সর্বশেষ:-
মুন্সীগঞ্জে হঠাৎ পদ্মার ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৭:১৫:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪ ৮১ বার পড়া হয়েছে
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি।।
আড়াই দশক আগে বাড়ি থেকে পদ্মা নদী ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে।ভাঙতে ভাঙতে সেই নদী এখন প্রদীপ দাসের বাড়ির একেবারে কাছাকাছি। ফলে সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ঝাউটিয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপকে।তিনি বলেন,নদী শাসনের সংবাদ শুনে ভালো লেগেছিল।কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাত্র অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।ফলে ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।এতে তাঁর মতোই হতাশায় ভুগছেন ঝাউটিয়াবাসী।এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে পদ্মায় বাড়ছে পানি।খরস্রোতা এই নদী উত্তাল হয়ে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। ৮-১০ ফুট উচ্চতায় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে।এতে করে ৬ দিনের ব্যবধানে লৌহজং উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের আনুমানিক ৭০টি বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে। ঢেউয়ের তোড়ে সরে যাচ্ছে ভাঙনরোধে ফেলা জিও ব্যাগ।উপজেলার পদ্মা-তীরবর্তী শিমুলিয়া,খড়িয়া, দক্ষিণ হলদিয়া,সিংহেরহাটি,তেউটিয়া,রা উৎগাঁও, বাগেরবাড়ি,সুন্দিসার,ডহরী এলাকায় ফেলে রাখা জিও ব্যাগ তীব্র ঢেউয়ে তলিয়ে গেছে।তীরে মাটি ভেঙে পড়ছে নদীতে।আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পদ্মা নদীর তীরের মানুষ।স্থানীয় বাসিন্দা,ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছ থেকে গতকাল রবিবার জানা গেছে,ভাঙনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাঁওদিয়া,বেজগাঁও,লৌহজং-তেউটিয়া ও কনকসার ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজন।
গাঁওদিয়া ইউপির সদস্য মো:রশিদ শিকদার বলেন, আগের সোমবার দুপুর থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত ওই ইউনিয়নের হারিদিয়া গ্রামেই অর্ধশতাধিক বসতঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। অসময়ে ভাঙনের কবলে পড়ে দিশেহারা বাসিন্দারা।অর্ধশতাধিক পরিবার এখন আকাশের নিচে বসবাস করছে।ভাঙনকবলিত এলাকায় তারা এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দুপুরে খাবার দিচ্ছেন।অন্যদিকে লৌহজং তেউটিয়া, বেজগাঁও ও কনকসার ইউনিয়নের আরও ২০টি বসতঘর নদীর পেটে গেছে।প্রবল স্রোত আর উত্তাল ঢেউয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।লৌহজং-তেউটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো:রফিকুল ইসলাম মোল্লার অভিযোগ,নদীভাঙন রোধে নির্মাণাধীন বাঁধের কাজে ধীরগতি, অপরিকল্পিতভাবে জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলার কারণে ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।পদ্মা উত্তাল হয়ে ওঠায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।ভাঙনের মুখে পড়েছে ১২০ বছরের পুরোনো ব্রাহ্মণগাঁও বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়।সেখানকার শিক্ষক মোহাম্মদ আসলাম বলেন,‘আমি এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। ছাত্র অবস্থায় দেখেছি,বিদ্যালয় থেকে পদ্মা নদী ছিল কয়েক কিলোমিটার দূরে।আর এখন বিদ্যালয়টি একেবারে ভাঙনের মুখে।’একই এলাকার শেখ আয়নাল হাসান জানান,পদ্মার ভাঙনে দুই দশক আগে বসতবাড়ি ও কৃষিজমি হারিয়েছেন।এখন গাওদিয়া গ্রামের যেখানে আছেন সেখান থেকেও নদী মাত্র ২০০ মিটার দূরে।তাই ফের ভাঙন-আতঙ্ক নিয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো:জাকির হোসেন বলেন,নদী তীরবর্তী এলাকার একাধিক স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ সরে গেছে। ফলে কমবেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে।আবারও জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলে ভাঙনরোধের কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে লৌহজং উপজেলার খড়িয়া থেকে টংঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার বাঁধের কাজ শুরু হয়।২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে তা শেষ হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ।বৃহস্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো:আসাদ্দুজামান,মুন্সীগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তহিদুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ওসমান গনি তালুকদার,ইউএনও মো:জাকির হোসেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।শুক্রবার এসব এলাকায় যান মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি।তিনি পাউবো কর্মকর্তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।মুন্সীগঞ্জ পাউবো সূত্র জানায়,ইতোমধ্যে ব্লক নির্মাণের কাজ হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ।শুরুতে লৌহজংয়ের শিমুলিয়া থেকে টংঙ্গীবাড়ীর দিঘিরপাড় পর্যন্ত ৯ দশমিক ১ কিলোমিটার তীর রক্ষা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪৪৬ কোটি টাকা।পরে তা আরও ৬ কিলোমিটার বাড়িয়ে ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ বেশি দেওয়া হয়।পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী মো:আসাদুজ্জামান বলেন,পদ্মার তীর রক্ষা বাঁধের যে কাজ চলছে, এর ৪৭ শতাংশ শেষ।বাকি কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।আপৎকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলতে ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।