রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকার বেশিরভাগ ব্যাংকের এটিএম বুথ বন্ধ
- আপডেট সময়- ০৪:০৮:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০২৪ ৪১ বার পড়া হয়েছে
নিরাপত্তার অভাবে বন্ধ এটিএম বুথ, ভোগান্তিতে গ্রাহকরা
অনলাইন ডেস্ক।।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান। জরুরি প্রয়োজনে গতকাল শনিবার টাকা তুলতে গিয়ে ৫০টির বেশি এটিএম বুথে গিয়ে বিমুখ হয়েছেন প্রায় সব বুথই বন্ধ। হেঁটে ও রিকশায়, জিগাতলা মিরপুর-১৪ ও মিরপুর-১০ এলাকার বিভিন্ন এটিএম বুথে গিয়েও একটিও খোলা পাননি। এভাবে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঘুরেও কেউ কেউ টাকা তুলতে পারেননি।
নিজ ব্যাংকের বুথে টাকা না পেয়ে আরো ৯টি ব্যাংকের এটিএম বুথে গেছেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এই গ্রাহক। বেশির ভাগ এটিএম বুথেই লেখা ‘আউট অব সার্ভিস’। কোথাও কোথাও যান্ত্রিক ত্রুটি বা কারিগরি ত্রুটির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে ব্যাংক।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এটিএমে টাকা পৌঁছে থাকে।
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষের এই সেবা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এটিএমে টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। তাই দেশজুড়ে বেশির ভাগ ব্যাংকের এটিএমসেবা বন্ধ। যতটা না টাকার সংকট, তার চেয়ে বেশি নিরাপত্তার আশঙ্কায় ব্যাংকগুলো তাদের এটিএম কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছে।চলমান পরিস্থিতিতে টাকা পরিবহনের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না অনেক ব্যাংক ও এটিএমে অর্থ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও চাহিদা অনুযায়ী নগদ টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।
ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান সিকিউরেক্স লিমিডের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা এক টাকাও সরবরাহ করতে পরিনি। আমাদের ভল্টে আর টাকা নেই। বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ও বাংলাদেশ ব্যাংকও টাকা দিচ্ছে না।
স্বাভাবিক সময়ে আমাদের কম্পানি প্রতিদিন ২৫০ কোটি টাকা সরবরাহ করলেও আজ কোনো টাকাই দিতে পারিনি।’ নগদ টাকার সংকট ও নিরাপত্তার ঝুঁকি এর অন্যতম কারণ বলে জানান তিনি।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংক, এনসিসি, এক্সিম, প্রাইম, উত্তরা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এটিএম বুথগুলো বন্ধ। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়ও একই অবস্থা। এই এলাকার এসআইবিএল, ইবিএল, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, যমুনা ও ব্যাংক এশিয়ার কোনো বুথেই টাকা নেই।
জানতে চাইলে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তৃতীয় পক্ষের এই সেবা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে অনেক ব্যাংকের এটিএমে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দেওয়া সম্ভব হয়নি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল মওলা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে এটিএম বুথগুলোতে টাকা পাঠানো যাচ্ছে না। নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুত ব্যাংকের সমস্যা দূর হবে।’
গত সপ্তাহের শেষ কার্যবিদবস বৃহস্পতিবার ব্যাংকের অনেক শাখা বন্ধ রাখতে দেখা যায়। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধান দরজা বন্ধ রাখতে দেখা গেছে রাজধানীর কোনো কোনো ব্যাংকের। বিকল্প দরজা দিয়ে যাওয়া-আসা করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা ও গ্রাহকরা। ব্যাংকাররা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছেন তাঁরা। যদি কোনো শাখায় নিরাপত্তা ঝুঁকি অনুভূত হয়, তাহলে ব্যাংক চাইলে সেসব এলাকার শাখা ও এটিএম বুথ বন্ধ রাখতে পারবে।
এ বিষয়ে পদত্যাগ করার আগের দিন (৬ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান বলেন, ‘এখনো দেশে স্বাভাবিক অবস্থা আসেনি। বিভিন্ন দিকে বিভিন্ন দুর্ঘটনার কথা শোনা যাচ্ছে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো ব্যাংক কোনো শাখা বা কোনো এটিএম বুথের নিরাপত্তার ঝুঁকি মনে করে, তাহলে সেটি বন্ধ রাখতে পারবে। এমন পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে না। আশা করি, খুব দ্রুত স্বাভাবিক লেনদেন শুরু হবে সব ব্যাংক ও এটিএম বুথগুলোতে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাস শেষে দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের মোট এটিএমের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৪২৮। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৯ হাজার ৪০৯টি আর গ্রামাঞ্চলে চার হাজার ১৯টি। এটিএম ছাড়া সিআরএমের (ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন) মাধ্যমেও নগদ টাকা উত্তোলন করা যায়। দেশের বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, সিটি, ঢাকা ব্যাংকসহ অনেক ব্যাংক এখন এটিএমের বদলে সিআরএমের প্রতি ঝুঁকছে। সিআরএমে টাকা উত্তোলনের পাশাপাশি নগদ জমারও সুযোগ রয়েছে। এ কারণে ধীরে ধীরে সিআরএমের সংখ্যা বাড়ছে। গত মে মাস শেষে দেশে সিআরএমের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪৫০। এসব সিআরএমের বেশির ভাগই শহরাঞ্চলে, তিন হাজার ৯৮৫টি।
গত ৫ আগস্ট রাজধানীর অনেক থানা খালি করে চলে যায় পুলিশ। পরদিন থেকে তারা কর্মবিরতির ডাক দিলে নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি হয়।