সর্বশেষ:-
মুন্সীগঞ্জে আশ্রয়ণের ঘরছাড়া ১৬ দুস্থ পরিবার
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৬:১৬:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩৪ বার পড়া হয়েছে
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
ছেলে নেই,স্বামীও ছেড়ে গেছেন বহু আগে।২০২২ সালে মুন্সীগঞ্জ সদরের পঞ্চসার ইউনিয়নের
রামেরগাঁও এলাকায় ২ শতাংশ জমিসহ নিজের
নামে ঘর হয় উপার্জনে অক্ষম ময়না বেগমের
(৫৫)।ভেবেছিলেন বাকি জীবনটা এখানেই মাধ্য
গুঁজে পড়ে থাকবেন দেয়ে না খেয়ে।কিন্তু বিধি
বাম! গেল ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অস্থির পরিস্থিতির সুযোগ
কাজে লাগিয়ে পরদিনই ওই ঘরের জানালাসহ ঘরে থাকা মালামাল লুট করে উচ্ছেদ করা হয় নানাকে।
অন্ধ স্বামী লিল রহমানকে নিয়ে ফাতেমা আক্তারও থাকতেন এখানে।পথেঘাটে ভিক্ষাবৃত্তি করে তিন শিশু সন্তান নিয়ে চলে ফাতেমার সংসার।তবে এখন নিরুপায় হয়ে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে উঠেছেন নতুনগাঁও এলাকার ভাড়া বাসায়।মাস শেষ হলেও এখনো পরিশোধ করতে পারেননি বাসা ভাড়ার অর্থ।নিজের নামে দলিল করা থেকে উচ্ছেদ হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হে পড়েছেন তিনি।লড়াকু আরেক মুখ তানিয়া আক্তার।স্বামী ছেড়ে যাওয়া এই নারী স্থানীয় একটি সুতার ফ্যাক্টরিতে কাজ করে মাকে নিয়ে থাকতেন ভূমিহীন গৃহহীনদের জন্য সরকারের উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পে।তারও এখন দৈন্যদশা।ময়না,ফাতেমা,তানিয়া, নূর বানু,সাহারার মতো ১৬টি পরিবার আজ সন্ত্রাসী লুটেরাদের কারণে পথে বসেছে।জানা যায়,সরকার পতনের পরদিন ৬ আগষ্ট সকালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৫ শতাংশ জমি নিজের দাবি করে স্থানীয় মোরা ৫০-৬০ বাজিকে নিয়ে এসে হাতুড়ি,রড,হকিষ্টিক দিয়ে ভাঙচুর চালান ঘরগুলোতে।এ সময় লুট করা হয় প্রতিটি ঘরের লোহার দরজা,জানালা,টয়লেটের
সরঞ্জামাদি।খুলে নেওয়া হয় পানি উত্তোলনের
মোটর ও পাইপ।আশপাশের লোকজন এগিয়ে
এলে বেধড়ক মারধরের শিকার হন তারা।সময় ঘরগুলোতে থাকা বাসিন্দারা কাকুতি-মিনতি
করলেও তাদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা
অবিবাহিতদের ধর্ষণের হুমকি দেন ওই ব্যক্তি।পরে
নিরুপায় হয়ে দিখিদিক ছুটে যায় পরিবারগুলো।
রামেরগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমি ও ঘরের
মালিক তানিয়া আক্তার অভিযোগ করে সরকার পতনের দিন বিকালে রফি মোল্লা ও তার
ভাইয়েরা এসে বলে,তারা মনেপ্রাণে বিএনপি
করে।এই জায়গা তাদের।আগের সরকার জোর
করে তাদের জায়গা নিয়ে নেয়।এখন এক ঘন্টার
মধ্যে ঘরবাড়ি না ছাড়লে ঘরে আগুন দিয়ে দিবে
বলে হুমকি দেয়।পরে সবাই হাত-পা ধরে তাদের
থেকে এক দিনের সময় নেয়।পরদিন সকাল ৮টা
বাজতেই লোকজন নিয়ে এসে তারা ঘরের দরজা-
জানালা ভাঙা শুরু করে।কোনোমতে প্রাণ নিয়ে
সেখান থেকে পালিয়েছে আশ্রয়ণের বাসিন্দারা।
আরেক ভুক্তভোগী নুর বানু বলেন,স্বামীও নাই, পোলাও নাই।একটা মাইয়া বিয়া দিয়া দিছি
মাইনষের বাইত কাম কইরা।ওইদিন এক কাপড়ে
বাইর হইছি বাবা।একটা পোলা মানুষও আছিলো
না যে আমার ঘরের মালছামানাগিলি বাইর করব।
৪৫ দিন ধইরা আছি মাইয়ার বান্ধবীর বাসায়।
রাইতটা কোনোরকমে পার করি,দিন হইলে রা
রাস্তায় হাত পাতি।আমি কি আর আশ্রয় ফিরা পামু
এদিকে লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের
করেছেন ভুক্তভোগীরা।ওই দিনই তারা জেলা
প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে লিখিতভাবে বিষয়টি
জানান।জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ফাতেমা
তুল জান্নাত বলেন,”ভুক্তভোগীদের কথা শুনেছি।
এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”অভিযুক্ত রফি মোল্লা বলেন,”আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা এই ৪৫ শতাংশ জমি আমার পিতা কানু মোয়ার ওয়ারিশ সূত্রে আমরা ৭ ভাই এই জমির মালিক।তবে আমাদের কাগজে কিছু ত্রুটি আছে, আমরা আদালতে একটি মামলাও করেছি
২০২১ সালে।আদালত যে রায় দিবে সেটা আমরা
মেনে নিব।ভাঙচুর-লুটের অভিযোগ অস্বীকার
করেন তিনি।জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন,অভিযুক্ত অফি মোল্লা,রফি মোল্লারা বিএনপির কেউ না।তারা বিএনপির নাম জড়িয়ে অপকর্ম করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে ভুক্তভোগীরা।’মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও)আফিফা খান বলেন,’আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘর নির্মাণের সময় আমি ছিলাম না।ওই জমিটি সরকারি মালিকানাধীন।কিন্তু স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জমিটি দীর্ঘদিন অবৈধভাবে দখলে রেখেছিলেন।পরে তাদের থেকে দখলমুক্ত করে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৬টি ঘর নির্মাণ করে দেয় সরকার। ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে অবৈধ দখলদার চক্রটি লুটপাট ভাঙচুর করেছে।তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি উচ্ছেদকৃত এই পরিবারগুলোকে দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।