সর্বশেষ:-
অসমের ‘মায়াং’ কালো জাদু ও তন্ত্র-মন্ত্রের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৯:০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ৩০ বার পড়া হয়েছে
ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়,
কলকাতা প্রতিনিধি।।
অসম উত্তর পূর্বের এক পূর্ণ রাজ্য। ছোট পাহাড় এবং ব্রহ্মপুত্র নদে ঘেরা এই রাজ্যের রাজধানী ডিসপুর গুয়াহাটি শহরের প্রাণকেন্দ্র। গুয়াহাটি থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার পথ মায়াং।
অসমের মায়াং গ্রাম, কালো জাদু ও তন্ত্র মন্ত্রের এক আকর্ষণীয় জায়গা ।
ভারতবর্ষের উত্তরপূর্বে রাজ্য অসমের মায়ং গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দারা যুগের পর যুগ ধরে তন্ত্র-মন্ত্র, কালা জাদু, ঝাড়ফুঁক নিয়েই বেঁচে আছেন। আজকের আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অপার উন্নতির যুগেও মায়ং গ্রামের মানুষগুলো এখনও অলৌকিকতা এবং কুসংস্কারের দুনিয়ায় বাস করেন। যদিও বিজ্ঞান তথা আমাদের কাছে এগুলি কুসংস্কার কিন্তু তাঁদের কাছে অবশ্য সে সবই সংস্কার। রহস্যময় এই গ্রামকে ঘিরে শুধুমাত্র ভারতবর্ষই নয় সারা বিশ্ববাসীরও আগ্রহের শেষ নেই।
কথাটা শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এটাই সত্যি যে প্রতি বছর হাজার হাজার দেশী বিদেশী পর্যটক মায়ং গ্রামের কালো জাদুর আকর্ষণে হাজির হন সেখানে। স্বচক্ষে উপলব্ধি করতে আসেন এই মায়াংগ্রামের কালো জাদুর প্রকৃতি। কালো জাদুর ভূমি নামে পরিচিত মায়ং গ্রামটি অসমের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত। অসমের মরিগাঁও জেলার ছোট্টো গ্রাম এটি।
গ্রামের নাম মায়ং হওয়ার পিছনে স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য তথ্য রয়েছে। কারও মতে ’মায়ং’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ‘মায়া’ থেকে। ইতিহাস বলে এই গ্রামে মহাভারতের আমলে নাকি জাদুবিদ্যা চর্চা করতেন ভীমের ছেলে মায়া বিদ্যার সম্রাট ঘটোৎকচ। তথ্য অনুসারে শ্রীকৃষ্ণের বরে ঘটোৎকচ ছিলেন মায়া বিদ্যার একচ্ছত্র সম্রাট। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ঘটোৎকচের মায়াবিদ্যার কারণেই তৎকালীন দিনে গ্রামটির নাম হয়েছিল মায়ং।
এই অঞ্চলের স্থানীয় জনগণ একথা বলে থাকেন ভীম এবং হিড়িম্বার ছেলে ঘটোৎকচই ছিলেন এই প্রদেশের রাজা। তৎকালীন দিনে ঐন্দ্রজালিক ও মায়াবী রাজার অধীনে বসবাস শুরু করেন বিভিন্ন বয়সের একাধিক জাদুকর, তান্ত্রিক, মায়াবিনীরা। তাঁদেরই বংশধরেরাই নাকি এখানে আজ বসবাস করেন। শুধুমাত্র বসবাস করেন একথা বললে ভুল হবে তারা সেই পূর্বপুরুষের প্রথা, সেই পুরাতন পেশা আজও বজায় দেখেছেন ভালোভাবেই। গ্রামের রাস্তা ঘাটে, অরণ্যে, নদীর পাড়ে তাঁদের সকলকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
তবে এ কথা ঠিক এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের ওপরে তারা সরাসরি কোন কিছু জাদুবিদ্যা প্রয়োগ করেন না। একান্ত তাদের কাছে গিয়ে উপস্থিত হলেই তবেই তারা এর নমুনা মানুষের সামনে তুলে ধরে। তারা বেশিরভাগ সময়ে এই সমস্ত যাদুবিদ্যা ও তন্ত্র মন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তবে বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির যুগে আধুনিক প্রজন্মের কিছু সদস্য এই প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন বলেও জানা যায়।
ডিমাসা সম্প্রদায়ের কাছে এই মায়াং অত্যন্ত প্রিয়। ডিমাসারা দাবি করেন তারা মহাভারতের ভিম ও হিড়িম্বার বংশধর। অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ আসাম সহ উত্তর পূর্বের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রাজত্ব ছিল ডিমাসা রাজাদের। শেষ রাজা ছিলেন গোবিন্দ চন্দ্র হাসনুসা। প্রায় ৮শ বছর আগে চিন এবং থাইল্যান্ড থেকে আহমরা অরণ্য পেরিয়ে প্রায় দেড়শ ঘোড়ায় চড়ে আসামে প্রবেশ করে আচমকা আক্রমণ চালায় রাজ প্রাসাদে।রাজা অপ্রস্তুত ছিলেন। তিনি পালিয়ে গভীর জঙ্গলে উধাও হয়ে যান।
এরপর আহম সাম্রাজ্যের সূচনা হয়। ডিমাসারা বিভিন্ন নামে ছড়িয়ে পড়ে। ডিমাসা,কাছারি, বড়ো, সনোয়াল ইত্যাদি নামে ভাগ হয়ে যায়। তাদের হিড়িম্বা সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল ডিমাপুর। আসাম ভাগের পর এটি নাগাল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
শুধু আসাম নয়, পশ্চিমবঙ্গের, এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্য,এমনকি বাংলাদেশ থেকে বহু পর্যটক এই মায়াং তান্ত্রিক শহরে আসেন। সারা অঞ্চল জুড়েই তান্ত্রিকদের আশ্রম দেখা যাবে।