দীপ্ত টিভির তামিম হত্যাকান্ডে বিএনপি নেতা রবি ও মাদক কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা মিলেছে
- আপডেট সময়- ০৩:৫৭:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪ ৭৯ বার পড়া হয়েছে
অনলাইন ডেস্ক।।
পশ্চিম রামপুরায় ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে জমির মালিকের ছেলে তানজিল জাহান ইসলাম তামিম হত্যার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে আবাসন প্রতিষ্ঠান প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেডের কর্ণধার ও বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলম রবি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মামুনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ।
উক্ত ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৬ জনের নামে নিহতের বাবা সুলতান আহমেদ বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যারমধ্যে এক নম্বর আসামি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মামুন ও তিন নম্বর আাসামি বিএনপি নেতা ও প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেডের কর্ণধার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় শেখ রবিউল আলম রবি।
এখন পর্যন্ত ৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির হাতিরঝিল থানা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন, মো. আবদুল লতিফ, মো. কুরবান আলী, মাহিন, মোজাম্মেল হক কবির ও বাঁধন।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে গ্রেপ্তার ৫ আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তাদের ৪ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মো. রুহুল কবির খান বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. মামুন এবং প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেডের কর্ণধার ও বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলম রবির প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। জমির মালিককে প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেডের ৫টি ফ্ল্যাট দেয়ার চুক্তি থাকলেও, তারা দুটি হস্তান্তর করেছে। বাকি তিনটির মধ্যে একটি ফ্ল্যাট অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. মামুনের শ্বশুরের কাছে বিক্রি করেন শেখ রবিউল আলম রবি। ফ্ল্যাটটি তারা অবৈধভাবে জবরদখল করে রেখেছিল। যা নিয়ে গত তিন বছর ধরেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, এই দ্বন্দ্বের জেরে বৃহস্পতিবার সকালে অতর্কিতে সিসি ক্যামেরা ভেঙে সেই ফ্ল্যাটে হামলা করলে দীপ্ত টিভির কর্মকর্তা তানজিল ইসলাম জাহান তামিম গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তামিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৬ জনের নামে মামলা করেছে পরিবার। এরইমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির বলেন, রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য বিষয় না। আমরা বিষয়টাকে অপরাধ এবং অপরাধীর দৃষ্টিতেই দেখছি। রবিউল আলম রবি এ মামলার তিন নম্বর আসামি। তাকে গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আশা করছি শিগগিরই বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনে সোপর্দ করতে পারব।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল তা তদন্তে উঠে আসবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মামুনকে হত্যা মামলার মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। বিএনপি নেতা রবিউল ৩ নম্বর আসামি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জমির মালিকের সঙ্গে ডেভেলপার কোম্পানির দ্বন্দ্ব। সুতরাং রবিউলের দায়ই থাকবে। বাকিটা তদন্তে উঠে আসবে।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় পুলিশ আগে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি এমন অভিযোগ রয়েছে জানতে চাইলে রুহুল কবীর বলেন: হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ইতোমধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তার অবহেলার প্রমাণ পেয়েছি।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকালে জমির মালিক সুলতান আহমেদের ছেলে ও সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভির সম্প্রচার কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম তামিমকে বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট ভাগাভাগি নিয়ে আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিরোধের জেরে হত্যা করা হয়।
ভবন নির্মাণের জন্য জমির মালিক সুলতান আহমেদ প্লিজেন্ট প্রপার্টিজ (প্রা.) লিমিটেড নামে একটি আবাসন নির্মাণ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেন। চুক্তি অনুসারে জমির মালিকদের ফ্ল্যাটের অংশ বুঝিয়ে দেওয়া নিয়ে জমির মালিকদের ও কোম্পানির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।