সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, আন্তর্জাতিক, কলকাতা, ক্যাম্পাস নিউজ, ফিচার, বাংলাদেশ, ভারত, শিক্ষা ও সাহিত্য, শিক্ষাঙ্গন, সালথা
অমর সঙ্গীত শিল্পী অতুল প্রসাদ সেনের বহু অজানা তথ্য
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ১১:২৭:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০৬ বার পড়া হয়েছে
ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা।।
কবি ও অমর সঙ্গীতশিল্পী অতুলপ্রসাদ সেন সেই বিখ্যাত উদ্ধৃতি,”মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা।” এই বাংলা ভাষা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বলিষ্ঠ ও মধুর ভাষা। বাঙালিদের মধ্যে এই বাংলা ভাষায় গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ লিখে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন। এই বাংলাভাষার চরম অবমাননা করে জোর করে উর্দু চাপিয়ে দিয়ে পাকিস্তান বর্বর নির্যাতনের নজির স্থাপন করেছিল পূর্বপাকিস্তানে। বাঙালি গর্জে উঠেছিল। তারপরের ইতিহাস সকলেরই জানা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সেই সময় বাংলাভাষার দাবিতে স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
অসভ্য, বর্বর পাকিস্তানি সেনা ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করেছিল। ৫ লক্ষ বাঙালি মা, বোনকে গণধর্ষণ করে আড়াই লক্ষ মহিলাকে গর্ভবতী করে তুলেছিল। শেষ পর্যন্ত ৯ মাসের যুদ্ধে ভারতীয় সেনা এবং মুক্তি বাহিনীর হাতে পাকিস্তানের পরাজয় হয়ে নতুন স্বাধীন,সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। মুক্তি যুদ্ধে কবিগুরুর অনুপ্রাণিত করা গান,”আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি” জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পায়।
সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা।
ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে রাষ্ট্র সংঘ। এর নেপথ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যথেষ্ট অবদান অনস্বীকার্য।
এই বাংলা ভাষায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকালে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে উজ্জীবিত করতে লিখেছিলেন,” কারার ঐ লৌহ কপাট, ভেঙে ফেল কররে লোপাট”।
এই ভাষার মাটিতেই জন্মেছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ক্ষুদিরাম বসু, সূর্য সেন (মাস্টারদা), প্রফুল্ল চাকী, বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু, সুরেন্দ্র নাথ ব্যানার্জি, স্বামী বিবেকানন্দ, কবি জসীমউদ্দীন, আরো অসংখ্য মনীষী।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। ভারতের কয়েকটি রাজ্যের সরকারি ভাষা বাংলা। বাস্তবে ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত ভাষা হচ্ছে বাংলা। বর্তমানে ২৬ কোটিরও বেশি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে বাংলার অবস্থান সপ্তম।
রাষ্ট্র সংঘের একটি রিপোর্টে জানা গেছে, বিশ্বের মধুরতম ভাষার মধ্যে বাংলার স্থান দ্বিতীয়।
২০০২ সালে সিয়েরালিওন প্রজাতন্ত্র বাংলাকে সেদেশের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছে। ১৯৯১ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সিয়েরালিওন গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ছিল। যুদ্ধকালীন শান্তি বজায় রাখার জন্য জাতিসংঘ সেখানে তাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীর একটি বড় দল পাঠায়। সিয়েরালিওনের বিদ্রোহীকবলিত অঞ্চলসমূহের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার জন্য তখন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২০০২ সালে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ তেজান কাব্বা ঘোষণা করেন যে, বাংলা হবে সেদেশের অন্যতম সরকারি ভাষা।
শুনলে গর্ব বোধ করি, আমেরিকা এবং ব্রিটেনের নির্বাচনে বাংলায় ব্যালট পেপার ছাপা হয়। অস্ট্রেলিয়া ,সিডনি , কানাডা এবং আফ্রিকার প্রায় দশটি দেশের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা বাংলা।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে লিঙ্গুয়াপাক্স ইনস্টিটিউট প্রতিবছর পুরস্কার প্রদান করে। স্পেনের বার্সেলোনায় অবস্থিত লিঙ্গুয়াপাক্স ইনস্টিটিউট বিশ্বব্যাপী ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে এই কাজটি করে চলেছে। যারা ভাষাগত বৈচিত্র্য বা বহুভাষিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখছেন, এই পুরস্কারটি তাদের দেওয়া হয়।
কানাডার প্রথম অডিওভিজ্যুয়াল মাতৃভাষা পাবলিক স্মৃতিস্মারক ‘দি লিঙ্গুয়া একুয়া’ ২০০৯ সালে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের ‘সারি’ শহর কর্তৃপক্ষ ‘দি লিঙ্গুয়া একুয়া’ শীর্ষক স্মৃতিস্মারকটি তৈরির জন্য অর্থায়ন করে। ‘লিঙ্গুয়া একুয়া’ এমন একটি জায়গা যেখানে সকল ভাষাভাষী এসে ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে অন্য ভাষার সৌন্দর্যের প্রতি তাদের মুগ্ধতা প্রকাশ করে।
২০০৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের অ্যাশফিল্ড পার্কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভটি একটি সুউচ্চ পাথরখণ্ডের বেদির ওপর নির্মিত। এর মধ্য বাংলাদেশের শহীদ মিনারের চিত্র খোদাই করে তার নিচে বাংলা ও ইংরেজিতে ‘ভাষা শহীদদের আমরা কখনও ভুলব না’ কথাটি উৎকীর্ণ রয়েছে। পাশাপাশি মাতৃভাষায় প্রতীক হিসেবে সাতটি ভাষার বর্ণমালা ব্যবহার করা হয়েছে।