সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, দূর্নীতি দমন কমিশন(দুদক), দেশজুড়ে, দোয়ারাবাজার, নারী ও শিশু, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পুলিশ, মৌলভীবাজার, রাজনীতি, সিলেট
সাবেক কৃষিমন্ত্রী শহীদদের সম্পদের পাহাড়
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৫:০৯:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪ ৫৫ বার পড়া হয়েছে
তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।।
স্ত্রী ও সন্তানদের নামে বাড়ি, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আটটি অ্যাপার্টমেন্ট, মার্কেট ও বাগানবাড়িসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের ৭ বারের সাবেক সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুুস শহীদ। কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে তৈরি করেছেন চা-বাগান। সেখানে সরকারি খরচে বিদ্যুতের লাইন টেনে সেচের জন্য বসিয়েছেন এক ডজনের বেশি গভীর নলকূপ। হাইল-হাওর ও বাইক্কা বিলের পাশে প্রায় ২৭ বিঘা জমিতে করেছেন মৎস্য খামার। কমলগঞ্জের কাঁঠালকান্দিতে ৮ একর পাহাড়ি জমিতে গড়ে তুলেছেন বাগানবাড়ি।
আব্দুস শহীদ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত ভবনের নামকরণ করেছেন নিজের নামে। এ ছাড়া তার প্রভাব কাজে লাগিয়ে স্বজনরাও হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
হলফনামায় সম্পদের তথ্য : ২০০৮ সালে হলফনামায় স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে ৮৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭০৭ টাকার সম্পদ দেখান আব্দুস শহীদ।
২০২৩ সালের হলফনামায় তা হয়েছে ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯০৮ টাকা। পাঁচ বছর আগেও স্ত্রী উম্মে কুলসুমার কোনো সম্পদ ছিল না। কিন্তু ২০২৩ সালে গৃহিণী উম্মে কুলসুমার ১০০ ভরি স্বর্ণ, নগদ ৪ লাখ টাকা, বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ারে ১ লাখ ৩৬ হাজার এবং অকৃষি জমির পরিমাণ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা উল্লেখ রয়েছে।
লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনভূমিতে চায়ের বাগান : ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর চিফ হুইপের দায়িত্ব পান আব্দুস শহীদ। বন বিভাগ সূত্র জানায়, সে সময় তিনি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের স্টুডেন্ট ডরমিটরির পাশে কিছু জমি স্বল্পমূল্যে কিনে ‘সাবারি টি প্ল্যান্টেশন’ নামে একটি চা-বাগান গড়ে তোলেন। তখন অভিযোগ ওঠে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মো. আব্দুুস শহীদ নিজের কেনা স্বল্প জমির সঙ্গে লাউয়াছড়া উদ্যানের অনেকটা দখল করে চা বাগানটিতে যুক্ত করেছেন। তিনি এবং আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বনের জমি দখল করেছেন- এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে বন বিভাগ লাউয়াছড়া বনের জমির সীমানা চিহ্নিতকরণের উদ্যোগ নেয়। তবে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও অদৃশ্য কারণে বন বিভাগ লাউয়াছড়া বনের জমি পরিমাপ করতে পারেনি।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃৃতি সংরক্ষণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনেক বছর ধরে ক্ষমতাবান সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ অবৈধভাবে লাউয়াছড়া বনের জমি দখলে রেখেছেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সবখানেই তার একচ্ছত্র প্রভাব বিদ্যমান ছিল। সে কারণে ২০১৮ সাল থেকে বন বিভাগ একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও বনের জমি উদ্ধার করতে পারেনি।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০১৮ সালে প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিমাপ শুরুর পর বন বিভাগ এ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। সে সময়ে লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তাকে ক্ষমতাধররা হুমকি-ধমকি দেয়। ওই মহলের হুমকির কারণে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কিছুদিন পর এ বনবিট থেকে বিদায় নেন।
ক্ষমতার কাছে কুলিয়ে ওঠেনি বন বিভাগ : বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুুস শহীদের দখলে লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনের বেশকিছু জমি রয়েছে। এতদিন তার ক্ষমতার দাপটে আমাদের পক্ষে ওই জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি দল প্রাথমিকভাবে প্রায় পাঁচ একর বনের জমি উদ্ধার করে পুনরায় বন বিভাগের অধীনে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, লাউয়াছড়া বনের জমি পরিমাপের পর আর যদি কোনো জমি সাবেক কৃষিমন্ত্রীর বা অন্য কারও দখলে থেকে থাকে, তবে সেগুলোও উদ্ধার করা হবে।’
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সাবেক কৃষিমন্ত্রীর দখলে কী পরিমাণ জমি রয়েছে, তা ডিমারকেশনের (সীমানা চিহ্নিতকরণ) পর নিশ্চিত হতে পারব। তবে আমরা আমাদের লাউয়াছড়া স্টুডেন্ট ডরমিটরির পাশে অবস্থিত প্রায় ৫ একরের বেশি জমি সাবেক কৃষিমন্ত্রীর দখল থেকে উদ্ধার করেছি। সেখানে বন্যপ্রাণীর খাদ্যোপযোগী নানা জাতের গাছের চারা রোপণ করেছি। লাউয়াছড়াকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিমাপ করে দখলমুক্ত করা হবে।’
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান নিয়ন্ত্রণ : লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সহব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদ দীর্ঘদিন পর্যায়ক্রমে দখলে রেখেছেন তার দুই ভাই। মোসাদ্দেক আহমদ মানিক নামের এক ভাই এখনও দায়িত্বে আছেন বলে জানান রেঞ্জ অফিসার শহীদুল ইসলাম। অন্য ভাই ইফতেখার আহমেদ বদরুল একাধিকবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতার দাপটে।
বেগমপাড়ায় বাড়ি স্ত্রীর নামে : সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ আইন লঙ্ঘন করে নানা দুর্নীতি-অনিয়মের প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আখতারুল ইসলাম সম্প্রতি জানিয়েছেন, তদন্তে সাবেক মন্ত্রী আব্দুস শহীদ, তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি-ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য সম্পদের তথ্য মিলেছে। কানাডার ‘বেগমপাড়ায়’ স্ত্রীর নামে বাড়ি ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশে তাদের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ রয়েছে।
নামের ‘কাঙাল’: শুধু সম্পদ নয়, নামেরও ‘কাঙাল’ আব্দুস শহীদ। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি অর্থায়নে একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হলেও, তাতে নামকরণ করেছেন তিনি। কমলগঞ্জ সরকারি গণমহাবিদ্যালয়, সুজা মেমোরিয়াল কলেজ শমশেরনগর, পতনঊষার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কমলগঞ্জ মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মুন্সিবাজার কালিপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবনের নামকরণ করা হয়েছে উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের নামে।
প্রসঙ্গত- প্রভাবশালী এই নেতাকে গত মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তার বাসা থেকে নগদ ৩ কোটি টাকার বেশি, আট দেশের বিপুল মুদ্রা ও ৮৫ ভরি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। পরে আদালত দশ দিনের রিমান্ড চাইলে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।