সর্বশেষ:-
বিজ্ঞানী এলিস সিলভার’ আলোড়ন সৃষ্টিকারী দাবি: মানুষ পৃথিবীর জীব নয়

প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৩:৫৯:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪ ১৮৫ বার পড়া হয়েছে

মানস বন্দ্যোপাধ্যায়,
কোলকাতা।।
মনে পড়ে সেই জনপ্রিয় হিন্দি ছবিটি!! রেখা, ঋত্বিক রোশন, প্রীতি জিন্টা অভিনীত “কোই মিল গয়া” ছবিতে একটি ভিন গ্রহের এলিয়েনের কাহিনী সকলের মধ্যে বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। প্রশ্ন উঠেছে , সত্যিই কি ভিন গ্রহে এলিয়েন রয়েছে?
বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং অনেক আগেই বলেছিলেন, “এলিয়েন আছে, অবশ্যই আছে।” নাসার গবেষকেরা কেপলার টেলিস্কোপের সাহায্যে এমন ২০টি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন, যাদের মধ্যে সম্ভবত প্রাণ আছে। নাসার প্রথম সারির বিজ্ঞানী অ্যালেন স্টেফান, বিজ্ঞানী সিলভানো পি কলম্বানো, বিজ্ঞানী থমাস জুরবিউকেন বিভিন্ন সময় বলেছেন এলিয়েনদের থেকে নাসা আর বেশি দূরে নেই। কয়েক বছরের মধ্যেই নাসা এলিয়েনদের কাছে পৌঁছে যাবে।
কিন্তু সম্প্রতি নাসার এই বক্তব্যে জল ঢেলে দিয়েছেন এক বিজ্ঞানী। তাঁর চাঞ্চল্যকর মতবাদ নিয়ে ঝড় উঠেছে বিজ্ঞানপ্রেমীদের মধ্যে। তিনি দাবী করেছেন মানুষই এলিয়েন বা ভিনগ্রহের জীব। অথচ বিজ্ঞান বলেছিল, প্রায় ১৮ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকায় সৃষ্টি হয়েছিল প্রথম মানব প্রজাতি হোমো ইরেকটাস।
বিজ্ঞানী এলিস সিলভার দাবি করেছেন, মানুষ পৃথিবীর জীব নয়। এই চাঞ্চল্যকর দাবি করে তিনি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন।
তাঁর ‘হিউম্যান আর নট ফ্রম আর্থ: এ সায়েন্টিফিক ইভ্যালুয়েশন অফ দ্য এভিডেন্স’ বইটিতে রীতিমতো যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, ‘মানুষ পৃথিবীর জীব নয়’।
এলিয়েনরা কি আদৌ এরকম দেখতে?
ডঃ এলিস সিলভার বললেন, মানুষই ভিনগ্রহের জীব
আমেরিকার প্রখ্যাত ইকোলজিস্ট ডঃ এলিস সিলভার। তিনি তাঁর ‘”হিউম্যান আর নট ফ্রম আর্থ” – এ সায়েন্টিফিক ইভ্যালুয়েশন অফ দ্য এভিডেন্স’ বইটিতে রীতিমতো যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, ‘মানুষ পৃথিবীর জীব নয়’। বহুদিন ধরে গবেষণা করার পর তাঁর সিদ্ধান্ত, অন্য জীবদের মতো মানুষের সৃষ্টি পৃথিবীতে হয়নি।
কয়েক লক্ষ বছর আগে অন্য গ্রহ থেকে মানুষকে পৃথিবীতে ছেড়ে যাওয়া হয়েছিল। ডঃ সিলভার বলেছেন, মানুষের শরীরে থাকা অনেক ত্রুটি বুঝিয়ে দেয়, পৃথিবী আমাদের নিজের গ্রহ নয়। পৃথিবীর অনান্য উন্নত প্রাণীর সঙ্গে মানুষের শরীরের এত পার্থক্য কেন! এই প্রশ্নটির ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে ডঃ এলিস সিলভারের মতবাদটি।
ডঃ এলিস সিলভারের সেই চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী বই” হিউম্যান আর নট ফ্রম দ্য আর্থ” এ কী বলেছেন?
ডঃ সিলভারের সেই চাঞ্চল্যকর থিয়োরির কিছু ঝলক তুলে ধরা হলো।
● ডঃ সিলিভারের মতে, পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া থাকা সব প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী পরিবেশ থেকেই সরাসরি তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে নেয়। উদ্ভিদ তার গায়ে এসে পড়া সূর্যালোক, বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড আর মাটি থেকে জল নিয়ে নিজের খাবার তৈরি করে নেয়। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীরা সরাসরি উদ্ভিদকে খেয়ে, বা অনান্য প্রাণীকে খেয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকে। কিন্তু মানুষ প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে পাওয়া বা গজিয়ে ওঠা খাবার সরাসরি খেতে অপছন্দ করে কেন!
বাঘ, সিংহ জ্যান্ত পশু ধরে খেয়ে নেয়। তাদের হজমের কোন অসুবিধা হয় না। গরু, ছাগল ভেড়া, হরিণ সবুজ ঘাসপাতা সহজেই খেয়ে হজম করে নেয়। পাখিরা গাছের পাতা, পোকা মাকড় দিব্যি খেয়ে ফেলে। কাক উচ্ছিষ্ট আমিস,নিরামিষ খেয়ে ফেলে।তাদের তো কোন হজমের কষ্ট হয় না। বিড়াল কাঁচা মাছ খেতে পারে।কুকুর কাঁচা মাংস খেয়ে সুস্থ থাকে। তাহলে মানুষ কেন পারেনা? এমন অসংখ্য তথ্য দিয়েই এলিস সিলভার বোঝাতে চেয়েছেন মানুষ পৃথিবীর জীব নয়। ভিন্ন কোন গ্রহের। পৃথিবীতে মানুষই আসলে এলিয়েন।
ডঃ সিলিভারের মতে, সরাসরি পরিবেশ থেকে নেওয়া খাবার হজম করতে পারে না একমাত্র মানুষই। তাই সে অন্যভাবে তার খাদ্যের প্রয়োজন মেটায়। মানুষ যদি পৃথিবীরই জীব হতো, তাহলে সে বাকি প্রাণীদের মতোই পরিবেশ থেকে পাওয়া খাবার সরাসরি খেয়ে হজম করতে পারত।
● মানুষকে এই গ্রহের সবচেয়ে উন্নত প্রাণী বলে মনে করা হয়। কিন্তু ডঃ সিলভারের মতে মানুষই হল পৃথিবীর সবচেয়ে খাপছাড়া জীব। মানুষই হল পৃথিবীর জলবায়ুতে টিকে থাকার পক্ষে সবচেয়ে অনুপযুক্ত জীব। কারণ, পৃথিবীর বাকি সব জীব সারাজীবন খোলা আকাশের নীচে, প্রখর রৌদ্র, তুমুল ঝড় বৃষ্টি সহ্য করে বেঁচে থাকতে পারে। মানুষ কেন পৃথিবীর বাকি সব প্রাণীর মতো বৃষ্টিতে ঘন্টার পর ঘন্টা ভিজতে পারে না! কয়েকঘন্টার বেশি সূর্য্যের প্রখর রৌদ্রে থাকলে একমাত্র মানুষেরই কেন ‘সান স্ট্রোক’ হয়! সূর্য্যের আলোয় বেশিক্ষণ থাকলে আমাদের ত্বকের চামড়া কালো হয়ে যায় কেন! ! কেন সূর্যের আলোয় মানুষেরই চোখ ধাঁধিয়ে যায়! অন্য প্রাণীদের তো তা হয় না। এগুলি কি প্রমাণ করেনা সূর্য রশ্মি মানুষের পক্ষে উপযুক্ত নয় এবং মানুষ থাকত কোনও নরম আলোয় ভরা গ্রহতে।
● মানুষের মধ্যেই প্রচুর দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা ক্রনিক ডিজিজ দেখা দেয় কেন! ডঃ সিলভারের মতে ব্যাক পেন (back ache) হল মানুষের অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী রোগ। পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ এই রোগে ভোগেন। কারণ মানুষ পৃথিবীর অনান্য প্রাণীর মতো চারপায়ে হাঁটে না। ফলে হাঁটা চলা ও বিভিন্ন কাজে মাধ্যাকর্ষণের সাহায্য পায় না। পৃথিবীর বাকি প্রাণীদের কি ঘাড়ে, পিঠে, কোমরে ব্যাথা হয়! মানুষের এই ‘ব্যাক পেন’ রোগটিই প্রমাণ করে, মানুষের দেহ অন্য কোনও গ্রহে বসবাসের উপযুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল। যে গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ ছিল পৃথিবীর তুলনায় অনেক কমজোরি।
● পৃথিবীতে থাকা কিছু দীর্ঘজীবী প্রাণী, যেমন আফ্রিকার হাতি, অ্যালডাবরা ও গ্যালাপাগোস কচ্ছপ, বো-হেড তিমি, গ্রেটার ফ্লেমিঙ্গো, গ্রিন-উইং ম্যাকাওদের চোখেও কি চল্লিশের পর চালসে (হাইপার মেট্রোপিয়া) পড়ে! বয়েসের সঙ্গে সঙ্গে তাদের শ্রবণক্ষমতা কমে যায়!
● পৃথিবীর কোনও মানুষই ১০০% সুস্থ নয় কেন! প্রত্যেকেই এক বা একাধিক রোগে ভোগেন কেন!
● মানব শিশুর মাথা বড় হওয়ার জন্য নারীদের স্বাভাবিক উপায়ে প্রসব করতে প্রবল যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। প্রসব করতে গিয়ে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মা ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মানুষ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনও প্রজাতির লক্ষ লক্ষ স্ত্রী প্রাণী ও শাবক প্রসবকালে মারা গিয়েছে কি? মানব শিশু জন্মের পরেই পৃথিবীর উন্নত প্রাণীগুলির শাবকদের মতো হাঁটতে শেখে না কেন?
● মানুষের দেহে কেন ২২৩টি অতিরিক্ত জিন আছে! পৃথিবীর অনান্য প্রাণীদের দেহে অতিরিক্ত জিন নেই কেন!
● মানুষের ঘুম নিয়ে গবেষণা করে গবেষকরা বলছেন পৃথিবীতে দিন ২৪ ঘন্টার, কিন্তু আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি (body clock) বলছে, আমাদের দিন হওয়া উচিত ছিল ২৫ ঘন্টার। মানবজাতির সৃষ্টিলগ্ন থেকেই দেহঘড়িতে একটি দিনের জন্য কেন ২৫ ঘন্টা বরাদ্দ করা হয়েছিল!
বিভিন্ন বিজ্ঞানী ডঃ সিলভারের থিওরিটির বিস্তর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু অনেকে আবার তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা বলেছেন ডঃ সিলভার যে যুক্তিগুলি হাজির করেছেন, সেগুলি কিন্তু একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। সত্যিই তো পৃথিবীর অনান্য প্রজাতির জীবের চেয়ে আমরাই কেন আলাদা হলাম। সত্যিই কি আমরা পৃথিবীর প্রাণী! নাকি আমরা ভিনগ্রহের প্রাণী হয়ে পৃথিবীকে শাসন করছি! রহস্যটির উত্তর লুকিয়ে আছে কালের গর্ভে। একটা প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই গেল,মানুষের সৃষ্টি যদি পৃথিবীতে না হয়ে থাকে বা আমরাই যদি ভিনগ্রহ থেকে পৃথিবীতে এসে থাকি, তাহলে কাদের খুঁজতে নাসা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচা করছে!”
এর আগেও বহুবার এলিয়েন দের নিয়ে হৈচৈ পড়েছিল। তারা কোন একটি গ্রহ থেকে পৃথিবীতে এসে নানান ধরনের কান্ড ঘটিয়েছেন। তাদের নিয়ে বিজ্ঞানীদের উৎকণ্ঠার অন্ত নেই। তাহলে নাসা যে গবেষণা করে ২০ টি গ্রহে প্রাণের সন্ধান পেয়েছেন তারা কারা? মানুষই যদি এলিয়েন হয় তাহলে গবেষণা কাদের নিয়ে? এলিস সিলভারের বই নিয়ে তাই বিস্তর আলোচনা চলছে।
মানস বন্দ্যোপাধ্যাযের সংযোজন:
এলিসের গবেষণা মেনে নিলে একটা জিনিষ পরিষ্কার, ঈশ্বর আল্লাহ, গডকে না মানলেও একটি শক্তির অবস্থান সম্পর্কে অনেকটা সত্য এসে পড়ে। সেই শক্তি ভগবান হোন, আলাহ্ হোন বা গড হোন সকল ই এক ও অভিন্ন। পুরাণে স্বর্গ, কোরআনে বেহেশত ও বাইবেলে হেভেন আর কিছুই নয় সেই গ্রহ যেখানে আলো আছে,তাপ নেই, হওয়া আছে তুফান নেই। হত্যা, খুন খারাবি, চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা,দুর্নীতি নেই। কাজেই সহজে অনুমান করা যেতে পারে যে লক্ষ বছর আগে যেই মানুষদের সেই গ্রহ থেকে পৃথিবীতে এনে ফেলে দেওয়া হয়েছিল,তারা ছিল দুর্নীতি গ্রস্ত। সর্ব শক্তিমান ভগবান , আল্লাহ্রর সঙ্গে বেইমানি করেছিল বলেই তাদের সেখান থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল।
সেই সুন্দর গ্রহে যারা থাকেন তারা সৎ,। ধর্ম শুধু একটাই মানব ধর্ম,জীবে প্রেম। তার বাইরে কারোই স্থান নেই সেখানে। পৃথিবীতে এমন মানুষ কজন আছেন, সম্ভবত হাতে গোনা। কাজেই কোন মানুষেরই মৃত্যুর পর সেই গ্রহে যাবার সম্ভাবনা কম। সেই গ্রহটির কাছে পৌঁছনোর জন্য নাসা এবং ভারতীয় ইসরোর বিজ্ঞানীরা আপ্রাণ প্রয়াস করে চলেছেন। আদপে পৌঁছুতে পারবেন কি?