেই।তাই মুন্সীগঞ্জে এসেছি আমরা ছয়জন।এক আলু চাষির সঙ্গে কথা হয়েছে।তিনি এক মাসের জন্য আমাদের নিবে এবং প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে দিবে।রৌমারী থেকে আসা সুজন মিয়া বলেন,কৃষি কাজই আমাদের আয়ের একমাত্র মাধ্যম।এই সময়টাতে আমাদের ওখানে কোনো কাজ থাকে না।তাই সিরাজদিখানে এসেছি। কয়েকজনের সঙ্গে দরকষাকষি চলছে।ইমামগঞ্জ এলাকার আলু চাষি মনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে শ্রমিক সংকট,তাই নিমতলা এসেছি।আলুর জমি প্রস্তুত করার জন্য ১০ জন শ্রমিক নিয়েছি।থাকা ও খাওয়াসহ দিন হাজিরা ৫০০ টাকা।সিরাজদিখানের ইছাপুরার আলুচাষি ইসমাইল মিয়া বলেন,একজন শ্রমিক প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান।ইছাপুরা ইউনিয়নের ইছাপুরা চৌরাস্তা থেকে আলু রোপণ করার জন্য ৬ জন শ্রমিক নিয়েছি।একই উপজেলার নিমতলা এলাকার আলু চাষি তোফাজ্জল হোসেন বলেন,আমার জমিতে আলু রোপণ করতে উত্তরবঙ্গের শ্রমিক নিয়োগ করেছি। আমাদের এ অঞ্চলে শ্রমিক সংকট,তাই নিমতলা হাটে আলুর রোপণের জন্য ২০ জন শ্রমিক নিয়েছি। থাকা-খাওয়াসহ দিন হাজিরা ৫০০ টাকা।ইছাপুরার আলুচাষি কাজল বেপারী বলেন,একজন শ্রমিক প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান। ইছাপুরা ইউনিয়নের ইছাপুরা চৌরাস্তা থেকে আলু রোপণের জন্য ৬ জন শ্রমিক নিয়েছি।থাকা-খাওয়াসহ দিনপ্রতি ৫০০ টাকা করে প্রত্যেককে দিতে হবে।বরিশাল থেকে আশা অপর শ্রমিক দেলোয়ার মিয়া বলেন,বর্তমানে আমাদের গ্রামের বাড়িতে কোনো কাজকর্ম নেই।তাই কাজের জন্য এই এলাকায় এসেছি ৬ জন মিলে।এক আলু চাষির সঙ্গে কথা হয়েছে।তিনি এক মাসের জন্য আমাদের নিবেন দৈনিক ৫০০ টাকা করে দিবে বলেছেন।
মাদারীপুর থেকে আসা রাজন বেপারী বলেন, কৃষিকাজই আমাদের আয়ের একমাত্র মাধ্যম।এই সময়টাতে আমাদের ওখানে কোনো কাজ থাকে না। তাই সিরাজদিখানে এসেছি।কয়েকজনের সঙ্গে দরকষাকষি চলছে।মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন,এ মৌসুমে জেলায় ৩৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।ইতিমধ্যে জেলার বিস্তীর্ণ জমিতে আলু রোপণের উৎসব চলছে।তিনি আরো বলেন,এ জেলার বিভিন্ন বাজারে শ্রম বিক্রির হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা শ্রমিকেরা প্রতিদিন সকালে কৃষকের সঙ্গে চুক্তি করে তারা তাদের শ্রম বিক্রি করছেন।
নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগস:-
-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ