রূপগঞ্জে ফের বেপরোয়া কিশোর গ্যাং গ্রুপের প্রধান সেকান্দর বাহিনী
- আপডেট সময়- ১২:৫৮:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪ ২১৮ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সিকান্দার বাহিনীর প্রধান এসকে আবু জাফর সিকান্দার
রাশেদুল ইসলাম।।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার হাটিপাড়া এলাকার কিশোর গ্যাং গ্রুপের প্রধান এসকে আবু জাফর ওরফে ত্রাস সেকান্দর। সে পৌর এলাকায় গড়ে তুলেছেন মাদক ব্যবসার রাম রাজত্ব সহ অস্ত্রধারী বাহিনী। সেকান্দর ও তার বাহিনীর আতঙ্কে জীবন যাপন করছে তারাবো পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। পান থেকে চুন খসলেই অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেয় সিকান্দার বাহিনীর লোকজন। ছিনতাই,চুরি ডাকাতি থেকে খুন- সবই করে থাকে এই বাহিনী। তাদের কাছে থানা পুলিশও অসহায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারাব পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে অর্ধশতাধিক শিল্পকারখানাও গড়ে উঠেছে। এখানকার আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে হাটিপাড়া এলাকার মোজাম্মেল হক মোজার ছেলে সেকান্দর ও তার বাহিনী। শীতলক্ষ্যা নদীর নৌযানে চাঁদাবাজি, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ছিনতাই ও ডাকাতির মূল হোতা এই বাহিনী। এলাকায় নতুন কেউ বাড়ি কিংবা ব্যবসা করতে গেলে সেকান্দর বাহিনীকে চাঁদা দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করতে হয়।অন্যথায় ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পরতে হয়। তারাবো সুলতানা কামাল সেতুর ওপর প্রতি রাতেই কিশোর গ্যাং গ্রুপের প্রধান সেকান্দরের নেতৃত্বে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
গত বুধবার (১৫ মে) রাতে সেতুর ওপর সিএনজি চালিত অটোরিকশা থামিয়ে অস্ত্র মূখে নগদ ১৬ হাজার টাকা ও ৩টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় । এ সময় চিৎকার দেয়ায় সিএনজিতে থাকা ২ যাত্রীকে মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যায়।
সূত্রে আরো জানা গেছে, তারাব পৌরসভায় হাটিপাড়া এলাকায় সে মাদকের ডিপো গড়ে তুলেছেন।তার রয়েছে ৪০ জনের এক বিশাল অস্ত্রধারী বাহিনী। সেকান্দরের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে তার সেকেন্ড-ইন কমান্ড মোজাম্মেল হক মোজার ছেলে রাসেল ও রিফাত। টোকাই সাব্বির ও কাউসার ছিনতাই-ডাকাতি করে। আবির ও শুভ তার জলসাঘর দেখভাল করে। হাটিপাড়ার হিন্দুপাড়া এলাকায় প্রতিদিন জুয়ার আসর জমায় সেকান্দর বাহিনী। এখানে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা হয়।
হাটিপাড়া এলাকার শাহীন মিয়া ও জাকির হোসেন জানান, সেকান্দরের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। দাবিকৃত টাকা না পেলেই হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। সারাক্ষণই এই বাহিনীর হাতে দা-ছুরি থাকে। এগুলো নিয়ে এলাকায় মহড়া দেয়। গত বছর হাটিপাড়া এলাকার কেকে স্যাটেলাইট সেন্টার নামে ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। দাবিকৃত ১০ লাখ না দেয়ায় সেকান্দর ও তার বাহিনী এ ঘটনা ঘটায়।
কেকে স্যাটেলাইটের মালিক কামরুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চেয়েছে। বলছে ব্যবসা করতে হলে টাকা দিতে হবে, নতুবা ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। চাঁদা না দেয়ায় আমার প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্যাশ ভেঙে ৪ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।’
রূপগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, সেকান্দরের বিরুদ্ধে ফয়সাল হত্যাসহ ৮টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে মাদক মামলা। হাটিপাড়া এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হাটিপাড়ার আতঙ্ক সেকান্দর। মানুষ শান্তিতে নেই। সেকান্দরের নাম শুনলেই ভয় লাগে।’
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, ‘এই বাহিনী দিন-রাত দা-ছুরি ও চাপাতি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। দেখলে এমনিতেই ভয় লাগে।’
সেকান্দরের পাশের বাড়ির একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা জ্বালায় আছি। সারা দিন-রাত চলে মাদকের আড্ডা। আর রাত হলেই মাইয়া মানুষ নিয়া ফুর্তি করে।’
অভিযুক্ত সেকান্দরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এসব সত্যি নয়। আমি উল্টো মানুষকে উপকার করি।’
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, সেকান্দর ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। আমরা শিগ্রই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।