মুন্সীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে দালাল চক্রের মূলহোতা উপপরিচালক কামাল
- আপডেট সময়- ০১:৪৮:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪ ১৩৯ বার পড়া হয়েছে
দালাল চক্রের সকল সদস্য উপপরিচালকের নিজের পোষ্য, তার অদৃশ্য ইশারায় চলে এ সকল কর্মকান্ড..!
বিশেষ প্রতিবেদক,মুন্সিগঞ্জ।।
মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দিন দিন বেড়েই চলেছে দালাল চক্রের দৌরাত্ম।
প্রায় প্রতিদিনই পাসপোর্ট অফিস খোলার আগ থেকেই গেটে অবস্থান করেন বেশ কয়েকজন দালাল চক্রের সদস্য। সেবা প্রত্যাশীরা কেউ পাসপোর্ট অফিসের গেটে আসা মাত্রই তাকে ঘিরে ধরেন দালাল চক্রের একাধিক সদস্যরা, ঝামেলা ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়ার নানান ধরনের আশ্বাস দেন তারা।
এভাবেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একেবারে নির্ভেজাল পাসপোর্ট পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন সাধারণ পাসপোর্ট প্রত্যাশী মানুষদের।
বিশেষ করে ফাঁদে ফেলেন পাসপোর্ট অফিস হতে দূরের উপজেলা ও গ্রাম থেকে আসা সাধারণ মানুষ সহজেই তাদের কথা বিশ্বাস করে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পাসপোর্ট করাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকাল ৯টার দিকে প্রতিদিনের ন্যায় দালাল চক্রের সদস্যদের ধরতে সরেজমিনে পাসপোর্ট অফিসের গেটে যাওয়া মাত্র জাতীয় দৈনিক সমকালীন কাগজের এক ছব্দবেশী প্রতিবেদককে দালাল চক্রের দুই সদস্য ঘিরে ধরে বলেন, পাসপোর্ট নবায়ন করবেন নাকি নতুন? প্রতিবেদক নতুন পাসপোর্ট করবেন বলতেই এদের মধ্যে রাসেল মিয়া নামের এক দালাল চক্রের সদস্য বলেন,শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র দেন পাসপোর্ট করে দিচ্ছি।তারপর জানতে চান বিদুৎ বিল কার নামে? প্রতিবেদক জানান, তার বাবার নামে। এ সময় রাসেল মিয়া আশ্বাস দিয়ে বলেন, তাহলে আর কোনো সমস্যা নেই। সব কিছু আমরাই করে দেব, সঙ্গে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সও করে দিবো আপনার কোনো চিন্তা করতে হবেনা।
পরবর্তীতে কত টাকা লাগবে জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট করতে চাইলে এগার হাজার পাঁচশ টাকা, আর ৩০ দিনে করলে ৯ হাজার টাকা দিতে হবে।
এরপর সমকালীন কাগজের ছব্দবেশী প্রতিবেদক পাসপোর্ট অফিসে ঢুকতেই দেখেন প্রায় একশ মতো মানুষ পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য অপেক্ষমান রয়েছেন। কিন্তু সকাল সাড়ে ৯টা বাজলেও পাসপোর্ট কাউন্টারে কাউকে পাওয়া যায়নি।অথচ দালাল চক্রের সদস্যরা ঠিকই সক্রিয় রয়েছেন। পরে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে কাউন্টারে পাসপোর্টের আবেদন ফরম জমা নেওয়ার জন্য এক কর্মকর্তা প্রবেশ করেন। এরপর একই কাউন্টারে পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার জন্য প্রবেশ করেন অপর আরেক কর্মকর্তা। এ সময় এই প্রতিবেদক নজরদারি শেষে পাসপোর্ট অফিসের ভেতর থেকে বাইরে বের হয়ে দেখেন গেটে দাঁড়িয়ে আছে দালাল চক্রের সদস্য। কেউ ঢুকলেই তার সামনে গিয়ে এক ধরনের আটকিয়ে জোর করেই জিজ্ঞাসা করছেন পাসপোর্ট নবায়ন নাকি নতুন করবেন। বিভিন্নভাবে সুকৌশলে তাদের দিয়ে পাসপোর্ট করার জন্য অনেক ভাবে চেষ্টা করছেন দালাল চক্রটির একাধিক সদস্য।
প্রসঙ্গত গত বছরের, ১১ আগষ্ট (বুধবার) মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে গিয়ে সেখানে দায়িত্বে থাকা আনসার ও কম্পিউটার অপারেটরের হাতে এক তরুণ মারধর ও জুতাপেটার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে পাশাপাশি গণমাধ্যমেও ফলাও ভাবে ঘটনাটি প্রচারিত হয়েছে।
গোপন সুত্রে জানা গেছে, ঘটনায় ভুক্তভোগী মনির মীর (২১) শ্রীনগর উপজেলার বালাশুর ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকার ছেলে। জেলা শহরের খালইস্ট এলাকায় মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নিজেই।
ভুক্তভোগী মনির মীর সাংবাদিকদের জানান, পাসপোর্ট অফিসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে সিরিয়ালে দাঁড়ান তিনি। বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ফিঙ্গার দিতে না পেরে, একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে অফিসের দরজায় জোরে ধাক্কা দেন। এ সময় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. শাজালাল ও আনসার সদস্য ভুক্তভোগী মনিরকে কক্ষে নিয়ে প্রথমে কিল-ঘুষি ও একপর্যায়ে জুতাপেটা করেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস মুন্সিগঞ্জের উপ-পরিচালক কামাল হোসেনের কাছে সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সমঝোতা হয়েছে বলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে আর কিছু বলতে চাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দালাল জাতীয় দৈনিক সমকালীন কাগজকে বলেন, এখন মূলত কম সংখ্যক দালালই পাসপোর্ট অফিসের গেটে দাঁড়ান। দালালরা মূলত এখন অনলাইন আবেদনের অফিসেই বেশিরভাগ অবস্থান করেন। মুন্সীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস ও তার আশপাশের অনলাইন অফিসে ৫০/৬০ জন দালাল ৬ সদস্য রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজারেও রয়েছে অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করার দোকান। তারাও টাকা নিয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশন করে পাসপোর্ট করে দিচ্ছেন বলে স্বীকার করেন।
তিমি আরও জানান, মূলত ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে যখন কেউ ঝামেলায় পড়েন তখনই পাসপোর্ট অফিসের সামনে থাকা দালাল চক্রের সদস্যরা সুযোগটা নেন। ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে ঝামেলা হলেই দালালরা বলেন, আসেন আমরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এ বলে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দাবি করেন। তখন সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে টাকার বিনিময়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে রাজি হন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মোহাম্মদ কামাল হোসেন খন্দকার বলেন, পাসপোর্ট অফিসে দালাল কোথায়? আমি তো কোনো দালাল দেখি না। এখন কেউ যদি পাসপোর্ট করতে গিয়ে তার এলাকার কোনো দালালকে টাকা দিয়ে আসে তাহলে তো আমার কিছু করার নেই।তিনি আরও বলেন, পাসপোর্ট অফিসের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। আর যা আছে তা তো একদিনে সব পরিবর্তন করে ফেলতে পারব না। তিনি এসব বলে এড়িয়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।
এসব অভিযোগ নিয়ে কথা হয় মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপনের সঙ্গে। তিনি দৈনিক সমকালীন কাগজ কে বলেন, আমরা এর আগেও পাসপোর্ট অফিসে দায়িত্বে থাকা আনসার বাহিনী সদস্যদের ডেকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছি। আবারও খোঁজ নিয়ে তাদের সকলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।তবে ডিডির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান তদন্ত করে খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চোখ রাখুন বিস্তারিত আসছে…….