সাতক্ষীরার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা কর্মকর্তা রোকনুজ্জামানের জীবনগাথা
- আপডেট সময়- ০৩:৪৭:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪ ২৯ বার পড়া হয়েছে
ইব্রাহীম হোসেন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি।।
সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলায় প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন আর এই শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সহযোগিতা করেন ১২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭৪৬ জন শিক্ষক শিক্ষিকা। এই সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা উপকরণের চাহিদা বাস্তবায়ন ঘটানো ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করন সবকিছুর দেখভাল করার জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি রয়েছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা।
প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৪ এর জন্য সাতক্ষীরা জেলার শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নির্বাচিত হয়েছেন কলারোয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এইচ এম রোকনুজ্জামান । মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের পক্ষ থেকে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠির ফলাফলে এ তথ্য জানা গেছে।
সাতক্ষীরা জেলায় প্রাথমিকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের গল্প জানান কলারোয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এইচ এম রোকনুজ্জামান । তিনি বলেন আমি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মত তেমন কেউ নই। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে পরিকল্পিতভাবেই কাজ করছি। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের ১১ তারিখ কলারোয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদানের পর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ সামনে এসে দাঁড়ায় যার মধ্যে অন্যতম ছিল:
• বিদ্যালয় সমূহের পরিবেশ শিক্ষার্থী বান্ধব নয়।
• শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের আগমন প্রস্থান নির্ধারিত নিয়ম ও সময়ে না করা।
• উপজেলা শিক্ষা অফিস অপরিচ্ছন্ন।
• বিদ্যালয় চলাকালীন শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা।
• অকারনে প্রধান শিক্ষকদের উপজেলা শিক্ষা অফিসে আসার প্রবণতা।
• শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত কোন কাজের নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘ সূত্রতা ।
• শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বেশি।
• উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে সেবামূলক দপ্তরের দূরত্ব।
• শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে গড় উপস্থিতির সংখ্যা কম।
• উপজেলা শিক্ষা অফিসার , সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও স্টাফদের দের সাথে দ্বিমুখী সম্পর্ক।
• বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সমস্যা প্রকট।
• বিদ্যালয় সমূহে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শুদ্ধাচার চর্চায় অনীহা।
• শিক্ষার্থীদের সাবলীল গঠনের দক্ষতা অনেক কম।
প্রাথমিকে এমন জরাজীর্ণ সমস্যা গুলো দেখার পরে সকল শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে বসে বিভিন্নভাবে এই চ্যালেঞ্জ সমূহ উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করে কাজ করে যাচ্ছি বলে জানান এই কর্মকর্তা। তার সকল চ্যালেঞ্জ উত্তরণের পরিকল্পনার মধ্যে যা রয়েছে:
• প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের উপস্থিতিতে মাসিক সভায় বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে স্পষ্ট এজেন্ডা ভিত্তিক আলোচনা জোরালো নির্দেশনা দেয়া ।
• পরিদর্শন কার্যক্রম ইউইও ও এইউইও জোরদার করার মাধ্যমে শিক্ষকদের বিদ্যালয় মুখী করা।
• উপজেলা শিক্ষা অফিস ও বিদ্যালয় সমূহের সার্বিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দৃষ্টিনন্দন ভাবে বাস্তবায়ন।
• উপজেলা শিক্ষা অফিস ও অন্য কোথাও শিক্ষকদের অন্য তত্ত্ব আসা-যাওয়া করার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ভাবে রেজিস্টার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে শিক্ষকদের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা কমানো। এছাড়াও উপজেলা শিক্ষা অফিসের শিক্ষকদের অকারনে ঘন ঘন আসা-যাওয়ার প্রবণতা কমানোর জন্য শিক্ষা অফিসে আসার কারণ লিপিবদ্ধ করার রেজিস্টার খোলা হয়েছে।
• সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী শিক্ষকদের ন্যায় সঙ্গত আবেদন পেন্ডিং রাখা হয় না।
• প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে বাবা ও মায়েদের শিক্ষার্থীদের প্রতি আরো যত্নশীল করার লক্ষ্যে মা সমাবেশ জোরদার করা হয়েছে। একই সাথে শিক্ষকদের সাথে নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা সহ অভিভাবকের বাড়িতে হোম ভিজিট ও উঠান বৈঠক কার্যকর করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমানো সম্ভব হয়েছে।
• উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য সেবা দপ্তর, জনস্বাস্থ্য দপ্তর, উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সাথে সমন্বয় গঠন করে প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ দৃশ্যমান উন্নয়ন ও উন্নতির দিকে ধাবিত হয়েছে।
• উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও অফিস স্টাফদের সাথে চমৎকার সমন্বয়ে রয়েছে।
• দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সাবলীল গঠন দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিটি বিদ্যালয়ে সাবলীল পড়তে পারে না এমন শিক্ষার্থীর তালিকা প্রণয়ন করে বিদ্যালয়ভিত্তিক দায়িত্ব বন্টন পূর্বক নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পর সাবলীলভাবে পড়ার অগ্রগতির পরিমাপের টুলস এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।
• বিদ্যালয় এর সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শুদ্ধাচার চর্চা নিবিড় ভাবে করার লক্ষ্যে প্রতিটি বিদ্যালয় শুদ্ধাচার চর্চার কৌশল সম্মিলিত ফেস্টুন তৈরি সহ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এমন অসংখ্য উন্নয়নমুখী কার্যক্রম এই উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে করে যাচ্ছি। শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে উপজেলা শিক্ষা প্রশাসন, শিক্ষা অফিসের সকল কর্মকর্তা, সকল শিক্ষক শিক্ষিকা অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরাও। যে কারণে আজ হয়তো সাতক্ষীরা জেলার শ্রেষ্ঠত্ব হওয়ার জন্য মূল্যায়িত হয়েছি। এবার সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন কলারোয়ার রামভদ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম, শ্রেষ্ঠ কাব শিক্ষক হয়েছেন কলারোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অনুপ কুমার ঘোষ। শিক্ষায় কলারোয়ার এমন অর্জন অবশ্যই এলাকার জন্য সুনাম বয়ে আনছে। তবে আমার পরিকল্পনাই রয়েছে যেখানেই দায়িত্ব পালন করি না কেন প্রতিটি শিক্ষার্থী আমার সন্তান প্রতিটি কর্মকর্তা আমার সহকর্মী আমার ভাই সকলে মিলে সকলের সমন্বয়ে একটি সুন্দর শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে চাই যা এলাকায় শিক্ষার এক অপরূপ সৌন্দর্য বহন করবে ।