মুসলিম উম্মাহ্’র জন্য সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম দিন জুমাবার
- আপডেট সময়- ০৭:০৪:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮ বার পড়া হয়েছে
অনলাইন নিউজ ডেস্ক।।
জুমার দিন সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম দিন। সপ্তাহের ঈদের দিন। ইসলামে এ দিনের গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে। সব দিনের মধ্যে জুমাবারকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন মহান আল্লাহ তাআলা। কোরআন ও হাদিসে এ দিনের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। ৪০টিরও বেশি হাদিসে জুমার প্রসঙ্গ এসেছে। এতে জুমার রাত-দিনের ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পাপমোচনের পাশাপাশি পুণ্যদানের ঘোষণাও এসেছে এ দিনের বিশেষ বিশেষ আমলের ব্যাপারে।
হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সকাল সকাল গোসল করবে এবং (স্ত্রীকেও) গোসল করাবে, এরপর ইমামের কাছে গিয়ে চুপচাপ বসে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনবে, সে প্রতি কদমের বিনিময়ে এক বছরের নফল রোজা ও নামাজের সওয়াব লাভ করবে।’ (তিরমিজি ৪৯৬)
এ ছাড়া দিনটি কালের বহু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত। হাদিসে এসেছে, ‘বিশ্বজগতের সৃষ্টি ছয় দিনে হয়েছে। এর শেষ দিনটি ছিল জুমার দিন।’ (সহিহ মুসলিম ২৭৮৯)
আরও এসেছে, এ দিনেই আল্লাহতায়ালা আদম (সা.)-কে সৃষ্টি করেন, এ দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং এ দিনেই তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেন। আর কেয়ামত এ দিনেই সংঘটিত হবে।’ (সহিহ মুসলিম ৮৫৪)
পবিত্র কোরআনেও জুমা প্রসঙ্গে তাগিদ এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য ডাকা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং কেনা-বেচা ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমুআ ৯)
উল্লিখিত আলোচনায় জুমার দিনের ফজিলত ও গুরুত্বের বিষয়টি স্পষ্ট। প্রশ্ন হলো জুমার দিনকে আল্লাহতায়ালা এত মর্যাদা দিলেন কেন? এতসব গুরুত্বপূর্ণ কাজই বা কেন এ দিনেই তিনি করলেন? এ প্রশ্নের উত্তর আল্লাহই ভালো জানেন। শুধু এ বিষয়টি নয়; বরং আল্লাহর সৃষ্টি জগতের পুরো পদ্ধতির ব্যাপারে একই কথা। তিনি এক স্থানকে আরেক স্থানের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। এক সৃষ্টিকে আরেক সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। একজন মানুষকে আরেকজন মানুষের ওপর সম্মান দিয়েছেন। যেমন মক্কা-মদিনা ও বায়তুল মোকাদ্দাসসহ এর আশপাশের অঞ্চলকে সারা পৃথিবীর ওপর মর্যাদা দিয়েছেন। মানুষকে সমগ্র সৃষ্টির ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে সব মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন ইত্যাদি। তিনি কেন এমন করলেন, এসব বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। একবার মক্কার মুশরিকরা এ ধরনের একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল। তারা বলেছিল, ‘এ কোরআন কেন দুই জনপদের কোনো প্রতাপশালী ব্যক্তির ওপর নাজিল করা হলো না?’ (সুরা জুখরুফ ৩১) অর্থাৎ কোরআন আরবের দুটি বড় শহর মক্কা ও তায়েফের কোনো প্রধান ব্যক্তির ওপর কেন নাজিল হলো না? এরূপ হলে কোরআনের প্রতি যথাযথ সম্মান তারা দেখাত। কিন্তু এর বিপরীতে কোরআন একজন পিতৃহীন দরিদ্র মানুষের ওপর নাজিল হয়েছে, যা তাদের আত্মমর্যাদায় লেগেছে! তাদের এসব আপত্তির উত্তরে আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ‘আর তোমার ররেব যা ইচ্ছা তিনি তাই সৃষ্টি করেন এবং যাকে খুশি তাকেই মনোনীত করেন। এতে তাদের কোনো এখতিয়ার নেই।’ (সুরা কাসাস : ৬৮)
অর্থাৎ এসব বিষয় আল্লাহতায়ালা কাউকে বলে-কয়ে করেন না। তিনি তার প্রজ্ঞা বলেই করেন। আর এসব প্রশ্ন করে লাভও নেই। কারণ জুমাবারকে শ্রেষ্ঠত্ব না দিয়ে অন্য কোনো দিনকে দিলেও একই প্রশ্ন আসত। সব বিষয়ের ক্ষেত্রে একই প্রশ্ন ঘুরিয়ে করা যেত। তবে সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে একটি দিন বিশেষ থাকার দরকার আছে। যে দিনটিতে মুমিনরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর ইবাদত করবে। নিজেদের পরস্পরের খোঁজ-খবর নেবে। একে অন্যের সঙ্গে ভালোবাসা বিনিময় করবে। সর্বোপরি ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। তা ছাড়া এক সময় ইসলামি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ফরমা নাদিও জুমার বয়ানের মধ্য দিয়ে বলে দেওয়া হতো। এসব কারণগুলোকে কেন্দ্র করে সপ্তাহে বিশেষ একটি দিন মুসলমানদের জন্য প্রয়োজন ছিল। সে দিনটি নির্ধারণ করণে আল্লাহতায়ালা বিশেষ ঘটনাপ্রবাহের দিকে লক্ষ্য রেখে জুমার দিনকে ধার্য করেছেন।
(সংগৃহীত)
নিউজটি শেয়ার করুন
-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ