সাংবাদিক প্রীতির সহায়তায় সৌদি থেকে ফিরল গার্মেন্টস কর্মী শায়েরার লাশ

- আপডেট সময়- ০৪:৫৬:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫ ৯০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
গেলো কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে নির্যাতিত বহু নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি এবার সৌদিতে নিহত নারায়ণগঞ্জের অসহায় এক নারী শ্রমিকের পরিচয় শনাক্ত করে তার লাশ দেশে ফিরিয়ে এনে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিল সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি।
বিমান বাংলাদেশের BG340 ফ্লাইট যোগে ২০ মার্চ (বৃহস্পতিবার) রাত ৭টা ৫৮ মিনিটে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় শায়েরার লাশ। মানবাধিকার কর্মী প্রীতি লাশটি তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার পাশাপাশি দাফনকার্য সম্পাদনের জন্য সরকারি খরচে একটি চেক নিয়ে দেন অসহায় পরিবারটিকে। এসময় উপস্থিত ছিলেন নতুনধারা বাংলাদেশ (এনডিবি)’র চেয়ারম্যান কলামিস্ট মোমিন মেহেদী, দলটির মানবাধিকার বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান শান্তা ফারজানা।
সৌদি থেকে দূতাবাস কর্মকর্তা মো. ফয়সাল জানান, ২৫ ফেব্রুয়ারী রিয়াদের শুমাইছি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শায়েরা(৪৩)। মৃত্যুর পর পাসপোর্টে ভুল নাম্বার থাকায় আমরা কোনোভাবেই মৃত নারীটির পরিবারের খোঁজ পাচ্ছিলাম না। তাছাড়া এখানে প্রতিদিন অসংখ্য বাঙালী কর্মী মারা যায়। তাই লাশ ১৪ দিনের বেশি ফ্রিজিং করে রাখা সম্ভব হয়না। সর্বোচ্চ ১৪ দিনের মধ্যে পরিচয় শনাক্ত না হলে তা বেওয়ারিশ হিসেবে সৌদি সরকার নিজ দায়িত্বে এখানে দাফন করে। তবে কোনো উপায় না পেয়ে ১৩ দিন পর আমি দূতাবাসের পক্ষ থেকে মানবাধিকার বাংলাদেশ এর মহাসচিব সাংবাদিক সোনিয়া দেওয়ান প্রীতিকে বিষয়টি জানালে তিনি ১ দিনের মধ্যে পরিবারের খোঁজ বের করে তাদের মাধ্যমে লাশ শনাক্ত করেন।
জানা গেছে, দরিদ্র পরিবারে মায়ের মুখটি শেষবারের মত ৪টি এতিম শিশুকে দেখানো প্রয়োজন মনে করে প্রীতি নিজেই কয়েকদিনের চেষ্টায় সরকারি খরচে লাশ দেশে আনার পাশাপাশি দাফনের সহযোগিতা হিসেবে ৩৫০০০ হাজার টাকার একটি চেক নিয়ে দেন পরিবারটিকে।
প্রীতি জানান, সৌদিতে নিহত বাংলাদেশী নারী শ্রমিক সায়রা(৪৩) নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ চনপাড়া আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দা। তালাকপ্রাপ্তা এই হতদরিদ্র নারী ৪টি এতিম সন্তানকে আত্মীয়দের কাছে রেখে কর্মসংস্থানের খোঁজে ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল সৌদিতে পাড়ি জমান।
তিনি বলেন, দূতাবাস কতৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে যখন পরিবারটিকে খুঁজে বের করলাম, তখন জানতে পারলাম- কোনো এক মাধ্যমে আরও এক বছর আগে শায়েরার মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারটি জানত। যা ভুল। মূলত কর্মী হিসেবে সৌদি গেলেও শায়েরা কিছুদিনের মধ্যে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এবং এরপর শায়েরার জীবনে নানা ট্রাজেডি চলতে থাকে। যার এক পর্যায়ে তার দেশে থাকা পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর দীর্ঘদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এবং বছরখানেক আগে একটি ফেইক কল আসায় তারা মনে করেছিল শায়েরা সেখানে মারা গেছে আরও ১ বছর আগে। আসলে এ বছর ২৫ ফেব্রুয়ারী তার মৃত্যু হয়েছে।
সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি আরও বলেন, ঈদ পরবর্তী সময়ে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব শায়েরার রেখে যাওয়া এই এতিম ৪ শিশুর জন্য একটি আর্থিক অনুদান আদায় করে দিতে। ইতিমধ্যেই এ সংক্রান্ত কাগজপত্র সহ কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি।
উল্লেখ্য, মানবিক এই নারী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি এ পর্যন্ত সৌদি সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে নির্যাতিত অসংখ্য নারী কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে এনেছেন।
এছাড়াও তিনি প্রবাসী নারী শ্রমিকদের পারিশ্রমিক সহ কর্মস্থলে তাদের অধিকার আদায় ও তাদের কল্যাণে অনেক বছর ধরে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করে চলেছেন। এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারী তিনি সৌদিতে নির্যাতিত নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেওভোগ এলাকার এক নারী গৃহ শ্রমিককে দেশে ফিরিয়ে আনেন।
নিউজটি শেয়ার করুন

-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ