সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, আইন-আদালত, ইসলাম ও জীবন, দূর্নীতি দমন কমিশন(দুদক), দেশজুড়ে, নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর, নারী ও শিশু, পূর্বাভাস, ফতুল্লা, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব
ফতুল্লায় আলোচিত সুরুজ হত্যাকান্ডে লাভবান বিন্দু-কবির
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৭:০১:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪ ৬৫ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব সংবাদদাতা।।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কাশীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ হত্যার বিচার ও অপরাধীদের শাস্তির চেয়ে এ নিয়ে রাজনৈতিক নোংরা খেলা-ই হচ্ছে। সুরুজ হত্যায় কপাল খুলে দিয়েছে দলের অনেকের। এ হত্যাকান্ডকে নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নানা খেলায় মেতে উঠেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাকে এ মামলায় ফাঁসাতে নানা কৌশল নিচ্ছেন তারা। এ কাজে প্রশাসন ও পত্র-পত্রিকাকেও উৎকোচ দিয়ে ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।
তবে সাধারণ মানুষ ও দলীয় সূত্র মতে- এ-ই হত্যার ঘটনার পরে সবচেয়ে বেশী লাভবান হয়েছেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সহ প্রচার সম্পাদক রেহান শরীফ বিন্দু ও তার সহযোগী রিয়াজ উদ্দিন কবির। এবং তাদের শেল্টারদাতা হিসেবে রয়েছেন কাশীপুরের চেয়ারম্যান সাইফ উল্লাহ বাদল’র পুত্র নামজুল হাসান সাজনও।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়- সুরুজ খুনের পরে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বিন্দু ও কবির সবচেয়ে বেশী লাভবান হয়েছে। এ হত্যাকান্ডে সরাসরী জড়িত হীরা’র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে দেড় শতাধিক গ্যাস সিলিন্ডার মালামাল, বাড়ি থেকে ৮-১০টি গরু-গবাদি পশু, বাড়ি-ঘরের মালপত্র টাকা-পয়সা। এমনকি বাড়ি-ঘরের টিনের চালও লুট করে নিয়ে যায় কথিত ছাত্রলীগ নেতা রিয়াজ উদ্দিন কবির ও সাঙ্গপাঙ্গরা। শুধু তাই নয়, হীরা গ্রেফতার হবার পরে কদম আলী ঘাটও দখল করে নিয়েছে কবির।
স্থানীয় একাধিক সূত্র আরও জানায়- সুরুজ হত্যার পরে বড় নেতা’র নাম ভাঙিয়ে কয়েকজন মাঠের নেতাকে ‘বকরা’ বানায় সাজন-বিন্দু ও কবির। আহতদের চিকিৎসার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। শুধু তাই নয়, এ মামলায় ফাঁসিয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে আরও কয়েকজনের কাছ থেকে একটা বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। ফলে এ-ই হত্যাকান্ড থেকে বিন্দু ও কবির’র প্রায় কোটি টাকার একটা রমরমা বাণিজ্য হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান- নানা অভিযোগের কারণে এর আগে রেহান শরীফ বিন্দুকে সরিয়ে দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান সাইফ উল্লাহ বাদল। এরপর আবার এসে চেয়ারম্যানের উপর ভর করেছেন। চেয়ারম্যানের খুব কাছে থাকার কারণে কাশীপুরের সব নেতাই তাকে বিশেষ চোখে দেখে। কয়েকজন নেতা ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসে কয়েক লাখ টাকা ‘সেলামি’ পান তিনি। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে দুই হাতে লুটপাট শুরু করেছেন। জমি-জমা, হাট-ঘাট ও গার্মেন্টস সব কাজেই দুর্দান্ত দাপট দেখাচ্ছেন বিন্দু। চর কাশীপুর সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় জমিও কিনেছেন এ-ই নেতা। ছাত্রলীগে পদ পাইয়ে দিতে চেয়ারম্যান সাহেবকে ম্যানেজ করবেন এমন আশ্বাস দিয়ে কবিরকে বগলে আটকে রেখেছেন।
কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন- সবই দেখি, কিন্তু কী আর বলবো। বললেই চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে সত্য-মিথ্যা বানিয়ে কান ভারী করে। আপনারা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখেন সম্পদে চেয়ারম্যানের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে বিন্দু। আওয়ামী লীগ নেতা রেহান শরীফ বিন্দু এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।
অন্যদিকে রিয়াজউদ্দিন কবির বলেন- ঘাটটি চেয়ারম্যান সাহেব নেতাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর হীরা’র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে লুটপাট করেছে সুরুজ মিয়ার পুত্র মুন্না’র লোকজন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নাজমুল হাসান সাজনকে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর আজম মিয়া বলেন- আমরা নিরপেক্ষভাবে হত্যা মামলাটি তদন্ত করছি। এ মামলায় এজাহারভুক্ত অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হবে না। কিন্তু প্রকৃত অপরাধী কাউকে ছাড়া হবে না।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন কাশীপুরের আলীপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কাশীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সুরুজ মিয়াকে সন্ত্রাসী সালাউদ্দিন সালু ও তার ভাই আলাউদ্দিন হীরা সহ ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন সুরুজ মিয়ার দুই পুত্র সহ ৪ জন।
ঘটনার পরদিন ২৮ জুন নিহতের পুত্র মুন্না বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখ সহ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করে ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা করেন। এ-ই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র্যাব।