সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, আইন-আদালত, আবহাওয়া ও জলবায়ু, দূর্নীতি দমন কমিশন(দুদক), দেশজুড়ে, মুন্সিগঞ্জ, শ্রীনগর
শ্রীনগরে অবৈধ ড্রেজারের কৃষিজমি ধ্বংসের মহোৎসব
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৬:২৮:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪ ৬২ বার পড়া হয়েছে
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।।
সরকারী নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে দুই ও ত্রি-ফসলি জমি ভরাটের ফলে কৃষিজমি বিলুপ্তির পথে।ড্রেজার দিয়ে কৃষিজমি ধ্বংসের মহোৎসব চলছে।এতে একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করা হচ্ছে,অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।আইন ভঙ্গ করে ড্রেজারের তান্ডবে প্রতি বছর শত শত বিঘা ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে।অথচ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন না করায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।নির্বিচারে কৃষিজমি ভরাটের কারণে অনেক জায়গায় বর্ষায় সেচের পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।ফলে বাড়ছে জলাবদ্ধতা।কিন্তু এই আইনের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে ফসলি জমি ভরাট করা হচ্ছে।বিভিন্ন গ্রামে ফসলি জমিতে বাঁধ, ড্রেজার দিয়ে মাটি ভরাট করে বসতভিটা নির্মাণ করা হচ্ছে।বছরের পর বছর এই অবস্থা চললেও রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সরকারী ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা।উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে প্রতি বছর সড়কের ধারে আবাদি কৃষিজমি ভরাট হচ্ছে।এসব জমি ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে বসতঘর,রাস্তা-ঘাট, দালানকোঠা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।ফসলের পরিবর্তে যেখানে শোভা পাচ্ছে পাকা দালানকোঠা। অব্যাহতভাবে ভরাট হওয়ায় উপজেলায় হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজমি।আর এতে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার হুমকিসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।অথচ কৃষিজমি অক্ষত রেখে উন্নয়নের জন্য বারবার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।বিশেষ করে দুই ও ত্রি-ফসলি জমি সংরক্ষণে তার জোরালো নির্দেশনা ছিল।কৃষিজমি সুরক্ষায় নীতি-নির্ধারকদের গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও দিয়েছেন তিনি।বালুদস্যু ও ভরাট সিন্ডিকেটের সদস্যরা ফসলী কৃষিজমিগুলো ভেঁকু মেশিন দিয়ে গভীরভাবে কেটে পকেট তৈরী করে রাখছে।কেউ কেউ পকেট কাটার সাথে সাথে ড্রেজারের পাইপ বসিয়ে ভরাট কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে।এ ভরাটের যোগান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঘড়া-ভাগ্যকুলের মাঝামাঝি পদ্মা নদীর চড়ে অর্ধশতাধিক কাটিং ড্রেজার ও কৃষিজমি।অর্থাৎ এক জমি ভেঁকু দিয়ে কেটে পকেট করে।অন্য জমি থেকে কাটিং ড্রেজারের মাধ্যমে পাইপ লাইন দিয়ে মাটি কেটে এনে পকেট ভরাট করা হচ্ছে।এসব কাজ স্থানীয় ভূমি অফিসগুলোর নাকের ডগায় ঘটলেও যেন দেখার কেউ নেই।সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে,বীরদর্পে ভাগ্যকুল,মান্দ্রা-বালাসুর বাগানবাড়ি হয়ে ঢাকা-দোহার রোড বোরিং করে আড়িয়াল বিলে কৃষিজমি বালু ভরাট করছে বালাসুর বৌবাজারের জাহাঙ্গীর মৃধা গং। বর্ষা তথা ড্রেজার মৌসুমকে সামনে রেখে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নেই তৎপর হয়ে উঠেছে বালুদস্যু ও ভরাট সিন্ডিকেটের সদস্য কামারগাঁও ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন,সাবেক মেম্বার ছামাদ,উত্তর বালাশুর ও রাঢ়ীখালের রোকন,ষোলঘরের লালচাঁন,মোবারক,কবুতরখোলার মাসুদ,মতিন, জশলদিয়ার আশরাফ চেয়ারম্যান,শামীম, কুকুটিয়ার আজিম মেম্বার,ফিরোজ,শামীম,আবুল বেপারী,হাশেম আলী আমিন,পশ্চিম নওপাড়ার আলমগীর,আমির হোসেন,তন্তরের শাহিন, বাড়ৈগাঁওয়ের খলিল,নাগেরহাটের মিজান, আলমপুরের লাভলু মোড়ল,মোসলেম,শাহিন, আহসান,মদনখালীর রাসেল,আশা,হিরো, বাড়ৈখালীর সাঈদ,বাঘড়ার আনু মেম্বার, আরধীপাড়ার টিটুসহ আরো অনেকেই।ইতিমধ্যে তারা শত শত বিঘা কৃষিজমি ভেঁকু দিয়ে কেটে পকেট তৈরী করে রেখেছে।প্রতিবারের মত এবারও খাল-বিলে পানি আসার সাথে সাথেই বালুবাহী বাল্কহেড এনে ভাসমান ড্রেজারের মাধ্যমে ভরাট হবে ঐসব পকেট।এসব ভূমিখেকো সিন্ডিকেটরা শুধু পকেট তৈরী আর ভরাট করেই ক্ষ্যান্ত নয়,বরং তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ পার্শ্ববর্তী জমির কৃষকেরা।এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী স্থানীয় কৃষকের কাছ থেকে জানা যায়,একটি জমিতে পকেট কাটলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায় চারপাশের অন্যান্য জমির মালিকরা।কারণ পকেট তৈরীর সময় সীমানা লঙ্ঘন করে ক্ষেতের আইলসহ জমির ওপর মাটি ফেলে পাড় বেঁধে নেয় তারা।প্রতিবাদ করলে উল্টো হেনস্থার শিকার হতে হয় তাদের।তাই অনেক কৃষক তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। সাম্প্রতিককালে তৈরী করা সেসব পকেট বর্তমানে কাটিং ড্রেজারের মাধ্যমে ভরাট করা হচ্ছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে কতিপয় ব্যক্তি বলেন,সবকিছু ম্যানেজ করে সরকারি,বেসরকারি জলাশয় ও কৃষিজমি ভরাট করা হয়েছে।পরিবেশবান্ধব সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা মনে করছেন,সরকারের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যদি কৃষিজমি ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিতে পারে তাহলে (১০-১৫) বছরের মধ্যে এই অঞ্চলের কৃষিজমি একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।কৃষিজমিতে বাড়ি নির্মাণে ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও অনুমতি নেওয়ার বিধান থাকলে কেউ মানছেন না।নিজেদের ইচ্ছামতো কৃষিজমিতে বাঁধ দিয়ে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে বলে দাবি রাঢ়ীখাল ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক খান বারীর।
তিনি বলেন,ড্রেজার দিয়ে কৃষিজমি ভরাট দ্রুত বন্ধ না করলে অল্প সময়ের ব্যবধানে আমাদের এই অঞ্চলের কৃষিজমিগুলো আর টিকানো সম্ভব হবে না। এ ব্যাপারে অবৈধ ড্রেজার সিন্ডিকেট চক্রের অন্যতম সদস্য মোঃ জাহাঙ্গীর এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমরা প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই এই ব্যবসা করি।রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের ভূমি অফিসার আমির হোসেন বলেন, আমরা ভেঙে দিয়ে আসার পর আবার অদৃশ্য শক্তির কারণে এরা কাজ করে কিভাবে আমাদের জানা নেই।এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোশারেফ হোসাইন বলেন,এসিল্যান্ড ছুটিতে রয়েছে।আমি একা।ইউনিয়ন তহসিলদারদের বলে দিয়েছি তারা ব্যবস্থা নিবে।